![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবাক হয়ে চিন্তা করছিলাম, বাঙালী কেন ক্ষমতার স্বাদ পেলে তা ত্যাগ করতে চায়না। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম ক্ষমতাপ্রীতির ‘শয়তানী’ ব্যাপারটা শুধু হাসিনা-খালেদা আর এরশাদের সময়কার প্যারাডাইম না। সম্ভবত এটা এই অঞ্চলের আবহমান কালের ব্যাপার। নথিবদ্ধ ইতিহাস বা আমার জ্ঞানের পরিসীমায় অনেক গুলো মানুষের নাম ভেসে আসে যারা ক্ষমতার নেশায় হাসিনা-খালেদা বা এরশাদের তুলনায় অনেক বড় পাগলামী বা মানুষে হত্যার মত বড় শয়তানী, ষড়যন্ত্র বা তত্ত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু এদেশের নয়, এ অঞ্চলের অসামান্য ক্ষতি করেছেন। কিন্তু তার চেয়েও আরও আশ্চর্য ব্যাপার হল এদের অনেককেই আবার হিরো হিসেবে আমাদের কাছে তুলে ধরা হয়। আমাদের শিশুদের কাছে তাদের কে আইডল হিসেবে দেখানের হয়। আমার কাছেও এদের অনেকই দীর্ঘদিন হিরোই ছিলেন। কিন্তু এখন তাদেরকে ক্ষমতালোভী একধরনের ম্যানিয়াক ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। আমাদের দেশের এবং কিছুটা বৃহৎ প্রেক্ষাপটে এঅঞ্চলের অনেক চিরস্থায়ী সমস্যার জন্য এই ধরনের মানুষগুলোই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। পলাশী থেকে হিসাব করা হলে এ ধরনের ক্ষমতালোভী অনেক ম্যানিয়াকের কথা বলা যায়। আমার ব্যাখ্যায় অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বা পাকিস্থানি রাজারকার বলবেন (আমি অবাক হবনা, কারণ আমাদের মানসিকতা আবহমান কাল থেকে এমনই, আমরা কেউ আ’লীগান্ধ,কেউবা বিএনপি বা জামাতান্ধ। নিজের নির্দিষ্ট আইডিওলজির বাইরে কখনও চিন্তা করার কথা কখনও ভাবতেই পারি না। এবং এই মানসিক দাসত্ব ক্ষমতালোভী ‘শয়তানদের’ ক্ষমতা আকড়ে থাকতে উৎসাহিত করে ।)
প্রথমে আমরা যদি শুরু করি মীর জাফরকে দিয়ে আর ঘষেটি বেগমকে দিয়ে, আজকে যাদের নামকে আমরা গালি হিসেবে ব্যবহার করি (মজার ব্যাপার হল-আজকের ক্ষমতালোভীরাও তাদেরকে ওইভাবেই দেখে-কিন্তু নিজেরাও তার মত একই কাজ করে!!)। মীর জাফর বা ঘষেটি বেগম ব্রিটিশদের কাছে দেশ বিক্রি করেদিয়েছিল কেন?? কারণ ওই ক্ষমতালোভ। বিশাল জনগোষ্ঠীকে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যাওয়ার মূল কারণ ওই ক্ষমতার মোহ। মীর জাফর আর ঘষেটি বেগমের ক্ষমতা ম্যানিয়া এ অঞ্চলের মানুষকে দু’শ বছরের বৃটিশ গোলামীর শৃংখলাবদ্ধ করেছিল। বৃটিশ শাসনের শেষ প্রান্তে এসে আরেক পাওয়ার ম্যানিয়াক (আপনি তার নাম নিয়ে ক্ষেপে যেতে পারেন, কিন্তু আমার কিছুই করার নাই- উনি একটা সময় পর্যন্ত আমারও হিরো ছিলেন!!) যাকে আমরা আদর করে বাংলার বাঘ (শের-এ-বাংলা) বলে থাকি। উপমহাদেশের সকল সমস্যার মূল উনার এক পুরাই পাগলামী প্রস্তাব যাকে আমারা তথাকথিত ‘লাহোর প্রস্তাব’ নামে জানি। যার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ কয়েকভাগে ভাগ হয়ে যায়। উনার এই প্রস্তাবের মূল কারণ আমার কাছে ‘ক্ষমতালোভ’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। (অনেক অন্ধ বন্ধু আমার কথায় মাইন্ড খাইতে পারেন-ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ আমার কাছে পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়)। হ্যা উনার সেই খায়েশ পরে পূরণ হয়েছিল-পাকিস্থান আন্দোলনের অনেকেরেই ক্ষমতার খায়েশ শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছিল কিন্তু উনাদের ব্যক্তিস্বার্থের বলি হয়েছিল লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। এখনও এ অঞ্চলের মানুষ উনাদের সেই খায়েশের দাম শোধ করে যাচ্ছে। আরও অনেকের নাম নেয়া যায়। কিন্তু আমরা পাকিস্থান আমলের শেষ ও স্বাধীনতার পরের দিকে দৃষ্টিপাত করি। স্বাধীনতার মত বড় ঘটনাও শেখ সাহেবের মত ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালীর’ ক্ষমতা ম্যানিয়ার ফসল। ৭০’র নির্বাচনের পর ক্ষমতা যদি শেখ সাহেবের হাতে সমর্পণ করা হত তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষের কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা গেলেও শেখ সাহেবে ক্ষমতা মোহ না-গিয়ে বরং আরও পোক্ত করার খায়েশ জেগেছিল। উনি অবশ্য তার দাম শোধ করেছিলেন নিজের আর পরিবার সদস্যদের রক্তের বিনিময়ে। জিয়াউর রহমানও ক্ষমতা ম্যানিয়াক ছিলেন না এটা কখনও বলা যাবে না। তার সে ম্যানিয়ার আগুনে পুড়ে শত শত সামরিক বাহিনীর সদস্য আর অফিসার তাদের জীবন হারিয়েছিল। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হয়েছিলেন ক্ষমতা আকড়ে রাখতে, তার সে নেশার অবসান হয়েছিল জীবনের বিনিময়ে। ক্ষমাতান্ধ এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ দাড়িয়ে গেলেও ক্ষমতা থেকে উনি সরতে চাননি।ক্ষমতা হারানোর দুই দশক পরও উনার সেই ম্যানিয়া যায়নি বরং জীবনের অন্তীম বেলায় তা উনাকে পাবনায় নিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে উনাকে যারা সরাতে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছিলেন, ইতিহাসের পরিহাস হল তারাও তাঁর পতন থেকে কোন শিক্ষা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। স্বৈরাচার পতনের পরের নির্বাচনেই ‘আপোষহীন নেত্রী’ একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াস চালিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। আফসোসের কথা হল তিনি নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা না নিয়ে আবারো ২০০৬ সালে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। আজিজ-ইয়াজুদ্দিনের সহায়তা উনাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। উনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষমতার নেশা আরও এক কাঠি বেশী। উনার পরিবারের প্রায় সবাই অন্ধ ক্ষমতা ম্যানিয়ার বলি হলেও তার সে ম্যানিয়া এখনও যায়নি। বরং দিনে দিনে তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামায়াতিদের ক্ষমতার নেশাও এদের চেয়ে কম না, আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কথা বললেও তাদের নেতাদের ক্ষমতার নেশা হাসিনা আর খালেদার চেয়ে কম না, অন্তত তাদের ইতিহাস তাই বলে। এসব ক্ষমতালোভীরা একেক সময় একেক ইস্যু নিয়ে ক্ষমতা আকড়ে থাকার চেষ্টা করে। কেউ ধর্মের অজুহাত, কেউ সংবিধান রক্ষার অজুহাতে । কিন্তু ইতিহাস বলে একসময় তাদের চলে যেতে হয় কিন্তু সেটা হয় অপমানের লজ্জার্। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল ইতিহাস বলে এ অঞ্চলের পলিটিশিয়ানদের লজ্জা-শরম আর কমনসেন্স একটু কমই। জনগণ জুতা মারলে তারা ভাবেন তাদেরকে জনগন ভালবেসে ফুল দিয়েছে!!
এই ক্ষমতা ম্যানিয়া আমাদের রক্তে মিশে আছে, সুতরাং হাসিনা-আর খালেদা ক্ষমতা দখল আর টিকে থাকার জন্য ম্যাকিয়াভেলিয়ান খেলায় মেতেছেন তা নতুন নয়। কিন্তু এদের চেয়ে সবচেয়ে বড় ম্যানিয়াক হলাম আমরা আম-পাবলিক। আমরা এদের শঠতা আর প্রতারণার কথা ভালমতই বুঝলেও তাদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্য বার বার তাদের পিছনে দাড়িয়ে যাই। এই ম্যানিয়াকরা যেমন মীর জাফরের পিছনে দাড়িয়েছিলাম আজকে আবার তারাই হাসিনা খালেদার পিছনে দাড়িয়ে আছি। সুতরাং ক্ষমতা ম্যানিয়া আমাদের জন্য নতুন নয়। এই রোগ আমাদের রক্তে মিশে আছে। আবহমান কাল থেকেই আমরা ক্ষমতা-ম্যানিয়াক। মীর জাফর থেকে শেখ হাসিনা সবাই ক্ষমতা ম্যানিয়াক। এই ম্যানিয়াকরা সবসময় শঠতাকেই বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতা কে নয়।
©somewhere in net ltd.