![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিঞ্চিত কাব্য রচনা করি
১.
তাহনিফ সাধারণত
কফি নিয়ে পরীক্ষণধর্মীতায় যায় না।
পরীক্ষণধর্মীতার অভিজ্ঞতাও সুখকর
না। ওয়েটারকে তাই ম্যানু
না দেখেই ক্যাপাচিনো ওর্ডার
দিয়ে দিল। ইতালির এক
কফিশপে বসে ল্যাপটপটা নিয়ে
আবার মগ্ন হয়ে গেল। মনযোগ
ধরে রাখতে পারছে না। মাথায়
পুরোনো স্মৃতি উকি দিচ্ছে।
স্মৃতি যখন উকি দেয় তখন সেই
স্মৃতিকে সম্ভাষণ
করে ঢুকতে দিতে হয়। নতুবা বার বার
কড়া নেড়ে বিরক্ত করে। ওয়েটার
কফি দিয়ে গেল। কফিতে চুমুক
দিয়ে স্মৃতিটাকে মুক্ত
করে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না!
প্রতিবার কফির কাপে চুমুক দিলেই
স্মৃতিটা ভেসে ওঠে ঠিক যেন
গতকালের ঘটনা। স্বাদটাও যেন
পেয়ে যায় অবচেতনে!
২.
কফি উইথ তাহনিফ আজ।
রাইসা কবে যেন বলেছিল
কফি খাওয়াবে। তাহনিফ
গালভরা নামও দিয়ে দেয় "কফি উইথ
তাহনিফ" অবশ্যই "কফি উইথ করণ" এর
অনুকরণে। রাইসা সেই অনুকরণ
করা নামটাতেই মজা পেয়ে যায়
কেন যেন। যাই হোক কফিশপের
বাইরে তাহনিফ অপেক্ষা করছে।
রাইসার আসতে বরাবরের মতই
দেড়ি হল।
-দাঁড়ায় আছ কেন বাইরে? ভেতরে চল।
তাহনিফ কিছু বলার আগেই কাউন্টার
এট্যাকের শিকার। রাইসার
পেছনে পেছনে কফিশপে ঢুকল।
সুবিধেমত
জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের
সুবিধে করে দিতেই কোণার দিকের
একটা টেবিল খালি হয়ে গেল।
-আহ্ এটলাস্ট।
-কি এটলাস্ট?
-এই যে তোমার সাথে, তাহনিফের
সাথে কফি উইথ তাহনিফ।
-... কফি তো খাওয়াবা তুমি। আমার
কি! আমার তো মজা।
-এহ্... আমি শুধু আজকেই। এরপর
থেকে তুমি খাওয়াবা।
-আচ্ছা যদি আমাকে পাও...
-খুঁজে বের করব হুহ্।
-হইছে অর্ডার দাও।
-তুমি দাও তোমারটা।
ওয়েটার এসে ম্যানু ধরিয়ে দিল।
তাহনিফ এসপ্রেসো ওর্ডার দিল।
রাইসা বলল ডাবল এক্সপ্রেসো নিতে।
তাহনিফ এসপ্রেসো এর আগে টেস্ট
করেনি। হুমায়ূন আহমেদের কোন
বইয়ে যেন নায়িকার
এসপ্রেসো বানানোর পারদর্শীতার
কথা বলা হয়েছিল। তাহনিফ ভাবল
এমন লেখকের উপন্যাসের
নায়িকা যখন
এসপ্রেসো বানাতো তবে অবশ্যই
তা ভাল হওয়ার কথা। আর
রাইসা যেহেতু বলছে ডাবল
এসপ্রেসো নিতে তো নেয়াই যায়।
তাহনিফ ডাবল এসপ্রেসো অর্ডার
দিয়ে দিল। ওয়েটার বলল কিঞ্চিত
বিটার হতে পারে। সামান্য
বিটারে কিই বা আসে যায়।
রাইসা স্লাইস কেক নিল।
একটু পর ওয়েটার কফির সাথে এক গ্লাস
পানি এনে তাহনিফের
সামনে এনে রাখল। পানির
কার্যকারিতা ঠিক বুঝা গেল না।
তাহনিফ কফিতে চুমুক দিল। টেস্টটার
জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সুন্দর
করে ইংরেজিতে বিটার না।
বাংলা ভাষায় তিতা, শুধু
তিতা না,অতিরিক্ত
বাড়াবাড়ি রকমের তিতা।
তাহনিফের মুখে তিতার কোন ছাপ
পড়ল না। পাশের পানির
গ্লাসটা তুলে চুমুক দিল।
পানিটা মিষ্টি লাগল। কিন্তু
পানিতে চিনি নেই।
তিতা খাওয়ার
কারণে পানি মিষ্টি লাগছে।
পানির
কার্যকারিতা এতক্ষণে বুঝতে পারল
তাহনিফ। রাইসা কথা বলে যাচ্ছে।
তাহনিফ সহজ
ভঙ্গিতে কথা শুনে যাচ্ছে। এক চুমুক
এক্সপ্রেসো এক চুমুক পানি।
এসপ্রেসোতে চুমুকের পর এক চুমুক
পানি এর টেস্ট আনএক্সপ্রেসেবল!
কফি অর্ধেকের বেশি শেষ
এতক্ষণে রাইসা কিছু খেয়াল করল
মনে হয়।
-এই তুমি এভাবে পানি খাচ্ছ কেন।
-এমনি।
-না ঘাপলা আছে। কফিতে সমস্যা?
-নাহ্ তেমন না। তবে একটু বিটার।
-মানে! কফিতো একটু এমনই হয়।
-না মানে তিতা।
-হ্যাহ্ কেমন তিতা?
-বুঝানো সম্ভব না অনেক তিতা।
-দাও দেখি...
তাহনিফ
ভাবে নি যে রাইসা কফিতে চুমুক
দেবে। কিন্তু চুমুক দিল। রাইসার
চেহারাটা দেখার মত হয়েছে।
পুরোটে মুখে বিস্ময়ের ছাপ।
রাইসা তাহনিফের দিকে করুণ
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তাহনিফ
হাসছে মৃদু মৃদু।
-তুমি এতক্ষণ এই কফি খাচ্ছিলা?
-হ্যা সমস্যা কি! শেষ কর না বাকিটুকু।
তাহনিফের চোখে কিছুটা কৌতুক।
রাইসা পানি চায়নি অবশ্য এখনো।
কি মনে করে বাকি কফিটুকুও শেষ
করে ফেলল রাইসা। কাপ রেখেই কেক
খাওয়া শুরু করল।
রাইসা বলতে লাগল,"এত তিতা।
তুমি কীভাবে এটা চুমুক দিচ্ছিলা?
তাও আবার অল্প অল্প করে।!"
তাহনিফের
ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি আরও
বিস্তৃত হল,"তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চুমুক
দিচ্ছিলাম তিতা দূরে থাক, আমার
কাছে তো মিষ্টি লাগছিল!"
"উফ্ তুমি এত কথা শিখসো না...."
রাইসার মুখে কিঞ্চিত
লজ্জা লেগে আছে যেন।
তাহনিফের ঠোঁটের কোণে মৃদু
হাসি ফুটে উঠল।
স্মৃতিটা পুনরোমন্থনের জন্য আবার
আগের মত রেখে দিল!
-”কফির সাথে জুড়ে থাকা...”
-তাহমিদ উল্লাস
-১২.০৫.১৪
©somewhere in net ltd.