নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
বেশি না, বছর সাতেক আগেও বাংলাদেশের কূটনীতিকরা তাদের বিদেশী বন্ধুদের গর্ব করে বলতেন যে, ক্ষুদ্র ও গরীব দেশ হলেও বাংলাদেশ পৃথিবীকে দুটো অভিনব জিনিষ দিয়েছে; মাইক্রোক্রেডিট এবং কেয়ারটেকার সরকার। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যে যে মানুষটি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, আমাদের দেশের গৌরব ডক্টর ইউনূস, তাঁর পরিণতি দুঃখজনক; তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নাকি এখন অপাংক্তেয়। একটি অজনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার উদগ্র প্রবণতার জন্য আমরা কি আমাদের সকল জাতীয় অর্জন বিসর্জন দেবো?
বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি ওয়েস্টমিনস্টার গণতন্ত্রের সাথে খাপ খায় না! এরকম ঔপনিবেশিক চেতনায় পর্যবসিত হলে রাজনীতি ছেড়ে দেয়াটাই শ্রেয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করবে এদেশের জনগণ। আমাদের জনগণ যদি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আছে তাহলে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখতে হবে, রাজনীতিবিদ হিসেবে এটাই কি আমাদের দায়িত্ব নয়? আরেকটি দেশের গণতান্ত্রিক রীতির সাথে সঙ্গতি রাখার জন্য কি আমি আমার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যাবো? সংবিধান, স্টিফেন কিং এর লেখা কোনও বেস্ট সেলার না যে অন্য সব লেখককে একই ছাঁচে লিখে যশ অর্জন করতে হবে। লন্ডনে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে ছাতা ধরা মানসিক বৈকল্যের লক্ষণ, বিচক্ষণতার না। ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইল ডেমোক্রেসিতে কিন্তু রানী প্রটেস্টান্ট ক্রিশ্চিয়ানিটির রক্ষক। আমাদেরও কি তাহলে রাজা-রানী বানিয়ে ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব সোপর্দ করতে হবে কাউকে?
এমন মনে করাটা অমূলক যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক কিংবা আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশেও নির্বাচনের এক মাস আগে গভর্নর জেনারেল পার্লামেন্ট ভেঙে দেন এবং সরকার কেয়ারটেকার মোডে চলে যায়। উল্লেখ্য, একশো বছরের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন কোনও সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয় না যেহেতু কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা অসম্ভব একটি ব্যাপার। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে সরকারী দলের অধীনে নির্বাচন হলে তার ফলাফল কী হয়, সেটা আমরা দেখেছি ২০০৯-এর উপজেলা নির্বাচনে, ২০১০ সালের ভোলা-৩ উপনির্বাচনে এবং সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা জনগণের রায়কে শুধু উল্টেই দেয়নি, সহিংসতা এমনকি হত্যার মাধ্যমে সাধারণ জনতাকে করেছে ভীতসন্ত্রস্ত এবং অসহায়। সবচেয়ে হাস্যকর হোল যে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী সরকার নাকি শুধু রূটিন অনুযায়ী কাজ করবেন? গত আড়াই বছরের কার্যক্রম তো বলছে যে আওয়ামী সরকারের রুটিনই হচ্ছে নির্বাচন রিগ করা। এমন মনে করার কোনও কারণ আছে কি যে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সম্পূর্ণ দলীয়কৃত প্রশাসন কোনও এক মন্ত্রবলে “বিবেক তাড়িত” হয়ে নির্বাচনকে আওয়ামী প্রভাব মুক্ত করবেন; কিংবা আওয়ামী লীগের রামদাসজ্জিত সন্ত্রাসীরা রাতারাতি সব সুশীল হয়ে যাবেন ?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আমাদের আন্দোলন কোনমতেই ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন না। আমি পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে ২০০৯-এর নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য আমাদের দলের ভেতরে প্রবল চাপ ছিল। আমরা ভুলি নি বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করার হীন প্রচেষ্টায় কীরকম মরিয়া হয়ে উঠেছিল। নির্বাচনের তিন মাস আগেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো, সম্পূর্ণ দলীয় প্রচেষ্টায় তিল তিল করে পাঁচ বছর ধরে আমরা যে বাংলাদেশব্যাপী ইনফরমেশান বেজ গড়ে তুলেছিলাম, তদন্তের নামে সেই মহামূল্যবান গবেষণা হাওয়া ভবন থেকে লুণ্ঠন করা হয়েছিলো যার হদিস আমরা আজও পাই নি। নিশ্চিত পরিণতি জেনেও আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য না, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। আজও, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আমাদের যে সংগ্রাম সেটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার জরিপে উঠে এসেছে যে শতকরা অন্যূন ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মতামত না নিয়ে সমগ্র দেশবাসীর মতামত নিলে এই সংখ্যা শতকরা ৯৫ জনের কম হবে না বলে আমার স্থির বিশ্বাস। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্যেই কি আমরা রাজনীতি করি না ?
পাঠক, দয়া করে ভাববেন না যে আপনাদের অসুবিধা অনুধাবন করতে আমরা সক্ষম নই। আমরা হরতালের পক্ষে নই, লগি-বৈঠার রাজনীতিতেও আমাদের রুচি নেই। কিন্তু আপনারা নিজেদের জিজ্ঞেস করুন, এই সরকার কি কোনও সভ্য প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাস করে? আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তারা তাদের সন্ত্রাসী ও পুলিশদের লেলিয়ে দেয়, আমাদের নেতাদের তারা জনসম্মুখে পিটিয়ে হত্যা করে নইলে গুম করে ফেলে যার খোঁজ পাওয়া যায় না মাসের পর মাস, সংসদ ভবনের সামনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জয়নুল আবেদিন ফারুককে পিটিয়ে গনতন্ত্রকে লাঞ্ছিত করা হয়, বিনা বিচারে আমাদের কর্মীদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে একের পর এক। আজ আমরা যদি এর বিপক্ষে আন্দোলন না করি কাল হয়তো আপনাকেও বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে। আমি তাই আপনাদের অনুরোধ করবো এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য। কাল হয়তো সে সুযোগটুকুও আপনি পাবেন না। আমি আবারও বলবো, আমাদের এ আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার আন্দোলন না, এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের যে কোনও রায় আমরা মাথা পেতে নেবো।
পাঠক, শেষ করছি প্রোক্রাস্টীজের গল্প দিয়ে। গ্রীক মিথলজিতে প্রোক্রাস্টীজ বলে এক অদ্ভুত কর্মকারের উল্লেখ আছে, যার বাড়ী ছিল এথেন্স ও ইলুসিসের মাঝপথে। সাধারণ পথিকদের রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ করে সে তার বিছানায় শোওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলত যে এই বিশেষ বিছানায় ঘুমালে মানুষ এক জাদুবলে ঠিক এই বিছানার সমান লম্বা হয়ে যায়। যে তথ্যটি সে কাউকে জানাতো না সেটা হোল এই ‘জাদুর’ পদ্ধতি। যারা সে বিছানার চাইতে লম্বা, প্রোক্রাস্টীজ তাদের পা কেটে দিতো, আর বিছানার চেয়ে খাটো হলে তাদের পা টেনে বিছানার সমান লম্বা করে মেরে ফেলত।
আওয়ামী লীগ, প্রোক্রাস্টীজের বিছানায় ফেলে গনতন্ত্রকে যেন ঠিক এরকম করেই যেখানে নিজেদের প্রয়োজন সেখানে লম্বা করছে আর যেখানে প্রয়োজন সেখানে কেটে ফেলছে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে প্রোক্রাস্টীজের জন্যে থিসিউসও থাকে। পোয়েটিক জাস্টিস হোল; প্রোক্রাস্টীজের ত্রাসের রাজত্ব শেষ হয়েছিল তার নিজেরই বিছানাতেই, গ্রীক মিথলজির নায়ক থিসিউসের হাতে! আমি আজো বিশ্বাস করি, জনতাই হোল আমাদের আসল থিসিউস।
Click This Link
ফখরুল ইসলাম সাহেবের লেখাটা অনেক দিন পর পড়লাম, ভাল লাগল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগবে।
©somewhere in net ltd.