নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই কি আমাদের প্রাপ্য ছিল

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬

আগে কখনও কোনো আদালতে যাইনি। আদালতের ভিতরটা তাই দেখা হয়নি কখনও। মাও হয়তো কখনও যাননি। সাক্ষ্য প্রদানের আগের দিন মাকে সাহস দিতে ফোন করলাম; বললাম পাশে থাকব তার; বললাম তাকে নিয়ে আমার অনেক গর্ব। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন- “যাই মা, সাক্ষ্য দিয়ে আসি। শহীদের স্ত্রী হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রমাণ করে আসি নিজামী যুদ্ধাপরাধী।’’



আমার মা শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী আলবদর হাইকমান্ড মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩তম সাক্ষী ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ১১ ও ১২ জুলাই, ২০১৩। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমাদের বিয়াল্লিশ বছরের সংগ্রামের চুড়ান্ত ফসল এ বিচার। অনেক বেদনার পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর এক ঐতিহাসিক মূহূর্ত।



আমার বুকটা হু হু করে উঠল। কাঠগড়ায়? কেন? আমি আদালতে কখনও যাইনি, সাক্ষীর যে কাঠগড়া থাকে তা ছিল অজানা। আমার বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হল। আর কত? আর কত কষ্ট করলে দেশের প্রতি দায় আমাদের শেষ হবে? আর কী কী করলে দেশকে ভালবাসার পূর্ণমূল্য সুদে-আসলে পরিশোধিত হবে?



বিয়াল্লিশ বছরে যে রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, হতাশা, দুঃখ, যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা, আশা-নিরাশা, স্বপ্ন বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছি- সব আমাকে ভেঙেচুরে দিল। নির্ঘুম কাটল রাত। আদালতে যেতে চেয়েছিলাম মার হাত শক্ত করে ধরে রাখার জন্য। কিন্তু আদালতে একটি পা ফেলার আগেই, মা সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই আমি হয়ে উঠলাম পুরোপুরি বিধ্বস্ত একজন মানুষ।



কিন্তু মা ছিলেন শান্ত, স্থির, হয়তো কিছুটা দুঃখী, কিন্তু সংকল্পে অবিচল। তিনি গভীরভাবে ধর্মানুরাগী। ন্যায়বিচারের উপর তার আস্থা অবিচল। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের জন্য যা করা প্রয়োজন তাই করতে তিনি সদাপ্রস্তুত।



আমাদের বহু নেতৃবুন্দ আছেন যাদের সঙ্গে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী জাতীয় রাজাকার-আলবদরের পাশাপাশি বসা হাস্যোজ্বল চেহারার ছবি, করমর্দনের ছবি আমাদের সকলেরই দেখা পত্রপত্রিকায়। আমরা চুনোপুঁটি- আদর্শের জন্য রক্ত দেওয়া নিরীহ, নির্বোধ জনগণ। সুতরাং নিজামীর মতো উচ্চমার্গের রাজাকারকে দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। সামনে থেকে এমন একজন নিকৃষ্ট লোককে দেখতে হবে, তার চোখের দিকে তাকাতে হবে- ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠছিল। মনে হচ্ছিল, হায়, আমি এতবড় দুর্ভাগা!



মাকে নিয়ে আদালতকক্ষে যখন ঢুকলাম, প্রথমেই চোখ গেল সেই সাক্ষীর কাঠগড়ার দিকে। খুবই বেদনাদায়ক লাগল এটা। আমাদের সঙ্গে ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা মুনতাসীর মামুন, কাজী মুকুল, মমতাজ লতীফ। ছিলেন প্রজন্ম ’৭১ এর শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেনের পুত্রদ্বয়, তৌহিদ রেজা নূর, শাহীন রেজা নূর। তৌহিদ ভাইকে বললাম আমার ক্ষোভের কথা। তিনি স্থির কণ্ঠে বললেন- ‘‘এটাই বিচারিক প্রক্রিয়া।’’



আমার বুক ভেঙে হাহাকার করতে লাগল। হায় বিচার! হায় বাংলাদেশ! তোমার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি এমন এক অপরাধের জন্য যার রক্তের দাগ এখনও মুছে যায়নি, বীরাঙ্গনারা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে অভিশপ্ত জীবন, এখনও বেঁচে আছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। রক্তের দাগ তো মুছে যায়নি। তাও আরও প্রমাণ করার প্রয়োজন আছে? কেন সমস্বরে সারাদেশ বলে না এরা খুনি?



নিজেকে প্রবোধ দিই। বিচারিক কার্যপ্রণালী মেনে নিতেই হবে। তবে তাই সই বাংলাদেশ। যা করতে হয় তোমার জন্য সব করব। তবুও তুমি মুক্ত হও এই যুদ্ধাপরাধীদের বিষবাষ্প থেকে। তাও তুমি গড়ে ওঠো সোনার বাংলা হিসেবে।



মা ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন সাক্ষীর কাঠগড়ার দিকে। ছোটখাট মানুষটা দৃঢ়, ঋজুভঙ্গিতে দাঁড়ালেন। স্পষ্ট ধীর কণ্ঠে তার সাক্ষ্যপ্রদান শুরু করলেন। চল্লিশ বছরের শিক্ষকতার ছাপ তার প্রতিটি উচ্চারণে। আমার বুকটা গর্বে ভরে গেল। সাক্ষীর কাঠগড়াকে তুচ্ছ লাগল আমার মার ব্যক্তিত্বের কাছে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। আসামির কাঠগড়ায় নিজামী টুপি পড়ে বসে আছেন। সাক্ষ্য চলতে চলতে এক সময় তাকে বেশ বিচলিত মনে হল, টুপি খুলে ফেললেন। তার সামনে বসা দুই হিজাবপরা মহিলা। শুনলাম একজন নিজামীর স্ত্রী, অন্যজন সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী। পাশে খুব সম্ভবত নিজামীর ছেলে- সরীসৃপের মতো চোখ করে তাকিয়ে শুনছিলেন নিজামীর অপকর্মের কথা। কী নির্লজ্জ, কী নিরাবেগ ওরা!



ঘৃণায় আমার গা রি-রি করে উঠল। বারবারই তাকাচ্ছিলাম ওদের দিকে। অবাক হয়ে ভাবছিলাম আপনজন হলেও কি তার অপরাধও সমর্থন করতে হবে? শিক্ষা কি ওদের মানবতাবোধ শেখায়নি? ধর্মের যে যুক্তি তারা দেয় সে কথা ভেবে ভাবি, যখন তারা নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সামনে নতজানু হয় তখনও কি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ও অপকর্মের কথা মনে পড়ে না? ৩০ লাখ শহীদ, ৪ লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বত, লাখ লাখ এতিমের দীর্ঘশ্বাসের যে অভিশাপ তা কি তাদের বিচলিত, লজ্জিত করে না?



চোখ ফিরাই আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দিকে। নিজেকে নির্বোধ মনে হয়। এত ঘা খাওয়ার পরও আজও বিশ্বাস করতে কেন আমার কষ্ট হয় যে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদরদের পক্ষে সাফাই গাইবার লোক আছে? ঘৃণাভরে তাকিয়ে থাকি। খোঁজ নেই এরা কারা, শুনি বেশিরভাগ জামায়াতের লোক, কিছু আছে বিএনপি। একজনের কথা শুনলাম নিতান্তই অনেক টাকা পাচ্ছেন বলে নিজামীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।



আইনজীবীদের পিছনের সারির তরুণ মুখগুলোর দিকে তাকাই। এরা কেন এত অল্পবয়সে অতীতের একটি সর্বজ্ঞাত অপরাধ ও অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন? এদের বাবা-মা কি একাত্তর দেখেনি! শুনলাম সকলেই অনেক টাকা পাচ্ছেন; এদের অনেকেই জামায়াতের টাকায় ব্যারিষ্টারি পড়ে এসেছেন। নিজেদের ন্যায়-অন্যায়ের বোধ কি এতই ঠুনকো, এত সহজেই বিক্রয়যোগ্য? এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার টিভি টকশোতে বেশ সরব। হায়, যে তরুণের হওয়ার কথা ছিল তারুণ্যদীপ্ত দৃঢ় দেশপ্রেমিক, সে কোন শিক্ষায় এমন হল?



ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলল। প্রতিটি বাক্য কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করার জন্য সময় দিতে হয়। খুব ধীরগতিতে সাক্ষ্যপ্রদান এগিয়ে চলল। মার শান্ত কণ্ঠস্বর শুনতে শুনতে আদালতে বসে আমার মনটা স্থিত হয়ে আসে। রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, দুঃখ ছাপিয়ে সাফল্য ও গর্বের অনুভূতি মনকে ছেয়ে ফেলে। এই সাক্ষীর কাঠগড়া, এ আদালত এত আমাদের অতিকাঙ্খিত বিজয়ের রূপ। আমি একে ভুলভাবে গ্রহণ করছি কেন? বিয়াল্লিশ বছরে রাজপথের শ্লোগান কি এটাই ছিল না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই? এ বিচার কি আমাদের কল্পনার অতীত এক অভূতপূর্ব বিজয় নয়?



আজ ওই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার চাইব- এটি তো কামনা করেছি সারাজীবন, স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু বাস্তবের এ বাংলাদেশে আমি নিজে অন্তত পুরোপুরি কখনও-ই বিশ্বাস করিনি এমন দিন আসবে। আজ এসেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ওই আদালতে বসে আমি অনুধাবন করলাম এ সাক্ষ্য, এ বিচার আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের চুড়ান্ত পরিণতি, আমাদের কাঙ্খিত বিজয়।



ঠিক এমনটি যখন ভাবছি তখন যোহরের আযানের সময় হল। আমার কাছে ওই আযানকে যেন দৈববাণী মনে হল। মনে হল উপরে শেষ বিচারের বিচারক, নিচে মর্তের বিচারক- আমাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা তোমাদের কাছে সমর্পণ করলাম। আল্লাহ তুমি বিচার কর। মর্তের বিচারকদের সঠিক বিচার করার সাহস ও প্রজ্ঞা দাও।



মার সাক্ষ্য প্রদানের শেষে অনিবার্যভাবে আসে বাবাকে ধরে নিয়ে যাওযার ঘটনা। মা অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে আবার সেই ঘটনা বিধৃত করলেন। সারা আদালত কক্ষে ওই কিছু কিছু লোক ছাড়া একটি চোখও শুষ্ক থাকেনি। সকলে কেঁদেছেন, সেই সঙ্গে কেঁদেছে চার দশকের না-পাওয়া বিচারের বাণী। এমন কান্না আজও ফিরে ফিরে বাজে বাংলার ঘরে ঘরে। শেষ বিচারের দিনও কেঁদে ফিরবে আল্লাহর আরশ জুড়ে। অপরাধীরা কি সেটাও ভয় পায় না?



লেখাটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু যখন এর শেষাংষ লিখছি তখন গোলাম আযমের রায় প্রকাশিত হল। সব্বোর্চ যে পাপী সে কিনা পেল বয়সের বিশেষ বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড! এ কী পরিহাস! বুকের ভিতর একটি প্রশ্নই তীব্র চিৎকারে ঘুরে ঘরে আসছে, এই কি প্রাপ্য ছিল আমাদের, ৩০ লাখ শহীদের আত্মার, ৪ লাখ ধর্ষিত মা-বোনের?



বলা হচ্ছে, গোলাম আযম যে দোষী তা তো এবার আইন দ্বারা প্রমাণিত হল। তার ফাঁসিই হওয়া উচিত ছিল, ওটাই আদালত বলেছেন। তার মানে কী? এতে আমাদের খুশি হওয়া উচিত? সর্বজনস্বীকৃত এক পাপীর পাপ প্রমাণিত হয়েছে। শাস্তির একটা দণ্ড নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু বয়স বা অন্য কোনো বিবেচনায় সে অনুকম্পা পেতে পারে না।



সে ছিল মাস্টারমাইন্ড। আর সে জীবনের বাকি দিনগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে দুধকলা খাবে আর আমরা তা মেনে নেব? এর জন্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সাক্ষ্য দিতে যাওয়া? সাক্ষী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইকে মেরে ফেলা হল, সাক্ষীদের ক্রমাগত ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুভাকাঙ্খীরা সমানে বলেই চলেছেন মাকে দেখে রেখো, নিজে সাবধানে থেকো। সাক্ষীদের রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেকেই সাক্ষ্য দিতে চাচ্ছেন না। মা দিয়েছেন। বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে, মেনে নিয়েই সাক্ষী দেওয়া । আমিও হয়তো মনে মনে বাবার মতো মাকেও দেশের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছি।



এ যন্ত্রণা কি কেউ বুঝবে ?



মার সাক্ষ্যপ্রদান শেষ হয় প্রথম দিন। ২য় দিন আসামমিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা। জেরা করতে গিয়ে চতুর আইনজীবী কথার মারপ্যাঁচে আমার সদা সত্যভাষী মাকে বিব্রত ও মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চেষ্টা করবেন। ভয় ও শঙ্কার তীব্র যন্ত্রণায় কাটে আরেকটি ঘুমহীন রাত। পরদিন আদালতে ঢোকার আগে একজন বন্ধুর শুভকামনার উত্তরে আমি লিখলাম, “এই কষ্ট আর ভালো লাগে না, আদর্শের এই দায়িত্বের বোঝা ঠেলতে ঠেলতে আমি ক্লান্ত।’’



সেদিন ছিল প্রথম রোজার দিন। একফোঁটা পানি না খেয়ে একাত্তর বছর বয়সী আমার মা সাক্ষীর কাঠগড়ায় বসে শান্ত স্থির কণ্ঠে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। আইনজীবী অনেক চেষ্টা করলেন বিভিন্ন ফাঁকফোঁকর খুঁজে পাওয়ার জন্য। কিন্তু কীভাবে পাবেন?



মাকে নিয়ে যখন আদালত থেকে বের হয়ে আসি তখন মনে হচ্ছিল যতটুকু যা দেওয়ার, যা করার ছিল আমাদের, আমার মার, আমার, আমার বোনের, আমরা করেছি। দেশ, এবার বাকিটা তুমি কর। শাস্তি দাও এ যুদ্ধাপরাধীদের, মুক্ত কর বাংলাকে এ যুদ্ধাপরাধীদের কলুষিত রাজনীতি থেকে।



আজ গোলাম আযমের রায় আমাকে ভিন্ন শিক্ষা দিল। বুঝিয়ে দিল অনেক পথ হাঁটা বাকি আছে এখনও, অনেক কাজ আছে বাকি। আমি বুঝে নিয়েছি দেশের জন্য ত্যাগ, আদর্শের জন্য সংগ্রাম- এই আমাদের নিয়তি। আরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হাসিমুখে সইতে হবে। মন শক্ত করে ফেলেছি।



তাই হোক, তবে তাই হোক। চলুন শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।



Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.