নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
আমি যখন প্রবাসে প্রথম পা রাখি তখন আমার বয়স ১৮ বছর ১ মাস ২দিন, যদিও ট্রেনিং শুরু করি আরো ৩ মাস আগে। তবে কর্ম জীবন শুরু করতে হয় ১৭ ছুই ছুই করতেই, কত বয়সে কাজ শুরু করলাম তার জন্য আমার একটুকু মাথা ব্যাথা নেই। কাজকে কখনো বুঝা মনে করিনি, সব সময় বন্ধুর মত করে নিয়েছি এমনকি আজও নিচ্ছি।
সিঙ্গাপুর আসার ৬ মাস পর বড় বোনের বিয়ে হয়, আমি শুধু ফোনেই কথা বলতে পেরেছি। আজকের মত তখন ভিডিও কলের সুবিধা ছিলনা যে বোন ভগ্নিপতিকে দেখব। তারো কিছুদিন পর এক দাদু মারা গেল হাজার মাইল দূরে থেকে শুধু চোখের পানি ফেলেছি দেখতে পারিনি।
১৬ মাস পর দেশে ফিরে গেলাম ছিলাম প্রায় ৪মাস, এই ৪টা মাস আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জীবন কি এবং কাকে বলে।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার সিঙ্গাপুর ফিরে এলাম, এবার শুরু হল বাস্তব জীবনের কঠিন সময়টা। মাত্র ১৭ দিন পর ছোট কাকা মারা গেলেন, উনি শুধু আমার কাকাই ছিলেন না পরম বন্ধুও বটে। মা পাখি যেমন তার ডানার নিচে বাচ্চা গুলিকে পরম মমতায় লোকিয়ে রাখে, ঠিক কাকাও আমাকে এইভাবে লোকিয়ে রাখতেন। ঝড় বৃষ্টি সব কিছু কাকা নিজের শরীর দিয়ে আটকিয়ে দিতেন। কখনো কোন কিছুতে সমস্যা হলে, কাকা মাথায় হাতদিয়ে বলতেন "কিরে বেটা, এত চিন্তা করিস কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে"
বলতে গেলে এই কাকা ছিল আমার আত্না, হৃদয়ের একটা বিশাল অংশ। সেই প্রিয় মানুষটা চলে গেল আমি হাজার মাইল দূরে বসে শুধু নিরবে বিদায় দিলাম। বিশ্বাস করোন আমি সেইদিন কান্না করিনি, শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রিয় মানুষটার খুজ করে ছিলাম। কিন্তু পাইনি.............
সিঙ্গাপুর আসার পরদিনই বিডিয়ার বিদ্রোহে মারা গেছেন আমাদের গ্রামের একজন কর্নেল "কর্নেল এমদাদ", এই মানুষটাও আমাকে আর্মিতে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ ছিল তাই পাইনি কিন্তু উনার চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলনা। দেখা হয়নি উনার সাথেও, এখানেও আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বোবা কান্না আমাকে চিৎকার করতেও দেইনি।
এরিমধ্যে ছোট বোনের বিয়ে হল, পরিবারের অনেক অনুষ্ঠান হাসি কান্না অতিক্রম করল। কোন কিছুতেই আমি সাক্ষী হতে পারলামনা, শুধু রেডিও শ্রোতার মত মোবাইলে শুনে গেলাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেল্লাম....................
দেখতে দেখতে ফুফু মারা গেল, ফুফা মারা গেল, দাদা মারা গেল। এমনি করে অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেল, আমি শ্রোতা হয়েই থাকলাম।
সবকিছু উলট পালট করে দিল শনিবার রাত্রে মাহমুদ ভাইয়ের মৃত্যুটা, এমন একজন মানুষের এইভাবে চলে যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারলামনা। জীবনের শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না, এই বাস্তবতাটা কি করে মেনেন নেই? জানিনা কতদিন লাগবে স্বাভাবিক হতে?
একটা ঘৃণার সৃষ্টি হয়ে গেছে এই প্রবাস জীবনটা উপর...............
প্রিয় সব মানুষ এক এক করে চলে যাচ্ছে, আমি শুধু শুনেই যাচ্ছি কাউকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনা। পরিবারের আনন্দ বেদনা কোন কিছুতেই থাকতে পারিনা, কেবলই পরিবারের চাহিদা পুরনের জন্য একজন মেশিন হয়ে থাকার কোন মানে হয়না।
ভাবছেন, পরিবারের জন্য এতকিছু করার পরর নিশ্চয় ভাল একটা প্রতিদান পাব? জ্বী আসলেই পাব, বিশাল অশ্বডিম্ব। আপনার চারিপাশের প্রবাসীদের ফিরে আসার পর পরিবারের ব্যবহার একটু দেখুন তাখলেই বুঝতে পারবেন।
শুধু একটা দোয়া করি, আমার কোন শত্রুও যেন এই অবিশপ্ত প্রবাস জীবন না পাই। ভাল থাকুক দেশের সবাই, ভাল থাকুক প্রিয় সব মানুষ প্রিয় মাতৃভূমিতে।
আর আমরা প্রবাসীরা কোন কিছু না পাওয়ার বেদনাতে দিনকি দিন নীল হতে থাকি...................
৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ভাই আমি বলিনি দেশে থাকলে এরা যেতনা কিন্তু প্রিয় মানুষগুলির শেষ যাত্রায় না থাকার যন্ত্রনা কতটুকু তা বুঝিয়ে বলা যাবেনা।
ভাই আমার পকেটে প্রচুর টাকা আসেনি তবে যতটুকু এসেছে তাতে শুকরিয়া,
ইচ্ছে করলেই দেশে চলে আসা যায়না, মানুষ জেলে থাকতে বাধ্য হয় তারচেয়ে বেশি বাধ্য হয় বিদেশ থাকতে। কেননা তার দিকে তাকিয়ে থাকে একটা সম্পূর্ণ পরিবার।
বিদেশের কষ্টটা দেশের কাওকে বুঝিয়ে বলা যাবেনা...........
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১৮
ক্লে ডল বলেছেন: সৃষ্টিকর্তা কখনো বেইনসাফি করেন না। আপনার কষ্টের প্রতিদান নিশ্চয় তিনি দেবেন!
৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪০
মিঃ অলিম্পিক বলেছেন: কি কমু..!!! বুঝতেছিনা.....
৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯
শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার লেখটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হলো।
//ভাবছেন, পরিবারের জন্য এতকিছু করার পরর নিশ্চয় ভাল একটা প্রতিদান পাব? জ্বী আসলেই পাব, বিশাল অশ্বডিম্ব। আপনার চারিপাশের প্রবাসীদের ফিরে আসার পর পরিবারের ব্যবহার একটু দেখুন তাখলেই বুঝতে পারবেন।//
তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, ভাল মানুষদের আল্লাহ এমন জায়গা থেকে সাহায্য করেন, যা উনি কল্পনাও করেননি।
ভাল থাকুন। সবসময়।
৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: মাহমুদ ভাই অকাল মৃত্যুটা মেনে নিতে সত্যিই আমাদের কষ্ট হচ্ছে, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভাজন ছিলেন তিনি।
৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আপনার প্রবাস জীবনের কষ্ট কথা শুনে সত্যিই খারাপ লাগলো, আশা করছি এর প্রতিদান পাবেন।
৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪
অগ্নিবেশ বলেছেন: দেশে থাকলে আপনি সামুতে লিখতেন "কেন দেশে থাকতে ঘৃণা করেন" ।
৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এটা কম বেশী সব প্রবাসীরই যন্ত্রণা। আমি নিজের বোন সহ ৭ জনের বিয়েতে(সবাই মারাত্মক ক্লোজ) থাকতে পারিনি।
ঢাকাবাসীর মন্তব্যে বলতে চাই - প্রবাসীরা আসতে চায় দেশে। কিন্তু দেশে কী করবে সেটাই দুশ্চিন্তা। দেশে যদি কেউ ২০ হাজার টাকার চাকুরি পায় ৫০% প্রবাসী আর বিদেশ করবে না...
৯| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: যারা চলে গেছেন তারা আপনি দেশে থাকলেও যেতেন। বিদেশে বসে প্রচুর টাকা আয় শুরু করার পর অনেকেই এধরণের কথা বার্তা বলেন, এটা অনেকটা নদীর এপার কহে...। এদেশে থাকার সময় কিন্তু আপনি মনে হয় প্রতিদিন দৌড়েছেন মাইলকে মাইল গাড়িতে বাসে ঐ বিদেশে যাবার সুযোগের জন্য। বিদশে চলে যাবার পর পকেটে প্রচুর অর্থ আসা শুরু করার পর পর এসব নাটকীয় সংলাপ তৈরী হতেই পারে! 'প্রবাসীরা কিছু না পাওয়ার বেদনাতে... এসব কথা শুধুই কথার কথা'! অত নিরাসক্তি অত অভক্তি থাকলে চলে আসুন দেশে । কেউ আপনাকে আটকাবেনা। যে বিদেশ আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে যার জন্য আপনি অবসর সময়ে সামুতে লিখতে পারছেন আরামসে খাচ্ছেন দাচ্ছেন ভোগ করছেন তাকে অতো অবহেলাটা সঠিক নয় বলেই মনে হয়। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।