নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিশিকে বিয়ে করা হলনা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৩৩



নিশিদের পরিবার থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেয়া হল, যদিও আমি সাথে ছিলাম না তবে বাবা তাই বল্ল। তবে কেন ফিরিয়ে দেয়া হল এই বিষয়ে ক্লিয়ার কিছু বলেনি, বাবার কাছে অনেকবার জানতে চাইলাম কিন্তু বাবা এর বেশি কিছু বলতে আগ্রহী হলনা। কয়েকবার জানতে চাইলে এক প্রকার ধমক দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
নিশিদের পরিবার আমার সাথে উনাদের মেয়ের বিয়ে দেবেনা তাতে তেমন কোন আপত্তি নেই কিন্তু কেন দিচ্ছেনা এই বিষয়টা নিশ্চয় আমাকে জানাতে পারে, অনেক চিন্তা করে নিশির ভাইয়ানির (নিশি তার ভাইকে ভাইয়ানি বলেই ডাকে) সাথে দেখা করতে গেলাম। যেহেতু ফিরিয়ে দিয়েছে সুতরাং আজকে আমার উপস্থিতি উনি নিশ্চয় সুন্দর ভাবে নেবে না, আমি অনেকটা এমন প্রিপারেশন নিয়েই গিয়ছিলাম। কিন্তু ভাইয়ানির কাছে পরিচয় দিতেই উনি খুবই সুন্দর ব্যবহার করলেন, দুপুরে এক সাথে খেলাম অনেক গল্প করে বিকালে ফিরলাম। উনার কথা বার্তা দেখে একটু মনে হইনি কোন কারন ছাড়া আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি উনার ব্যবহারে এতটাই ভালবাসা ছিল আমাকে কোন কিছুতেই ফিরিয়ে দেয়ার মত না। গল্পের এক পর্যায়ে আমি সরাসরি নিশির বিষয়টা টেনে আনলাম, উনি পরিবারের বিষয় বলে এড়িয়ে গেলেন।
বিদায় নেয়ার সময় বাসা থেকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে গেলেন, আজকেই প্রথম এই মানুষটার সাথে পরিচয় কিন্তু মনে হয় খুব নিকটের কেউ নতুবা এমন আপন করে নিতে পারতেন না।
ভাইয়ানির সাথে দেখা করে আসার পর মাথায় শুধু একটা চিন্তায় কাজ করছে নিশির মায়ের সাথে দেখা করা দরকার, পরদিন সকালের ট্রেনে নিশিদের বাড়িতে এসে হাজির হলাম। উনার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল দুইবার খুবই আন্তরিক, আজকেই প্রথম সরাসরি সাক্ষাত হল। পরিচয় দিতেই মাথায় হাত ভুলিয়ে শরীরের খুজ খবর নিলেন। অনেকক্ষন গল্প করলাম কোন একটা কথাতে মনে হয়নি আমাকে এইভাবে সরাসরি রিজেক্ট করেছে, গল্পের ফাকে আমি নিশির বিষয়টা নিয়ে আসলাম। উনি জানালা দিয়ে বাহির তাকালেন তখনো রৌদ্রের তাপটা এত বেশি তীব্র হইনি, কিন্তু আমার কথা কোন উত্তর মনে হয় উনার জানাছিলনা তাই অনেকটা সময় চুপ করে থাকলেন। ঠিক পাঁচ মিনিট পরে খুব শান্ত ভাবে বল্লেন "বাবা এই বিষয়ে আর কথা বলার দরকার নেই"
উনারা যদি এইভাবে ফিরিয়ে দেবে তাখলে আমার কথার জবাব নিশ্চয় থাকতো কিন্তু এমন মলিন হয়ে কথা বলার মানে কি, প্রতিটা শব্দ যেন এক একটা মায়াবী শিকল মনে হচ্ছে। এতদিন শুধু নিশিকে ভালবেসে ছিলাম কিন্তু উর পরিবারের সাথে মিশে মায়াটা কেমন বেড়ে গেল।
অনেক গল্প গুজব করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিশিদের বাসা থেকে বাহির হলাম, যেহেতু নিশির মা তেমন কঠিন কিছু বলেনি তাখলে নিশ্চয় নিশির বাবা নিষেধ করেছে। এবার আমার মিশন নিশির বাবার সাথে দেখা করা, অনেকটা অপমান হতে হবে এমন প্রিপারেশন নিয়েই উনার অফিসে গেলাম। ভদ্রলোক পরিচয় দেয়ার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লেন "তুমি শরিফ?" আমি কিছুটা অবাক হলাম যে দুইদিন পূর্বে আমার সাথে উনার মেয়র বিয়ে দেবেনা বলে সরাসরি ফিরিয়ে দিয়েছে অথচ সেই মানুষটাই আমাকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে। নিশিদের পরিবারের সাথে যতই মিশছি ততই অবাক হচ্ছি, আচ্ছা এরাকি না করে দিয়েছে নাকি বাবা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? কিছুতেই হিসাব মিলাতে পরছিনা।
ভদ্রলোক আমার সাথে গল্প করার জন্য দোকান বন্ধ করে বাহিরে চলে এলেন, যদিও অনেক করে বল্লাম বিকালটাই ব্যবসার সঠিক সময় এই মুহুর্তে দোকান বন্ধ করলেতো ব্যবসার ক্ষতি হবে। উনি সেই স্বাভাবিক ভাবেই বল্লেন "ছেলের সাথে গল্প করতে গিয়ে একদিন ব্যবসা নাই করলাম"
আবারও একটাই প্রশ্ন "সত্যিকি এরা ফিরিয়ে দিয়েছে, নাকি বাবা নিজ থেকেই বলেছে"
সাগর নদী পাহাড় বন এই সব আমার খুব প্রিয় কিন্তু নিশির বাবাতো জানার কথানা, আমাকে অভাক করিয়ে দিয়ে পাশের নদীটার তীরে আমাকে নিয়ে এসে বসলেন। এতটা প্রানবন্ত মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি, উনার ছোট বেলা থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সব গল্পই করলেন।
হঠাৎ করেই মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠল, এই সমস্যাটা আজকাল প্রায় হচ্ছে। ঝিমঝিম করে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়, চোখে ঝাপসা দেখি। কোন কোন সময় একেবারে অন্ধকারে ডুবে যায়। ২/৪/৫ মিনিট পর আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। গতকাল ভাইয়ানির সাথে দেখা করতে গিয়ে মনে হয় বেচারাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে ছিলাম, কথার মাঝেই আমার চারিপাশ ঝাপসা হয়ে আসল আমি চুপ করে বসে থাকলাম। যখন সব কিছু ঠিক হল তাকিয়ে দেখি বেচারা ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, প্রথম দেখাতে যে কেও ভাবতে পারে হইতো উনি এই মাত্র গোসল করে এসেছেন।
নিশিদের বাসায় আসার পরও এই সমস্যাটা হয়েছিল, ছোফাতে বসতে গিয়ে কেমন মাথাটা ঝিম করে উঠল এরপর মনে হয় ২/৩ মিনিট শুধু বসেই ছিলাম। অন্ধকার চারদিকে ঘ্রাস করে ফেলেছিল, মনে হয় কোন মারাত্বক সমস্যা নতুবা এমনটা হওয়ার কারন নেই। ভাবছি আজকে ঢাকা ফিরে সময় পেলে ডাক্তারের কাছে একটু যাব যদিও গত মাসে বাবা সাথে করে ডাক্তারে কাছে নিয়ে গিয়েছিল। খুব সুন্দর মনের একজন ডাক্তার, এমন হেসে হেসে বন্ধুর মত কথা বলা ডাক্তার খুব কমই চোখে পরে।
কি যেন কয়েকটা টেষ্ট করতে দিয়েছিল রিপোর্টও বাবার কাছেই, রোগ নিয়ে আমার তেমন কোন চিন্তা নেই। বড় কোন সমস্যা হলে মারা যাব এইতো?
নদীর পারের সবুজ ঘাষের উপর দিয়ে হাটছিলাম, নিশির বাবা অনেক গল্প শোনাচ্ছেন এমনকি উনি নাকি ভালবেসে বিয়ে করেছেন এই গল্পটাও শুনানেল। এমন সুন্দর বিশ্লেষন না হেসে থাকতে পারিনি, যেই শব্দ করে হাসলাম এমনি চারিপাশ অন্ধকার মনে হতে শুরু করল। এরপর আর তেমন কিছু মনে করতে পারলামনা, এই সমস্যাটা মনে হয় নিশিকে নিয়ে খুব বেশি টেনশন করার জন্য।
পড়ন্ত বিকালে শুরু করা গল্প শেষ হতে হতে প্রায় রাত্র ৯টা বেজে গেছে, উনার অনুরোধে রাত্রটা থেকে গেলাম। নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ালেন বলতে গেলে আমরা দুজনই রান্না করলাম, খিচুরি আর গরুর মাংস। সহজ হিসাবে সবসময় খিচুড়ি রান্নার দায়িত্ব আমি নিয়ে থাকি আজকেও তাই করলাম, শ্বশুর মশাই একটা হাসি দিয়ে উনার কাজ শুরু করলেন আমি খিচুরির আয়োজন করতে থাকলাম।
নিজেদের রান্না করা খাবার খেতে বসে গল্প শেষ হতেই চাইলনা, উনার কথায় মনে হল তিতাস নদীকে উনি প্রেয়সীর চেয়ে বেশি ভালবাসেন। নিজ জেলা এবং এই জেলার মানুষকে উনি কতটা ভালবাসেন সরাসরি না বল্লেও কথার মাঝে ফুটে উঠেছে খুব সুন্দর ভাবে।
রান্না খাওয়া দাওয়া গল্প এ সবে প্রায় রাত্র ২টা বেজে গেছে, কিন্তু সকাল ৭টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠতে হল। ভেবেছিলাম শ্বশুর মসাইকে ডাকবনা কিন্তু আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে উনি আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, জটপট নাস্তা করে আবার নিশিদের বাসার দিকে ছোটলাম। নিশির আপুনার (নিশি বড় বোনকে আপুনা বলে ডাকে) সাথে দেখা করতে হবে। ছোট বোনের বিয়েতে বড় বোনের মতামতটা বিশাল ফ্যাক্ট, সবাই যখন খুব ভাল আচরন করছে সুতরাং আপুনা মনে হয় রাজি হইনি।
আমি নিশিদের বাড়িতে ফিরে আসতে আসতে সকালের সূর্যটা প্রায় মাথার উপরে চলে এসেছে, এক কথায় দুপুর বলা চলে। গেইটের ভিতরে যাচ্ছি এমন সময় পাশ থেকে একজন "শরিফ" বলে ডেকে উঠল, ফিরে তাকাতেই দেখি আপুনা। উনাকে সামনে থেকে আজকেই দেখলাম গতকাল নিশির আম্মু অবশ্যক ছবিতে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
আমি সালাম দিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম, উনি জানতে চাইলেন আমি চিনেছি কিনা। আমি হাসি দিয়েই বল্লাম জ্বী আপুনা খুব ভাল করেই চিনেছি। আমার মুখে আপুনা শব্দটা শুনে উনি কেমন জানি একটা হাসি দিয়ে উঠলেন, হইতো এই নামে নিশি উনাকে ডাকে। বাসার গেইটের পাশেই একটা দোকান আছে, আপুনা নিজেই দুইটা প্রান কোলা নিলেন একেবারেই ঠান্ডা। চুমুক দিতেই উনি বলে উঠলেন "তোমার এই অবস্থায় বেশি ঠান্ডা খেতে কোন সমস্যা নাইতো?"
কিছুটা চমকে উঠলাম, আমার এই অবস্থা মানে কি। চিরচেনা হাসি দিয়ে জানতে চাইলাম আমার আবার কি অবস্থা? উনিও ঠিক হাসি দিয়েই রিপ্লে করলেন "নাহ মানে জানতে চাইলাম ঠান্ডাতে কোন সমস্যা আছে কিনা"
আপুর সাথে অনেক গল্প হল, ছোট সময়ের অনেক মজার গল্প করলেন। সাতার শিখা নিয়ে খুব মজার গল্প আছে উনার, গল্পটা যতটুকু মজার তারচেয়ে অনেক বেশি মজার উনার উপস্থাপনা। হাসি ঠাট্টার মাঝে নিশির বিষয়টা তুলে দরলাম, হাসিমাখা মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেল। এই একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা এরা সবাই আমার সাথে এত সুন্দর কথা বলে কিন্তু নিশির বিষয়টা সমানে আনতেই সবাই কেমন মলিন হয়ে যায়। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপুনার চোখ ছলছল করছে, একটু হলে হইতো চোখের পানি গড়িয়ে পরবে, কিন্তু এমন করার মানে কি? আসলে সমস্যাটা কোথায়?
গল্প শেষ করে আমি চল্লাম যান্ত্রিক জীবনের শহর ঢাকার দিকে, বিকালের ট্রেনে চেপে ঢাকায় পৌছাতে রাত্র প্রায় ১০টা বেজে গেছে। রাতের খাবার খেয়ে বাবার সাথে কিছুটা সময় গল্প করে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালেই বাবাকে প্রথম প্রশ্ন করলাম নিশি বিষয়টা আসলে কি? কেন উরা নিষেধ করেছে? আমার কেন জানি সন্ধেহ হচ্ছে বাবা নিজেই না করতে বলছে। কথা চলার এক পর্যায়ে বাবাও খুব উত্তেজিত হয়ে গেলেন, বলতে গেলে আমিও অনেকটা উত্তেজিত হয়ে পরেছি। অনেক কথা হয়েছে, হইতো বাবাকে কঠিন কিছু বলে ফেলেছি। পাশের রুম থেকে মা খুবই রেগে এসে গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দিয়ে আমার হাতে কিছুদিন পূর্বের ডাক্তারের রিপোর্ট গুলি দিলেন। যদিও বাবা কাগজ গুলি নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আমি জোর করেই কাগজ গুলি নিলাম, একটা একটা কাগজ দেখছি আর জীবনের প্রতি মায়াটা বহুগুন বাড়ছে। সবগুলি কাগজ দেখার পর যতটুকু বুঝতে পারলাম আমি খুব অল্প দিনের মধ্যেই সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি, ডাক্তারের লেখা রোগের নামটা মনে করতে পারছিনা কিন্তু মিনিংটা হল ""ব্রেইনে নাকি কি ধরনের একটা ঝর্ণার মত পানি প্রবাহিত হয়, আমার ব্রেইনে কোন একটা সমস্যাই সচ্ছ পানি গুলি কেমন আঠালো হয়ে গেছে" এই পর্যায় থেকে ফিরে আসার কোন পথ নেই, মৃত্যু খুব নিকটে।
আর কোন কথা বলতে পারলামনা, কেমন একটা হাসি দিয়ে বাবাকে বল্লাম এই কথাটা আগে বল্লেই পারতে শুধু শুধু তোমাদের সবার সাথে আমার রাগারাগি করতে হল।
মা এসে পাশে বসল, মাথায় হাত ভুলিয়ে বল্ল এই পরিস্থিতিতে কি করে এমন একটা মেয়ের জীবন আমরা নষ্ট করব। আমরা প্রথম যেদিন নিশিদের বাসায় যায় ঐদিন ওদের পরিবারও রাজি ছিল কিন্তু ঢাকায় ফিরে ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ওর বাবা মাকে বিস্তারিত বলি যাতে করে উনারা তোকে বলে দেই এরা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজিনা। প্রথম সংবাদটা শুনে নিশির বাবা কেমন ঝিমদিয়ে বসে ছিলেন, মাত্র একটা দিনের ব্যবধানে কত কিছু পাল্টে গেছে। অনেক রিকুয়েষ্ট করলেন তর সাথে উনাদের দেখা করিয়ে দিতে তাই দুইদিনের জন্য উনাদের সাবার সাথে দেখা করতে যেতে আমরা নিষেধ করিনি।
যেন কিছুই হইনি এমন একটা ভাব নিয়ে আমি বাসা থেকে বাহির হয়ে চলে আসি, ঠোটে চিরচেনা সেই হাসি। গতকাল নিশির বাবার সাথে কথা বলার সময় মাথার যন্ত্রনাটার জন্য ইচ্ছা ছিল ঢাকা ফিরে ডাক্তারের সাথে দেখা করব কিন্তু এখনতো সব কিছুই জেনে গেছি সুতরাং ডাক্তারের সাথে দেখা করার চিন্তা বাদ দিয়ে একটা সাইবার ক্যাফে বসলাম ১৫/২০ মিনিট সময় নিয়ে আগামী কালের টিকেট কনফার্ম করলাম অর্থাৎ সিঙ্গাপুর ফিরে যাচ্ছি। ঐখানে ব্যবসার কিছু কাজ আছে ছোট ভাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে, টাকা পয়সার ঝামেলা পার্টনারদের সাথে শেষ করতে হবে।
বাসায় এসে বাবাকে বলতেই উনি নিষেধ করে দিলেন এই অবস্থায় দেশের বাহিরে যাওয়ার কোন দরকার নেই, অনেক কষ্টে বাবা মাকে বুঝিয়ে রাজি করালাম এক মাসের মধ্যেই আমি ফিরব কথা দিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম, মা পাশে দাড়িয়ে একটা একটা করে কাপড় বাজ করে দিচ্ছে আমি ব্যাগে রাখছি। দুষ্টমি করতে করতে মাকে বল্লাম আজ নিশি থাকলে তুমি এমন কষ্টটা করতে হত না, কথাটা শেষ করতে মনে হল ভুল কিছু বলে ফেল্লাম মা আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অন্য রুমে চলে গেল। আমি আবার আমার কাজে মনযোগ দিলাম।
১০টার মধ্যেই বাসা থেকে বের হয়ে এলাম, যাদিও সব সময় বাবা এয়ারপোর্টে আসতে চাইলে আমি নিজেই নিষেধ করি কিন্তু এবার আর নিষেধ করলামনা। বাবার সাথেই গাড়িতে উঠে বসলাম, মনে হচ্ছে এর পরতো আর কোনদিন বাবা আমাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবেনা।
বাসা থেকে এয়ারপোর্ট আসতে ১ ঘন্টার মত সময় লাগে, পথে বাবা কার সাথে যেন ফোনে কয়েকবার আমাদের অবস্থান জানালেন। গাড়িটে এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানে মোড় নিয়ে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করতে গেলেই আমার চোখ আটকে গেছে কয়েকজন মানুষের উপর, উরা সবাই এখানে কেন? নিশির বাবা মা ভাই বোন এমনকি সাথে একজন অপরিচিত মেয়ে, হয়তো এই মেয়েটা ওনাদের দলের না নতুবা আশেপাশের কেউ হবে।
নিশির সাথে গল্প করার সময় জানতে পেরেছিলাম ওর ছোট কাকা দেশের বাহির থাকে, মনে হয় উনাকে নিতে এসেছে। যাক ভলই হল আরো একবার উনাদের সাথে দেখা হল, হাতে অনেকটা সময় আছে কিছুটা সময় গল্প করা যাবে।
গাড়ি থেকে নামতেই ওনাদের দলে থাকা অপরিচিত মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। আরে আজিবতো, এই মেয়ে কাঁদছে কেন? আর আমাকে জড়িয়ে ধরছে কেন?
তখনি মনে হল, এই মেয়েটা নিশি। সবার সাথে দেখা হলেও শুধু নিশির সাথেই আমার দেখা হইনি এমনকি ছবিতেও দেখিনি। হালকা নীল শাড়ি, দু'হাতে কাচের চুড়ি, চোখে কাজল......... ঠিক যেন হুমায়ুন স্যারের রুপা।
নিশির সাথে অনেনকদিন পূর্বে একবার কথা হয়েছিল আমাদের যখন দেখা হবে তখন নিশি এই সাজে আসবে, মেয়েটা স্মরণ শক্তি খুবই ভাল নতুবা আমার মত পাগলের এমন পাগলামি কথা মনে থাকার কথা না।
আপুনার হাতে একটা ছোট্ট প্যাকেট তাতে রাখা আমার শখের হলুদ পান্জাবী, ভাইয়ানির হাত থেকে নেয়া প্যাকেটে একটা মাউথ ওয়ার্গান। আমার খুব প্রিয় একটা জিনিষ সব সময় হাতে নিয়ে কোন না কোন একটা সুর উঠাতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কখনো তেমন কারো কাছে শিখতে যায়নি তাই ভাল করে পারিনা।
নিশির হাতে একটা ফুল, হ্যা দোলনচাপা ফুল। এই ফুলটা নিশির সবচেয়ে প্রিয় ফুল, গল্পের ছলে মাঝে মাঝে বলতো সর্বোচ্চ মন খারাপের সময়ে আশেপাশে দোলনচাপা ফুল দেখলেই উর মন ভাল হয়ে যায়। এই বিষয়টা নিয়ে কত দুষ্টমি করতাম বলে শেষ করা যাবেনা।
নিশি ফুলটা আমার হাতে দিতে এসেও পারেনি, হাত থেকে ফুলটা পরে গেছে। আবার জড়িয়ে দরে কান্না শুরু করে দিয়েছে, বারবার একটাই প্রশ্ন করছে "কেন নিজের যত্ন নাওনি?"
আজ সবার চোখেই পানি আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি, কখনো হেসে হেসে কথা বলছি কখনো কোন একটা উপমা দেয়ার চেষ্ট করছি। এই পরিস্থিতিতে মন ভাল করে দেয়ার মত কোন কথা খুজে পেলামনা, তাই ব্যর্থ চেষ্টাই করে গেলাম।
ঘড়িতে তখন ১২টা বেজে গেছে আর দাড়িয়ে থাকা সম্ভবনা, আমাকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে যেতে হল কিন্তু নিশি কিছুতেই আমাকে ছাড়ছেনা, বাধ্য হয়ে দর্শনার্থীর টিকেট কিনে নিশিকে নিয়ে ভিতরে চলে আসলাম। ডিপার্চার গেইটে দাড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি একঝাক মানুষ দাড়িয়ে আছে মলিন মুখে, এদের সবার দৃষ্টি আমার চলে যাওয়ার পথে।
এক হাতে ছোট্ট লাগেজ অন্য হাতে নিশির হাত, এগিয়ে চলছি বুকিং কাউন্টারের দিকে.................

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৫৫

ওমেরা বলেছেন: দুঃখহীন পৃথিবী এত দুঃখের গল্প লিখেছেন !!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:১৩

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: মাঝে মাঝে দুঃখহীন পৃথিবীরও দুঃখ থাকে এটা বুঝাতে হয়, তবে এদের দুঃখটা থাকে কল্পনার বাস্তবের না

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:০৯

রুরু বলেছেন: লিখন শৈলী ধারুন।।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:১৩

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪৫

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: এক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, দারুণ লেখেন আপনি। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনার মত লিখতে পারি। আমার লেখা পড়ার অনুরোধ রইলো।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২১

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আমার লেখা মানেই বেশিরভাগ আজাইরা কল্পনা। তারপরও পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার লেখাও বেশিরভাগ সময়ই পড়া হয়, ইদানিং কাজের চাপে একেবারে পিষ্ট হচ্ছি তাই ব্লগে খুব বেশি একটা আসতে পারিনা।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ভাইয়া বিষন্ন হওয়ার মত কিছুই নাই, আমার নিশির গল্প গুলি এমনই হয়ে থাকে।
অনেক ধন্যবাদ আমার দুঃখহীন পৃথিবীতে আসার জন্য

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬

আশিক_ইসিই_২ক১৩ বলেছেন: মনে হল যে এটা লেখকের নিজের জীবনের কাহিনী। ধন্যবাদ, খুব ভালো লিখেছেন।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৩

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আমার দুঃখ হীন পৃথিবীতে, আমার বেশিরভাগ লেখাই কল্পনাতে সাজানো তবে ইদানিং নিশির লেখাটাই বেশি এসে যাচ্ছে।

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভিন্ন ধরণের প্লট, আপনার নিজের, নাকি কলকাতার কোন লেখকের?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০১

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: চাঁদগাজী ভাই, আমার নিজেরওনা আবার কলকাতার কোন লেখকেরও না। সম্পুর্ণটা আমার কল্পার একটা অংশ

৭| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই

৮| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যা হবার কথা ছিলো তাই হয়েছে
এ নিয়ে হা হুতাস করে লাভ নাই।
হয়তো এর ভিতরেই আপনার জন্য
কল্যাণ নিহিত আছে।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ভাইয়া হা হুতাসতো করছিনা, এমনিতেই এমনটা একটা কল্পনা তৈরী করতে মন চাইল তাই করে ফেল্লাম। এছাড়া আর কিছুই না

৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ধুর মেয়া ভাই! পুরাই মন্টারে ভিজায়া দিলেন !!!

অনেক অনেক ভাল লাগল গল্পটা!

+++

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু ভাই, আমার দুঃখ হীন পৃথিবীতে।
মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা গল্প চলে আসে মাথায়, তাই এমনটা করে ফেলা আর কি

১০| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪

অপ্‌সরা বলেছেন: যাক বাবা গল্পটা তবুও কল্পনা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: নিশিটাই একটা কল্পনা, যদিও মাঝে মাঝে বাস্তবের মত করে ফিরে আসে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.