নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হায় স্বদেশ

ভাই ভালো হতে চাই

তাইয়িব

সাধারন মানুষ।সত্য কথা বলা পছন্দ করি।

তাইয়িব › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১-এর রাজাকার, আজকের গণতন্ত্রী জমায়েতী মওদুদীর নেতাদেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৪

১৯৭১-এ রাজাকার বাহিনীর সদস্য ও জমায়েতে মওদুদীর কেন্দ্রীয় নেতা, খুনী, লুটেরা, ধর্ষক, সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর-১ আসনে ৯ম সংসদ নির্বাচনেও চারদলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কারণ তার বিরুদ্ধে রয়েছে স^াধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতার সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ।

এছাড়া বিগত জোট সরকারের আমলে গডফাদারে পরিণত হয়েছিল সে। জোটের ৫ বছরের শাসনামলে সাঈদী ও তার ক্যাডার বাহিনীর হিংসাত্মক তৎপরতায় এলাকার প্রতিপক্ষের রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক কেউই রেহাই পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার লোভে এরা ইসলামকে অবমাননা করতে এমনকি কৃষ্ণ ও রামের পূজারি হতেও লজ্জা বোধ করেনি।

কৃষ্ণ ও রামের পূজারী দিইল্ল্যা রাজাকার মুরতাদ সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদী

৩১শে মার্চ-২০০৬ ঈসায়ী দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও জামাতের সংসদীয় দলের উপনেতা মাও. দে হো সাঈদী হিন্দুদের রামকৃষ্ণ আশ্রমে এক অনুষ্ঠানে যোগদান করতঃ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। আলোচনাকালে সাঈদী বলে, “কৃষ্ণ ও রামকে শ্রদ্ধা করি।”

‘দৈনিক সমকাল’-এ ‘সাঈদীর ধর্ণা’ শিরোনামে প্রথম পাতায় ছোট্ট একটি খবর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ ও জামাতের সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা দে হো সাঈদী আগামী নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের লক্ষ্যে মন্দির-আশ্রমে ধর্ণা দিতে শুরু করেছে। বুধবার পিরোজপুর পৌর এলাকার ঘুমুরিয়া বিপিন চাঁদ ঠাকুরের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী ও মতুয়া সম্মেলনে সাঈদী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখে এবং আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেয়। এর কিছুদিন আগে সে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে পিরোজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম, কালীবাড়ি মন্দির, বিপিন চাঁদ আশ্রমসহ বিভিন্ন আশ্রম ও মন্দিরে আলোচনা অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।” (সমকাল, ২১ এপ্রিল-২০০৬)

উল্লেখ্য, সাঈদী যে কতটুকু হিন্দু স্বার্থরক্ষক তা হিন্দুরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। কারণ সে ‘৭১-এ অনেক হিন্দুদেরকে হত্যা করেছে, বাড়ি-ঘর লুট করেছে। ক্ষমতায় আসার পরে আবারও সে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন চালিয়েছে। অথচ ধুরন্ধর মুনাফিক রাজাকার দিইল্ল্যা হিন্দুদের দ¦ারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে অনুদানের ঘোষণা দেয় ভোট বাগাতে। কিন্তু তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি।



দিইল্ল্যা রাজাকারের মুদি দোকানদার থেকে লুটপাটের মাধ্যমে পাঁচ তহবিল গঠন করে ধনী হওয়ার কাহিনী:

পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী থানার (বর্তমান জিয়ানগর উপজেলা) বালিপাড়া ইউনিয়নের টেপশাবুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী সিকদারের ছেলে দেলাওয়ার হোসাইন ওরফে ‘দিইল্ল্যা রাজাকার’ ১৯৭১ সালের স^াধীনতা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত ছিল একজন মুদি দোকানদার। পাড়েরহাট বাজারে তার ছোট একটি মুদি দোকান ছিল। মুদি দোকানের পাশাপাশি তখন সে তার ভায়রা মোজাহার মল্লিকের সুপারি ব্যবসা দেখাশোনা করতো। মুক্তিযুদ্ধই তার ভাগ্য বদলে দেয়।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন গাজী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী স্থানীয় রাজাকার ও শান্তিকমিটির নেতা দানেশ মোল্লা, মোছলেম মাওলানা, আবদুল করিম, আজাহার তালুকদার ও সেকেন্দার সিকদারের আনুকূল্য লাভ করে এবং সবসময় কাঁধে রাইফেল নিয়ে চলাফেরা করতো। তৈরি করেছিল নিজস্ব বাহিনী এবং ‘পাঁচ তহবিল’ নামে লুণ্ঠিত মালামাল রাখার কমিটি।

তার ‘দিইল্ল্যা বাহিনী’ সে সময় পাড়েরহাটের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের বাড়িঘর ও দোকান লুটপাট করে। হিন্দুদের তুলে দেয় পাক বাহিনীর হাতে। ’৭১-এর যুদ্ধের পর ১৯ ডিসেম্বর দেলাওয়ার হোসাইন এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে তার ভায়রা মোজাহার মল্লিকের সুপারি ব্যবসার মোকাম জয়পুরহাট জেলায় আশ্রয় নেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সে এলাকায় অপর চারজন সহযোগী নিয়ে ‘পাঁচ তহবিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে, যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের ঘরবাড়ি জোরপূর্বক দখল এবং তাদের সম্পত্তি লুণ্ঠন করা। লুণ্ঠনকৃত এসব সম্পদ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গনিমতের মাল আখ্যায়িত করে নিজে ভোগ করতো এবং পাড়েরহাট বন্দরে বিক্রি করে ব্যবসা পরিচালনা করতো।”

পাড়েরহাট ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিয়ন কমান্ডের মিজান একাত্তরে সাঈদীর তৎপরতার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ‘দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী স^াধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় লিপ্ত ছিলো। সে ধর্মের দোহাই দিয়ে পাড়েরহাট বন্দরের অনেকের ঘরবাড়ি লুট করেছে ও নিজে মাথায় বহন করেছে এবং মদন নামে এক ব্যবসায়ীর বাজারের দোকানঘর ভেঙে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছে। দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী বাজারের বিভিন্ন মনোহরি ও মুদি দোকান লুট করে লঞ্চঘাটে দোকান দিয়েছিলো। দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর অপকর্ম ও দেশদ্রোহিতার কথা এলাকায় হাজার হাজার মানুষ আজও ভুলতে পারেননি’ (মাসিক নিপুণ, আগস্ট ১৯৮৭)।

পাড়ের হাটের আনোয়ার হোসেন, আবু মিয়া, নূরুল ইসলাম খান, বেনীমাধব সাহা, বিপদ সাহা, মদন সাহা প্রমুখের বসতবাড়ি, গদিঘর, সম্পত্তি এই দিইল্ল্যা রাজাকার মাও. সাঈদী লুট করে নেয় বলে তিনি গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন।

পাড়েরহাট বন্দরের মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন নবীন জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী এবং তার সহযোগীরা পিরোজপুরের নিখিল পালের বাড়ি তুলে এনে পাড়েরহাট জামে মসজিদে গনিমতের মাল হিসেবে ব্যবহার করে। মদন বাবুর বাড়ি উঠিয়ে নিয়ে দিইল্ল্যা রাজাকার মাও. সাঈদী তার শ্বশুর বাড়িতে স্থাপন করে।

রুহুল আমীন আরো জানান, ১৯৭১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশন সংগ্রহ করতে পাড়েরহাটে গেলে দেখেন স্থানীয় শান্তিকমিটি ও রাজাকারদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৬০-৭০ জনের একটি দল পাড়েরহাট বন্দরে লুটপাট করেছে। পিরোজপুরের শান্তিকমিটি ও রাজাকার নেতাদের মধ্যে সেদিন পাকিস্তানি সেনা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলো দিইল্ল্যা রাজাকার মাও. সাঈদী, সেকান্দার শিকদার, মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, দানেশ মোল্লা প্রমুখ। এ ছাড়াও দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীকে একটি ঘরের আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন পাড়েরহাট বন্দরের মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন।



ধর্মব্যবসায়ী দিইল্ল্যা রাজাকারের ধর্মব্যবসা ও আত্মগোপন থাকার কাহিনী:

জয়পুরহাটে আত্মগোপন থাকার সময় এক ওয়াজ মাহফিলে নির্ধারিত মাওলানা না আসায় দেলওয়ার হোসাইন ওয়াজ কমিটির অনুমতি নিয়ে সেখানে ওয়াজ শুরু করে। এভাবেই তার ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্ম ব্যবসা শুরু হয়। এরপর সে ভৈরব জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকে এবং ওয়াজ মাহফিলের ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন শুরু করে। অনেক দিন সে আত্মগোপনে ছিলো।

‘দিইল্ল্যা’রাজাকার সাঈদীর ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে জাতীয় গণতদন্ত কমিশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জমায়েতে মওদুদী নেতা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তার নিজ এলাকায় আলবাদর, আলশামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করে ও তাদের সরাসরি সহযোগিতা করে। ১৯৭১ সালে সে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলো না, তবে তথাকথিত মাওলানা হিসেবে সে তার স^াধীনতাবিরোধী তৎপরতা পরিচালনা করেছে। তার এলাকায় পাক সেনাদের সহযোগী বাহিনী গঠন করে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লুটতরাজ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ইত্যাদি তৎপরতা পরিচালনা করেছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ‘দিইল্ল্যা’রাজাকার সঈদী ’৭১ সালের ১৬ আগস্ট গোপাল বণিক নামে পাড়েরহাটের এক ব্যবসায়ীকে পাক সেনাদের হাতে তুলে দেয়। ৬ ডিসেম্বর আবদুল আজিজ নামে একজনকে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল জমায়েতে মওদুদী নেতা সাঈদী বিভিন্ন ওয়াজ তফসিরের নামে এখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের স^াধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

পবিত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে একজন ‘মাওলানা’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে সাঈদীর অপকর্মের নজীর শুধু বিগত নির্বাচনেই নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও রয়েছে। ঐসময় সে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজ জেলা পিরোজপুরে মক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদেরসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, সম্পদও লুট করেছে।

এই সাঈদীর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ, পাক বাহিনীর ভোগের জন্য বলপূর্বক মেয়েদের ধরে সে তাদের ক্যাম্পে পাঠাত।



জোরপূর্ব বাড়িদখল করে সম্ভ্রমহরণ ও অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনায় দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী:

জাতীয় গণতদন্ত কমিশন রিপোর্টে আরো বলা হয়, ‘পিরোজপুরের অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক খান গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, সাঈদী যুদ্ধের সময় পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার বাড়ি জোরপূর্বক দখল করে এবং তখন সে এ বাড়িতেই থাকতো। সে ওখানে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতো। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করে পাক সেনাদের কাছে সরবরাহ করতো সাঈদী। অ্যাডভোকেট রাজ্জাক আরো জানিয়েছেন, সাঈদী পিরোজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ভোগের জন্য জোরপূর্বক মেয়েদের ধরে এনে তাদের ক্যাম্পে পাঠাতো।

পাড়েরহাট বন্দরের হরি সাধু এবং বিপদ সাহার বাড়ি লুটপাটের পর তার মেয়েদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে সাঈদী। বিখ্যাত তালুকদার বাড়িতে লুটতরাজ করেছে। ওই বাড়ি থেকে ২০-২৫ জন মহিলাকে ধরে এনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছে।



গণহত্যার নরঘাতক সাঈদী:

পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। সে বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণদের ধরে আনতো এবং আলবাদর বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করতো। কেউ এর বিরোধিতা অথবা আপত্তি করলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হতো।’ শাবি’র শিক্ষক লেখক জাফর ইকবালের পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদের হত্যাকান্ডের সঙ্গেও দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী জড়িত ছিলো বলে তার কন্যা সুফিয়া হায়দার এবং জামাতা আলী হায়দার খান অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর সহযোগিতায় ফয়জুর রহমান আহমেদকে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে এবং হত্যার পরদিন সাঈদীর বাহিনী পিরোজপুরে ফয়জুর রহমান আহমেদের বাড়ি সম্পূর্ণ লুট করে নিয়ে যায়।

পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যা ও নির্যাতনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদী। পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, নির্যাতন, লুটতরাজসহ নানা যুদ্ধাপরাধের অন্যতম হোতা দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদী। তার এসব অপকর্মের বহু নজীর ও সাক্ষী আজো পাওয়া যাবে তার হাতে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বেঁচে থাকা পিরোজপুরের স্বজনহারা মানুষের ঘরে।

স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী তার ঘাতক, যুদ্ধাপরাধীর চেহারা গোপন করে ধর্মের নাম ভাঙিয়ে প্রধানত তরুণ প্রজন্মের অজ্ঞতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বার বার ক্ষমতার মসনদে বসার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পিরোজপুর ও নাজিরপুরের যাদের বয়স ৩০-৩৫ বছরের নিচে তারা দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীর আসল চেহারা চেনে না বলেই তার মতো নরঘাতক পার হয়ে যায় নির্বাচনী বৈতরণী।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ও নরঘাতক সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদীর দুষ্কর্মের কিছু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট’-এ। ওই রিপোর্ট হতে জানা যায়Ñ

১৯৭১ সালে মুক্তিযদ্ধের সময় এই কুখ্যাত জামাত নেতা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তার নিজ এলাকায় আলবাদর, আলশামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং তাদের সরাসরি সহযোগিতা করে। ১৯৭১ সালে সে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা ছিল না, তবে তথাকথিত মাওলানা হিসেবে সে তার স্বাধীনতাবিরোধী অপতৎপরতা পরিচালনা করেছে। তার এলাকায় পাক সেনাদের সহযোগী বাহিনী গঠন করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লুটতরাজ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ইত্যাদি অপতৎপরতা পরিচালনা করেছে। এছাড়াও মিজান তালুকদার বলেন, একাত্তর সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে মাও. সাঈদী তার বড়ো ভাই আব্দুল মান্নান তালুকদারকে ধরে পাড়েরহাটে। পিস কমিটির অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আব্দুল মান্নান তালুকদারের উপর দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী পাশবিক নির্যাতন করে এবং তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা মিজান তালুকদার কোথায় আছে জানতে চায় ও তার সন্ধান দিতে বলে।

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা পিরোজপুরের অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খানও দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীর সহযোগিতায় তাদের এলাকার হিমাংশু বাবুর ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে। পিরোজপুরের মেধাবী ছাত্র গণপতি হালদারকেও দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তৎকালীন মহকুমা এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত এসডিও আব্দুর রাজ্জাক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান, স্কুল হেডমাস্টার আব্দুল গাফফার মিয়া, সমাজসেবী শামসুল হক ফরাজী, অতুল কর্মকার প্রমুখ সরকারি কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবীদেরকে দিইল্ল্যা রাজাকার মাও. সাঈদীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হত্যা করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য সরবরাহকারী ভগীরথীকে তার নির্দেশেই মোটরসাইকেলের পিছনে বেঁধে পাঁচ মাইল পথ টেনে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পাড়েরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন খান জানিয়েছেন, দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীর পরামর্শ পরিকল্পনা এবং প্রণীত তালিকা অনুযায়ী এলাকার বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের পাইকারি হারে নিধন করা হয়। রুহুল আমীন নবীন আরো জানান, দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী এবং তার সহযোগীরা তদানীন্তন ইপিআর সুবেদার আব্দুল আজিজ, পাড়ের হাট বন্দরের কৃষ্ণকান্ত সাহা, বানীকান্ত সিকদার, তরুণীকান্ত সিকদার এবং আরো অনেককে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। (সূত্র: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র)



একাত্তরের নরপাষ- দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদী এখনও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়:

নেকড়ে যেমন মেষের ছদ্মবেশ নিলেও নেকড়েই থেকে যায়, তেমনি একাত্তরের নরপশু রাজাকার-আলবাদররা স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টালেও নরপশু রাজাকার-আলবাদরই থেকে গেছে। পিরোজপুরের একাত্তরের ‘রাজাকার দিইল্লা’ স্বাধীনতার পর জনগণকে ধর্মকর্মের কথা শুনিয়ে ‘মওলানা সাঈদী’ হলেও তার অধর্মের অপকর্মের কলঙ্ক ৩৭ বছর পরও মুছে যায়নি। এখনও সাঈদীরা একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী দালাল-ঘাতক-রাহাজানির নির্মমতা। নৃশংসতার ভয়ঙ্কর প্রতীক।

গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নিপীড়ন ইত্যাদির মাধ্যমে এরা জাতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামের বিরোধিতা করেছে। এ সত্য থেকে আরো পলায়ন করতে পারে; কিন্তু সত্য নিষ্ঠুরভাবে আমৃত্যু তাদের ধাওয়া করে যাবে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই সাঈদীদের নাম উচ্চরিত হবে সীমাহীন ঘৃণায়।

স্বাধীনতার পর নেতৃত্বের অদূরদর্শিতায় দেশে স্বাধীনতার শত্র“ রাজাকার-আলবাদরদের সাময়িকভাবে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত পুনর্বাসন হয়েছে; কিন্তু লাখো বীরের রক্তের সিঁড়ি দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা অর্থাৎ একাত্তরের বাস্তবতা ও ইতিহাস থেকে কখনও বিস্মৃত হবে না বলে রাজাকার-আলবাদরদের প্রশ্নটি বার বার আসবে, যতদিন না কালের আবর্তে শেষ রাজাকারটির চিহ্ন মুছে ফেলা হবে।

একাত্তরের কুখ্যাত ঘাতক রাজাকার দিইল্ল্যা এখন মওলানা সাঈদী। সে জামায়েত মজলিশে শূরার এক সদস্য এবং চরম বিতর্কিত ব্যক্তি। সংসদের একজন সদস্যও। তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযোগ, সে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী লাদেনের এক ভাবশিষ্য। বাংলাদেশে তালেবানী স্টাইলে ক্ষমতা দখলের অলীক স্বপ্ন যারা দেখে, তাদের একজন এই রাজাকার সাঈদী। জাতির দুর্ভাগ্য যে, সাঈদী সগর্বে ঘোষণা করেছিল (সাংসদ থাকাকালীণ), তাকে রাজাকার প্রমাণ করতে পারলে সে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবে। এমন দুঃস্পর্ধার পরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবিদার সরকার (২০০১ ক্ষমতায় থাকা আ’লীগ সরকার) তার বিরুদ্ধে কোনও তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি; কিন্তু পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা বয়েজউদ্দিন পশারী ও পাড়েরহাট ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন গাজী তার চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ধুরন্ধর ধর্মব্যবসায়ী সাঈদী সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সাড়া দেয়নি।



স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে দিইল্ল্যা ‘রাজাকার’ বাহিনীতে নাম লেখায়। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ব্যক্তি ও পরিবারের উপর নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতায় সে এত ভয়ঙ্কর ছিল যে, অচিরেই পাক সেনাদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে। তাকে তিনশ’ সদস্যের এক রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হয়। জোর করে তরুণদের ধরে এনে রাজাকার ও আলবাদর বহিনীতে নাম লেখাতে বাধ্য করত সাঈদী। কেউ রাজাকার বা আলবাদর না হতে চাইলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সময় সে রাজাকার ও শান্তিকমিটির নেতা মাওলানা দানেশ মোল্লা, মোছলেম মাওলানা ও সেকান্দার সিকদারের নৈকট্য লাভ করে। পরবর্তীতে পিরোজপুর মহকুমার রাজাকারপ্রধান মাণিক খোন্দকার তাকে আলবাদর বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়। যুদ্ধকালীন পাড়েরহাট বন্দরে সাঈদী তার অধীনস্থ রাজাকার ও আলবাদরদের নিয়ে হেলালউদ্দিন পশারী, সইজউদ্দিন পশারী, রইজউদ্দিন পশারী, আমজাদ গাজির বাড়িসহ অর্ধশতাধিক দোকান লুট করে। পাড়েরহাট খেয়া সংলগ্ন সুলতান তালুকদারের ঘর দখল করে মুদি মনোহরী দোকান নিজের নামেই চালু করে। একাত্তরে জুন মাসে বন্দরের উত্তর প্রান্তের মদনমোহনের বৃহৎ ও সুদৃশ্য বাড়িটি লুটপাটের পর ভেঙ্গে সাঈদী সেটি নিজ বাড়িতেই নিয়ে আসে। আগস্ট মাসের গোড়ার দিকে গোপাল বণিক নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে তাকে সে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। সাঈদীর সহযোগতায় একইভাবে ইউপি সদস্য কৃষ্ণ কান্ত সাহাকে হত্যা করা হয় ঐ বালেশ্বর ঘাটে। এছাড়া সাঈদী বন্দরের ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা, বিপদ সাহা, মাখন সাহাসহ আরও কয়েক বণিকের দোকান লুট করে। লুণ্ঠনের পাশাপাশি বহু ঘরবাড়ি পোড়ানো, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে পাক বাহিনীকে দেয়া ও তাদের মাতাপিতাসহ আত্মীয়স্বজনকে হয়রানি, নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অনেক অভিযোগ রয়েছে- যা সরকার তদন্ত করলে এখনও বিস্তারিতভাবে জানা যাবে।

মুনাফিক সাঈদীর বর্ণচোরা ভূমিকা:

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক সেনাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে দেয়া, হত্যা, দোকানপাট, বাড়িঘর লুটপাট, নির্যাতন-নিপীড়নে ‘দিইল্ল্যা’ নামে পরিচিত সাঈদীর অপকর্মাদি নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা হলেও পাড়েরহাটের বাসিন্দারা আজও তা ভোলেনি। স্বাধীনতাযুদ্ধই সউদখালী গ্রামের ইউসুফ আলী সিকদারের পুত্র দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিইল্ল্যার ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এই দিইল্ল্যা ছিল পাড়েরহাটের বাদুরা গ্রামের ইউনুস মুন্সীর ‘ঘরজামাই’। শ্বশুরালয়ে থাকা দিইল্ল্যা ছিল বেকার। একটি মুদি দোকানে বসে আড্ডা মারত। ১৯৯৭ সালে সাঈদী সগর্বে বলেছে, ‘আমি মানুষ মেরে থাকলে আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা হল না কেন? সাঈদীর এ কথার জবাব ঐতিহাসিক ড. মুনতাসীর মামুন দিয়েছিলেন। সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির মুক্তিযোদ্ধা ও নিহতের পরিবারের যে তথ্যচিত্র তুলে ধরেছেন তার কিছু অংশ ড. মামুন দেখে লিখেছেন, “সেখানে এক প্রৌঢ়া অশ্র“রুদ্ধ কণ্ঠে অভিযোগ করেছেন, তার স্বামীকে হত্যা করেছে সাঈদী এবং হত্যার বিচার চেয়েও তিনি তা পাননি। কারণ, এখন সাঈদীর যোগাযোগ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে।”

২০০১-এর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ (সদর ও নাজিরপুর এলাকা) আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হয় জমায়েতে মওদুদীর নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওরফে বাংলার ইহুদী। বিগত সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে নগণ্য ব্যবধানে জয়ী হলেও দিইল্ল্যা রাজাকার সাঈদীর এই জয়ের পিছনে ছিল অপপ্রচার, নির্যাতন, ভোট চুরিসহ নানা গুরুত্বর অভিযোগ।

এই জঘন্য রাজাকারকে কোন ক্রমেই স্বাধীন বাংলার মাটিতে ধর্ম ব্যবসা করে ইসলাম ও এদেশের স্বাধীনতার অবমাননা করতে দেয়া যায় না। এই যুদ্ধাপরাধীদের অচিরেই বিচার করতে হবে। এদেরকে সর্বোতভাবে প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীন বাংলার কলঙ্ক ঘুচাতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.