![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আসলে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বা জ্ঞানী ব্যাক্তি নই। কিন্তু আমি তাই বলি যাই বলি তা আমি বিশ্বাস করি।
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/194533/small/?token_id=6163bed06f44fbc6c09196606933b44b
তার নাম দুখি দাসী। যখন সে তার মায়ের কোলে ছিলো তখন তার বাবা আকালে মারা যায়। এমন জনম দুঃখীর নাম তাই সবাই রাখে দুখি দাসী। দুখি দাসীর পুরো জীবনটাই পুরো দুঃখে মোড়ানো। দুখি দাসীর ভাষায়,// দুখি দাসী জনমে সুখি হইলো না//। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুখি দাসীরা বাস করতো হরিরামপুর ইউনিয়নের তাফালিয়া গ্রামে। সেই সময়কার যুদ্ধের দামামা শুনে তাদের অনেক প্রতিবেশী আর আত্বীয় স্বজন ওই পাড়ে(ভারত) পাড়ি জমিয়েছিলো। নির্ঝঞ্ঝাট দুখি দাসী আর তার পরিবার মাটির টানে যেতে পারে নাই। তার স্বামী মহানন্দা কৃষক ছিলো। যখন চারিদিকে যুদ্ধের দামামা তখনও মহানন্দ নির্বিকারভাবে তার ছেলে বিশ্বনাথকে নিয়ে কৃষিকাজে ব্যাস্ত থাকতো। পেটে আহার জুটানোর জন্য তা না করে উপায়ই বা কি। আষাড় মাসের কোন একদিনে দুখি দাসীর পরিবারে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো কালো অন্ধকার নামে। রোজ দিনকার মতোই মহানন্দ তার ছেলে বিশ্বনাথকে নিয়ে ক্ষেতে গিয়ে কাজ করতে থাকে । কাজ করার এক পর্যায়ে কয়েক জন বিহারী অস্র হাতে এসে মহানন্দ আর বিশ্বনাথকে ক্ষেতের থেকে ধরে নিয়ে যায়। দুখি দাসীর মতে বিহারীগুলো এসেছিলো টঙ্গির দিক থেকে। বিহারীরা আরও ধরে তার এক ভাশুরের ছেলেকে আর পাশের এলাকার কিছু লোকেদের। দুখি দাসী তার ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার , টাকা সব দিয়ে দেয় বিহারীদের বিনিময়ে শুধু মহানন্দা আর বিশ্বনাথের জীবন ভিক্ষা চায়। পাষন্ডরা টাকা, গহনা সবই নেয় কিন্তু ফেরত দেয় না আর মহানন্দা আর বিশ্বনাথকে। সবাইকে সাড়ি করে গুলি করে একে একে হত্যা করে মহানন্দা, বিশ্বনাথসহ সবাইকে। তার এক ছেলে যার নাম মরন (১০-১২বছর ) ঘটনার আকস্মিকতা আর নির্মমতা দেখে অসুস্থ হয়ে যায় এবং মারা যায়।
তারপর পদ্মা মেঘনায় অনেক জল গড়িয়ে এখন সে মানুষের সাহায্যের উপর ভর করে থাকে। শাক তোলে এবং তা বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন করে । এই বাড়ি সেই বাড়িতে রাত কাটে তার। এক মেয়ে আর এক ছেলে তার আছে কিন্তু মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ী আর ছেলেও বিয়ে করে তার শ্বশুরবাড়ী থাকে । দুখি দাসী থাকে তাফালিয়ার ভাসুরপো শম্ভু আর জীবনের ঘরে ভাগ ভাগ করে আর মাঝে মাঝে বাদালদীর গোপালের মার কাছে থাকে। শেখ সাবই একবার তারে ৪০০০ টাকা দিছিলো তারপর কেউই তারে টাকা দেয় নাই। এখন তিন চার মাস পর পর ৯০০ টাকা বয়স্ক ভাতা পায় ।
সবচেয়ে আফসোসের ব্যাপার হলো যেই ভিটে মাটির টানে এই দেশ সে ছাড়ে নাই সেই তারই এখন মাথা গোঁজার কোন জায়গা নাই। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার এখন কি দরকার ? উত্তরে দুইটা জিনিষ বললো, একটা ঘর বানাইয়া দিতে আর নাতিরে একটা কাজ দিতে যে এখন তার মামার গ্যারেজে চাকরি করে কোন পারিশ্রমিক বা নাম মাত্র পারিশ্রমিকে। আমি বললাম আমার তো সাহায্য করার সামর্থ্য নাই দেখি সবার সাথে কথা বলে। সে বললো বাবারে,
“নিজের ঘরে হাগাও ভালা,
পরের ঘরে থুথুও সাজা।”
কিছু বলার নাই। শুধু বাউনিয়াবাসীর কাছে আহবান তাকে যেনো সবাই মিলে একটা ঘর তুলে দেয়।
©somewhere in net ltd.