নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দাদাভাই

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮


আহসান হাবীব

অক্টোবর ৫, ২০১১

ahsanhabib-fআমাদের পরিবারের সব খারাপ খবরগুলো সবার আগে পাই আমি। কারণ মা আমার সঙ্গে থাকেন বলে সবাই আগে আমাকে ফোন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে মার শরীর কেমন, এই খারাপ খবরটা তিনি নিতে পারবেন কিনা। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। এবারও তাই হল সেদিন তিনটায় আমার কাছে ফোন এল সিঙ্গাপুর থেকে । ফোন করেছে মাজহার, অন্যদিনের সম্পাদক যিনি আমাদের পারিবারিক বন্ধুর মত। বিপদে বড় ভাইয়ের সার্বক্ষনিক সঙ্গী।
- হ্যালো শাহীন ভাই, একটা খারাপ খবর আছে।
- বলে তিনি ওপাশে ফুপিয়ে উঠলেন। আমি নিজেকে প্রস্তুত করলাম খারাপ সংবাদটা শোনার জন্য।
- বলুন মাজহার ভাই।
- হুমায়ূন ভাইয়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
পরের প্রশ্নটাই হচ্ছে খালাম্মার শরীর কেমন?
- মোটামোটি।
- তাহলে এ খবরটা এখনই জানানোর দরকার নেই।
- ঠিক আছে।
আমি বজ্রাহত হয়ে বসে রইলাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারেও ক্যান্সার ঢুকলো।

বাসায় এসে স্ত্রীকে প্রথম বললাম খবরটা । সেও হতভম্ব। কিছুদিন আগেই তার বাবা মানে আমার শ্বশুর মারা গেছেন ক্যান্সারে। সেই শোক সে এখনো সামলে উঠতে পারে নি। তারপর আবার এই খরব! সেও বলল আম্মাকে এ খবর দেওয়ার দরকার নেই। আমি মাকে কিছু বললাম না। মা উল্টা জিজ্ঞেস করল
- কিরে হুমায়ুনের কোন খবর পেয়েছিস?
আম্মা জানে সে সিঙ্গাপুরে চেক আপের জন্য গেছে। কারণ কিছুদিন ধরেই নাকি তার শরীর ভাল যাচ্ছিল না।
কিন্তু রাত আটটার দিকে বড় ভাই নিজেই আমাকে ফোন করল।
- হ্যালো আম্মাকে জানিয়েছিস ?
- না জানাই নি।
- এখনি জানা। এটা লুকাছাপার কোন বিষয় না। বল ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সম্ভবত ছড়াচ্ছে। এখানে এমনটাই বলল । আম্মাকে বল দোয়াটোয়া করতে। আর ভাইবোন সবাইকে জানা। কথাগুলো সে খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল।
আহসান হাবীবের চোখে লেখক হুমায়ূন আহমেদ।

আহসান হাবীবের চোখে লেখক হুমায়ূন আহমেদ।

তারপর আরকি! আমি আম্মাকে বললাম, তবে একটু রয়ে সয়ে বললাম। বললাম ভয়ের কোন কারণ নেই। এর ট্রিটমেন্ট আছে তারা ফিরে এসে পৃথিবীর সবচে দামি ক্যানসার হসপিটালে যাবে; সেটা আমেরিকায় ( একশ পঞ্চাশটা বিখ্যাত ক্যান্সার হসপিটালের মধ্যে এর রেটিং এক নম্বরে)।
আমি আবারো টের পেলাম আমার মা কঠিন নার্ভের মানুষ। তার বয়স তিরাশি বছর। ডায়বেটিস, হার্ট আর কিডনীর পেসেন্ট। তিনি চুপ করে গেলেন।

আসলে আমাদের পরিবারের আমরা সবাই খুব শক্ত নার্ভের মানুষ। আমার তাই ধারণা। এটা হয়েছে সম্ভবত ১৯৭১ সালের ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার কারণে। আমার মার প্রায় সামনেই তার বাবা আর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতো আছেই। সেই মা কঠিন হবে নাতো কে হবে?

বড় ভাই ( আমরা অবশ্য তাকে দাদাভাই ডাকি) সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এলে আমরা সবাই তার বাসায় গেলাম। সে দেখলাম খুব স্বাভাবিক। সবার সঙ্গে তার স্বভাবজাত রসিকতা করছে। বন্ধুরা আসছে তাদের সঙ্গে দিব্যি আড্ডা দিচ্ছে। সমানে সিগারেট খাচ্ছে। ঘর ধূয়ায় ধূয়াময় ( যদিও বাই পাস অপারেশনের পর তার সিগারেট খাওয়া একদমই নিষিদ্ধ) হাতে খুব বেশী সময় নেই, দুদিন পরই আবার ফ্লাই করতে হবে আমেরিকার উদ্দেশ্যে। তার প্রস্তুতিও চলছে। আমি আবিস্কার করলাম কারও মুখে ভয় বা আতঙ্কের কোন চিহ্ন নেই। আত্মীয়স্বজনও অনেকে এসেছেন। বাড়িতে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব। তার ছোট্ট শিশু পুত্র নিষাদ মহা খুশি; তাকে দেখে মনে হল তার জীবনে এত আনন্দ বোধহয় খুব একটা এর আগে আসে নি…একসঙ্গে এত মানুষ।
আমেরিকা যাওয়ার আগেও সে খুব স্বাভাবিক ছিল।
পৌছার পর, হাসপাতালে এডমিট নেওয়ার পর সে নাকি তার বিদেশী ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিল:
‘ ডাক্তার আমি কি সত্যিই মারা যাচ্ছি?’
বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গম্ভীর মুখে বলল ‘ আমরা সবাই মারা যাচ্ছি…’
তারপর বলল ‘ না তুমি এখনই মারা যাচ্ছ না। এখানে যখন এসেই পরেছ আমরা একটু চেষ্টা করে দেখি তোমাকে বাঁচাতে পারি কিনা। ’
যাওয়ার আগেরদিন আমার বড় বোন বড়ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিল-
- দাদাভাই, তোমার কী ধারণা তুমি কি সত্যি সত্যি সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসতে পারবে?
সে স্বভাবসুলভ রসিকতার মুডে বলল ‘ ক্যন্সারে না মরলেও মনে হচ্ছে নিউমুনিয়ায় মরতে হবে। ’
- কেন? আমরা উদ্বিগ্ন
- আত্মীয়-স্বজন সবাই যে হারে আমাকে দোয়া দরুদ পড়ে ফু দিতে শুরু করেছে… !!
এই হচ্ছে আমাদের বড় ভাই ড. হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশের কিংবদন্তি লেখক। অবশ্যই সে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবে। আমরা সে আশায় বুক বেধে বসে আছি।

আহসান হাবীব: কার্টুনিস্ট, রম্যলেখক ও হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.