নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ রক্ষার সৈনিক

মারুফ মুনজির

আমাকে যে ভালবাসে তাকে আমার খুব ভাল লাগে

মারুফ মুনজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার গ্রাম, গ্রামের মানুষ, কিছু ভাবনা

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫০

বাড়ি গেলাম, অনেকের সাথে সাক্ষাত হলো, এবার আমি বাউফলের জনগন নিয়ে ভেবেছি, কে কিভাবে চিন্তা করে, একটু ভেবে দেখার চেস্টা করলাম, ভাবনা সঠিক হতে পারে, নাও পারে। মানুষের সাথে কথা বলার থেকে গ্রাম, গ্রামের মানুষ, এগুলো দেখতেই ভালো লেগেছে। প্রায় ১১ বছরের ব্যবধানে বিশাল পরিবর্তন দেখে এলাম, ২০০৪ সাল থেকে বাউফলে নেই, উতসব ছাড়া বাড়ি যাওয়া হয় না। হতাশার দিকও যেমন আছে তেমনি আশার দিকটাও উল্লেখযোগ্য।



গ্রাম আর সেই গ্রাম নেই। উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে, মানুষের হাতে বৈধ অবৈধ প্রচুর টাকা, যে যেভাবে হোক নিজেকে বাচিয়ে রাখছে সেখানে নৈতিকতা না থাকলেও চলবে। সে কথা পড়ে হবে।



ইদের দিন বাসার পাশের তিন দিকের মসজিদের মাইকের শব্দে ঘুম হারাম হয়ে উঠলো, চরম বিরক্তি নিয়ে বিছানায় বসে থাকলাম, কান পেতে মসজিদের মাইকের ইসলামী সংগীত শুনলাম, এবার একটু অন্যভাবে মাথায় চিন্তা আসলো, ইসলামী সংগীতে আমুল পরিবর্তন এসেছে, সেটা সুরে, কথায়, রেকডিং এ, মাঝে মাঝে তো হিন্দি বাংলা জনপ্রিয় গানের সুরের নকল খুজে পাচ্ছিলাম, সেই আগের একগুয়ে সুর নেই, গানের কথার এক ধরনের টাচি বিষয় আছে। আগে দেখেছি এক এক গ্রুপের এক এক ধরনের গান সুর, যেমন চরমোনাই, ছারছীনা, জামাত শিবিরের গানের সুর কথার আলাদা আলাদা পরিচিতি ছিলো। এবার শুনে মনে হলো এই দুরত্ব কমছে।



সেই আগের মতই আমার মা, সকালের অনেক আগেই উঠে, সকালের নাস্তা পায়েস আরো অনেক কিছু তৈরী করে রেখেছে। আল্লাহ আমার মাকে দীর্ঘ আয়ু দিন, জানি না মা বেচে না থাকলে ঘরের এই রান্না হবে কিনা, ঘরের বউরা এই দায়িত্ব পালন করবেন কি না, সকালে ছেলের বন্ধুরা আসবে এই কথা ভেবে মা যেভাবে আন্তরিকতার সাথে কিছু আয়োজন করছেন সেভাবে কিছু হবে কিনা কে জানে।

শহর থেকে ইদের নামাজ পরতে গ্রামের বাড়িতে গেলাম, যাবার পথে রাস্তার পাশে এতো এতো নতুন বাড়ি, ছেলেবেলার সেই মেঠো পথ নেই, পানিতে ভরপুর বিশাল সবুজ ধান ক্ষেত নেই, পিচঢালা পাকা রাস্তা, রাস্তার পাশের বাড়ির জন্য সেই ধান ক্ষেত আর দেখা যায় না, টিনের ঘর নেই, নতুন সব ঘরে ইটের ব্যবহার আছে, মানুষ তার নিরপত্তার সব আয়োজন করছে। পরিচিত মানুষদের জিজ্ঞেস করলাম এই ঘর কার, ঐ ঘর কার, একটু অবাক হলাম। দশ বছরে মানষের এতো আয় বেড়েছে, যাদের থাকা খাওয়ার ব্যাপারে অন্যদের উপর নির্ভর করতে হতো, তাদের অবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে, আমি ভাবলাম এটার আশার দিক, মানুষ পরিশ্রম করছে, নিজে নিজে আয় করার উপায় খুজে বের করছে, এভাবে সবাই চেস্টা করলে আমাদের দেশের উন্নয়ন ঢেকায় কে। এবার পরিচিতদের জিজ্ঞেস করলাম এই ঘরের আয়ের প্রধান ব্যক্তি কে, কি করছে, কোথায় থাকে, কিভাবে আয় করছে। সবশেষে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। গর্বের সাথে অবৈধ আয়ের কথা বলছে। চট্টগ্রামের কাস্টমস এ পিয়ন পোস্টএ চাকরি, তার বিশাল বাড়ি, বাবাকে হজ্জ করিয়েছেন, ইদের দিন মসজিদে দেখলাম নতুন টাকার বান্ডিল বের করছেন। জমি কিনছেন। গ্রামে উঠতি প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। কিছু ঘরের ছেলেরা বিদেশ গিয়েছেন, তাদের সচ্ছলতা চোখে পড়ার মতো। এই যে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সাথে সাথে তাদের প্রভাবও বাড়ছে, পুরনো প্রভাবশালীদের সাথে দ্বন্ধও বাধছে। ইদের দিন নাজিরপুরে মারামারি হলো, স্থানীয় কমিশনার আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, সবই এই টাকার খেলা, উঠতি টাকার ফসল। এতে ভেংগে যাচ্ছে সামাজিক শৃংখলা, কেউ কাউকে মানতে নারাজ। আবার শৃংখলতা এসেছে অন্যভাবে। মাঠে ফুটবল খেলা দেখছি, দর্শক প্লেয়াররা রেফারিকে স্যার স্যার বলছেন। এই সম্মানের সাথে সম্বোধন আমারতো খুবই ভালো লেগেছে। এদিকে গোল হয়ে গেছে, আনন্দ করছে দর্শক খেলোয়ার সবাই, লাইনসম্যান জানালেন অফসাইট, সবাই মেনে নিলেন, আগে এরকম কখনো দেখিনি, তখন রেফারীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়ে মারামারি বেধে যেতো। আমার এই সংযম, এই মেনে নেয়ার মানসিকতা ভালো লেগেছে, সবসময় সব কাজে এই মানসিকতা থাকবে আশা করি।

ইদের নামাজ পড়ছি, বক্তব্য চলছে, খুব কস্ট লাগলো, সবাই নিজেকে প্রকাশ করতে সময় ব্যয় করছে, নিজের ঢোল নিজে বাজাতে ব্যস্ত, প্রদর্শনেচ্ছা চরম পর্যায় পৌছে গেছে। দান করার ক্ষেত্রে এত প্রকাশ করার মানসিকতা দেখলাম, আমার মনে হয় এ দান কবুল হওয়ার কথা না। আমার নামে লিখুন ৫০০০ হাজার, আমার নামে ২০০০, এর মধ্যে উঠতি টাকা ওয়ালাদের দাপট বেশি। এই যে প্রকাশ করে দান করার মানসিকতা আগে এরকম নির্লজ্জভাবে ছিলো না। এটা সমাজের মানুষের পতনের নমুনা প্রকাশ করছে।

আমার খালু, স্থানীয় ইউনিয়নের কাজী, কথায় কথায় বলে ফেললেন এখনতো বিয়ের থেকে ডিভোর্স বেশি হচ্ছে। বিগত ছয়মাসে তুলনামুলক ডিভোর্স বেশি হয়েছে। ইদের পরের দিন একটি ডিভোর্স হলো। আমি একটু হতবাক হলাম, সিটি বা শহরে এই সংখ্যার হার বেশি কিন্তু গ্রামেও যে বাড়ছে তা বুঝা যাচ্ছে। এই প্রবনতা সমাজের শৃংখলতা ভাংছে তা প্রমান করে যাচ্ছে। এ পরিবার ভেংগে যাওয়ার প্রবনতা সামনে আরো বাড়বে এটা বোঝাই যাচ্ছে।

বাউফলে আমার বন্ধু খুবই কম, তবুও ফোন দিলাম, সবাই ব্যস্ত, সেই আবেগ নেই, এতে যে আমি অখুশি তা নয়, কিন্তু বড়দের স্নেহ কমতে দেখে খারাপই লাগলো, সবাই ব্যস্ত। কিন্তু এই ব্যস্ততা কিসের জন্য। নিজের জন্য নাকি পরের জন্য?



বাউফলের তরুন তরুনীদের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। বাউফল থেকে নুরাইনপুর যাচ্ছি, তরুনদের পোশাকে আধুনিক ফ্যাশনে ছোয়া দেখলাম, যেটা চোখে পরার মতো সেটা হলো প্রকাশ্য সিগারেট খাওয়া, রাস্তায় হাটছে, টেনে যাচ্ছে। খেতে পারে কিন্তু উঠতি বয়েসের তরুনদের প্রকাশ্য ধোয়া উড়িয়ে খাওয়াটা একটু দৃষ্টিকটু। এটা আগে ছিলো না।

তবে সব তরুনরা পড়াশুনায় সচেতন এটা দিলমন খুলে বলে দেয়া যায়, আমাদের সময় খুব কম ছাত্ররাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতাম, কোন রকমে বি এম অথবা জগন্নাথ কলেজের চিন্তা করতাম। এখন বিশাল অংশ ছাত্ররা কোচিং করছে। বিশেষ করে মেয়েদের কোচিং করাটা চোখে লেগেছে।নিজেদের তৈরী করছে প্রতিযোগীতার জন্য। এই যে ক্যারিয়ার সচেতন তরুন তরুনীদের কথা ভেবে মনে শান্তি পাই।এই ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ভালো কিছু দিবে এটাই বিশ্বাস করি।

অনেকদিন পর টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনলাম, অনেক্ষন চোখ বুজে অনুভব করি, প্রকৃতির মাঝে ডুবে যাই। আহ মনটা জুড়িয়ে গেলো, বৃষ্টিপুর্ব আশেপাশ দেখি, বৃষ্টিপরবর্তী আকাশ, ভেজা গাছ, ভেজা পথ, সেই পুরনো দিনের মাটির সোধা গন্ধ নাকে লাগে।

শৈশবের সব স্মৃতিপূর্ন জায়গা বদলে গেছে, সেই খেলার মাঠ ইদগাহ, নয়তো স্মৃতিস্তম্ভ, বিভিন্ন স্থাপনায় বদলে গেছে। শহুরে শহুরে ছাপ আছে তবে প্রাণ পাই না। বিচিত্রতা আছে মুগ্ধতা নেই।

মানুষগুলো ধান্ধাবাজটাইপের মনে হলো, বগা ঘাটে নামলাম, মটরসাইকেল ভাড়া করে এলাম, বাসায় এসে ভাড়ার কথা বলতেই জানলাম আমার থেকে স্বাভাবিকের অনেকগুন বেশি নিয়েছে।একটু আহত হলাম। আমিতো তার মুখের কথা বিশ্বাস করেছি, নিজ এলাকার মানুষ হিসেবে ভেবেছি। তাহলে আমার সাথে এই জালিয়াতি করাটা ঠিক হলো।

ইদের দিন রাতে হাসপাতালে গেলাম, দোতালার গেট বন্ধ, জানতে চাইলাম কেনো, ভিতরে আসামী আছে, রাতে ছিনতাই হতে পারে তাই গেট খোলা যাবে না।তাহলে এই শিক্ষিত থানার মানুষের পর্যায়টা কোন পর্যন্ত গেছে ভাবার দরকার হয় না।

তবে বাউফলের মানুষের পেশা বদলে যাচ্ছে, ঘরে ঘরে শিক্ষার হার বাড়ছে। আমার বাড়ির পাশেই নাইয়া বাড়ি, আগে এদের পড়াশুনা ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিলো না। এবার যেয়ে দেখলাম সব ছোটরা পড়শুনা করছে। কেউ কেউ ক্লাসে ভালো রেজাল্টও করছে।আমার খুবই ভালো লেগেছে। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তো হতবাক, এক পরিবারের মেয়ে ঢাকা কবি নজরুলের অনার্সের ছাত্রী, বিশ্বাস হতে কস্ট হয়, এই পরিবার থেকে শিক্ষার জন্য মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়েছে।এটা বিশাল সাহসেরও ব্যাপার। যাদের সংসার চলতে কস্ট হতো, শিক্ষার ব্যপারে আগ্রহ কমই দেখেছি। সেই পরিবারের মেয়ে ঢাকায় পড়ে। ব্রাভো ব্রাভো, স্যালুট দেয়ার মতো কাজ।

আগে কর্মবিমুখ মানুষ দেখতাম, এখন এটা চোখে পড়ে না, সবাই কিছু না কিছু করছে। এটা খুবই আশার কথা। তবে শুধু বৈধভাবে আয়ের চিন্তাটা মাথায় থাকতো সবার তাহলে মনে খুব শান্তি পেতাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.