নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংখ্যালঘু নির্যাতন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ

১১ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪০

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর ও অর্ধশতাধিক উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, অগি্নসংযোগ, নির্যাতন, লুটপাট এবং মঠ-মন্দির ধ্বংসের প্রতিবাদে গত সোমবার বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদের নেতারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া, সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয়গুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে শাহাবউদ্দিন কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেয়ার পরপর সারাদেশে মহলবিশেষ এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। উদ্বেগের বিষয়, এই অরাজক পরিস্থিতি তৈরিতে একাত্তরের মতোই ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয় , চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নোয়াখালীসহ বেশ কিছু জেলায় গত ৪ দিন ধরে একটানা একতরফাভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো হচ্ছে। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর ও অর্ধশতাধিক উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেককে নির্মমভাবে জখম করে হত্যা করা হয়েছে। আগুন দিয়ে বাড়ির পর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই সঙ্কটকালে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের দেখা যায়নি। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে বলে নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরের বটেশ্বরী রোডের কয়েকটি হিন্দু দোকান ছাড়াও বাঁশখালীতে ১২টি বাড়ি ও ৩টি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এ সময় মন্দিরের একজন পুরোহিতকে হত্যা করা হয়। সাতকানিয়ায় ৮টি বাড়ি ও একটি বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালানো হয়। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন মন্দিরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জ গ্রামে ১২টি বাড়ির ৪৫টি ঘরে অগি্নসংযোগ, লুটপাট এবং একটি আশ্রমসহ ৫টি মন্দির ভাংচুর করা হয়। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারে ৫টি সোনার ও ১টি মুদি দোকানে এবং রায়পুরে মন্দিরসহ ২টি আশ্রমে হামলা করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া গ্রামে ১০টি, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ৩টি, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ৩টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ৩টি বাড়িতে অগি্নসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের গোপালপুর, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, রংপুরের মিঠাপুকুর, সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ি ও মৌলভী বাজারের বড়লেখার জুড়িবাজারে হিন্দুদের দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। শত শত বছর ধরে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক পাশাপাশি আত্মীয়ের মতো বসবাস করে আসছে। একের বিপদ-আপদে অন্যরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্ম ভিন্ন হলেও তারা একই ভাষায় কথা বলে। একই ধরনের পোশাক পরে। এক সঙ্গে উৎযাপন করে বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেয়। নগ্নপায়ে প্রভাতফেরিতে যায় দল বেঁধে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১ কোটি বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ একই তাঁবুর নিচে বসবাস করেছে ৯ মাস। একাত্তরের রণাঙ্গনে সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে হানাদার পাকসেনা, রাজাকার ও আলবদরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে ৩০ লাখ মানুষ। তখন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ আর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ধর্ম ভিন্ন হলেও তারা সবাই এদেশের নাগরিক। নিরাপদ জীবনযাপন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মতপ্রকাশ ও ধর্মপালনের সবারই রয়েছে সমান মৌলিক অধিকার। কেবল ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে কোনো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট, বাড়িঘরে আগুন দেয়া ও উপাসনালয় ধ্বংস করা এবং জন্মভূমি থেকে বিতাড়ন করার অধিকার কারো নেই। দেশের সংবিধান এই অধিকার কাউকে দেয়নি। তারপরও একটি স্বার্থান্বেষী মহল একাত্তরের মতো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে পুঁজি করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়, তা একাত্তরের পাকসেনাদের নির্যাতনকেও হার মানায়। সে সময় অনেক হিন্দু পরিবার আতঙ্কে অস্থির হয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সংখ্যালঘু নির্যাতনের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা এখনো ভুলতে পারে না এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। কিছুদিন আগে দিনাজপুরের চিরিবন্দরের বলাই বাজারে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। লুটপাট করা হয় তাদের সহায়-সম্বল ও দোকানপাট। গত বছর ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বৌদ্ধপল্লীতে তাদের উপাসনালয়ে যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে একটি কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাঈদীকে ফাঁসি দিয়েছে দেশের আদালত। প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির হরতাল ডেকেছে। এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কী করার আছে? কেন সংখ্যালঘুদের ওপর এই অন্যায় আক্রমণ? কেন তাদের ওপর অযাচিত হামলা? অথচ একটি ধর্মান্ধগোষ্ঠী ধর্মের নামে রাজনীতি করে, সেই ধর্ম কি তা সমর্থন করে? কোনো কুচক্রী মহলের উস্কানিতে সংখ্যালঘু ভাইবোনদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই আহ্বান সত্ত্বেও গত মঙ্গলবার দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা এবং প্রতিমা ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ঘটেছে নাটোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, খুলনা, নীলফামারী ও চট্টগ্রামে। গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ১৪ দল। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখার জন্য ১৪ দল ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, রাঙামাটি, ঈশ্বরদী, বগুড়া, গোপালগঞ্জ, যশোর ও ঝিনাইদহসহ সারদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার জন্য মানববন্ধন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সরকারের মন্ত্রীসহ দেশের গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মব্যবসায়ীদের এই সংঘাত ও সহিংসতা বন্ধের জন্য পাড়া-মহল্লা, গ্রামগঞ্জ এবং জেলা-উপজেলায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দেশের সব পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দেয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীরাও এই হামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আমাদের দেশে বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলছে, এমনই এক দুর্দিনে মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন বাংলাদেশের নোয়াখালীতে। মানুষের মধ্য থেকে কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা, সংঘাত ও হিংসা দূর করা যায়, তা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। তিনি মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তির মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। গত রোববার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছেন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি প্রতিটি আক্রান্ত এলাকায় কানসার্ট, শিবগঞ্জ ও বগুড়ার শেরপুরের মতো সর্বদলীয় বৈঠক করা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের সচেতন মানুষ। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সংঘাত ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই দুঃসময় সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় গিয়ে মানুষকে অভয় দিতে হবে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এলাকায় গিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে তারা কিছুটা হলেও ভরসা পাবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলকেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে এক সঙ্গে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলতে হবে, সংখ্যালঘু নির্যাতন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

রাসেল মাহমুদ শুভ্র বলেছেন: লেখাটার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.