নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতের হরতাল, বিপন্ন ম্যাডাম জিয়ার নিরাপত্তা

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৫০

সত্যিই কী বিচিত্র এদেশের রাজনীতি! যারা রাজনৈতিক দল করেন তারা কেবল ক্ষমতায় যেতে বা থাকতে পারলেই হলো; ওদের জনগণের প্রতি তেমন কোন নজর নেই। থাকলে এমন সহিংস হরতাল কি দিতে পারত? বিএনপি প্রধান বিরোধী দল, দু’তিনবার ক্ষমতাসীনও ছিল তারা কেন জামায়াতী ‘হরতাল’ ডাকল? শুধু কি হরতাল ডেকেছিল, সহিংসতাও ঐ জামায়াতের স্টাইলেই চালিয়ে গেছে। ট্রেনে আগুন, সিপার তুলে ফেলা, বাসে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া, দোকানপাট লুট, এমনতরো জামায়াতী সহিংসতা অনুসরণ করে বিএনপিও হরতাল সাকসেসফুল করবার অকারণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অকারণ বললাম, কারণ আজকাল ‘হরতাল’ ডাকলে তা ‘হরতাল’ হয় না। হরতাল যেই ডাকুক না কেন, আজকাল হরতাল সফল হওয়ার কোন উপায় নেই। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত পুলিশ প্রাথমিকভাবে, না হলে অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে, র‌্যাব ডাকে প্রশাসন। তাতেও যদি সায়েস্তা করা না যায় তখন বাধ্য হয়ে বর্ডার গার্ড বা ‘বিজিবি’ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এরা কি ধরনের তিন বা চার স্তরবিশিষ্ট ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ যে করেন, তার তো নমুনা আমরা সব সময় দেখছিই। এত স্তরের নিরাপত্তা নিলেও নিজেরাই নিরাপদ নয়, খোদ পুলিশ তো বটেই এমন কি র‌্যাব বা বিজিবি সদস্যরাও হামলা ও হুমকির সামনেই থেকে যায়। সব জায়গা থেকেই খবর আসছে, পুলিশসহ এতজনের মৃত্যু। ইদানীং যে কৌশলে জামায়াত মানুষের ওপর অতর্কিতে হামলা চালাচ্ছে, তাতে দেখছি পুলিশ একেধারে কাহিল। থানায় আক্রমণ করে ভেতরে ঢুকে কুপিয়ে পুলিশদের হত্যা করছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। কমিউনিস্টরা আগেরকালে ‘হিট এ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তটস্থ করে রাখত। আর এখন জামায়াত অনেকটা তেমনি পদ্ধতিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সরকারকে মহাসঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। এমন পদ্ধতিতে হামলা চালালে কখন কোন দিক থেকে আক্রমণ আসবে তা বোঝা যায় না। তাই এমন যে কোন হামলার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর তৈরি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী জামায়াত-শিবিরের ‘ঝটিকা মিছিল’ মোকাবেলা করতে গিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে। তাই যখন গুলি চালাচ্ছে কিংবা রাবার বুলেট অথবা কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ছে তখন লোকজন মারা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ক’জন ঐ জঙ্গী দলের দুষ্কৃতি, তা বলতে পারব না, তবে ওদের কেউ না কেউ হয়ত মারা যাচ্ছে। কিন্তু নিরীহ মানুষ, পথচারী রিক্সা-মোটর-অটোচালক-এরা তো নিশ্চয়ই জামায়াতের লোক সবাই নয়। তবু তাদের প্রাণ দিতে হচ্ছে জামায়াতের অপকর্মের কারণে।

যে হরতালের কথা তুলে আলোচনা শুরু করেছিলাম, সে প্রসঙ্গে আসি। এই ঢাকা শহরের হরতালের কথাই বলি। তখন অর্থাৎ ৪০, ৫০, ৬০ দশকে এমনকি ‘৭০-৭১ সালে হরতালের চেহারা এমন সহিংস ছিল না। তখন কোন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন কিংবা ছাত্র বা যুব সংগঠন যদি হরতাল আহ্বান করত, তার কিন্তু নিয়ম-নীতি ছিল, ছিল শৃঙ্খলাও। যেমন হরতাল যারা ঘোষণা করত, তারা এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড, সংবাদপত্রের পরিবহন এমন সব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে হরতালের আওতার বাইরে রাখত। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছোট্ট একটা বক্স করে ছাপা হতো ‘যা হরতারের আওয়াভুক্ত নয়’ শিরোনামে। হরতালে পিকেটিং করা কর্মীরা সাধারণত এ সবের ওপর হামলাও করত না। কিন্তু এখনকার হরতালে অপনি নিশ্চিত নন, গাড়ি আদৌ বের করতে পারবেন কিনা? যদি বের করেন তবে হিংস্র হরতাল আহ্বানকারীদের কর্মীরা আরও সহিংস হয়ে নিজের ইচ্ছেয় অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণ চালায়। অবশ্য পুলিশও এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আচরণে অবতীর্ণ হয়ে প্রত্যাঘাতমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

এখানে একটা কথা বলে রাখি, আগের কালে রিক্সা, অটো, বাস, ট্রাক, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি পরিবহনের চালক সমবায় সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি সব ছিল; ফলে হরতাল কেউ করতে চাইলে অনেক আগে থেকেই এসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সমর্থন চাইতেন। ফলে ঐকমত্য পোষণ করলে সকলে সমর্থন জানালে হরতাল হতো সর্বাত্মক। কোন গাড়ি-ঘাড়াই চলাচল করত না। দোকানপাট খুলত না। এমনকি ট্রেন-বিমান-লঞ্চও কখনও কখনও বন্ধ থাকত, মালিকদের ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন থাকলে। যদি কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হতেন, তবে তো কথাই ছিল না। বন্ধ থাকতই।

হরতালেও একটা ডিসিপ্লিন ছিল। নিয়মনীতি মেনে হরতাল ডাকা এবং পালন করা হতো। হরতাল ডাকা হতো সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে, তাও হঠাৎ করে সরকারী ছুটির আগে বা পরের দিন নয়। আজ যেমন হয়। ফলে হরতালের চরিত্র বা সংজ্ঞাটাই মনে হয় একেবারে উল্টে গেছে। আগে যে কারণে হরতাল ডাকা হতো, তা যেমন স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছিল, তেমনি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাকা হতো। প্রত্যেক সংগঠনের কর্মী নেতারা মাঠে থাকতেন? কারণ যদি কোন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা মোকাবেলার জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন নেতারা। আর এখন তার কোন সুযোগ নেই। যে দলই হরতাল ডাকুক তাতে কর্মীদের কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। সব দলেরই একজনের ওপর সিদ্ধান্ত নির্ভর করে- দলীয় শীর্ষ নেতাই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আগের কালে হরতাল যারা ডাকতেন, যেহেতু সময় নিয়ে তারা হরতালের দিন ঠিক করতেন, তার ফলে নাগরিক জীবনে দুঃসহ যন্ত্রণা-দুর্ভোগের সৃষ্টি হতো না। কিন্তু আজকাল কাউকে কেউ তোয়াক্কা করে না। যে যখন খুশি হরতাল ডেকে দেয়। পালন হোক বা না হোক, হরতাল তো করা গেল! এতে যে জনগণের জীবনে যন্ত্রণা-ভোগান্তির একশেষ হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখেন না রাজনৈতিক দলগুলো। এখন হরতালে অগ্নিসংযোগ, বাস পোড়ানো, হুমকি হামলা অকারণে হতে থাকে। পিকেটিং হয় না- এ্যাটাক হয়। এটা প্রচলিত অর্থে হরতালের চরিত্র নয়। একে গুণ্ডা-পাণ্ডার কাজ কিংবা জঙ্গী-সন্ত্রাসী অপকর্মই বলা যেতে পারে।

এখন হরতালে যদি বড়লোকদের দামী গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো হয়, তবেই তো হরতাল ‘সফল’ হয়েছে বলে মনে হয়। বাস পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এমনতরো ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে এখনকার হরতালে; অথচ এ ব্যাপারে একদল অন্য দলকে, না হলে সরকার বিরোধী দলকে, অথবা বিরোধী দল অনবরত সরকারকে দোষ দিয়েই যাচ্ছে। মনে হয় এটাই বুঝি বিরোধী দলের একমাত্র কাজ।

ধরুন, আমাদের দেশের বিরোধী দলগুলোর এমনইতো চরিত্র- কার্যকলাপ। একে অপরকে দোষারোপ করতে পারলেই মনে করেন তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাঁদের নজর থাকে শকুনীর মতো পরবর্তী নির্বাচনের দিকে। তাকে লক্ষ্য করেই যত কথা আর যথা কর্ম। এর বাইরে ঐটুকুও সেই মুহূর্তে ভুলে যান যে, ঐ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঐ জনগণের কাছেই যেতে হবে। অথচ অযথা হরতাল দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত- জনগণের দুর্ভোগ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জীবনাশঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা সুদূরপ্রসারী এমন সব–ক্ষতি করেন কিন্তু ঐ মুহূর্তে অনুতপ্ত হবেন না। তা না হলে, দেশের এত দাঁতের ডাক্তার থাকতে এখন এই বয়েসে মাদাম জিয়ার দাঁত দেখাতে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। কথা ছিল ওখানে ৪/৫ দিন থেকে সুপুত্র তারেককে দেখতে যাবেন। কিন্তু হায়রে রাজনীতি। খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরেই ‘কাজ’ সেরে ঢাকা ফিরে এলেন। কেবল ফিরে এলেন না, এসে রাত দশটায়ই তিনি দলের সিনিয়র লিডারদের সাথে বৈঠক করলেন এবং ঠিক হলো পরদিন তিনি বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন। সংবাদ সম্মেলন হবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে। হলো। লম্বা বিবৃতি দিলেন সাংবাদিকদের কাছে। ঠাসা মিথ্যাচারে ভারি বিবৃতি পাঠ করার পর সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের সুযোগই দিলেন না। তাঁর দেয়া বিবৃতিতে যে ফাঁক ও কৌশল ছিল, সেগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্ন ছিল কিন্তু মাদাম জিয়া পাত্তাই দিলেন না। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এমন জটিল পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের এভাবে ডেকে কথা না বলার কারণটা কি?

এই খানেই সৃষ্টি হলো এক অনন্য হরতাল দৃষ্টান্ত জামায়াত ডেকেছিল হরতাল ৩৬ ঘণ্টা, শুক্র ও শনিবার তো সরকারি ছুটি তাই জামায়াত রবিবার ও সোমবার ডেকেছিল হরতাল নিরবচ্ছিন্ন, খালেদা জিয়া ডাকলেন মঙ্গলবার। তিন দিন পর পর হরতাল। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা চলছে, অথচ সেদিকে জামায়াতের দৃষ্টি থাকবে না জানি, ওরা তো সকল নাশকতা করতেই মাঠে নেমেছে কিন্তু বিএনপি কেন ওদের সাথে? ভাবলেন না একবার, এই ছেলেমেয়েদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবরাই ভোটের সময় ভোট দিতে পারেন! পাঠক, এটা একটা রেওয়াজই হয়ে গেছে, ছুটির দিনের সাথে হরতাল ডাকা- তাহলে ফাঁকিবাজ কিংবা দলীয় সমর্থকদের ছুটির দিন বেড়ে যায়। এবারে ছুটি হয়ে গেল পর পর পাঁচদিন।... লোকে বলছিলেন, প্রশাসনকে অকার্যকর করতেই লক্ষ্য এটি। একজন মন্তব্য করলেন, জামায়াত নাকি আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে, তবে এমন ধারাবাহিক হরতালের ডাক কেন? তবে কি আঁতাতের অভিযোগ মিথ্যা? নাকি জামায়াতকে মান ভাঙ্গিয়ে কাছে টানার জন্যই ম্যাডাম এমন কৌশল গ্রহণ করেছেন? আমারও তাই মনে হচ্ছে। বিএনপি এখন জামায়াতকে তোষামোদ করে নিজেরা নিজেদের কুলমান রক্ষা করতে চেষ্টা করছে। দেখুন না পাঠক, হরতাল করার সময় যে পদ্ধতিতে অপকর্ম এবং সন্ত্রাস চালায় জামায়াত-শিবির, ঠিক একই পদ্ধতিতে বিএনপিও আগে এবং পরে হরতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি বোধ হয় জামায়াতের মতন ফিসপ্লেট উঠিয়ে কিংবা আগুন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে উদ্যত। ককটেল ফোটানো, বাসে আগুন এবং পুলিশের সাথে অকারণে সংঘর্ষ বাধিয়ে চলমান পরিস্থিতিকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, বিএনপি কিন্তু সত্যিই শান্তিপূর্ণভাবে ‘হরতাল’ বা তাদের দেয়া কর্মসূচী পালন করতে চাইছে কিন্তু জামায়াত ঠিক তা হতে দিচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে বা বলাবলি করছেন কেউ কেউ, এটাতো জামায়াত চাচ্ছেই, তাতে ঘি ঢালতে গেল কেন বিএনপি? তারই সুযোগ নিয়ে জামায়াত অনুপ্রবেশ করেছে এবং করছে, তাই বিএনপির হরতালেও একই ধরনের ধ্বংসাত্মক কা-কারখানা চালানো হচ্ছে। তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে, জামায়াত-বিএনপি বন্ধুত্ব অটুটই আছে, এতদিন যা দেখানো হচ্ছিল, তা কেবলই নাটক? জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের মিল মিলাপ চলছে, বৈঠক হচ্ছে, এটা তাহলে কি এ থেকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে? যা হোক, জামায়াত যার সাথেই আঁতাত করুক জোট বাঁধুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র যাদের দাবি, তাদের সাথে কখনই আপোস হতে পারে না, আমরা সেই বিশ্বাস করি এবং এ বিশ্বাসেই হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলাম জানি দুশমন ঐ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, শোষক সামরিক জান্তা ও কূটরাজনীতিকদের নিরবচ্ছিন্ন চক্রান্তের বিরুদ্ধে। এটাই সত্য, সেই লড়াইয়ে এই জামায়াত, শিবির, আলবদর, আল শামস, শাহিন ফৌজ মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি দল-গোষ্ঠীগুলো সবাই-বিশেষ করে এদেশীয় গোলাম আযম, নিজামীরা সবাই দলবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। বাংলাদেশের যেন অভ্যুদয় না ঘটে তার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এবং সহিংস সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সহযোগী হিসেবে পাকিস্তানীদের পরিকল্পিত গণহত্যায় শামিল হয়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাকার অপরাধ করেছে। ওদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে নির্লজ্জ বেহায়ার মতন, দেশদ্রোহী কাফেরের মতন।

জামায়াত এতদিন ধরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে নিত্যনিয়োজিত পুলিশবাহিনীর সদস্যদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালাচ্ছে। তাতে প্রথমে ভড়কে যাচ্ছে পুলিশবাহিনী কিন্তু যখন পাল্টা আঘাত হানছে, আহত নিহত হচ্ছে অনেকে, তখন জামায়াতী সন্ত্রাসীরা ওটার দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে পুলিশের ওপর। এমন ঘটনা ঘটছে গত কয়েকমাস যাবত। তবু কেন পুলিশকে মার খেতে হয়! তবে কি ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’ নাকি সর্ষেয় ভূত রয়ে গেছে! না হলে, পুলিশকে যখন জামায়াতীরা পেটায়, তখন পুলিশগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কেন?

আমরা কি তবে ব্রিটিশবিরোধী আমলে ফিরে গেলাম? তখন যাদের সন্ত্রাসবাদী বা টেরোরিস্ট বলা হতো-তাঁরা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সশস্ত্র যোদ্ধা, দেশপ্রেমিক; কিন্তু এখন যাদের সেই আমলের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত দেখছি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে- এরা তো দেশদ্রোহী; এরা বাংলাদেশ চায়নি, পাকিস্তান বহাল রাখতেই চেয়েছিল। ক্ষমতালিপ্সার সুযোগে বিদেশে, পাকিস্তানে পালিয়ে গেলেও নতুন করে জেনারেল জিয়ার আমলেই তারা অনুপ্রবেশ করে জেঁকে বসল। সেই দুষ্টক্ষত এখন দগদগে ঘা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ওদের সেদিনের অন্যায়গুলোর বিচার, যেই না শুরু হতে যাচ্ছিল, অমনি যেন ওদের বীভৎসরূপ একাত্তরের মতই বের হতে থাকল। একাত্তরের যেন পুনরাবৃত্তি। এখন তো চাক বা না চাক, বিএনপি এসে জামায়াতের সাথে হাত মেলাচ্ছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করেছিল তা সত্য প্রমাণিত হচ্ছে না। তাই চোরের মায়ের বড় গলার মতন অসত্যকে সত্য প্রমাণে বিশাল ঐ বিবৃতি দিয়ে মিথ্যার বেসাতি গেয়েছেন। কারণ জামায়াতের গলা জড়িয়ে ধরতেই হবে বিএনপিকে, বড্ড বেকায়দায় পড়ে গেছে ওরা। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কসরত এতদিন যা করছিল, এবার থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ল বলে মনে হচ্ছে। সে কারণেই হরতালে জামায়াতী ‘করতাল’ বাজাচ্ছে তারা। ম্যাডাম খালেদা জিয়া বলেছেন- দেশে নাকি ‘গণহত্যা’ চলছে। সবাই বলছেন ‘গণহত্যার’ সংজ্ঞা আর দর্শনের কথা; কিন্তু আমি একটু অন্যদৃষ্টিতে দেখতে চাই এই ‘মহতী উক্তি’কে, কারণ ম্যাডামের মুখ থেকে বেরিয়েছে তো? তাও আবার সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে আসার পর। ... তিনি অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম (তখনও ম্যাডাম হননি) খালেদা জিয়া গণহত্যা তো একাত্তরে দেখেননি; কারণ, যারা গণহত্যা চালিয়েছিল এই জামায়াতীদের মতন কুলাঙ্গার বিশ্বাসঘাতকদের সঙ্গে নিয়ে, সে তো ‘মহীয়সী নারী’ দেখেননি, যেখানে ছিলেন সেখানে ওসব শুনতেও পাননি, তাই ‘গণহত্যা’ কাকে বলে জানবেন কি করে?

আবার দেখুন না, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী এলেন ঢাকায়। তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। আর এ ধরনের সাক্ষাতের বিষয় নির্ধারিত হয় দীর্ঘদিন আগেই। কিন্তু তথাকথিত বিরোধীদলীয় নেত্রী ঠিক আগের দিন এই ‘সাক্ষাতকার’ বাতিল করে দিলেন- অবশ্য সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পর। কে জানে কি হলো, কেন এটা বাতিল করলেন! এতে দেশের মর্যাদা এবং মহান অতিথি কেমন একটা বেমক্কা অবস্থায় পড়ে গেলেন, তাকি একবারও ভেবে দেখেছেন? ম্যাডাম যখন ভারত সফরে গেলেন, ফিরে এলেন হাসিমুখে! তারপর সেই দেশের বর্ষীয়ান নেতা রাষ্ট্রপতিকে ঠুনকো নিরাপত্তার অভিযোগ দেখিয়ে নির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করলেন? সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি নড়াইলে যাচ্ছেন, শিলাইদহের কুঠিবাড়ী, মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, পরিদর্শন করতে পারলেন। যেখানে আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী এদেশেরই নাগরিক ক’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও অভ্যাগত মান্যবর অতিথির সাথে দেখা করতে পারলেন না! সেদিন জামায়াতের হরতাল ছিল। তাই সোনারগাঁ হোটেলের সামনে পটকা ফুটিয়ে নিরাপত্তাহীনতা প্রমাণ করাতে হলো। হায়রে ভয়ঙ্কর রাজনীতি!

হরতাল দিয়ে শুরু করেছিলাম, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেও কিন্তু সেই নিরাপত্তাহীনতার হরতাল ডেকেছিলেন ম্যাডাম জিয়াও। এমনি নষ্ট রাজনীতির অদ্ভুত নমুনা।

কামাল লোহানী

সত্যিই কী বিচিত্র এদেশের রাজনীতি! যারা রাজনৈতিক দল করেন তারা কেবল ক্ষমতায় যেতে বা থাকতে পারলেই হলো; ওদের জনগণের প্রতি তেমন কোন নজর নেই। থাকলে এমন সহিংস হরতাল কি দিতে পারত? বিএনপি প্রধান বিরোধী দল, দু’তিনবার ক্ষমতাসীনও ছিল তারা কেন জামায়াতী ‘হরতাল’ ডাকল? শুধু কি হরতাল ডেকেছিল, সহিংসতাও ঐ জামায়াতের স্টাইলেই চালিয়ে গেছে। ট্রেনে আগুন, সিপার তুলে ফেলা, বাসে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া, দোকানপাট লুট, এমনতরো জামায়াতী সহিংসতা অনুসরণ করে বিএনপিও হরতাল সাকসেসফুল করবার অকারণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অকারণ বললাম, কারণ আজকাল ‘হরতাল’ ডাকলে তা ‘হরতাল’ হয় না। হরতাল যেই ডাকুক না কেন, আজকাল হরতাল সফল হওয়ার কোন উপায় নেই। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত পুলিশ প্রাথমিকভাবে, না হলে অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে, র‌্যাব ডাকে প্রশাসন। তাতেও যদি সায়েস্তা করা না যায় তখন বাধ্য হয়ে বর্ডার গার্ড বা ‘বিজিবি’ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এরা কি ধরনের তিন বা চার স্তরবিশিষ্ট ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ যে করেন, তার তো নমুনা আমরা সব সময় দেখছিই। এত স্তরের নিরাপত্তা নিলেও নিজেরাই নিরাপদ নয়, খোদ পুলিশ তো বটেই এমন কি র‌্যাব বা বিজিবি সদস্যরাও হামলা ও হুমকির সামনেই থেকে যায়। সব জায়গা থেকেই খবর আসছে, পুলিশসহ এতজনের মৃত্যু। ইদানীং যে কৌশলে জামায়াত মানুষের ওপর অতর্কিতে হামলা চালাচ্ছে, তাতে দেখছি পুলিশ একেধারে কাহিল। থানায় আক্রমণ করে ভেতরে ঢুকে কুপিয়ে পুলিশদের হত্যা করছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। কমিউনিস্টরা আগেরকালে ‘হিট এ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তটস্থ করে রাখত। আর এখন জামায়াত অনেকটা তেমনি পদ্ধতিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সরকারকে মহাসঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। এমন পদ্ধতিতে হামলা চালালে কখন কোন দিক থেকে আক্রমণ আসবে তা বোঝা যায় না। তাই এমন যে কোন হামলার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর তৈরি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী জামায়াত-শিবিরের ‘ঝটিকা মিছিল’ মোকাবেলা করতে গিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে। তাই যখন গুলি চালাচ্ছে কিংবা রাবার বুলেট অথবা কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ছে তখন লোকজন মারা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ক’জন ঐ জঙ্গী দলের দুষ্কৃতি, তা বলতে পারব না, তবে ওদের কেউ না কেউ হয়ত মারা যাচ্ছে। কিন্তু নিরীহ মানুষ, পথচারী রিক্সা-মোটর-অটোচালক-এরা তো নিশ্চয়ই জামায়াতের লোক সবাই নয়। তবু তাদের প্রাণ দিতে হচ্ছে জামায়াতের অপকর্মের কারণে।

যে হরতালের কথা তুলে আলোচনা শুরু করেছিলাম, সে প্রসঙ্গে আসি। এই ঢাকা শহরের হরতালের কথাই বলি। তখন অর্থাৎ ৪০, ৫০, ৬০ দশকে এমনকি ‘৭০-৭১ সালে হরতালের চেহারা এমন সহিংস ছিল না। তখন কোন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন কিংবা ছাত্র বা যুব সংগঠন যদি হরতাল আহ্বান করত, তার কিন্তু নিয়ম-নীতি ছিল, ছিল শৃঙ্খলাও। যেমন হরতাল যারা ঘোষণা করত, তারা এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড, সংবাদপত্রের পরিবহন এমন সব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে হরতালের আওতার বাইরে রাখত। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছোট্ট একটা বক্স করে ছাপা হতো ‘যা হরতারের আওয়াভুক্ত নয়’ শিরোনামে। হরতালে পিকেটিং করা কর্মীরা সাধারণত এ সবের ওপর হামলাও করত না। কিন্তু এখনকার হরতালে অপনি নিশ্চিত নন, গাড়ি আদৌ বের করতে পারবেন কিনা? যদি বের করেন তবে হিংস্র হরতাল আহ্বানকারীদের কর্মীরা আরও সহিংস হয়ে নিজের ইচ্ছেয় অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণ চালায়। অবশ্য পুলিশও এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আচরণে অবতীর্ণ হয়ে প্রত্যাঘাতমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

এখানে একটা কথা বলে রাখি, আগের কালে রিক্সা, অটো, বাস, ট্রাক, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি পরিবহনের চালক সমবায় সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি সব ছিল; ফলে হরতাল কেউ করতে চাইলে অনেক আগে থেকেই এসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সমর্থন চাইতেন। ফলে ঐকমত্য পোষণ করলে সকলে সমর্থন জানালে হরতাল হতো সর্বাত্মক। কোন গাড়ি-ঘাড়াই চলাচল করত না। দোকানপাট খুলত না। এমনকি ট্রেন-বিমান-লঞ্চও কখনও কখনও বন্ধ থাকত, মালিকদের ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন থাকলে। যদি কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হতেন, তবে তো কথাই ছিল না। বন্ধ থাকতই।

হরতালেও একটা ডিসিপ্লিন ছিল। নিয়মনীতি মেনে হরতাল ডাকা এবং পালন করা হতো। হরতাল ডাকা হতো সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে, তাও হঠাৎ করে সরকারী ছুটির আগে বা পরের দিন নয়। আজ যেমন হয়। ফলে হরতালের চরিত্র বা সংজ্ঞাটাই মনে হয় একেবারে উল্টে গেছে। আগে যে কারণে হরতাল ডাকা হতো, তা যেমন স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ছিল, তেমনি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাকা হতো। প্রত্যেক সংগঠনের কর্মী নেতারা মাঠে থাকতেন? কারণ যদি কোন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা মোকাবেলার জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন নেতারা। আর এখন তার কোন সুযোগ নেই। যে দলই হরতাল ডাকুক তাতে কর্মীদের কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। সব দলেরই একজনের ওপর সিদ্ধান্ত নির্ভর করে- দলীয় শীর্ষ নেতাই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আগের কালে হরতাল যারা ডাকতেন, যেহেতু সময় নিয়ে তারা হরতালের দিন ঠিক করতেন, তার ফলে নাগরিক জীবনে দুঃসহ যন্ত্রণা-দুর্ভোগের সৃষ্টি হতো না। কিন্তু আজকাল কাউকে কেউ তোয়াক্কা করে না। যে যখন খুশি হরতাল ডেকে দেয়। পালন হোক বা না হোক, হরতাল তো করা গেল! এতে যে জনগণের জীবনে যন্ত্রণা-ভোগান্তির একশেষ হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখেন না রাজনৈতিক দলগুলো। এখন হরতালে অগ্নিসংযোগ, বাস পোড়ানো, হুমকি হামলা অকারণে হতে থাকে। পিকেটিং হয় না- এ্যাটাক হয়। এটা প্রচলিত অর্থে হরতালের চরিত্র নয়। একে গুণ্ডা-পাণ্ডার কাজ কিংবা জঙ্গী-সন্ত্রাসী অপকর্মই বলা যেতে পারে।

এখন হরতালে যদি বড়লোকদের দামী গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো হয়, তবেই তো হরতাল ‘সফল’ হয়েছে বলে মনে হয়। বাস পোড়ানো, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এমনতরো ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে এখনকার হরতালে; অথচ এ ব্যাপারে একদল অন্য দলকে, না হলে সরকার বিরোধী দলকে, অথবা বিরোধী দল অনবরত সরকারকে দোষ দিয়েই যাচ্ছে। মনে হয় এটাই বুঝি বিরোধী দলের একমাত্র কাজ।

ধরুন, আমাদের দেশের বিরোধী দলগুলোর এমনইতো চরিত্র- কার্যকলাপ। একে অপরকে দোষারোপ করতে পারলেই মনে করেন তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাঁদের নজর থাকে শকুনীর মতো পরবর্তী নির্বাচনের দিকে। তাকে লক্ষ্য করেই যত কথা আর যথা কর্ম। এর বাইরে ঐটুকুও সেই মুহূর্তে ভুলে যান যে, ঐ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঐ জনগণের কাছেই যেতে হবে। অথচ অযথা হরতাল দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত- জনগণের দুর্ভোগ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জীবনাশঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা সুদূরপ্রসারী এমন সব–ক্ষতি করেন কিন্তু ঐ মুহূর্তে অনুতপ্ত হবেন না। তা না হলে, দেশের এত দাঁতের ডাক্তার থাকতে এখন এই বয়েসে মাদাম জিয়ার দাঁত দেখাতে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। কথা ছিল ওখানে ৪/৫ দিন থেকে সুপুত্র তারেককে দেখতে যাবেন। কিন্তু হায়রে রাজনীতি। খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরেই ‘কাজ’ সেরে ঢাকা ফিরে এলেন। কেবল ফিরে এলেন না, এসে রাত দশটায়ই তিনি দলের সিনিয়র লিডারদের সাথে বৈঠক করলেন এবং ঠিক হলো পরদিন তিনি বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন। সংবাদ সম্মেলন হবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে। হলো। লম্বা বিবৃতি দিলেন সাংবাদিকদের কাছে। ঠাসা মিথ্যাচারে ভারি বিবৃতি পাঠ করার পর সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের সুযোগই দিলেন না। তাঁর দেয়া বিবৃতিতে যে ফাঁক ও কৌশল ছিল, সেগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্ন ছিল কিন্তু মাদাম জিয়া পাত্তাই দিলেন না। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এমন জটিল পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের এভাবে ডেকে কথা না বলার কারণটা কি?

এই খানেই সৃষ্টি হলো এক অনন্য হরতাল দৃষ্টান্ত জামায়াত ডেকেছিল হরতাল ৩৬ ঘণ্টা, শুক্র ও শনিবার তো সরকারি ছুটি তাই জামায়াত রবিবার ও সোমবার ডেকেছিল হরতাল নিরবচ্ছিন্ন, খালেদা জিয়া ডাকলেন মঙ্গলবার। তিন দিন পর পর হরতাল। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা চলছে, অথচ সেদিকে জামায়াতের দৃষ্টি থাকবে না জানি, ওরা তো সকল নাশকতা করতেই মাঠে নেমেছে কিন্তু বিএনপি কেন ওদের সাথে? ভাবলেন না একবার, এই ছেলেমেয়েদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবরাই ভোটের সময় ভোট দিতে পারেন! পাঠক, এটা একটা রেওয়াজই হয়ে গেছে, ছুটির দিনের সাথে হরতাল ডাকা- তাহলে ফাঁকিবাজ কিংবা দলীয় সমর্থকদের ছুটির দিন বেড়ে যায়। এবারে ছুটি হয়ে গেল পর পর পাঁচদিন।... লোকে বলছিলেন, প্রশাসনকে অকার্যকর করতেই লক্ষ্য এটি। একজন মন্তব্য করলেন, জামায়াত নাকি আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে, তবে এমন ধারাবাহিক হরতালের ডাক কেন? তবে কি আঁতাতের অভিযোগ মিথ্যা? নাকি জামায়াতকে মান ভাঙ্গিয়ে কাছে টানার জন্যই ম্যাডাম এমন কৌশল গ্রহণ করেছেন? আমারও তাই মনে হচ্ছে। বিএনপি এখন জামায়াতকে তোষামোদ করে নিজেরা নিজেদের কুলমান রক্ষা করতে চেষ্টা করছে। দেখুন না পাঠক, হরতাল করার সময় যে পদ্ধতিতে অপকর্ম এবং সন্ত্রাস চালায় জামায়াত-শিবির, ঠিক একই পদ্ধতিতে বিএনপিও আগে এবং পরে হরতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি বোধ হয় জামায়াতের মতন ফিসপ্লেট উঠিয়ে কিংবা আগুন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে উদ্যত। ককটেল ফোটানো, বাসে আগুন এবং পুলিশের সাথে অকারণে সংঘর্ষ বাধিয়ে চলমান পরিস্থিতিকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, বিএনপি কিন্তু সত্যিই শান্তিপূর্ণভাবে ‘হরতাল’ বা তাদের দেয়া কর্মসূচী পালন করতে চাইছে কিন্তু জামায়াত ঠিক তা হতে দিচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে বা বলাবলি করছেন কেউ কেউ, এটাতো জামায়াত চাচ্ছেই, তাতে ঘি ঢালতে গেল কেন বিএনপি? তারই সুযোগ নিয়ে জামায়াত অনুপ্রবেশ করেছে এবং করছে, তাই বিএনপির হরতালেও একই ধরনের ধ্বংসাত্মক কা-কারখানা চালানো হচ্ছে। তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে, জামায়াত-বিএনপি বন্ধুত্ব অটুটই আছে, এতদিন যা দেখানো হচ্ছিল, তা কেবলই নাটক? জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের মিল মিলাপ চলছে, বৈঠক হচ্ছে, এটা তাহলে কি এ থেকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে? যা হোক, জামায়াত যার সাথেই আঁতাত করুক জোট বাঁধুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র যাদের দাবি, তাদের সাথে কখনই আপোস হতে পারে না, আমরা সেই বিশ্বাস করি এবং এ বিশ্বাসেই হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলাম জানি দুশমন ঐ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, শোষক সামরিক জান্তা ও কূটরাজনীতিকদের নিরবচ্ছিন্ন চক্রান্তের বিরুদ্ধে। এটাই সত্য, সেই লড়াইয়ে এই জামায়াত, শিবির, আলবদর, আল শামস, শাহিন ফৌজ মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি দল-গোষ্ঠীগুলো সবাই-বিশেষ করে এদেশীয় গোলাম আযম, নিজামীরা সবাই দলবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। বাংলাদেশের যেন অভ্যুদয় না ঘটে তার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এবং সহিংস সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সহযোগী হিসেবে পাকিস্তানীদের পরিকল্পিত গণহত্যায় শামিল হয়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাকার অপরাধ করেছে। ওদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে নির্লজ্জ বেহায়ার মতন, দেশদ্রোহী কাফেরের মতন।

জামায়াত এতদিন ধরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে নিত্যনিয়োজিত পুলিশবাহিনীর সদস্যদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালাচ্ছে। তাতে প্রথমে ভড়কে যাচ্ছে পুলিশবাহিনী কিন্তু যখন পাল্টা আঘাত হানছে, আহত নিহত হচ্ছে অনেকে, তখন জামায়াতী সন্ত্রাসীরা ওটার দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে পুলিশের ওপর। এমন ঘটনা ঘটছে গত কয়েকমাস যাবত। তবু কেন পুলিশকে মার খেতে হয়! তবে কি ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’ নাকি সর্ষেয় ভূত রয়ে গেছে! না হলে, পুলিশকে যখন জামায়াতীরা পেটায়, তখন পুলিশগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কেন?

আমরা কি তবে ব্রিটিশবিরোধী আমলে ফিরে গেলাম? তখন যাদের সন্ত্রাসবাদী বা টেরোরিস্ট বলা হতো-তাঁরা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সশস্ত্র যোদ্ধা, দেশপ্রেমিক; কিন্তু এখন যাদের সেই আমলের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত দেখছি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে- এরা তো দেশদ্রোহী; এরা বাংলাদেশ চায়নি, পাকিস্তান বহাল রাখতেই চেয়েছিল। ক্ষমতালিপ্সার সুযোগে বিদেশে, পাকিস্তানে পালিয়ে গেলেও নতুন করে জেনারেল জিয়ার আমলেই তারা অনুপ্রবেশ করে জেঁকে বসল। সেই দুষ্টক্ষত এখন দগদগে ঘা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ওদের সেদিনের অন্যায়গুলোর বিচার, যেই না শুরু হতে যাচ্ছিল, অমনি যেন ওদের বীভৎসরূপ একাত্তরের মতই বের হতে থাকল। একাত্তরের যেন পুনরাবৃত্তি। এখন তো চাক বা না চাক, বিএনপি এসে জামায়াতের সাথে হাত মেলাচ্ছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করেছিল তা সত্য প্রমাণিত হচ্ছে না। তাই চোরের মায়ের বড় গলার মতন অসত্যকে সত্য প্রমাণে বিশাল ঐ বিবৃতি দিয়ে মিথ্যার বেসাতি গেয়েছেন। কারণ জামায়াতের গলা জড়িয়ে ধরতেই হবে বিএনপিকে, বড্ড বেকায়দায় পড়ে গেছে ওরা। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কসরত এতদিন যা করছিল, এবার থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ল বলে মনে হচ্ছে। সে কারণেই হরতালে জামায়াতী ‘করতাল’ বাজাচ্ছে তারা। ম্যাডাম খালেদা জিয়া বলেছেন- দেশে নাকি ‘গণহত্যা’ চলছে। সবাই বলছেন ‘গণহত্যার’ সংজ্ঞা আর দর্শনের কথা; কিন্তু আমি একটু অন্যদৃষ্টিতে দেখতে চাই এই ‘মহতী উক্তি’কে, কারণ ম্যাডামের মুখ থেকে বেরিয়েছে তো? তাও আবার সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে আসার পর। ... তিনি অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম (তখনও ম্যাডাম হননি) খালেদা জিয়া গণহত্যা তো একাত্তরে দেখেননি; কারণ, যারা গণহত্যা চালিয়েছিল এই জামায়াতীদের মতন কুলাঙ্গার বিশ্বাসঘাতকদের সঙ্গে নিয়ে, সে তো ‘মহীয়সী নারী’ দেখেননি, যেখানে ছিলেন সেখানে ওসব শুনতেও পাননি, তাই ‘গণহত্যা’ কাকে বলে জানবেন কি করে?

আবার দেখুন না, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী এলেন ঢাকায়। তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। আর এ ধরনের সাক্ষাতের বিষয় নির্ধারিত হয় দীর্ঘদিন আগেই। কিন্তু তথাকথিত বিরোধীদলীয় নেত্রী ঠিক আগের দিন এই ‘সাক্ষাতকার’ বাতিল করে দিলেন- অবশ্য সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পর। কে জানে কি হলো, কেন এটা বাতিল করলেন! এতে দেশের মর্যাদা এবং মহান অতিথি কেমন একটা বেমক্কা অবস্থায় পড়ে গেলেন, তাকি একবারও ভেবে দেখেছেন? ম্যাডাম যখন ভারত সফরে গেলেন, ফিরে এলেন হাসিমুখে! তারপর সেই দেশের বর্ষীয়ান নেতা রাষ্ট্রপতিকে ঠুনকো নিরাপত্তার অভিযোগ দেখিয়ে নির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করলেন? সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি নড়াইলে যাচ্ছেন, শিলাইদহের কুঠিবাড়ী, মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, পরিদর্শন করতে পারলেন। যেখানে আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী এদেশেরই নাগরিক ক’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও অভ্যাগত মান্যবর অতিথির সাথে দেখা করতে পারলেন না! সেদিন জামায়াতের হরতাল ছিল। তাই সোনারগাঁ হোটেলের সামনে পটকা ফুটিয়ে নিরাপত্তাহীনতা প্রমাণ করাতে হলো। হায়রে ভয়ঙ্কর রাজনীতি!

হরতাল দিয়ে শুরু করেছিলাম, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেও কিন্তু সেই নিরাপত্তাহীনতার হরতাল ডেকেছিলেন ম্যাডাম জিয়াও। এমনি নষ্ট রাজনীতির অদ্ভুত নমুনা।



কামাল লোহানী

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

দিশার বলেছেন: ভাই অত্যান্ত দুক্ষের সাথে বলছি bnp , জামাত আলাদা করা কঠিন।

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২২

তালপাতারসেপাই বলেছেন: হুমম! হাগতে গেলে মুততেও হয়।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

রাফা বলেছেন: শিরোনামে বিপন্ন বানান ঠিক করেন।দেখতে খারাপ লাগে।

জয় বাংলা।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮

যোগী বলেছেন: এই বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে ম্যাডামই সবচেয়ে নিরাপদে আছেন

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮

নষ্ট শয়তান বলেছেন: বিরাট কাহিনী লিখছেন। আমি অল্প কথায় বলে যাই

**১৯৯১-১৯৯৬: আওয়ামী লীগ হরতাল দেয় ১৭৩ দিন। ।

**১৯৯৬-২০০১: বিএনপি হরতাল দেয় ৫৯ দিন। ।

**২০০১-২০০৭: আওয়ামী লীগ হরতাল দেয় ১৩০ দিন। ।

**২০০৯-২০১৩: বিএনপি হরতাল দেয় ২৫ টার মতো। ।

আরো জানতে স্বাগতম তোমাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.