নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন হবে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ?

১৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০২



নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। দেশ আবার উন্নয়নমুখী হয়। তবে দেশের সামর্থ্যের সাথে তাল মিলিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় লক্ষ্যভেদী উন্নয়ন হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজায়। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৯৭-২০০২ প্রণয়ন করে। ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ করা হয়। দেশের প্রধান শত্রু দারিদ্র্য বছরে ১.৫ শতাংশ করে হ্রাস পায়। দারিদ্র্যের হার ৪১.৬ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে আসে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পিছনে বড় প্রেরণা জুগিয়েছে দলটির নির্বাচনী ইশতেহার। তাতে জনগণের ৩৮ বছরের ইচ্ছা পূরণের দিকনির্দেশনা ছিল। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা তথা স্বল্পোন্নত দেশের কালোটিকা থেকে মুক্তির রূপকল্প আছে। লক্ষ্য অর্জনে আর্থসামাজিক বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির একটি সময়ভিত্তিক রূপরেখা দেয়া হয় তাতে। আর বলা হয় ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। এই উন্নয়ন স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু হয় সরকারের প্রথম দিন থেকে। সময় মাত্র ১৩ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ইশতেহারের লক্ষ্য পূরণে পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ প্রণয়ন করে। এর লক্ষ্য পূরণে কৃষির আধুনিকায়ন ম্যানুফেকচারিং এবং সেবা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক উত্পাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, শিক্ষাসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ এবং সর্বোপরি দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কর্মমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১১-১৫ প্রণয়ন করে। বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনের ধারায় ইতিমধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়েছে। এই সময়ে দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গড়ে ৬.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৮ শতাংশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গড় অর্জন ৪.৭ শতাংশ। সরকার প্রবৃদ্ধির ছোঁয়া সকলের মধ্যে পৌঁছে দিতে নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের মোট কর্মক্ষম নারীর প্রায় ৩০ শতাংশ এখন উত্পাদনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত আছে। যা পাঁচ বছর আগেও ১০ শতাংশের নিচে ছিল। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা সত্ত্বেও পণ্য রপ্তানিতে বছরে গড়ে প্রায় ১৮.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অপর দিকে উন্নত বিশ্বে রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং এলডিসিগুলো সম্মিলিতভাবে ২০১০-২০১১ সালে প্রায় ২৫ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ২০১২ সালে মাত্র ০.৬ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে ১.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বসেরা সাফল্য অর্জন করেছে। দেশি-বিদেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনেয়োগ এসেছে। প্রায় ১ কোটি বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাথাপিছু ২০১৩ সালে ১ হাজার ৪৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে সেটা ১ হাজার ১০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যেখানে ২০০৮ সালে ছিল ৬৩০ ডলার মাত্র।

নারী শিক্ষা প্রসারে সরকারের উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও উপকরণ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রণোদনা ভালো ফল দিচ্ছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। খুব কম উন্নয়নশীল দেশই এমন সাফল্য দেখাতে পেরেছে। অপুষ্টি রোধে সরকার কৃষি উত্পাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে কৃষক নিজের জমি এবং খামারেই সব ধরনের পুষ্টিপণ্য উত্পাদন করতে পারে। এ জন্য সরকার দেশব্যাপী ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশে কর্মজীবী মানুষের প্রায় ৪৪ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত আছে। সরকারি প্রণোদনা, উন্নত বীজ ও প্রযুক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিত, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ভোক্তা চাহিদা বাড়ার ফলে কৃষক লাভবান হয়েছে। তারা কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কৃষি উত্পাদনশীলতা অনেক বেড়েছে। কম জমিতে অধিক ফসল উত্পাদিত হচ্ছে। জনসংখ্যা ১.৩৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশ চাল উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে। কৃষি খাতেও উত্পাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতি জাতীয় অর্থনীতির সাথে যুক্ত হচ্ছে। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে জীবিত জন্মে ৩৩ জনে নেমে এসেছে। যা জাতিসংঘের দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম। মাতৃমৃত্যুর হারও প্রতি লাখে ১৮০ জনে নেমে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার বেশ সফলতা দেখিয়েছে। সিডর ও আইলায় ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়াই এর প্রমাণ। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে বৈদেশিক অর্থায়নে পুনর্বাসন, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তারপরও বাঙালি জাতি হিসেবে দুর্যোগ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচণ্ড সামর্থ্য রাখে। বারবার তা প্রমাণও করেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। ফলে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা হওয়ায় রূপকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে না। বরং ২০০৯-এর সরকার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেখানে এগিয়ে রেখে গিয়েছিল নতুন সরকার সেখান থেকেই আবার কাজ শুরু করতে পেরেছে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ধারায় কোনো ছেদ পড়েনি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ প্রণয়নেও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। তাই সার্বিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাডের ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিবেদন ২০১৩’ অনুযায়ী তিনটি বড় বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারলে একটি স্বল্পোন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশ তথা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এক. দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় তিন বছরে গড়ে ৯৯২ ডলার হলে এবং বর্তমান মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৯০ ডলার হলে। দুই. মানবসম্পদ সূচক, তথা (ক) পুষ্টি বা কত শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে আছে, (খ) স্বাস্থ্য তথা শিশু মৃত্যুর হার কত, (গ) স্কুলে ভর্তি তথা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার হার এবং (ঘ) বয়স্ক শিক্ষার হার। তিন. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সূচক। এখানে ছয়টি সূচক আছে। (ক) প্রাকৃতিক ঝুঁকি তথা কৃষি উত্পাদনে অনিশ্চয়তা সূচক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কত শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (খ) বাণিজ্যবিষয়ক ঝুঁকি তথা পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা কেমন। (গ) বাহ্যিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান তথা কত শতাংশ মানুষ নিম্নাঞ্চলে বসবাস করে। (ঘ) ঝুঁকির অর্থনৈতিক দিক তথা কৃষি, বন ও প্রাণিসম্পদ থেকে জিডিপির কত শতাংশ আসে এবং পণ্য রপ্তানির পরিমাণ সূচক। (ঙ) ক্ষুদ্রাকার তথা জনমিতি এবং (চ) দুর্গতমা সূচক। এইসব মিলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সূচক তৈরি করা হয়। এই জটিল প্রতিটি সূচকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে একটি দেশ গ্র্যাজুয়েশন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কমপক্ষে দুইটিতে পরবর্তী ছয় বছর এই অর্জন ধরে রাখতে পারলে জাতিসংঘ তখন উন্নতি অনুমোদন করে। তবে জিডিপি অর্জনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যদি কোনো দেশ জিডিপির নিম্নসীমা অর্থাত্ ১ হাজার ১৯০ ডলারের দ্বিগুণ জিডিপি অর্জন করতে পারে তাহলেই সেই দেশ উন্নয়নশীল ক্যাটাগরির জন্য বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে। তদুপরি বাংলাদেশ এখন জনমিতির সবচেয়ে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এখন কর্মক্ষম। অর্থাত্ তাদের বয়স এখন ১৬ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। বিশ্বের কোনো দেশে এমন জনমিতি কয়েকশত বছরের মধ্যে একবার আসে এবং তা গড়ে ৩০ বছর স্থায়ী হয়। বাংলাদেশ এখন সেই শুভযোগে প্রবেশ করেছে। রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫০০ ডলার অর্জনের লক্ষ্যে বিগত পাঁচ বছরের অর্জনকে বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে। শিল্পায়নে শ্রম শক্তির ২৫ শতাংশ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যও পূরণ করতে হবে। তাহলে উন্নয়ন টেকসই হবে। আর বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।

সূত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.