নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবজাতির কল্যাণে প্রণীত হয়েছে ইসলামের সব বিধি-বিধান। অন্যের কল্যাণকামিতা দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর গতি এত বিস্তৃত যে কুলমাখলুকাত এতে অন্তর্ভুক্ত। মানুষ মানুষের জন্য তো আছেই। মানুষকে পশু-পাখির জন্যও হতে হবে হিতৈষী। এটাই ইসলামের শিক্ষা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জনৈক পথিক তৃষ্ণাকাতর হয়ে একটি কূপের কাছে থেমে পানি পান করল। এরপর সে একটি কুকুরকে অনুরূপ পিপাসায় ছটফট করতে দেখে আবার কূপের কাছে ফিরে গেল। চামড়ার মোজা ভরে কূপ থেকে পানি উঠিয়ে তৃষ্ণার্ত জীবটিকে পান করাল। ফলে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে জান্নাত দান করলেন। (বুখারি : ১/৩১৮)
ঠিক এর বিপরীত আচরণের পরিণতির কথাও হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জনৈক মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিড়ালটিকে সে বন্দি করে রাখে, পিপাসায় কষ্ট পেয়ে পেয়ে এক সময় বিড়ালটি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। শাস্তিস্বরূপ সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। (বুখারি : ১/৩১৮)
সামান্য একটি প্রাণির বিষয়টি যদি এমন হয়, তবে সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাতের ব্যাপারে কী হতে পারে, তা ভেবে দেখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, 'নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের জলে ও স্থলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদের পবিত্র রিজিক দান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টবস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল : ৭০)
সেরা মাখলুকের পবিত্র রিজিকের মাঝে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিনসহ বিষাক্ত কেমিক্যাল যারা মিশ্রণ করছেন, তারা কোন নিকৃষ্ট কর্মটি সম্পাদন করছেন একটু ভেবে দেখা দরকার। মানুষের পবিত্র রিজিকে বিষ ঢেলে তারা খোদাদ্রোহিতায় লিপ্ত হয়েছে। নিজেদের হালাল ব্যবসাকে করছে তারা কলুষিত। সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, আদর্শবান ব্যবসায়ী হয়ে তারা হতে পারতেন নবী-রাসুল আর সিদ্দিক শহীদগণের সহযাত্রী। যেমনটি হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর নবী-রাসুল এবং সিদ্দিক-শহীদগণের সঙ্গে হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ২১৩৪)
তা না করে ভেজাল আর ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে তারা হলেন আদর্শ বিবর্জিত, ধূর্ত আর বিকৃত বণিক।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার খাদ্যের স্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর ভেতরে হাত ঢুকিয়ে ভেজা অনুভব করলেন। খাদ্যের মালিকের কাছে কারণ জানতে চাইলে সে বলল, বৃষ্টির পানি লেগেছে। নবী (সা.) বললেন, ভেজালগুলো ওপরে রাখতে পারলে না, যাতে মানুষ ধোঁকা না খায়? যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম : ১/৯৯)
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ধোঁকাবাজের সঙ্গে একটি ঝাণ্ডা থাকবে, যা তার পরিচয় বহন করবে। (বুখারি: ২/১০৩০)
আজকে যারা খাদ্যে ফরমালিন মিশিয়ে সাধুর ভান করে বসে আছে, বিচার দিবসে তারা নিজেদের গোপন করতে সক্ষম হবে না। লোকসম্মুখে লজ্জিত আর শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে এখনই সচেতন হতে হবে, বদলাতে হবে স্বভাব।
একজন প্রকৃত মুসলমান, খাঁটি মুমিন কখনো অন্যের জান-মালের ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
হাদিস শরিফে আছে, 'প্রকৃত মুসলমান তো সেই, যার জবান ও হস্তদয় থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।' প্রকৃত মুমিন তো সেই, যার কাছে মানুষ জানমালের নিরাপত্তা বোধ করে। (বুখারি : ১/১০)
অতএব, সত্যিকার অর্থে মুমিন মুসলমান হতে হলে খাদ্যে ফরমালিন ইত্যাদি বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন থেকে বিরত হতে হবে।
সম্প্রতি ফরমালিন নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছে। সরকারেরও বোধ হয় এদিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ফলে ফরমালিনবিরোধী বিভিন্ন অভিযান শুরু হয়েছে। বস্তুত মৌসুমি ফলের মতোই মৌসুমি হয়ে থাকে এ-জাতীয় অভিযান। যেমনটি হয়ে থাকে পত্র-পত্রিকায় সমসাময়িক লেখালেখি। কিন্তু এভাবে কি আর ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা যাবে? যাবে কি ফরমালিনমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা? অনেকে কঠোর আইন করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর আইন কি অপরাধ কমাতে পেরেছে? খুনাখুনির খবর দিন দিন খবরের কাগজ ভারী হয়ে চলছে। তাই অনেকটা নিশ্চিতরূপে বলা চলে, শুধু আইন করে ফরমালিনবিরোধী অভিযানে সফল হওয়া যাবে না। কেবল আইন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। যদি সে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা আর বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাস কার্যকর না থাকে। আর ইসলাম একমাত্র এর প্রবক্তা এবং ধারক-বাহক।
ইসলামের মৌলিক আকিদা তিনটি- তাওহিদ, রিসালাত এবং আখিরাত। তন্মধ্যে আখিরাত তথা পরকালের বিশ্বাস হচ্ছে মূল চালিকাশক্তি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
'ঐ দিনকে ভয় করো, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে, এরপর প্রত্যেকেই তার কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনোরূপ অবিচার করা হবে না।' (সুরা আল বাকারা : ২৮১)
আল্লাহ তায়ালার আদালতে দণ্ডায়মান হওয়ার বিশ্বাস কারো মাঝে বদ্ধপরিকর হলে তার দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে পারে না। আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপ পরিহার করা সহজ হয়ে যাবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে পথে এক লোকের দেখা হলো। লোকটি দুধ বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) দেখে বুঝতে পারলেন যে দুধে পানি মেশানো হয়েছে। তিনি লোকটিকে বললেন, কিয়ামতের দিন যখন তোমাকে দুধ থেকে পানিকে পৃথক করতে বলা হবে তখন তোমার কী উপায় হবে? (তারগীব ২/৩৬০)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। নিজ ভাইয়ের কাছে ত্রুটিযুক্ত কোনো পণ্য বিক্রয়কালে তার দোষ গোপন করা মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। (বায়হাকি ৫/৩২০)
আল্লাহ তায়ালার ভয় কিভাবে মানুষকে শুধরিয়ে থাকে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) একবার তাঁর ব্যবসার পার্টনার হাফস ইবনে আব্দুর রহমানকে কিছু মাল বিক্রির জন্য দিয়ে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, এর মাঝে একটি কাপড় আছে, যাতে এমন এমন ত্রুটি রয়েছে। তাই বিক্রির সময় ক্রেতাকে তা অবহিত করে দেবেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনি মালামাল বিক্রির সময় তা বলতে ভুলে যান। কাপড়টি কে ক্রয় করেছে, তাও স্মরণ করতে পারলেন না। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বিষয়টি জানতে পেরে সমুদয় টাকা সদকা করে দিলেন। যার পরিমাণ ছিল ২০ হাজার দিরহাম বা ৭৩ কেজি ছয় শ গ্রাম রৌপ্য সমমূল্য। এবং তার সঙ্গে ব্যবসার ইতি টানেন (উকুদুল জুম্মান : ২৪১)
অতএব, এটা নিশ্চিতভাবে দাবি করা যায়, ফরমালিনসহ যাবতীয় ভেজাল থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে পরকালের ভয়। এই ভয় অর্জন করতে পারলে কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে খাদ্যে বিষ মেশানো সম্ভব হবে না। পবিত্র হবে তার ব্যবসা। হাশরে সঙ্গ মিলবে নবী রাসুল (সা.) আর শহীদ সিদ্দিকগণের। আল্লাহর দেওয়া পবিত্র রিজিক হবে ঝুঁকিমুক্ত। চরম হুমকির মুখ থেকে রক্ষা পাবে মানব স্বাস্থ্য।
সুত্র
©somewhere in net ltd.