নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংলাপের জন্য কাকুতি-মিনতিঃ আরেকবার সাধিলেই খাইব!

২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:০৯



রাজনৈতিক অঙ্গনে ইদানীংকালে একটি বিষয় নতুন করে জনগণের সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটা হলো, বিএনপি চায় সরকারের সঙ্গে সংলাপ। অর্থাৎ ২০১৩ সালের একপর্যায়ে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির কল্যাণে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের জরুরি তাগিদ সৃষ্টি হয়েছিল, তারই পটভূমিকায় জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধিসহ অনেক বিশিষ্ট প্রতিনিধিই সে সময় উভয়পক্ষের সংলাপে বসার তাগিদ নিয়ে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সরাসরি ফোন করে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় বিরোধীদলের নেতা সংলাপে বসার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখাননি। এবং শেষ পর্যন্ত অর্থবহ কোন সংলাপ সে সময় হয়নি। তৎকালের খুঁটিনাটি রাজনৈতিক ঘটনা, বিরোধীদলের নেতার অশিক্ষাজনিত অভদ্রতা এবং টেলিফোনে সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যেসব অসৌজন্যতার নজির স্থাপন করেছিলেন তা নিয়ে এখন আর আলোচনা করার কোন রুচি নেই। পরবর্তীকালের ঘটনা সবারই জানা। দেশের নানা সংকট ও উদ্বেগজনক পথঘাট পেরিয়ে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরকার জাতীয় সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার যুক্তিসঙ্গত অজুহাত দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে। সেই নির্বাচন বিরোধীদলের বয়কট সত্ত্বেও সম্পন্ন করা হয়। অথচ দেশের রাজনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করেন_ যদি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সে সময় বেগম খালেদা জিয়া সংলাপে বসতেন এবং গ্রহণযোগ্য একটা সমঝোতায় উপনীত হয়ে ১০ম সংসদের নির্বাচনে অংশ নিতেন তাহলে আজকের এই রাজনৈতিক করুণ দশায় পতিত হয়ে সরকারের কাছে 'সংলাপ ভিক্ষা' করার জন্য মিনতি করতে হতো না। আজকের বিএনপির এই কাকুতি-মিনতির পক্ষে আগের মতো আমেরিকা-ইউরোপের মতলবাজ 'বন্ধুরা'ও এগিয়ে আসছে না।

একথা এখন স্পষ্ট যে, বিএনপি বা তাদের জোট খানিকটা বেকায়দায় পড়েই সংলাপের জন্য কাকুতি-মিনতি করছে। পক্ষান্তরে জানুয়ারির পর থেকে সরকার বেশ খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। কেননা যে বিদেশি বন্ধু দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে এক সময় সংলাপ অনুষ্ঠানের জরুরি তাগিদ বা চাপ দেয়া হতো সেই সঙ্গে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কথা বলা হতো এখন তারাই সেসব কথা বলছেন না। বরং এই সরকারের সঙ্গেই তারা কাজ করার ঘোষণা দিচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন চুক্তি ও চুক্তি নবায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোট বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি জোট জানান দিয়েই চাঙা হয়ে উঠেছিল। তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের একটা আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছিল। লন্ডনে বসে তারেক রহমান মিথ্যা প্রচারণার বেসাতি করেও ধরা খেয়েছেন। কিন্তু সেই মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর কয়েকদিন পরই ঢাকায় আসছেন শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে এবং সুষমা স্বরাজ তাদের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রও নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের জন্য। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান-চীন সফরের পর এবং ওই দুই দেশ সফরে আশাতিরিক্ত সাফল্য লক্ষ্য করে বিএনপি নেতাদের মুখে আর কথা নেই। শুধু 'চেটারিং বক্স' হিসেবে ফখরুল ইসলাম মাঝেমধ্যেই কিছু কথা বলছেন যা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। সব শেষ তাদের ম্যাডামই সংলাপ অনুষ্ঠানের আবেদন জানিয়েছেন সরকারের কাছে। রাজনৈতিক অনুকূল পরিবেশে একবার হঠকারিতা বা গোঁয়ার্তুমি দ্বারা হাতছাড়া করলে তার জন্য খেসারত দিতেই হয়। বিএনপির এখন সেই খেসারত দেয়ার পালা শুরু হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের পর চীন সফর শেষে ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বলে দিয়েছেন_ সংলাপ বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের আবশ্যকতা এখন আর নেই। সংলাপে বসার জন্য তিনিই সে সময়ের বিরোধীদলের নেতাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে খালেদা জিয়া সে সময় যেসব অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলেছিলেন_ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সে কথাও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তবু আমরা মনে করি বিএনপি যদি সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে চায় তাহলে তাকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির সপক্ষে দলের অবস্থানের কথা ঘোষণা করতে হবে। এটা শুধু আওয়ামী লীগের শর্ত নয়, বিএনপির কাছ থেকে দেশের জনগণও এই দাবি করে।

দলের নীতি-আদর্শের এই পরিবর্তনই পারে সংলাপ বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে। যে অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বও আর মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারবে না। কারণ তারা বেশ ভালো করেই জানেন, সংবিধানের অনিবার্য কারণে দশম সংসদের যে নির্বাচন হয়েছে তাতে দেশের ভোটাররা স্বতঃস্ফূতভাবে ভোট দিতে আসেনি। এটা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়, আর আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সেই নির্বাচনের বড়াই করে গোটা মেয়াদ অনৈতিকভাবে দেশ শাসন করতে পারে না। কিন্তু বিএনপি যদি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে না আসে তাহলে জিদের বশবর্তী হয়েও আওয়ামী লীগ সংবিধান আঁকড়ে ধরে পুরো মেয়াদ সরকার পরিচালনা করবে। সেক্ষেত্রে বিএনপিও তাদের জোট দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে কিন্তু সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারবে না।

বিএনপির উপদেষ্টাদের মধ্যে যাদের একটু 'জ্ঞান-গম্মি' রয়েছে তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে বহুসংখ্যক দৃশ্যমান খাতে উন্নয়ন সাধন করে চলেছেন। যা অতীতের কোন সরকারের আমলে নজির নেই। জনগণ ধীরে ধীরে সেসব উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের মতো দেশে ক্ষমতাসীনরা ভুল-ত্রুটি-দুর্নীতি করবেই। কিন্তু তার জন্য যাতে দেশের মূল উন্নয়ন কাজ ব্যাহত না হয় সেজন্য সরকারকে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। আজ জনগণ বুঝতে পারছে শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের প্রশ্নে আপসহীন। ফলে নাখোশ মনোভাবের জনসাধারণ তার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। আর সেই সংকল্প নিয়েই এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বৃহৎ ও নতুন ধরনের বহু প্রকল্প হাতে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। যে কোন মূল্য তিনি তার 'ভিশন' সফল করে তুলবেনই। এই প্রশ্নে দেশবাসী অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাবে। কেননা জনগণ বুঝতে পেরেছে ভিশন-২১ এর মধ্যে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। সেই রূপকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। সরকার তার সেই লক্ষ্যাভিসারের পথে ২০১৪-১৫ সালের এক বাজেট বাস্তবায়নের যে পরিমাণ সক্ষমতা (৯৬ ভাগ) অর্জন করেছে ২০১৩-১৪ সালে তাতে এ বছরের বাজেট মোটেই অস্বাভাবিক নয়। উচ্চাভিলাষ না থাকলে কোন জাতি তার স্বপ্ন পূরণের কাছে যেতে পারে না। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ক্ষমতাসীন সরকার ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে চলেছে এবং দৃপ্তপদভারে। এমতাবস্থায় বিএনপিও তাদের রাজনীতি অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পেছনে পড়ে গেছে। সেখান থেকে যদি তাকে রক্ষা পেতে হয় তাহলে তাকে গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতির মূলধারার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামের সঙ্গ ত্যাগ করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। শুধু তেমন অবস্থাতেই সরকার বাধ্য হবে সংলাপে বসে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে। যতদূর জানা যায়, জামায়াত-শিবির আর আগের মতো মরিয়া মনোভাব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হবে না। বরং তারা নিজেদের দলীয় অস্তিত্ব রক্ষা ও কারাগারে আটক নেতাদের রক্ষা করার জন্য সাধ্যমতো যা করার তাই করবে। কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য তারা শক্তিক্ষয় ও লোকক্ষয় করতে আর আগ্রহী নয়। হরতাল-অবরোধ ডেকে যে দলের নেতারা ঘরে বসে থাকেন বা গভীর আত্মগোপনে চলে যান পক্ষান্তরে রাজপথে পুলিশের লাঠি-গুলি খেতে হয় জামায়াত-শিবিরকে। ২০১৩ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে তারা তা প্রত্যক্ষ করেছে। এ অবস্থায় বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সরকার বুঝতে পেরেই সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রশ্নে এখন তারা পিছুটান দিচ্ছে। ক্ষমতায় 'যদু-মধু' থাকলেও এ কাজটিই করত। শেখ হাসিনাও এখন সেই কৌশলই নিয়েছেন।

কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়া বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনিই সরকার গঠন করতেন। তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন যে তিনি নির্বাচনেই যাননি। নির্বাচনে গেলে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তিনি একথা বলতে পারতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেদিন কি তাদের জ্ঞান-গম্মির দরজা বন্ধ ছিল? এখন আফসোস করে লাভ নেই। অপেক্ষা করতে হবে। নয়তো জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গণতন্ত্রের পথে সংলাপ বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলতে হবে। শুধু তখনই তারা আশা করতে পারে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও জনগণের সহানুভূতি। অন্যথায় আফসোস করেই যেতে হবে।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.