নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে পুনরায় স্পষ্ট করার সুযোগ এলো ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১২ ডিসেম্বর জামাত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে তার মৃত্যুদ- কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। পাকিস্তান জামাতের সাংসদ শের আকবর খান এই প্রস্তাব উত্থাপন করলে তাতে সমর্থন জানায় সরকারি দল মুসলিম লীগ। এ ছাড়া ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম) ও জমিয়তে উলামা ইসলাম এই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের এসব ইসলামভিত্তিক দল কোনো না কোনোভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এসব ইসলামি দলের নগ্ন হস্তক্ষেপ গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশবাসী মেনে নিতে পারেনি। এ জন্য ১৭ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করানোর দাবিও জানানো হচ্ছে। একাত্তরের গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করায় পাকিস্তান ক্ষমা না চাইলে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের দাবিও উঠেছে। পাকিস্তানের বর্তমান আচরণের পরিপ্রেক্ষিত বিচার করার জন্য আমাদের অতীতে ফিরে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসের মধ্যেই তাদের পরাজয় কাহিনী নিহিত রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন পরিকল্পনা ছিল অভিনব। ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির মধ্যেই নিহিত ছিল। কারণ জাতিক, নৃতাত্ত্বিক, ভৌগোলিক কিংবা ভাষাগত কোনো বিচারেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিন্যাস বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। যে ধর্মের ঐক্যের কথা বলা হচ্ছিল রাজনীতির ক্ষেত্রে বহু পূর্ব থেকেই তা এক পরিত্যক্ত বিষয়। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলীম লীগের সপ্তবিংশতিতম অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক ভারতের ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক রূপ সম্বন্ধে মুসলিম লীগের মূল প্রস্তাবটিতে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলোতে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠন করার কথা বলেছিলেন। লক্ষণীয় প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দের উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ২৪ মার্চ মুসলীম লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর ভারতের প্রভাবশালী হিন্দু পত্রিকাগুলো একে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে অভিহিত করে। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জিন্নাহর নির্দেশে দিল্লিতে আইন সভার মুসলীম লীগ সদস্যদের কনভেনশনে ‘লাহোর প্রস্তাবের’ সংশোধিত রূপ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন এবং তা গৃহীত হয়। মূল লাহোর প্রস্তাবের একাধিক রাষ্ট্র গঠনের জায়গায় একটি মাত্র রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা বলা হওয়ায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোর সমন্বয়ে একাধিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয় যার নাম ‘পাকিস্তান’। এর দুটি অংশের মাঝখানে হাজার মাইল পরিমাণ বিদেশী রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকায় ভৌগোলিক অখ-তা বিশিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রের অনুরূপ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সম্ভব ছিল না। অদ্ভুত ভৌগোলিক অবস্থান ছাড়াও এর পূর্বাংশ এমন একটি সম প্রকৃতির অখ- দেশ, যার ছয় কোটি অধিবাসী একই ভাষাভাষী; অথচ সাড়ে চার কোটি লোক অধ্যুষিত এর পশ্চিমাংশ হচ্ছে বহুজাতিক এবং পৃথকধর্মী।
মূলত ধর্ম ঐক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও, পাকিস্তানি শাসকেরা বুঝেছিলেন শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তার প্রমাণ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অনুভূত হয়েছে। তাই একটি পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিলেন তারা এবং এর জন্য বেছে নেয়া হল উর্দু ভাষাকে। যথারীতি সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ষাটের দশকের সেই সাংস্কৃতিক পরিচয় তৈরির সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিকে তখন নানাবিধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হচ্ছিল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ তাদের গবেষণায় পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক শোষণের স্বরূপ ও বৈষম্যমূলক আচরণের তথ্য, উপাত্ত, জনসমক্ষে প্রচার এবং পাকিস্তানের জন্য ‘টু-ইকনমি’ বা ‘দুই অর্থনীতিতত্ত্ব’ উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন সরকারি ব্যয় বরাদ্দ, শিক্ষা, চাকরি, অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প স্থাপনসহ নানা খাতের তুলনামূলক চিত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সৃষ্ট বৈষম্য ও বঞ্চনার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। এর মধ্যে ঘটতে থাকে রাজনীতির নানা ঘটনা।
১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ প্রবর্তনের ফলে ১৯৫৯ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচাল হওয়া, ১৯৬২ সালে প্রদেশগুলোকে কোনো ক্ষমতা না দিয়ে প্রধান নির্বাহী ও কেন্দ্রের হাতে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান প্রণয়ন এবং প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার হরণ বাঙালিদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে, তারা জাতীয় ক্ষমতার হিস্যা কখনো পাবে না। তদুপরি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধকালীন সময়ে পূর্বপাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকায় বাঙালি নেতাদের এই উপলব্ধির বোধ জাগ্রত করে যে বাঙালির অধিকার আদায় ও বৈষম্য দূরীকরণে স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প নেই। যুদ্ধের অব্যাবহিত পরেই আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবর রহমান বলেন, যুদ্ধের পর স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন আরো গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানকে সকল দিক দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করার সময় এসেছে। এর পরের ইতিহাস সকলের জানা। আইয়ুব-ইয়াহিয়া গংদের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয় বাঙালি জাতিকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে আক্রমণ করে। ইতিহাসে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা কবলিত সাড়ে সাত কোটি বাঙালি দুর্জয় আক্রোশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সেদিন পাকিস্তানি শাসকরা চপেটাঘাত খেয়ে আমাদের ভূখ- ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের দোসরদের সক্রিয়তা তখন বিশ্ববাসীর নজরে আসে। সেই সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয় বর্তমান সরকারের আমলে। আর তখন থেকে পুনরায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত হয় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। অবশ্য দেশ-বিদেশে জামাত-শিবির অঢেল অর্থ ব্যয় করেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। তবে পাকিস্তানের আস্থা অর্জনে তারা সক্ষম হয়েছে। আর এ জন্যই তাদের নেতা কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর প্রতি পাকিস্তানিদের দরদ উথলে উঠছে।
পাকিস্তানের জঙ্গি তৎপরতা ও আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তালেবানদের আক্রমণ সব মিলিয়ে একটি উগ্রবাদী রাষ্ট্রের প্রতি বর্তমান শতাব্দীর মানুষের আগ্রহ কম। কারণ পাকিস্তানের সমাজে জঙ্গিবাদ শিকড় গেড়ে বসেছে। সরকার, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদকে সহযোগিতা করছে। ২০০১ সালের আগে থেকেই আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকা ও ওয়াজিরিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান এবং কখনো কখনো ড্রোন হামলা চালিয়েছে; এখনো সেই অবস্থাই চলছে। পাকিস্তানের অনুমতি না নিয়ে এই হামলা পরিচালনা করলেও কোনো সরকারই নিন্দা জানাতে পারেনি। কারণ অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানি সরকার জঙ্গিবিরোধী কর্মকা-ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মিলিয়ন-বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য নিয়ে উল্টো তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল। উল্লেখ্য, এক সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তালেবান জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়। মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তালেবান সংগঠন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সর্বত্র ঢুকে গেছে। বাংলাদেশ তাদের টার্গেট ছিল তখন থেকেই। অর্থাৎ পাকিস্তান যেমন জঙ্গিবাদের আস্তানা হিসেবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে তেমনি বাংলাদেশকে ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে অস্থির করে তোলার চেষ্টা হয়েছে অনেক আগে থেকেই।
জঙ্গিবাদের এই বাস্তবতা এখন সারা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এক জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে। তালেবান, আল-কায়েদার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জঙ্গি দমনে নাটক মঞ্চস্থ করা, তালেবান নেতাদের ভয়ে ভীত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা, মানুষ অপহরণ করে অর্থ সংগ্রহের তালেবানি কৌশল, বাংলাদেশে জঙ্গি প্রেরণের জন্য ট্রেনিং প্রদান প্রভৃতি প্রসঙ্গ এবং সামাজিক-পারিবারিক জীবনের অনেক অজানা তথ্য অনেকেরই জানা। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভূখ-ের চিত্রাবলি ভয়ঙ্কর। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির ৬৬ বছরের ইতিহাস হচ্ছে সামরিক শাসনের ইতিহাস। এই সামরিক বাহিনী সেখানকার রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি। চলতি বছরের (২০১৩) প্রথম কয়েক মাসে একাধিক ঘটনায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে হত্যা করা হয়েছে শতাধিক মানুষকে। গত ২৫ মে আফগানিস্তানের কাবুল ও পাকিস্তানের পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছে ১৩ জন। তালেবানরা বন্দুক ও রকেট হামলার সেই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এর আগে ২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস এবং ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীদের সম্পৃক্ততা সকলের কাছে স্পষ্ট। তবে পাকিস্তানে সার্বিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী পাঞ্জাবি ভূস্বামী ও সেনাপ্রধানরা। মূলত পাকিস্তানের রাজনীতি জটিল ও অমানবিক।
বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়েছে জঙ্গি মৌলবাদ। পাকিস্তান-আফগানিস্তানে এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান শুরু হলে এরা পাকিস্তান হয়ে সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় সমুদ্রপথে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশে জঙ্গিদের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়। পাকিস্তানের অন্ধ ভারতবিরোধিতা, আমেরিকার ক্লায়েন্ট স্টেট হয়ে যাওয়া, আহমদিয়া ও শিয়াবিরোধী নীতি, মধ্যযুগীয় ধর্মীয় শাসন এবং সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষকে প্রগতিশীল বিশ্ব থেকে বিচ্যুত করেছে। জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে পাকিস্তানি সাংবাদিক ইমতিয়াজ গুলের ‘দ্য আনহোলি নেক্সাস : পাক-আফগান রিলেশনস আন্ডার দ্য তালিবান’(২০০২) গ্রন্থে। এ গ্রন্থে গুল দেখিয়েছেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের জন্য পাকিস্তানি শাসকরা জামাতি ইসলামির ক্যাডারদের বেছে নিয়েছিল; আর তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পাকিস্তানও ইসলামি দলগুলোকে ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্ম ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ভুল সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে সেই ভুল ভাঙার যুদ্ধে বাঙালিদের জয়ের পুষ্পমাল্য অর্জনের ইতিহাস সেখানকার শাসকরা আজো মেনে নিতে পারছে নাÑ তারই ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবসে কাদের মোল্লার মতো যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়ার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। উপরন্তু ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার হুমকি দিয়ে তেহরিক-ই তালেবান বাংলাদেশের অপর জঙ্গি সংগঠন জামাত-শিবিরকে রক্ষার জন্য তৎপর হয়েছে। আসলে আজন্ম যাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা তাদের আমরা বন্ধু ভাববো কীভাবে? এজন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জাতীয় পরিষদের ঐ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো এবং ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিন্দা প্রস্তাব যথার্থ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তৃণমূল জনগণের অবস্থান জঙ্গিবাদের আস্তানা খ্যাত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে পুনরায় স্পষ্ট করার সুযোগ এলো ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১২ ডিসেম্বর জামাত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে তার মৃত্যুদ- কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। পাকিস্তান জামাতের সাংসদ শের আকবর খান এই প্রস্তাব উত্থাপন করলে তাতে সমর্থন জানায় সরকারি দল মুসলিম লীগ। এ ছাড়া ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম) ও জমিয়তে উলামা ইসলাম এই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের এসব ইসলামভিত্তিক দল কোনো না কোনোভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এসব ইসলামি দলের নগ্ন হস্তক্ষেপ গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশবাসী মেনে নিতে পারেনি। এ জন্য ১৭ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করানোর দাবিও জানানো হচ্ছে। একাত্তরের গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করায় পাকিস্তান ক্ষমা না চাইলে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের দাবিও উঠেছে। পাকিস্তানের বর্তমান আচরণের পরিপ্রেক্ষিত বিচার করার জন্য আমাদের অতীতে ফিরে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসের মধ্যেই তাদের পরাজয় কাহিনী নিহিত রয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন পরিকল্পনা ছিল অভিনব। ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির মধ্যেই নিহিত ছিল। কারণ জাতিক, নৃতাত্ত্বিক, ভৌগোলিক কিংবা ভাষাগত কোনো বিচারেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিন্যাস বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। যে ধর্মের ঐক্যের কথা বলা হচ্ছিল রাজনীতির ক্ষেত্রে বহু পূর্ব থেকেই তা এক পরিত্যক্ত বিষয়। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলীম লীগের সপ্তবিংশতিতম অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক ভারতের ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক রূপ সম্বন্ধে মুসলিম লীগের মূল প্রস্তাবটিতে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলোতে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠন করার কথা বলেছিলেন। লক্ষণীয় প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দের উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ২৪ মার্চ মুসলীম লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর ভারতের প্রভাবশালী হিন্দু পত্রিকাগুলো একে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে অভিহিত করে। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জিন্নাহর নির্দেশে দিল্লিতে আইন সভার মুসলীম লীগ সদস্যদের কনভেনশনে ‘লাহোর প্রস্তাবের’ সংশোধিত রূপ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন এবং তা গৃহীত হয়। মূল লাহোর প্রস্তাবের একাধিক রাষ্ট্র গঠনের জায়গায় একটি মাত্র রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা বলা হওয়ায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোর সমন্বয়ে একাধিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয় যার নাম ‘পাকিস্তান’। এর দুটি অংশের মাঝখানে হাজার মাইল পরিমাণ বিদেশী রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকায় ভৌগোলিক অখ-তা বিশিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রের অনুরূপ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সম্ভব ছিল না। অদ্ভুত ভৌগোলিক অবস্থান ছাড়াও এর পূর্বাংশ এমন একটি সম প্রকৃতির অখ- দেশ, যার ছয় কোটি অধিবাসী একই ভাষাভাষী; অথচ সাড়ে চার কোটি লোক অধ্যুষিত এর পশ্চিমাংশ হচ্ছে বহুজাতিক এবং পৃথকধর্মী।
মূলত ধর্ম ঐক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও, পাকিস্তানি শাসকেরা বুঝেছিলেন শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তার প্রমাণ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অনুভূত হয়েছে। তাই একটি পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিলেন তারা এবং এর জন্য বেছে নেয়া হল উর্দু ভাষাকে। যথারীতি সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ষাটের দশকের সেই সাংস্কৃতিক পরিচয় তৈরির সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিকে তখন নানাবিধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হচ্ছিল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ তাদের গবেষণায় পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক শোষণের স্বরূপ ও বৈষম্যমূলক আচরণের তথ্য, উপাত্ত, জনসমক্ষে প্রচার এবং পাকিস্তানের জন্য ‘টু-ইকনমি’ বা ‘দুই অর্থনীতিতত্ত্ব’ উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন সরকারি ব্যয় বরাদ্দ, শিক্ষা, চাকরি, অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প স্থাপনসহ নানা খাতের তুলনামূলক চিত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সৃষ্ট বৈষম্য ও বঞ্চনার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। এর মধ্যে ঘটতে থাকে রাজনীতির নানা ঘটনা।
১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ প্রবর্তনের ফলে ১৯৫৯ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচাল হওয়া, ১৯৬২ সালে প্রদেশগুলোকে কোনো ক্ষমতা না দিয়ে প্রধান নির্বাহী ও কেন্দ্রের হাতে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান প্রণয়ন এবং প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার হরণ বাঙালিদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে, তারা জাতীয় ক্ষমতার হিস্যা কখনো পাবে না। তদুপরি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধকালীন সময়ে পূর্বপাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকায় বাঙালি নেতাদের এই উপলব্ধির বোধ জাগ্রত করে যে বাঙালির অধিকার আদায় ও বৈষম্য দূরীকরণে স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প নেই। যুদ্ধের অব্যাবহিত পরেই আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবর রহমান বলেন, যুদ্ধের পর স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন আরো গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানকে সকল দিক দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করার সময় এসেছে। এর পরের ইতিহাস সকলের জানা। আইয়ুব-ইয়াহিয়া গংদের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয় বাঙালি জাতিকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে আক্রমণ করে। ইতিহাসে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা কবলিত সাড়ে সাত কোটি বাঙালি দুর্জয় আক্রোশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সেদিন পাকিস্তানি শাসকরা চপেটাঘাত খেয়ে আমাদের ভূখ- ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের দোসরদের সক্রিয়তা তখন বিশ্ববাসীর নজরে আসে। সেই সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয় বর্তমান সরকারের আমলে। আর তখন থেকে পুনরায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত হয় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। অবশ্য দেশ-বিদেশে জামাত-শিবির অঢেল অর্থ ব্যয় করেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। তবে পাকিস্তানের আস্থা অর্জনে তারা সক্ষম হয়েছে। আর এ জন্যই তাদের নেতা কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর প্রতি পাকিস্তানিদের দরদ উথলে উঠছে।
পাকিস্তানের জঙ্গি তৎপরতা ও আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তালেবানদের আক্রমণ সব মিলিয়ে একটি উগ্রবাদী রাষ্ট্রের প্রতি বর্তমান শতাব্দীর মানুষের আগ্রহ কম। কারণ পাকিস্তানের সমাজে জঙ্গিবাদ শিকড় গেড়ে বসেছে। সরকার, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদকে সহযোগিতা করছে। ২০০১ সালের আগে থেকেই আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকা ও ওয়াজিরিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান এবং কখনো কখনো ড্রোন হামলা চালিয়েছে; এখনো সেই অবস্থাই চলছে। পাকিস্তানের অনুমতি না নিয়ে এই হামলা পরিচালনা করলেও কোনো সরকারই নিন্দা জানাতে পারেনি। কারণ অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানি সরকার জঙ্গিবিরোধী কর্মকা-ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মিলিয়ন-বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য নিয়ে উল্টো তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল। উল্লেখ্য, এক সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তালেবান জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়। মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তালেবান সংগঠন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সর্বত্র ঢুকে গেছে। বাংলাদেশ তাদের টার্গেট ছিল তখন থেকেই। অর্থাৎ পাকিস্তান যেমন জঙ্গিবাদের আস্তানা হিসেবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে তেমনি বাংলাদেশকে ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে অস্থির করে তোলার চেষ্টা হয়েছে অনেক আগে থেকেই।
জঙ্গিবাদের এই বাস্তবতা এখন সারা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এক জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে। তালেবান, আল-কায়েদার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জঙ্গি দমনে নাটক মঞ্চস্থ করা, তালেবান নেতাদের ভয়ে ভীত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা, মানুষ অপহরণ করে অর্থ সংগ্রহের তালেবানি কৌশল, বাংলাদেশে জঙ্গি প্রেরণের জন্য ট্রেনিং প্রদান প্রভৃতি প্রসঙ্গ এবং সামাজিক-পারিবারিক জীবনের অনেক অজানা তথ্য অনেকেরই জানা। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভূখ-ের চিত্রাবলি ভয়ঙ্কর। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির ৬৬ বছরের ইতিহাস হচ্ছে সামরিক শাসনের ইতিহাস। এই সামরিক বাহিনী সেখানকার রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি। চলতি বছরের (২০১৩) প্রথম কয়েক মাসে একাধিক ঘটনায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে হত্যা করা হয়েছে শতাধিক মানুষকে। গত ২৫ মে আফগানিস্তানের কাবুল ও পাকিস্তানের পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছে ১৩ জন। তালেবানরা বন্দুক ও রকেট হামলার সেই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এর আগে ২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস এবং ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীদের সম্পৃক্ততা সকলের কাছে স্পষ্ট। তবে পাকিস্তানে সার্বিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী পাঞ্জাবি ভূস্বামী ও সেনাপ্রধানরা। মূলত পাকিস্তানের রাজনীতি জটিল ও অমানবিক।
বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়েছে জঙ্গি মৌলবাদ। পাকিস্তান-আফগানিস্তানে এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান শুরু হলে এরা পাকিস্তান হয়ে সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় সমুদ্রপথে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশে জঙ্গিদের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়। পাকিস্তানের অন্ধ ভারতবিরোধিতা, আমেরিকার ক্লায়েন্ট স্টেট হয়ে যাওয়া, আহমদিয়া ও শিয়াবিরোধী নীতি, মধ্যযুগীয় ধর্মীয় শাসন এবং সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষকে প্রগতিশীল বিশ্ব থেকে বিচ্যুত করেছে। জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে পাকিস্তানি সাংবাদিক ইমতিয়াজ গুলের ‘দ্য আনহোলি নেক্সাস : পাক-আফগান রিলেশনস আন্ডার দ্য তালিবান’(২০০২) গ্রন্থে। এ গ্রন্থে গুল দেখিয়েছেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের জন্য পাকিস্তানি শাসকরা জামাতি ইসলামির ক্যাডারদের বেছে নিয়েছিল; আর তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পাকিস্তানও ইসলামি দলগুলোকে ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্ম ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ভুল সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে সেই ভুল ভাঙার যুদ্ধে বাঙালিদের জয়ের পুষ্পমাল্য অর্জনের ইতিহাস সেখানকার শাসকরা আজো মেনে নিতে পারছে নাÑ তারই ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবসে কাদের মোল্লার মতো যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়ার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। উপরন্তু ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার হুমকি দিয়ে তেহরিক-ই তালেবান বাংলাদেশের অপর জঙ্গি সংগঠন জামাত-শিবিরকে রক্ষার জন্য তৎপর হয়েছে। আসলে আজন্ম যাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা তাদের আমরা বন্ধু ভাববো কীভাবে? এজন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জাতীয় পরিষদের ঐ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো এবং ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিন্দা প্রস্তাব যথার্থ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তৃণমূল জনগণের অবস্থান জঙ্গিবাদের আস্তানা খ্যাত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪৯
তালপাতারসেপাই বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৫
শাহ আজিজ বলেছেন: ইতিহাস নির্ভর ব্যাখ্যা , ভালো, তবে আইয়ুব-ইয়াহিয়া গংদের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয় বাঙালি জাতিকে এটুকু ঠিক নয় হবে ভুট্টো - ইয়াহিয়া পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। আইউব সহজেই ক্ষমতা ছেড়েছিলেন , আমিই তো সাক্ষী অন্যের উপর নির্ভর কেন করতে হবে । আপনার লেখা একটি নাতিদীর্ঘ রচনা হতে পারে যদি তা যৌথভাবে লিপিবদ্ধ হয়।