নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ঢাকায় অস্ত্র, গোলাবারুদ মজুদ করছে জামায়াত-শিবির। পিস্তল-রিভলবারের মতো ক্ষুদ্রাস্ত্রের পাশাপাশি ভারি অস্ত্রও রয়েছে মজুদের তালিকায়। উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় বিপক্ষে গেলে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানো। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ধরা পড়া ভারি অস্ত্রের চালান দুইটি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় সামনে রেখে ঢাকায় আনা হয়েছিল। অস্ত্রের চালানের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া শিবিরের প্রশিক্ষিত দুই সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে এমন তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রশিক্ষিত সদস্য। তারা ছোট ও ভারি আগ্নেয়াস্ত্র চালনা ও মেরামতে পারদর্শী। তাদের মূল কাজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র, গোলাবারুদ আনা-নেয়া করা। বিশ্বস্ত সদস্য হিসেবে দলীয় নির্দেশে তারা এ কাজটি করে আসছিল। ইতোপূর্বে এ ধরনের অস্ত্রের আরও চালান ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃত দুই শিবির সদস্য।
এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ ইব্রাহিম জনকণ্ঠকে বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ভুয়া। জামায়াত-শিবির সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অভিযোগ বা দাবি বা ধারণা সঠিক নয়। যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় উপলক্ষে অস্ত্র, গোলাবারুদ মজুদ এবং সেইসব অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে নাশকতা চালানোর তথ্য পুরোপুরি মিথ্যা। তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল দুপুর একটায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুরে পৌঁছে। বিশেষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেই ট্রেনে অভিযান চালায় রেলওয়ে থানা পুলিশ। ট্রেনটির শেষের দিকের ট নম্বর বগির একটি সিটের নিচ থেকে সন্দেহজনক ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে আসে অত্যাধুনিক একে-২২ বোরের স্বয়ংক্রিয় প্রাণঘাতী রাইফেল। সেই সঙ্গে রাইফেলটির ২টি ম্যাগাজিন, রাইফেলটির টু টু বোরের ৮ রাউন্ড তাজা বুলেট, ১০টি বোমা তৈরির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ডেটোনেটর, ৩টি সুইসগেট চাকু ও ১০টি পাওয়ার জেল।
যে সিটের নিচ থেকে অস্ত্রের ব্যাগটি উদ্ধার হয় সেই সিটে বসে ছিলেন নুরুল ইসলাম (৩০) ও শামিম (৩৫) নামের দুই যুবক। তাদের আটক করা হয়। তারা একটি মাত্র টিকেটেই দুই জনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছে। এমন ঘটনায় রীতিমতো হৈচৈ পড়ে যায়।
ওইদিন রাতেই কমলাপুর জিআরপি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত দুইজনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে। মামলা দুইটির তদন্তের দায়িত্ব পান থানাটির উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।
পরদিন ২৯ এপ্রিল কমলাপুর রেলস্টেশনে টোকাইরা একটি পরিত্যক্ত কালো ব্যাগ পায়। ব্যাগটি খুলতেই বেরিয়ে আসে অস্ত্র, গোলাবারুদ। আবার শুরু হয় হৈচৈ। ওই ব্যাগটি থেকেও একটি একে-২২ বোরের একটি অটোমেটিক রাইফেল, রাইফেলটির ২টি ম্যাগাজিন, রাইফেলটির টু টু বোরের ৮ রাউন্ড তাজা বুলেট, ১০টি বোমা তৈরির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটোনেটর, ৩টি সুইসগেট চাকু ও ১০টি পাওয়ার জেল উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা হয়।
পরদিন ২৯ এপ্রিল আসামিদের পৃথক ২ মামলায় প্রত্যেককে ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত প্রত্যেককে ৫ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত নুরুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানায়। আর শামীমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে। তাদের ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে ঢাকা থেকে গোয়েন্দারা গ্রামের বাড়ি যায়। এছাড়া জেলা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকেও গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ চলে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক তারা দু’জনই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রশিক্ষিত সদস্য। তারা উদ্ধারকৃত ভারি অস্ত্র চালনা, মেরামত ও শক্তিশালী গ্রেনেড তৈরিতেও পারদর্শী। এদের প্রধান কাজ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ আনা নেয়া করা। অস্ত্রগুলো চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দেয়া হয়। তারা অস্ত্রগুলো গ্রহণ করে। এসব অস্ত্র নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল তাদের। অস্ত্রগুলো বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে কি না বা চট্টগ্রামের কোন গোষ্ঠী অস্ত্রগুলো সরবরাহ করেছে কি না সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে অস্ত্রগুলো ঢাকায় ব্যবহারের কথা ছিল। তাদের দায়িত্ব ছিল অস্ত্রগুলো স্টেশনের বাইরে নিয়ে অপেক্ষা করা। আরেকটি দলের অস্ত্রগুলো গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই অস্ত্রগুলো ধরা পড়ে যায়। এসব অস্ত্র জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে ব্যবহারের কথা ছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
তদন্তকারী সূত্রগুলো বলছে, রাইফেলটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতেই বাড়তি দুইটি ম্যাগাজিন আনা হয়েছে। ৮ রাউন্ড তাজা বুলেট পরীক্ষামূলকভাবে আনা হতে পারে। অনেক আগেই হয়ত রাইফেলটির বুলেট ঢাকায় এসেছে। উদ্ধারকৃত চাকুগুলো চোরাগোপ্তা কমান্ডো হামলা চালাতে আনা হতে পারে। কারণ এ ধরনের চাকু সাধারণত বিভিন্ন দেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমান্ডোরা কমান্ডো অপারেশনে ব্যবহার করে থাকেন। উদ্ধারকৃত পাওয়ারজেল ও ডেটোনেটরগুলো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব পাওয়ার জেল দিয়ে মারাত্মক ধ্বংসষজ্ঞ চালানো সম্ভব।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ঢাকায় ছাত্র শিবিরের প্রায় ৮শ’ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, প্রায় ৬ হাজার সাথী, প্রায় ১২ হাজার সাধারণ কর্মী ও প্রায় ১৫ হাজার সমর্থক কাজ করছে। সবমিলিয়ে ঢাকায় ছাত্র শিবিরের ৪০ হাজার সদস্য সক্রিয় রয়েছে। গ্রেফতারকৃত জামায়াত-শিবির নেতৃবৃন্দের মুক্তি, সরকার পতন এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পরে জামায়াত-শিবির আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। বিএনপির তরফ থেকে সরকারবিরোধী কঠোর কর্র্মসূচী ঘোষণা না করা হলে জামায়াত-শিবির এককভাবে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করবে। কর্মসূচীতে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলাপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃত দুই যুবক ছাত্র শিবিরের সদস্য বলে তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন সংস্থার তদন্তেও গ্রেফতারকৃতরা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। অস্ত্র, গোলাবারুদগুলো যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়কে সামনে রেখে আনা হয়ে থাকতে পারে। উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্র গোলাবারুদগুলো ঢাকায় ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল বলেও প্রাথমিকভাবে তাঁরা জেনেছেন। কে বা কারা কি কারণে বা কি উদ্দেশ্যে এসব ভারি অস্ত্র ঢাকায় মজুদ করার চেষ্টা করেছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরো অনুসন্ধান চলছে।
বিষয়টি সম্পর্কে রেলওয়ে পুলিশপ্রধান অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে জানান, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র গোলাবারুদগুলো উগ্র কোন ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী বা জঙ্গী সংগঠনের হতে পারে। যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত মামলার রায় ছাড়াও বড় ধরনের কোন নাশকতা চালাতে এসব ভারি অস্ত্র মজুদ করার চেষ্টা হতে পারে। এ ব্যাপারে বিস্তর অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
সূত্র
©somewhere in net ltd.