নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা-ছেলের সাক্ষাৎ-আলোচনার ফলাফল কোন পথে যাবে!

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সাক্ষাৎ হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের; মা খালেদা জিয়া ও পুত্র তারেক জিয়ার। বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে সাক্ষাতের এই যবনিকা উঠবে দুবাইতে এমিরেটস বিমানে আর মূল পর্বের আলোচনা হবে সৌদি আরবে। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে এখন বিএনপি রয়েছে এক বিশেষ অবস্থার মধ্যে। প্রায় প্রতিদিনের ইফতার পার্টিতেই খালেদা জিয়া বলে যাচ্ছেন, ঈদের পর সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। এতো ঘোষণার বহর দেখে সহজেই অনুমান করা চলে, বিএনপি আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টির জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছে। এমন অস্থির হয়ে ওঠার কারণ সহজেই অনুমেয়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধ করতে না পারার পরও বিএনপি ভেবেছিল যে, সরকার বেশি দিন টিকবে না। নিজের অতীত অবস্থা দিয়েই ভাবতে ভালোবাসে মানুষ। বিএনপিও ভেবেছিল নিজেকে দিয়েই। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদলীয় নির্বাচন করে বিএনপি মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। ওই দিনগুলোতে খালেদা জিয়া সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি। আর বিক্ষুব্ধ জনগণ খালেদা জিয়ার সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারকে এমন ভাগ্যই বরণ করতে হবে বলে মনে করেছিল বিএনপি।



কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। বিএনপি যা ভেবেছিল তা হয়নি। এখন যেভাবে চলছে, সেইভাবে চললে সরকার যে পাঁচ বছর বহাল তবিয়তে দেশ পরিচালনা করতে পারবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন অস্থির ভাব প্রদর্শন করছেন। এই অস্থির ভাবটা প্রকাশ পাচ্ছে কথাবর্তায়। নতুবা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কেন ইঙ্গিতে বলবেন, এবারেও কান্নার লোক কিংবা মিলাদ পড়ার লোক পাওয়া যাবে না। বলাই বাহুল্য, এই অস্থির ভাবটা আরো বেশি সঞ্চারিত হচ্ছে পুত্র থেকে। জানা যায়, সবচেয়ে বেশি অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন লন্ডন প্রবাসী তারেক জিয়া। তিনিই মাকে আরো অস্থির করে রাখছেন। পত্রপত্রিকা পাঠে জানা যায়, তারেক জিয়া ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘আন্দোলনে থাকলে নেতাকর্মীরা দলের প্রতি অনুগত থাকবে। নয়তো দল ও জোটের শরিকরা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলার চেষ্টা করবে। আর মাঠ ছেড়ে দিলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সংগঠন ভেঙে পড়বে।’ কেবল তাই নয়, আন্দোলন যদি না থাকে, সরকার যদি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি পায়, তবে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারের আরো আরো সাফল্য আসতে থাকবে। জনগণ সরকারকে আরো আস্থায় নেবে। তারেক জিয়া এমনটা মনে করায়ই খালেদা জিয়া ইফতার পার্টিতে বেশি বেশি করে আন্দোলন আন্দোলন রব তুলেছেন।



এটা রাজনীতির সাধারণ কথা যে, আন্দোলনের জন্য চাই সংগঠন। সংগঠনই হচ্ছে আন্দোলনের হাতিয়ার। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লক্ষ্য করলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তিনি মনে করেন দলের নেতৃত্ব আন্দোলনের উপযুক্ত নয়। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘আঙুল চোষা’ বলে গালি দিয়েছিলেন তিনি। এমন অভিযোগও তোলা হয়েছে যে, সরকারের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন বিএনপির কোনো কোনো সিনিয়র নেতা। নির্বাজনের আগে এবং পরেও খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগর ও ছাত্র দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বের ব্যর্থতার প্রশ্নটি তুলেছিলেন। মোট কথা দলের দুই প্রধান নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই এমন কথা সামনে আনা হচ্ছে যে, সংগঠনকে আন্দোলনের উপযুক্ত করে সজাতে হবে। আন্দোলনের প্রশ্নে যারা ভীরু-কাপুরুষ এবং সরকারের সাথে তলে তলে সংযোগ রেখে চলে অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা দোষে দুষ্ট তাদের বাদ দিতে হবে। তবে বাদ দিতে বললেই তো আর বাদ দেয়া যায় না। কারণ সন্দেহ-অবিশ্বাস, গ্রুপ দ্বন্দ্ব প্রভৃতির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে দল। কাকে বাদ আর কাকে রাখা হবে। কাকেইবা নতুন টানা হবে? সমস্যা সর্ব অঙ্গে ওষুধ দেয়া হবে কোথায়; এই হচ্ছে বিএনপি সংগঠনের অবস্থা।



প্রথমে ভাবা হয়েছিল জেলা পর্যায় থেকে শুরু করা হবে আন্দোলনের উপযুক্ত করে সংগঠন সাজানো। তারপর জেলাগুলো থেকে পর্যায় ক্রমে তৃণমূলকে সাজিয়ে তোলা হবে। সবশেষে ধরা হবে কেন্দ্র। কাজটা শুরুও হয়েছিল। যতোটুকু মনে পড়ে অন্তত ১৩টা জেলায় হাতও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মনমতো নেতা দিয়ে সাজানোর কাজটা যে এতো সোজা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেলো ওই প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে আসার ফলে। এদিকে সংস্কার হয়েছে এমন জেলাগুলোর পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়নি, যাহা বায়ান্ন তাহাই তেপ্পান্ন থেকে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তারপর কৌশল নেয়া হয়েছিল, সহযোগী সংগঠনের সংস্কার শুরু করা হবে। তাই মুক্তিযোদ্ধা দল ও শ্রমিক দলের কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এতে ফল পাওয়া কতোটুকু গেছে, তা বলা যাবে না। বরং শ্রমিক দলের কমিটি গঠনের পর সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। তাই আর যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে হাত দেয়া হয়নি। সহজেই ধারণা করা যায়, এখন কৌশল নেয়া হচ্ছে আগে ঠিক করতে হবে মাথা। তাই কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর কমিটির সংস্কারে হাত দেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে হাত দিতে গিয়েও সরে আসা হয়েছিল মহানগর সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ফলে। কিন্তু ঈদের পরে যেহেতু আন্দোলনে নামতেই হবে, তাই আর দেরি করা হয় নাই। ব্যবচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে সংযোজনও করা হয়েছে ঢাকা মহানগবের কমিটিতে। এই কাজটা করে বুঝতে চাওয়া হচ্ছে, রাস্তার আন্দোলনের নেতাদের দিয়ে যদি প্রথমে কেন্দ্রে ও পরে তৃণমূলে ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি সাজানো হয়, তবে দলের অভ্যন্তরে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কতোটুকু কি হবে?



প্রতিক্রিয়া যে ব্যাপক ও তীব্র হবে তা বুঝতে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার অসুবিধা হয়নি। ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহানগরের ক্ষমতায় আছেন সাদেক হোসেন খোকা। সঙ্গে সদস্য সচিব আছেন আব্দুস সালাম। এখন এতো দিন পর তাদের যদি বলা হয়, রাস্তায় তারা পরীক্ষিত নয় কিংবা নানা সন্দেহ পোষণ করা হয় এবং অভিযোগ তুলে পদ থেকে বাদ দেয়া হয়, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া হবে না কেন? খোকাকে সরিয়ে মহানগরের নেতৃত্বে আনা হয়েছে মির্জা আব্বাসকে। কার না জানা এই দুই সাবেক মেয়রের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের অহিন-অকুল সম্পর্ক। এখন এক জনকে কাছে টেনে আরেক জনকে যদি দূরে ঠেলে দেয়া হয়, তবে প্রতিক্রিয়া হবে না কেন? তবে প্রতিক্রিয়াটা কেবল একপক্ষীয় হয় নাই, দুই পক্ষেরই হয়েছে। কারণ মির্জা আব্বাস একচ্ছত্র নগর প্রধান হতে পারেননি। কমিটিতে নাকি রয়েছে সাদেক হোসেন খোকার সমর্থকরা বেশি। আর নতুন সাধারণ সম্পাদক নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে মির্জা আব্বাসের। তাকে যদি প্রধানই করা হলো, তবে কেন তার পছন্দের লোককে ওই পদ দেয়া হলো না। তাই সাদেক হোসেন খোকাকে হটিয়ে দিতে পেরেও বিজয়ের আনন্দে মাতেন নাই মির্জা আব্বাস। তাৎক্ষণিক গ্রহণ করেননি কারো অভিনন্দন। নিজ বাড়িতে লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কি ফল দিবে এই ব্যবচ্ছেদ আর সংযোজনের, তা এখনই স্পষ্ট করে বলার উপায় নেই।



ধারণা করা যায়, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দূরে অবস্থান করে আলাদা আলাদাভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পরিণাম সম্পর্কে অনুমান করতে পারছেন না। সর্বোপরি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সামলিয়ে নামতে হবে ঘোষিত আন্দোলনে। কিভাবে কোনটা করা হবে? তাই প্রয়োজন পড়েছে মুখোমুখি পরামর্শের। প্রসঙ্গত, প্রধান নেতা কে থাকবেন খালেদা জিয়া নাকি তারেক জিয়া এই প্রশ্নে বিএনপি দলটি অনেক দিন রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে। তবে খালেদা জিয়া পুত্র তারেক রহমানকে মূল নেতা হিসেবে যে বসিয়ে দেয়ার পথ খুঁজছেন এটা সুস্পষ্ট। ছেলের অভিষেক দেখতে চাওয়াটাই মায়ের জন্য স্বাভাবিক। ইতোপূর্বে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে প্রজেকশনও করা হয়েছিল। হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে এর তরুণ তুর্কদের এ জন্য সামনে এগিয়ে আনারও প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তার ফল শুভ হয়নি। প্রবীণ ও তরুণের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের তীব্রতা ও ব্যাপকতা প্রবীণ সাইফুর রহমান ও নবীন ইলিয়াস আলীর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পেয়েছিল। এবারে মনে হয় খালেদা জিয়া পুত্রের অভিষেক প্রশ্নে আরো মরীয়া। কারণ প্রবাসে থাকাটা ক্রমে দীর্ঘান্বিত হচ্ছে। এদিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে না চলে যাওয়ার জন্য মিডিয়ায় দৃশ্যমান থাকার চেষ্টায় দেশের ইতিহাস নিয়ে উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছে ছেলে। ফলে তারেক রহমান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। তাই খালেদা জিয়া আর সময় ব্যয় করতে চান না। তিনিও অস্থির আর তাই পুত্রের অস্থিরতাকে যথার্থভাবেই আমলে নিচ্ছেন। সময় দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন।



সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, অস্থিরতার ফলেই ঘটছে তারেক জিয়া প্রবাসে যাওয়া পর দলের দুই কর্ণধার মা-ছেলের দ্বিতীয় মিলন। প্রশ্ন হলোÑ এই মিলন কি বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক লক্ষ্যকে ফলবতী করতে সক্ষম হবে? প্রশ্নটা লক্ষ-হাজার কোটি টাকার এবং কোনো দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন জ্যোতিষও বোধকরি এর ফল আগাম বলতে পারবেন না। তবে একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে বলা যায়, উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপালে ফল হয় হিতে বিপরীত। প্রথমে বিএনপির এটা স্থির করা প্রয়োজন যে, নির্বাচন পূর্ব ও পরের রাজপথে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে নেতারা নাকি গোরায় ছিল গলদ, আন্দোলনের ইস্যু-কৌশল-পদক্ষেপ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ছিল ভুল। এটা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সচেতন মানুষ সকলেই জানেন যে, আন্দোলনের ইস্যু-কৌশল-পদক্ষেপ গ্রহণে যদি থাকে ভুল, তবে আন্দোলন কখনো দাঁড়ায় না। উগ্রতার দিকে গিয়ে আন্দোলন পড়ে মুখ থুবরিয়ে। বিএনপির ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি কথায় না গিয়ে বলা যায়, নির্বাচনের আগে তারেক জিয়ার ইন্টারনেট সংলাপ যারা শুনেছেন ও সংলাপের সংবাদ যারা পত্রিকায় পড়েছেন, তারা ভালো করেই জানেন যে, ওই দিনগুলোকে সবটা নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারেক জিয়া। তিনিই পূর্বাপর বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে জামাতকে সঙ্গে রেখে ঘোষণা দিয়ে দলকে যুদ্ধে নামিয়েছিলেন। আন্দোলন-সংলাপ-সমঝোতার লাইনে তারেক জিয়া ছিলেন না। ছিলেন বোমাবাজি-বন্দুকবাজি-অগ্নি সংযোগ তথা নিরীহ মানুষ-সংখ্যালঘু ও পুলিশ খুনের লাইনে।



প্রকৃত বিচারেই হিসাবটা ছিল সর্বৈব ভুল। বিএনপি মনে করেছিল জনগণের ক্ষোভ, সুশীল নিরপেক্ষবাদীদের আর সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমর্থন বিএনপিকে যুদ্ধে জয়ী করে তুলবে। এক পর্যায়ে যখন মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়কে কার্যকর করতে যাওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও মর্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি সাহেব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন কিংবা মার্কিন রাষ্ট্রদূত দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন, তখন বিএনপি উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল। বিশেষভাবে পাকিস্তান পার্লামেন্ট যখন রায় কার্যকর করার প্রতিবাদ করে এবং তথাকথিত আন্দোলনকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে, তখন বিএনপি জামাতকে নিজ ঘাড়ে তুলে নিতে পিছপা হয় না। এসবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে মা-ছেলেকে উৎসাহিত করেছিল। সমান সমান মন্ত্রী নিয়ে নির্বাচনে শামিল হওয়ার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানেও কর্ণপাত করেননি। এটা বিএনপি নেতা তরুণ তুর্ক তারেক রহমান বুঝেননি যে, সংবিধান ও সাংবিধানিক সরকার বহাল থাকলে যুদ্ধ করে জেতা দূরের কথা, যুদ্ধের পরিবেশই থাকে না। কিন্তু মা-ছেলে ঐকমত্য পোষণ করে একদিকে যুদ্ধ আর অপরদিকে যড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বাজিমাত করতে চেয়েছিল। প্রবাদ বলে, অতি চালাকিতে গলায় দড়ি। প্রকৃত বিচারেই কোথায় গলায় দড়ি পড়বে, অভিযুক্ত হবেন বিশেষভাবে তারেক জিয়া তা নয়; উল্টো রাস্তার লড়াকু ধুয়া তুলে সংগঠনে বিয়োজন-সংযোজন করতে চাইছেন তারেক জিয়ার পরামর্শে খালেদা জিয়া।



একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, নিজের ভুল স্বীকার পরোক্ষে করে চলেছেন খালেদা জিয়া। ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না এই প্রবাদ বাক্যটির সত্যতা প্রমাণ করে ইফতার পার্টিতে তিনি বলে যাচ্ছেন, ‘বিএনপি যুদ্ধের ডাক দেয়নি। জ্বালাও-পোড়াও বিএনপির রাজনীতি নয়। বিএনপির কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক।’ নিজ পক্ষে সাফাই না গেয়ে ভুল প্রকাশ্যে স্বীকার করে তিনি যদি অগ্রসর হতেন, তবে কেবল দেশের নয়, কেবল গণতন্ত্রের নয়; নিজ দল ও পরিবারেরও লাভ হতো। কিন্তু সেই পথে তিনি যাচ্ছেন না। যাচ্ছেন মা-ছেলে সাক্ষাৎ পরামর্শ করে বিয়োজন-সংযোজন করতে। সাদেক হেসেন খোকার বিরুদ্ধে লাগাচ্ছেন মির্জা আবাসকে। আবার মির্জা আব্বাসকে বিএনপির নগর প্রধান করলেও ভারসাম্য বজায় রাখতে সদস্য বেশি রাখছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদেক হোসেন খোকার। কার্যত দুই জনকে পরস্পরের মুখোমুখি করে দিচ্ছে নেতৃত্ব নিজেই। কোথায় দলের দুর্যোগে দলকে ঐক্যবদ্ধ করবেন তা নয়, বাধাচ্ছেন গ-গোল। এর পরিণাম বিএনপির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। আর ভুল স্বীকার করে গণতান্ত্রিক-শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের লাইনে না আসলে ক্ষতি হবে দেশের, দেশের মানুষের। কারণ বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে লক্ষ্য-পথ-পদ্ধতি ঠিক না করে সময় দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে আন্দোলন শুরু করলে ফলাফল গণবিচ্ছিন্ন ও উগ্রমুখী হতে বাধ্য। আর একাত্তরের পরাজিত শত্রু জামাত সঙ্গে থাকলে তা বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো তথাকথিত আন্দোলন আগের মতোই যুদ্ধংদেহী হওয়া ভিন্ন বিকল্প থাকবে না। যুদ্ধংদেহী হয়ে প্রথমবার ভাগ্যে জুটেছে বিয়োগান্তক নাটক, ন্যূনপক্ষে বিরোধী দলীয় নেতার পদটা হারিয়েছেন খালেদা জিয়া। দ্বিতীয়বার একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ইতিহাসের নিয়মানুযায়ী তা হবে প্রহসনের নাটক আর তাতে খালেদা জিয়ার অবস্থান নিঃসন্দেহে হবে আরো মর্মান্তিক! বস্তুতপক্ষে নিজ দলের নাক কেটে দেশের মানুষের অগ্রযাত্রা ভঙ্গ করবে নাকি সঠিক পথে অগ্রসর হয়ে দেশের সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ প্রশস্ত করবে সৌদি আরবে মা ও ছেলে সাক্ষাৎ আলোচনা, তা প্রত্যক্ষ করার জন্য দেশবাসী অপেক্ষা করে থাকবে।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.