নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
অনেক রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের লোকজন একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন ‘জয় বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বিতর্কের প্রয়োজন কী? দু’টো তো একই জিনিস। তাদের ভাষায় বিষয়টি নিম্নরূপ:
“আজকে আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়ন, শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। কিন্তু সেখানে ১৬ কোটি মানুষের দেশে আগামী দিনের এই চ্যালেঞ্জের কথা চিন্তা না করে ‘জিন্দাবাদ আর জয় বাংলার ভাষাগত দ্বন্দ্ব’ দেখে সমগ্র দেশবাসী হতাশায় নিমজ্জিত, যা দেশের জনগণের সঙ্গে রীতিমতো তামাসা ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে তাদের নিকট আমার প্রশ্ন:
ক) সবকিছু বাদ দিয়ে আপনাদেরকে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিলেই সন্তুষ্ট থাকবেন? মানুষের জন্য শুধু সম্পদ এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থানই কি যথেষ্ট? তাহলে অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী?
খ) তাহলে, (আপনাদের ভাষায়) শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা, গণতন্ত্র, ভাষা, সংস্কৃতি, মানবাধিকার, জাতিসত্তা, দেশ, সমাজ, ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদির প্রয়োজনই বা কী এবং এসবের অস্তিত্ব কোথায়?
গ) আমাদের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা, ২১শে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখসহ অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু?
ঘ) ‘জয় বাংলা’ এবং ‘জিন্দাবাদের’ মধ্যে মিল বা পার্থক্য কী তা ব্যাখ্যা করে বলবেন কি?
ঙ) ২১শে ফেব্রুয়ারি কি শুধুমাত্র একটি তারিখ? ভাষার বিকাশ বা ব্যবহার না করে কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব?
চ) একটা দেশে কি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা-ই হয়ে থাকে? সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের উন্নয়ন কর্মকা- ইত্যাদি কেন?
জ) রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষার প্রসার ও বিকাশ না ঘটিয়ে কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব?
ঝ) আমাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে: কোন দেশের বা কোন জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষার প্রসার ও বিকাশ ঘটাবেন এবং এর ভিত্তি কী হবে? এই মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর নির্ধারণ করুন তাহলেই সব প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন।
উপরোক্ত অপ্রয়োজনীয় এবং অতিকথনের কারণেই আমার পরামর্শ হচ্ছে: কথা বলার ওপর ট্যাক্স বা কর নির্ধারণ করতে হবেÑ নিম্নোক্ত ভাবে বা হারেÑ ১. বেশি কথা বলার জন্য এক রকম অর্থাৎ একটি নির্দিষ্টহারে কর নির্ধারণ করতে হবে। ২. ভুল বা সমাজ-বিরোধী বিষয়ের জন্য দ্বিগুণ বা তিনগুণ আকারে আয়কর নির্ধারণ করতে হবে। ৩. বারবার একই ভুল করলে আরো অধিক হারে কর নির্ধারণ করতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযানের মতো।
‘যার যা খুশি’ বলে ফেলবেন, আবার মিডিয়াও অবলীলায় তা প্রচার করবে তা হয় না, হতে পারে না। আমাদের সমাজে শিক্ষার তথা সামাজিক শিক্ষার হার এবং মানÑ উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক নিম্নে। এখানে সমাজ উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিডিয়াকে এসব বিষয়ে সতর্কভাবে এবং সমাজ উন্নয়নের পক্ষে তথা দেশ, জাতি এবং সমাজ প্রগতির পক্ষে কথা বলতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সমস্যা আরো জটিল। ১৯৭৫ সাল থেকেই ‘বাংলা ভাষা-সংষ্কৃতি এবং বাঙালি জাতি-রাষ্ট্র’ অস্তিত্বের সংকটে নিপতিত। উক্ত সমস্যা এবং সংকট থেকে উত্তরণ এবং মুক্তির লক্ষ্যে আমরা যেখানে আন্দোলন-সংগ্রামে লিপ্ত সেখানে মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি, রাষ্ট্র বা সমাজ বিরোধী প্রচার-প্রপাগান্ডা অনৈতিক এবং বেআইনী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ তথা ‘বাংলা ভাষা-সংষ্কৃতি ভিত্তিক’ এবং ‘অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতি-রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য। ‘জয় বাংলা’ হচ্ছে উপরোক্ত ‘বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের’ প্রতীকী সেøাগান। ‘২১শে ফেব্রুয়ারি’ যেরকম বাংলা ভাষার ‘প্রতীকী দিন’ যা বর্তমানে সারা বিশ্বের সকল মাতৃভাষা রক্ষার প্রতীকী দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে। মোরশেদ খান, যে রকম একজন মানুষের প্রতীকী নাম ঠিক সে রকমই ‘জয় বাংলা’ হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জনযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতিকী নাম বা পরিচয়। এই সেøাগানের মাধ্যমেই আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এবং আমরা বিজয় অর্জন করেছি। ‘জয় বাংলা’ সেøাগানই ছিল আন্দোলন-সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের ‘প্রেরণা ও শক্তির উৎস’। ‘হজরত আলীর’ শক্তিকে যেভাবে মুসলমানরা ‘ইয়া আলী’ বলে প্রেরণা লাভ করেন, আমাদের জন্য ‘জয় বাংলা’ও সেই একই রকম প্রেরণার উৎস।
ঠিক একইভাবে জিন্দাবাদ হচ্ছে: সাম্প্রদায়িক, উগ্র এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ তথা ‘ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্রের’ প্রতীকী সেøাগান। শাব্দিক অর্থ দিয়ে এ সবের বিচার বা সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। যেমন ‘রাজাকার’ অর্থ সহযোগী। কিন্তু আমাদের দেশে তার সামাজিক অর্থ হচ্ছে, ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ এবং ‘ধর্মীয় জঙ্গিবাদী শক্তি’। আবার ‘মীর জাফর’ হচ্ছে একজনের নাম। কিন্তু এ শব্দটি ব্যবহৃত হয় ‘বিশ্বাস ঘাতক’ হিসাবে। সুতরাং যে কোনো শব্দের শাব্দিক অর্থ দিয়ে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করা যায় না বা করা সঠিকও নয়। কোনো কোনো শব্দের সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক অর্থও থাকে। ২১শে ফেব্রুয়ারির মতো শব্দ অনেক সময় আন্তর্জাতিকভাবেও বিস্তৃতি লাভ করে। যেমন ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘অর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’। অথচ এ দিনটি ছিল আমাদের ভাষা-শহীদদের স্মরণে একটি দিন।
অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলছেন? অর্থনৈতিক মুক্তি কাকে বলে? অর্থনৈতিক উন্নতি এবং মুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? বিগত ৪৩ বছরে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেটুকু হয়েছে তাতে কার কতোটুকু অর্থনৈতিক উন্নতি বা মুক্তি হয়েছে?
উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে সামান্য আলোকপাত করা দরকার:
১. বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু বাৎসরিক আয় = ১,০৪৪ ডলার অর্থাৎ কম-বেশি প্রায় = ৮০,০০০ টাকা।
২. বাংলাদেশের বড় বড় শিল্পপতি বা শিল্প গ্রুপের মালিকদের বর্তমানে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো?
৩. উক্ত শিল্প গ্রুপে কর্মরত শ্রমিকদের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো?
৪. সরাসরি কৃষিকাজে নিয়োজিত ক্ষুদ্র কৃষক এবং কৃষি-শ্রমিকদের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো?
৫. ফুটপাতের হকার, রিক্শাসহ বিভিন্ন যানবাহনের শ্রমিক এবং ঢাকা শহরের ভাসমান বস্তিবাসী লোকদের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো?
৬. দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার নেতা-কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ডাক্তার, অধ্যাপক, আইনবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তথাকথিত সুশীল সমাজ নামধারী অন্যান্য শ্রেণী-পেশার লোকদের আলাদা আলাদা ভাবে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো?
৭. উপরোক্ত শ্রেণী-পেশার লোকদের ১৯৭২-৭৫ সালে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো ছিল? এ জরিপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সহ উপরোক্ত বিষয়গুলোর সঠিক ডাটা বা জরিপকৃত ফলাফল পাওয়া গেলে ‘অর্থনৈতিক উন্নতি এবং মুক্তি বিষয়ক’ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এবং উক্ত বিষয়ে আলোচনা সহজ হয়ে যাবে। নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা দ্বারা উপরোক্ত বিষয়গুলো আলাদা আলাদাভাবে জরিপ করিয়ে দেখুন কোন কোন পক্ষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় কতো এবং বিগত ৪৩ বছর আগে তাদের মাথাপিছু আয় কতো ছিল? এতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কাদের কতোটুকু অর্থনৈতিক উন্নতি বা মুক্তি অর্জিত হয়েছে?
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী
ক. “আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে”।
খ. “আমরা আরো অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবেÑ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে”।
আমাকে ক্ষমা করবেন উপরোক্ত প্রশ্নগুলো আমি উত্থাপন করিনি। জনৈক শিল্পপতি, ব্যাংকের মালিক, রাজনীতিবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের’ মাধ্যমে উত্থাপন করেছেন। তার লেখা এবং প্রশ্ন উত্থাপনের বিপরীতে এবং সংবিধানের উপরোক্ত প্রস্তাবনার আলোকে আমার উপরোক্ত প্রশ্নগুলো অযৌক্তিক হলে আমি সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। সুত্র
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১
শফিক আলম বলেছেন: এত কথার প্রয়োজন নাই। "জিন্দাবাদ" ব্যাপারটা সামনে আসার আগে আমাদের দেখতে হবে "জয় বাংলা" শ্লোগান আকাশ থেকে পড়েছিল কিনা! জয় বাংলা আর জিন্দাবাদ যদি একই ব্যাপার হয়ে থাকে তা'হলে আমাদের ২৪ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে 'জয় বাংলা' স্থান করে নিলো কি ভাবে? ১৯৬৬ থেকে '৭১ পর্যন্ত এই দেশের মানুষ কি পাগল ছিল? তাদেরকে কি অহিফেন সেবনে মদ-মত্ত্ব করা হয়েছিল যে নেশার ঘোরে তারা যা খুশি তাই বলেছে? যেই শ্লোগানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ গতি পেয়ে এগিয়ে গেছে, তাকে হঠাৎ জিন্দাবাদ করার প্রয়োজন পড়লো কেন? অন্যরকম গন্ধ পাওয়া যায় এই জন্যই তো ! যারা বুঝে তারা এসবে কান দেয় না, কিন্তু না-বোঝার সংখ্যাটাই যে এ দেশে বেশী!!