নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৫ জুলাই, ২০১৪ ব্রাজিলের ফরতেলেজা নগরীতে ব্রিকসের ৫টি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে ষষ্ঠ সম্মেলনে ব্রিকস ব্যাংক গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০% লোকের বসবাস এবং বিশ্বের মোট জিডিপির ২০% উৎপাদিত হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে চীন, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়া ২০৫০ সাল নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এর আগে ২০০১ সালে গ্লোডমেন সাসেক্সের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নীল প্রত্যাশা প্রকাশ করেছিলেন যে, ব্রিকসের পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে চারটি রাষ্ট্রের (দক্ষিণ আফ্রিকাবাদে) বিশ্ব জিডিপিতে মোট অংশীদারিত্ব তাৎপর্যমণ্ডিতভাবে বৃদ্ধি পাবে। আবার এই পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে চীন এককভাবে ব্রিকসের সদস্যের মধ্যে ৭০% জিডিপি উৎপাদন করে থাকে। আইএমএফের ২০১৩ সালের পার্চেজিং পাওয়ার গ্যারান্টিভিত্তিক জিডিপি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমসারির বিশটি রাষ্ট্র হচ্ছে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৪তম) ও ইইউ (একত্রে ১ম), চীন ২য়, ভারত ৩য়, জাপান ৪র্থ, জার্মানি ৫ম, রাশিয়া ৬ষ্ঠ, ব্রাজিল ৭ম, যুক্তরাজ্য ৮ম, ফ্রান্স ৯ম, মেক্সিকো ১০ম, ইতালি ১১তম, দক্ষিণ কোরিয়া ১২তম, কানাডা ১৩তম, স্পেন ১৪তম, ইন্দোনেশিয়া ১৫তম, তুরস্ক ১৬তম, অস্ট্রেলিয়া ১৭তম, ইরান ১৮তম, সৌদি আরব ১৯তম এবং তাইওয়ান ২০তম। রাজনৈতিক ও ভূ-সম্পত্তিগত কারণে ব্রিকসের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সক্রিয়ভাবে রাখা হয়েছে। আসলে ব্রিকস ব্যাংক একটি উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেই হবে না; দীর্ঘমেয়াদে এটি যৌক্তিক ও বাস্তবানুগ পদক্ষেপ দ্বারা উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কাঠামো গঠন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানে আরও গঠনমূলকভাবে বিতরণ করতে হবে। ব্রিকস ব্যাংক নিয়ে একশ্রেণীর অর্থনীতিবিদ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপক্ষে যতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করুক না কেন, সময়ের প্রেক্ষিতে সঠিক কর্মপন্থার মাধ্যমেই ব্রিকস ব্যাংককে যেমন সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে তেমনি প্রমাণ করতে হবে উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিক্রিয়াশীল এবং চাপিয়ে দেয়া ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিভিন্ন সময় ঋণ গ্রহণকারী দেশসমূহের যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন আর অনুভূত না হয়। ফলে কোন বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা ব্রিকস ব্যাংক গ্রহণ করলে তা আত্মঘাতী হবে।
ব্রিকস ব্যাংক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে প্রাথমিক মূলধন নির্ধারণ করেছে মার্কিন ডলারে ৫০ বিলিয়ন এবং সর্বোচ্চ ১০০ বিলিয়ন। ব্রিকস ব্যাংককে উন্নয়ন কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে মানবিক সাহায্য ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ দৃঢ়চেতা মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। যদিও ব্রিকস ব্যাংকের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ব্যাংক আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক কিংবা আঞ্চলিক ব্যাংককে প্রতিস্থাপন করবে না। বরং তারা উল্লেখ করেছে, ব্যাংকটি এমন একটি ব্যবস্থা স্থাপন করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী যাতে উন্নয়ন কাঠামোয় গতিময়তা সঞ্চারিত হয়। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশকে অবশ্যই ব্রিকস ব্যাংকের প্রাথমিক সদস্য করা উচিত।
আসলে বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটেনউডের সম্মেলনের ভিত্তিতে ১৯৪৫ সালে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যাত্রা শুরু। বিশ্বব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন; যার জন্য কারিগরি ও আর্থিক সমর্থন দেয়া। অন্যদিকে আইএমএফের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে নীতিগত পরামর্শ প্রদান, কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে মুদ্রানীতির সাযুজ্য প্রদান এবং ঋণ প্রদান করা; যাতে উন্নয়ন করা যায়। আইএমএফের কার্যক্রমের আওতায় সদস্যরাষ্ট্রের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পজিশনে ত্রুটি হলে তা সংশোধন করা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা রক্ষণের চেষ্টা করা, সদস্যরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতিতে সহযোগিতা করা। ১৮৮টি রাষ্ট্রের উন্নয়নকে সুসংহতকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ওপর দায়িত্ব বর্তালেও তারা গত সত্তরটি বছরের মধ্যে শেষ চল্লিশ বছর মূলত পাশ্চাত্যের দেশসমূহ বিশেষত ধনী রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করেছে। বিধ্বস্ত ইউরোপ পুনর্গঠনে তাদের যে ভূমিকা ছিল ইদানীং সে ধরনের ভূমিকা নেই, যদিও তারা তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কথা বলছে। বরং সংস্থা দুটো ধনবানদের প্রতি অতিমাত্রায় উদার। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ ব্যবস্থাপনাগত কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তাতে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষোভ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। এ জন্যই ব্রিকস ব্যাংকের গঠন নিয়ে অনেকেই ইতিবাচক হলেও দীর্ঘকালে গিয়ে এই ব্যাংক সত্যি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে কিনা সে জন্য যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়। আইএমএফ মূলত ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিশ্বব্যাংকে বেশি। একটি হিসেবে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিশ্ব জিডিপি’র পরিমাণ ১৯.২%। অন্যদিকে আইএমএফের ক্ষেত্রে তাদের ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ১৬.৮%। চীনের ক্ষেত্রে বিশ্ব জিডিপির পরিমাণ ১৬.১% হলেও আইএমএফের ক্ষেত্রে ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ৩.৮%, ভারতের বিশ্ব জিডিপির পরিমাণ ৬% হলেও আইএমএফে ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ২.৩%। আবার রাশিয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব জিডিপির পরিমাণ ২.৯% অথচ আইএমএফের ক্ষেত্রে ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ২.৬%। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপির পরিমাণ হচ্ছে ২.৮% অথচ আইএমএফের ক্ষেত্রে ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ১.৭%। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপির পরিমাণ হচ্ছে ০.৭% অথচ আইএমএফের ক্ষেত্রে ভোটাধিকারের পরিমাণ হচ্ছে ০.৮%। আসলে আইএমএফের সত্যিকার পুনর্গঠন প্রয়োজন এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরিতে রাষ্ট্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
বিভিন্ন সময়ে আইএমএফ যে সমস্ত শর্ত উন্নয়নশীল দেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে তার অধিকাংশই সেই দেশের উন্নয়নের বিপক্ষে যায়। নব্বইয়ের দশকে আইএমএফের শর্তসমূহ উন্নয়নশীল দেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জোসেফ স্টিগলিজ এ কারণেই ‘বিশ্বায়ন’ শীর্ষক গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ের সূচনায় লিখেছেন, আইএমএফ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আইএমএফ উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রতি যে নীতিসমূহ ঐ দেশে চাপিয়ে দিচ্ছে যা তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে; তার জন্যই এক ধরনের ক্ষোভ দানা বেঁধে থাকে। এই ক্ষোভ সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিভিন্ন সময় বাধ্য হয়ে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়। অথচ বহুদিন ধরেই বিকল্প অর্থ-ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল।
আবার বিশ্বব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাদের কার্যক্রম হচ্ছে কাবুলীওয়ালার মতো। বেনিয়া হিসেবে বিশ্বব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষ। যারা বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তারা কমই বর্তমানে উন্নত হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সব সময়ই তাদের কার্যক্রম রাষ্ট্রের উন্নয়নের বদলে নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধিতে অনেকখানি শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে থাকে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল দেশ থেকে ঋণের অংশ পুঁজি হিসেবে পাচারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। বিশ্বব্যাংক কখনও কোন রাষ্ট্রে মানবিক বিপর্যয় ঘটলে তার দায়দায়িত্ব নেয় না। যেমন ইথিওপিয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছিল। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনও মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে কখনও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় না। বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তেমন লক্ষ্য রাখে না। অথচ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুষম বণ্টন ব্যবস্থা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের মৌল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। অথচ বিশ্বব্যাংক অনেকক্ষেত্রে রাজনৈতিক আচরণ করে থাকে। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আচরণ ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। অর্থ ছাড় না দিয়ে দুর্নীতি হয়েছে-এ ধরনের অনভিপ্রেত অভিযোগ আসলে তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে পেছনে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। এখানে শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনার ফসল।
২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক মন্দার সময়েও কিন্তু বিশ্বব্যাংক তাদের মুনাফা অক্ষুণœ রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ দ্বারা প্রমাণ হয়, বিশ্বব্যাংক মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা দক্ষতার সঙ্গে বৈশ্বিক উন্নয়নকে সুসংহত করতে পারেনি। বর্তমানে কিন্সীয় (কবুহবংরধহ) এবং মুদ্রানীতি পাশাপাশি একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের অনেক দুর্নীতির অভিযোগ উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিনিয়ত করে থাকে। আবার তাদের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কথা এখন সারা বিশ্বে বেশ আলোচিত।
ব্রিকস ব্যাংকের সদর দফতর স্থাপিত হচ্ছে চীনের সাংহাই নগরীতে। প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ভারতীয়। ব্রিকসের গঠনতন্ত্রে কিন্তু পুরোপুরিভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। এর গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে যে, তাদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যের ভোটের পরিমাণ কখনও ৫৫% এর কম হবে না, যদিও অধিকসংখ্যক রাষ্ট্র এতে যুক্ত হোক না কেন। আসলে ব্রিকসের এ ধরনের বক্তব্য প্রমাণ করে, তাদের চিন্তাচেতনায় ভুল রয়েছে, যার পরিবর্তন আনয়ন করা দরকার। আসলে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রমের বিপক্ষে অবস্থান নিতেই ব্রিকস ব্যাংকের সূচনা; যদিও তারা তাদের ঘোষণাপত্রে এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দিয়েছে। ২০১৩ সালে চীন ১৩.০ বিলিয়ন, ভারত ১১.৪ বিলিয়ন এবং ব্রাজিল ১০.৪ বিলিয়ন ঋণ নিয়েছে। বস্তুত, গঠনকালীন পর্যায়ে ব্রিকসের প্রাথমিক পর্যায়ে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ছিল।
বাংলাদেশ ব্রিকস ব্যাংকের প্রারম্ভিক সদস্য হতে ইচ্ছুক বলে অর্থমন্ত্রী মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। ব্রিকস ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকরণ করা সম্ভব হলে এদেশের জন্য লাভ হবে। এ জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপসমূহ শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন ফিরিয়ে নিল তখন এডিবি, জাইকা এমনকি আইডিবিও শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন করেনি। আসলে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ম হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেয়া। আর বিশ্বায়নকে ব্যবহার করা হয় দরিদ্র দেশ থেকে ধনী রাষ্ট্রে পুঁজি পাচারের উপায় হিসেবে। এ জন্যই ব্রিকস ব্যাংক যদি বৃহত্তর পরিসরে প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে তার গতি-প্রকৃতি যেমন সুসংহত হবে তেমনি রাষ্ট্রের উন্নয়নকল্পে ব্যবহৃত হতে পারবে।
ব্রিকস ব্যাংকে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকরণ হওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড যদি প্রাথমিক সদস্য হয় এবং মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের সঞ্চার হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মূল উদ্যোক্তাদের ইগো প্রবলেম ও ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে বেরিয়ে আসা। উন্নয়নের জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ব্রিকস ব্যাংক অর্থায়ন করবে, সে ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও সুষম বণ্টন ব্যবস্থার প্রতি অবিচল থাকা। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথা বিবেচনায় রেখে পরিবেশ বিনষ্টকারী কোন প্রকল্পে অর্থায়ন না করার ক্ষেত্রে ব্রিকস ব্যাংককে সচেতন থাকতে হবে। ব্রিকস ব্যাংক যাতে আরও গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হয় এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। এ বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে ব্রিকস ব্যাংকের পরিচালনাকারীদের।
ব্রিকস ব্যাংক স্থাপিত হওয়ায় বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক ধরনের আশার আলো নিয়ে এসেছে। সত্যিকার অর্থে ব্রিকস ব্যাংককে কার্যকরী করতে হলে তাদের মূল লক্ষ্য হবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করে মুনাফামুখী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে উন্নয়নশীল দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নবান্ধব ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া; যাতে উন্নয়ন কাঠামোয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা যায়, দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায় এবং দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সঙ্গে সুষম বণ্টন ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া যায়। বাংলাদেশ যাতে ব্রিকস ব্যাংকের প্রাথমিক সদস্য হতে পারে সে জন্য ব্রিকস ব্যাংকের যে পাঁচটি রাষ্ট্র রয়েছে তাদের কাছ থেকে উদার মনোভাব প্রয়োজন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সাড়ে পাঁচ বছরে এ রাষ্ট্র অনেক এগিয়েছে-আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ না থাকলে আরও এগুতে পারত। বিকল্প একটি ব্যাংক হিসেবে ব্রিকস ব্যাংককে দাঁড়াতে হলে অবশ্যই আরও উদার ও গঠনমূলক ভূমিকা নিয়ে এগুতে হবে। ব্রিকস ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কাঠামোয় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ভূমিকা রাখতে পারবে, এই প্রত্যাশা করছি।
সুত্র
©somewhere in net ltd.