নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামাতের অর্থায়নে গার্মেন্টস শিল্পে ষড়যন্ত্র

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১০



সরকারকে জব্দ করার জন্য স্পর্শকাতর ও দেশবিরোধী শিবিরে সবগুলো জায়গায় আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটা যেহেতু প্রযুক্তির সুবিধার যুগ, সেহেতু দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কালো থাবা ইউরোপ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে তথাকথিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামের সংস্থা সরকারকে জব্দ করার জন্য জাতিসংঘের কাছে সুপারিশ পেশ করেছে যেন বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব শান্তিমিশনে সেনা সদস্য না নেয়া হয়। হয়তো জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা অবহিত আছেন বলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কথায় কর্ণপাত করেননি। ঠিক এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বা গার্মেন্টস নিয়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগত মজবুত হচ্ছে যে কটি খাতের আয় থেকে তার মধ্যে গার্মেন্টস খাত শীর্ষতম ও স্পর্শকাতর। এই খাতকে ধ্বংস করে সরকারের ঘাড়ে দায় চাপাবার ক্ষুরধার ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যুদ্ধপরাধী দল জামাত পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য বিপুল অর্থায়ন করে পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। এগারো দিনের মধ্যেই মে-জুন মাসের বেতন তুলে নিয়েছেন তোবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা। বোনাস এবং জুলাই মাসের বেতনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নিরীহ পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কোনো রাজনীতি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং বিজিএমইএ নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকালে বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রমিক সংগঠনের নামে জামাতের বিপুল অর্থায়নে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস এবং সরকার পতনের বড় রকমের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং বিজিএমইএ নেতারা। বারান্তরে বলে রাখা ভালো যে, বিষধর সাপ কখনো পোষ মানে না। জামাতের মতো সশস্ত্র বেপরোয়া, ফ্যাসিবাদী দলও এই সরকারের পোষ মানবে না। এ কথ বলছি এ কারণে যে, সাধারণ মানুষ সন্দেহের বিষে আক্রান্ত, সরকারের সঙ্গে জামাতের একটা সূক্ষ্ম-অদৃশ্য আঁতাত হয়েছে। এ জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার তৎপরতা হারিয়ে ফেলেছে। গণজাগরণের মঞ্চ তছনছ হয়ে গেছে। জানি না এমন সন্দেহের সত্যতা কতোটুকু। গণজাগণের মঞ্চ যতোটা জামাত বিরোধী জনমত সংগঠিত করেছিল তা যদি সরকারের স্ট্যাট্রেজিক্যাল কারণে ভোঁতা হয়ে যায় তাহলে তা হবে বড় মাপের ট্র্যাজেডি। সরকারের মন্ত্রীরাই ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, জামাত কখনোই স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের আপন হবে না। সরকারকে মহা কবি মাইকেলের কবিতার লাইনটি মনে করিয়ে দেই, ‘স্বজন নির্গুণ শ্রেয়ঃ পর পর সদা।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের শিল্প কলকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন। এই প্রোজেক্ট ফল করাবার চোখা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বিরোধী পত্রিকাগুলো ন্যক্কারজনক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জাতীয়করণ নীতির সমালোচনা শুরু করেছিল। জাতীয়করণ নীতির বিরুদ্ধে এমন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছিল যে কলকারখানা রাতারাতি লোকসানের জন্য দায়ী শুধু জাতীয়করণ নীতি। বঙ্গবন্ধুর প্রজেক্ট ফল করাবার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। জনগণকে ধারণা দেয়া হয়েছিল সরকারি কলকারখানাগুলো পানির দরে ব্যক্তি প্রভুদের হাতে ছেড়ে দিলেই রাতারাতি লাফিয়ে লাফিয়ে লাভ হতে থাকবে। ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পরও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আদমজী পাটকল বিলুপ্ত হয়ে গেলো। এখন সমস্ত গার্মেন্টস ব্যক্তি মালিকানাধীন। বলতে গেলে সরকারের কোনো দায়িত্বই নেই এ খাতে। মালিকরা ধনকুবের হওয়ার জন্যই গার্মেন্টস দিয়ে থাকে, মর্কসবাদ চর্চা করার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে না। যারা সিনেমা হলের ব্যবসা করেন বা চলচ্চিত্রের ব্যবসা করেন তারা কি জানেন না যে, ইসলাম সিনেমা অনুমোদন করে না? জানেন। তারপরও টাকার মালিক হওয়ার জন্য সিনেমার ব্যবসা খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। মানুষ যদি ব্যক্তি প্রতিভার জোরে নোবেল প্রাইজ পেতে পারে তাহলে ব্যবসায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে কেন কোটিপতির হবে না? এ জন্যই জ্ঞানতাপস ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সন্তোষগুপ্তকে বলেছিলেন, ‘তোমরা লেবার আনরেস্ট করতে চাও কেন? শিক্ষার ওপর জোর দাও তাতেই কাজ হবে। তোমাদের বড় বড় বুলিতে কিছুই হবে না।’ বঙ্গবন্ধুকে তো দোষারোপ করা হতো জাতীয়করণ নীতি গ্রহণ করার জন্য; তার কন্যা শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করা হচ্ছে কোন কারণে? লক্ষ করা যাচ্ছে, ১২ মাসে ১৩ বারেরও অধিক গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। রাস্তায় নামছে, সড়ক অবরোধ করছে, ভাঙচুর করছে। গার্মেন্টস অচল করে দেবার উপক্রম করছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে, যেখানে মালিক বিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হবে সেখানে তা না হয়ে শ্রমিকদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার পতনের আন্দোলনে টেনে নামানো হচ্ছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের। সেই যে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলের ষড়যন্ত্র, সেটাই অব্যাহত আছে। আমরা এও লক্ষ করছি যে, ভাড়া করা শ্রমিকরা অন্য ফ্যাক্টরি বা গার্মেন্টস থেকে এসে তোবা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করছে। বিদেশী মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে মালিকদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরকারের সহাযোগিতা চাওয়া। তা না করে সরকারকেই প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে। অথচ সরকার হচ্ছে শ্রমিকবান্ধব। তোবা গ্রুপের মালিকদের ওপর সরকার ১০০ ভাগ চাপ সৃষ্টি করেছেন শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। বেতন দিতে বাধ্যও হয়েছে মালিকরা, তার পরও উস্কানি থেমে নেই। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদক উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার এবং শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে ১০ আগস্টের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন এবং বোনাস দেয়ার জন্য তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার এবং বিজিএমইএ। শ্রম প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত তোবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। এ তথ্য জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ঈদের আগে থেকেই প্রাণপণ চেষ্টা করেছি তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন দিতে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮১.০১ শতাংশ আসছে পোশাক শিল্প খাত থেকে। তাই এই খাতকে সব রকমের সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যক্তিমালিকানা কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতন না হলে শ্রম আইনের ১২৩ ধারা লঙ্ঘন হয়। এই আইনের ১০৭ ধারায় ফ্যাক্টরি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তবে আমাদের শ্রমিক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিভিল ফর্মে মামলা হলে মালিক সুবিধা পেয়ে যাবে। যতোদিন মামলা ঝুলবে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে ততোদিন ঝুলিয়ে রাখবে মালিক। তা না করে মালিককে বেতন দিতে বাধ্য করতে হবে। এরপর সরকার বিরোধী টকশো, বিদেশী মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং পার্শ্ববর্তী গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কানি দেয়ার কারণ কী? একই প্রতিবেদক বলেন, আন্দোলনের মুখে সরকারের চাপে বিজিএমইএ নেতারা বেতনের দাবিতে বুধবার মে ও জুন মাসের বেতন ও ১০ আগস্ট জুলাই মাসের বেতনর ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তারা এক সঙ্গে তিন মাসের বেতনের দাবিতে অনড় থাকেন এবং তোবা কারখানায় বেতন গ্রহণ করতে চান। তারা বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন গ্রহণ করতে রাজি হননি। ১১ দিনের মাথায় প- হয়ে যায় এই আন্দোলনের ছক। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার লুৎফন কমপ্লেক্সের ৫টি গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের বের করে আনতে লাঠি হাতে হামলা করে একদল উত্তেজিত বহিরাগত শ্রমিক। এই হামলায় আহত হন কেএ ডিজাইন, লাইফ স্টাইল, বিগ বস, স্টেপ টু স্টেপ থ্রির অন্যতম পরিচালক শাহীন হোসেনসহ আরো কয়েকজন। হামলাকারীদের প্রতিরোধে ৫টি গার্মেন্টস থেকে নেমে আসে কয়েকজন। এই প্রতিবেদককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাহীন হোসেন বলেন, আমাদের গার্মেন্টসে কোনো বেতন বকেয়া নেই, মাতৃত্বকালীন ভাতা, শ্রমিকদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ আমরা দেই। তারপরও বহিরাগত কিছু লোক এসে দাবি করলো আমাদের ৫টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ছুটি দিতে হবে। আমরা সময় চাইলাম। তারা সময় দিতেও রাজি হলো না। এখন তারা কেউ হামলা করতে এলে আমরা পাল্টা আক্রমণ করবো বলে দাঁড়িয়েছি। এই হলো অবস্থা। এমনি এমনি আর ড. নীরোদচন্দ্র চৌধুরী ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ নামে বই লেখেননি। আমাদের দেশে এমনিতে পুঁজি বিনিয়োগ কারি, উদ্যোক্তা, শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠাকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। অলস, কর্মকুণ্ঠ বাঙালি অসৎ পুঁজি দিয়ে কেবল বাড়িঘর, দলোনকোঠা উঠিয়ে সুদ খোরদের মতো আরাম আয়েসে টাকা গুনতে চায়। তা টাকাওয়ালারা যদি কারখানা প্রতিষ্ঠা না করেন তাহলে শ্রমিক পাবেন কোথায় বিপ্লবীরা? মার্কসের ‘সারপ্লাস ভ্যালু’ দর্শনই বা কোথা থেকে আসতো? গার্মেন্টস অচল করে দেয়া হলে শ্রমিকদেরই পেটে লাথি পড়বে, বেকারের জন্ম হবে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। মালিকের কোনো ক্ষতি হবে না, তিনি অন্যখাতে পুঁজি খাটিয়ে টাকা কামাবেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাই ১৪ গ-া আকাম-কুকাম করে, ইচ্ছেমতো ভোগ-বিলাস করে বিদেশে দিব্যি আরামে আছেন। টাকার মালিকদের কোনো দিন অসুবিধা হয় না। মার খায় সাধারণ কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষ। একটা গার্মেন্টস বন্ধ হলে শ্রমিকের পরিবারে হাহাকার লাগবে, পোড়া ভর্তাটুকুও জুটবে না তাদের কপালে। সরকারের পতন ঘটাতে গিয়ে অশুভ শক্তি সখিনা বিবিদের কপাল ভাঙবে, পোড়া কপাল সহজে জোড়া লাগবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমিও একজন গরিব লেখক তাই পোশাক শিল্পের শ্রমিক ভাই-বোনদের আন্তরিক অনুরোধ জানাবো, পারর্ভাটেড উস্কানিদাতাদের খপ্পরে পড়ে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করলে আপনাদের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব সাধু সাবধান। সরকারকে জব্দ করার জন্য স্পর্শকাতর সবগুলো জায়গায় আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটা যেহেতু প্রযুক্তির সুবিধার যুগ, সেহেতু দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কালো থাবা ইউরোপ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে তথাকথিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামের সংস্থা সরকারকে জব্দ করার জন্য জাতিসংঘের কাছে সুপারিশ পেশ করেছে যেন বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব শান্তিমিশনে সেনা সদস্য না নেয়া হয়। হয়তো জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা অবহিত আছেন বলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কথায় কর্ণপাত করেননি। ঠিক এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বা গার্মেন্টস নিয়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগত মজবুত হচ্ছে যে কটি খাতের আয় থেকে তার মধ্যে গার্মেন্টস খাত শীর্ষতম ও স্পর্শকাতর। এই খাতকে ধ্বংস করে সরকারের ঘাড়ে দায় চাপাবার ক্ষুরধার ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যুদ্ধপরাধী দল জামাত পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য বিপুল অর্থায়ন করে পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। এগারো দিনের মধ্যেই মে-জুন মাসের বেতন তুলে নিয়েছেন তোবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা। বোনাস এবং জুলাই মাসের বেতনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নিরীহ পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কোনো রাজনীতি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং বিজিএমইএ নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকালে বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রমিক সংগঠনের নামে জামাতের বিপুল অর্থায়নে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস এবং সরকার পতনের বড় রকমের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং বিজিএমইএ নেতারা। বারান্তরে বলে রাখা ভালো যে, বিষধর সাপ কখনো পোষ মানে না। জামাতের মতো সশস্ত্র বেপরোয়া, ফ্যাসিবাদী দলও এই সরকারের পোষ মানবে না। এ কথ বলছি এ কারণে যে, সাধারণ মানুষ সন্দেহের বিষে আক্রান্ত, সরকারের সঙ্গে জামাতের একটা সূক্ষ্ম-অদৃশ্য আঁতাত হয়েছে। এ জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার তৎপরতা হারিয়ে ফেলেছে। গণজাগরণের মঞ্চ তছনছ হয়ে গেছে। জানি না এমন সন্দেহের সত্যতা কতোটুকু। গণজাগণের মঞ্চ যতোটা জামাত বিরোধী জনমত সংগঠিত করেছিল তা যদি সরকারের স্ট্যাট্রেজিক্যাল কারণে ভোঁতা হয়ে যায় তাহলে তা হবে বড় মাপের ট্র্যাজেডি। সরকারের মন্ত্রীরাই ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, জামাত কখনোই স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের আপন হবে না। সরকারকে মহা কবি মাইকেলের কবিতার লাইনটি মনে করিয়ে দেই, ‘স্বজন নির্গুণ শ্রেয়ঃ পর পর সদা।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের শিল্প কলকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন। এই প্রোজেক্ট ফল করাবার চোখা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বিরোধী পত্রিকাগুলো ন্যক্কারজনক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জাতীয়করণ নীতির সমালোচনা শুরু করেছিল। জাতীয়করণ নীতির বিরুদ্ধে এমন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছিল যে কলকারখানা রাতারাতি লোকসানের জন্য দায়ী শুধু জাতীয়করণ নীতি। বঙ্গবন্ধুর প্রজেক্ট ফল করাবার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। জনগণকে ধারণা দেয়া হয়েছিল সরকারি কলকারখানাগুলো পানির দরে ব্যক্তি প্রভুদের হাতে ছেড়ে দিলেই রাতারাতি লাফিয়ে লাফিয়ে লাভ হতে থাকবে। ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পরও চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আদমজী পাটকল বিলুপ্ত হয়ে গেলো। এখন সমস্ত গার্মেন্টস ব্যক্তি মালিকানাধীন। বলতে গেলে সরকারের কোনো দায়িত্বই নেই এ খাতে। মালিকরা ধনকুবের হওয়ার জন্যই গার্মেন্টস দিয়ে থাকে, মর্কসবাদ চর্চা করার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে না। যারা সিনেমা হলের ব্যবসা করেন বা চলচ্চিত্রের ব্যবসা করেন তারা কি জানেন না যে, ইসলাম সিনেমা অনুমোদন করে না? জানেন। তারপরও টাকার মালিক হওয়ার জন্য সিনেমার ব্যবসা খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। মানুষ যদি ব্যক্তি প্রতিভার জোরে নোবেল প্রাইজ পেতে পারে তাহলে ব্যবসায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে কেন কোটিপতির হবে না? এ জন্যই জ্ঞানতাপস ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সন্তোষগুপ্তকে বলেছিলেন, ‘তোমরা লেবার আনরেস্ট করতে চাও কেন? শিক্ষার ওপর জোর দাও তাতেই কাজ হবে। তোমাদের বড় বড় বুলিতে কিছুই হবে না।’ বঙ্গবন্ধুকে তো দোষারোপ করা হতো জাতীয়করণ নীতি গ্রহণ করার জন্য; তার কন্যা শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করা হচ্ছে কোন কারণে? লক্ষ করা যাচ্ছে, ১২ মাসে ১৩ বারেরও অধিক গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। রাস্তায় নামছে, সড়ক অবরোধ করছে, ভাঙচুর করছে। গার্মেন্টস অচল করে দেবার উপক্রম করছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে, যেখানে মালিক বিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হবে সেখানে তা না হয়ে শ্রমিকদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার পতনের আন্দোলনে টেনে নামানো হচ্ছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের। সেই যে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলের ষড়যন্ত্র, সেটাই অব্যাহত আছে। আমরা এও লক্ষ করছি যে, ভাড়া করা শ্রমিকরা অন্য ফ্যাক্টরি বা গার্মেন্টস থেকে এসে তোবা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করছে। বিদেশী মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে মালিকদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে সরকারের সহাযোগিতা চাওয়া। তা না করে সরকারকেই প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে। অথচ সরকার হচ্ছে শ্রমিকবান্ধব। তোবা গ্রুপের মালিকদের ওপর সরকার ১০০ ভাগ চাপ সৃষ্টি করেছেন শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। বেতন দিতে বাধ্যও হয়েছে মালিকরা, তার পরও উস্কানি থেমে নেই। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদক উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার এবং শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে ১০ আগস্টের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন এবং বোনাস দেয়ার জন্য তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার এবং বিজিএমইএ। শ্রম প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত তোবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। এ তথ্য জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ঈদের আগে থেকেই প্রাণপণ চেষ্টা করেছি তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন দিতে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮১.০১ শতাংশ আসছে পোশাক শিল্প খাত থেকে। তাই এই খাতকে সব রকমের সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যক্তিমালিকানা কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতন না হলে শ্রম আইনের ১২৩ ধারা লঙ্ঘন হয়। এই আইনের ১০৭ ধারায় ফ্যাক্টরি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তবে আমাদের শ্রমিক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিভিল ফর্মে মামলা হলে মালিক সুবিধা পেয়ে যাবে। যতোদিন মামলা ঝুলবে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে ততোদিন ঝুলিয়ে রাখবে মালিক। তা না করে মালিককে বেতন দিতে বাধ্য করতে হবে। এরপর সরকার বিরোধী টকশো, বিদেশী মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং পার্শ্ববর্তী গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কানি দেয়ার কারণ কী? একই প্রতিবেদক বলেন, আন্দোলনের মুখে সরকারের চাপে বিজিএমইএ নেতারা বেতনের দাবিতে বুধবার মে ও জুন মাসের বেতন ও ১০ আগস্ট জুলাই মাসের বেতনর ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তারা এক সঙ্গে তিন মাসের বেতনের দাবিতে অনড় থাকেন এবং তোবা কারখানায় বেতন গ্রহণ করতে চান। তারা বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন গ্রহণ করতে রাজি হননি। ১১ দিনের মাথায় প- হয়ে যায় এই আন্দোলনের ছক। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার লুৎফন কমপ্লেক্সের ৫টি গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের বের করে আনতে লাঠি হাতে হামলা করে একদল উত্তেজিত বহিরাগত শ্রমিক। এই হামলায় আহত হন কেএ ডিজাইন, লাইফ স্টাইল, বিগ বস, স্টেপ টু স্টেপ থ্রির অন্যতম পরিচালক শাহীন হোসেনসহ আরো কয়েকজন। হামলাকারীদের প্রতিরোধে ৫টি গার্মেন্টস থেকে নেমে আসে কয়েকজন। এই প্রতিবেদককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাহীন হোসেন বলেন, আমাদের গার্মেন্টসে কোনো বেতন বকেয়া নেই, মাতৃত্বকালীন ভাতা, শ্রমিকদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ আমরা দেই। তারপরও বহিরাগত কিছু লোক এসে দাবি করলো আমাদের ৫টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ছুটি দিতে হবে। আমরা সময় চাইলাম। তারা সময় দিতেও রাজি হলো না। এখন তারা কেউ হামলা করতে এলে আমরা পাল্টা আক্রমণ করবো বলে দাঁড়িয়েছি। এই হলো অবস্থা। এমনি এমনি আর ড. নীরোদচন্দ্র চৌধুরী ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ নামে বই লেখেননি। আমাদের দেশে এমনিতে পুঁজি বিনিয়োগ কারি, উদ্যোক্তা, শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠাকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। অলস, কর্মকুণ্ঠ বাঙালি অসৎ পুঁজি দিয়ে কেবল বাড়িঘর, দলোনকোঠা উঠিয়ে সুদ খোরদের মতো আরাম আয়েসে টাকা গুনতে চায়। তা টাকাওয়ালারা যদি কারখানা প্রতিষ্ঠা না করেন তাহলে শ্রমিক পাবেন কোথায় বিপ্লবীরা? মার্কসের ‘সারপ্লাস ভ্যালু’ দর্শনই বা কোথা থেকে আসতো? গার্মেন্টস অচল করে দেয়া হলে শ্রমিকদেরই পেটে লাথি পড়বে, বেকারের জন্ম হবে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। মালিকের কোনো ক্ষতি হবে না, তিনি অন্যখাতে পুঁজি খাটিয়ে টাকা কামাবেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাই ১৪ গ-া আকাম-কুকাম করে, ইচ্ছেমতো ভোগ-বিলাস করে বিদেশে দিব্যি আরামে আছেন। টাকার মালিকদের কোনো দিন অসুবিধা হয় না। মার খায় সাধারণ কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষ। একটা গার্মেন্টস বন্ধ হলে শ্রমিকের পরিবারে হাহাকার লাগবে, পোড়া ভর্তাটুকুও জুটবে না তাদের কপালে। সরকারের পতন ঘটাতে গিয়ে অশুভ শক্তি সখিনা বিবিদের কপাল ভাঙবে, পোড়া কপাল সহজে জোড়া লাগবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমিও একজন গরিব লেখক তাই পোশাক শিল্পের শ্রমিক ভাই-বোনদের আন্তরিক অনুরোধ জানাবো, পারর্ভাটেড উস্কানিদাতাদের খপ্পরে পড়ে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করলে আপনাদের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব সাধু সাবধান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: আপনের কি দাওদের সমস্যা আছে নাকি?

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: সরকার বাহাদুরও তো জামায়াতের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সে ব্যাপারে আপনার দাওদ - একজিমা - চুলকানি - কাউজানির স্বরুপ বিশ্লেশন করলে খুশী হতাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.