![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৯৬১ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের রিসালপুরস্থ বিমান বাহিনী একাডেমিতে ফ্লাইং ক্যাডেট হিসেবে ৩৬ নম্বর জিডি পাইলট শর্ট কোর্সে যোগ দেন। অল্প দিনের মধ্যেই একজন চৌকষ ক্যাডেট হিসেবে নিজের স্থান দখল করে নেন। ১৯৬৩ সালে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং ১৯৬৭ সালের ২৩ জুলাই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৭ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং 'সিতারা-ই-হারব' পদক পেয়েছিলেন তবুও তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাত্ আজকের বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানিদের বিমাতাসুলভ আচরণে দারুণ দু:খ পান। এদিকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় পাকিস্তানিদের আচরণ দেখে তিনি ক্ষুদ্ধ হন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিদের নিরঙ্কুশ বিজয়ে আশায় বুক বাঁধেন।
৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি উজ্জীবিত হন ও 'স্বাধীনতার সংগ্রাম'কে বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে তিনি ছিলেন নরসিংদীর গ্রামের বাড়িতে। ঐ রাতের গণহত্যার কথা রেডিওতে শুনতে পান এবং গ্রামের লোকদের একত্রিত করে খান সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও একত্রিত হতে থাকে। তিনি সকলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেন।
১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি একটি বিমান থেকে তাদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালানো হয়। তিনি উপলদ্ধি করেন একটি বিমান হলে তিনি এই হামলার প্রকৃষ্ট জবাব দিতে পারতেন। তিনি মাটি ছুঁয়ে শপথ করলেন, যেভাবেই হোক একটি পাকিস্তানি বিমান ছিনিয়ে এনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করবেন।
ইতোমধ্যে তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েও দুই মাস পার হয়ে গেছে। মনের সুপ্ত আশাকে বাস্তবে রূপ দিতে কথা বলেন এম.কে. বাশার এবং সুলতান মাহমুদের সাথে। তারপর ৯ মে স্ত্রী ও কন্যাদ্বয়সহ করাচি ফিরে যান। তিনি কাজে যোগ দিলেন কিন্তু পাকিস্তানিরা তাকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করলো। তাঁকে তাঁর নিজস্ব দায়িত্বে না দিয়ে দেয়া হলো 'ফ্লাইট সেফটি অফিসার'র দায়িত্ব। তিনি মর্মাহত হলেন, হোঁচট খেলেন কিন্তু দমলেন না। সুযোগ খুঁজতে থাকলেন। একবার সুযোগ এসে হাতছাড়াও হয়ে গেল। বিমান চালনার প্রশিক্ষক হিসেবে মতিউরের বেশ সুনাম ছিল তাঁর পাকিস্তানি ছাত্রদের মধ্যে মিনহাজকে টার্গেট করে প্রশিক্ষণ সিডিউল দেখলেন তিনি।
চূড়ান্ত সুযোগ এলো। সেদিন ২০ আগস্ট, শুক্রবার। রশীদ মিনহাজের ফ্লাইং সিডিউল দুপুরে। একটা টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান সামনে এগিয়ে এল। বিমানের সামনের সিটে রশীদ মিনহাজ। পেছনের সিটটিতে প্রশিক্ষক বসেন কিন্ত তা আজ শূন্য। মিনহাজ একাই বিমানে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি। উড্ডয়নের পূর্বে বিমানের সামনে এগিয়ে এলেন মতিউর। মিনহাজ দেখলেন তার প্রশিক্ষককে। বিমান থামিয়ে কেনোপী উঁচু করে কিছু জিজ্ঞেস করতে চায় মিনহাজ। সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি মতিউর। লাফ দিয়ে বিমানের পেছনের সিটে উঠে হাতের রুমালে মাখা ফ্লোরোফরম দিয়ে অচেতন করার অবসরে বিমান চালনার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিলেন। ব্যাপারটি অত সহজ ছিল না। বিমান উড়তে থাকলো খুব নিচ দিয়ে রাডারকে ফাঁকি দিয়ে। 'ব্লু-বার্ড-১৬৬' নামের টি-৩৩ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি হাইজ্যাক হচ্ছে এটি মিনহাজ মশরুর বিমান ঘাঁটি কন্ট্রোল রুমকে জানিয়ে দিল। মতিউর কোন এক ফাঁকে মিনহাজকে পেছনের সিটে ফেলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণভার নিলেও পেছন থেকে মিনহাজ বাধা দিচ্ছিলো। ধস্তাধস্তিও হয়েছিলো। ব্লু-বার্ড উড়ে চলছিলো ভারতীয় সীমান্তবর্তী বিমান ঘাঁটির দিকে। আর মাত্র মিনিট চারেক চলতে পারলেই তা সম্ভব হতো। কিন্তু সিন্ধু প্রদেশের জিন্দাগ্রাম নামক এলাকার একটি বালুর ঢিবিতে আছড়ে পড়লো বিমানটি। এর সাথেই শেষ হয়ে গেল একটি উজ্জ্বল তারকার একটি স্বপ্ন।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মশরুর ঘাঁটিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে কবর দেয়া হয়। সেখান থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন তাঁর দেহাবশেষ ঢাকায় এনে ২৫ জুন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুন:সমাহিত করা হয়। আজ আমরা স্বাধীন কিন্তু তিনি নেই। আজকের দিনে আমাদের কর্তব্য সব মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম ও মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে নিজদের গড়ে তোলা।সুত্র
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২৬
রুয়াসা বলেছেন: স্যালুট বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান।