নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
সারা পৃথিবীতে বর্তমানে যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আই এস ইস্যু। আই এস-এর উত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নানান দিকে মোড় নিচ্ছে। এর মধ্যে জাওয়াহিরির বক্তব্য অন্যতম। জাওয়াহিরির সেই বক্তব্যে আমরা দেখতে পাই যে, তাদের মূল ফোকাস হচ্ছে মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থাত্ ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার ইত্যাদি এবং এই বক্তব্যের কিছুদিন পরেই আমরা দেখছি যে, বাংলাদেশ থেকে আই এস-এর সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজন জেএমবি হুজি সদস্য গ্রেফতারও হয়েছে। এবং তাদেরই বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটেনে বসবাসকারী একজন আই এস রিত্রুুটারকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
বাংলাদেশে আই এস কিংবা আল কায়েদার প্রভাব-প্রতিপত্তি, এদের উদ্ভব, এদের কন্ট্রোল কিভাবে বাংলাদেশে প্রতিফলিত হবে এবং জাওয়াহিরির যে বক্তব্য তারা যে বাংলাদেশে ফোকাস করছে এটি কিভাবে এখানে অপারেশন করা হবে। আমার মতে, তাদের ইচ্ছা যে বাংলাদেশে এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব তারা ঘটাবে যেটা তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে। আর এজন্য তারা বাংলাদেশের এমন কিছু গ্রুপকে ব্যবহার করবে যাদের সাথে তাদের অর্গানিক কোন লিংক না থাকলেও নীতিগত কোন বিষয়ে মতৈক্য আছে এমন কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে।
আই এস-এর এই যুদ্ধে অংশ নিতে ইরাক এবং সিরিয়ায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি দেশ থেকে অনেক মুসলমান এসে যোগ দিচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই যুবক। তারা ইরাক এবং সিরিয়ায় গিয়ে আই এস-এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা যুদ্ধ করছে এবং এনিয়ে কিন্তু বেশ একটা ঘোলাটে অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘোলাটে অবস্থায় এখনো বাংলাদেশের শংকিত হওয়ার মত কোন পরিস্থিতি না হলেও একে ভবিষ্যতে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে বিষয়ে কিন্তু এখনই শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এখনো কিভাবে বাংলাদেশে তাদের প্রতিপত্তি ঠেকানো যাবে এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে দেখতে হবে কিভাবে তারা বাংলাদেশে তাদের আস্তানা গাড়তে চায় এবং কিভাবে তারা তাদের আস্তানা সুদৃঢ় করতে চায়, পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে কিভাবে বিদেশের মাটিতে আই এস এবং আল নযুয়া গ্রুপের সাথে ভিড়তে না পারে সেটাও দেখতে হবে। আমাদের এই ঘটনাগুলোকে একটি অশনি সংকেত, আশংকাজনক অর্থাত্ বাংলাদেশে প্রচণ্ডভাবে তাদের উদ্ভব হবে, বাংলাদেশের প্রত্যেক আনাচে-কানাচে তারা ছড়িয়ে যাবে সেভাবে কিন্তু দেখার উপায় নেই কিন্তু তবুও আমাদের এই ব্যাপারে সবার আগে যে বিষয়টা নজরে আনতে হবে তা হলো বাংলাদেশে একটা গ্রুপ কিন্তু রয়েছে যাদের সাথে আল কায়েদা কিংবা আই এস-এর নীতিগত একটা মিল রয়েছে তাদের ধ্যান ধারণা। দর্শন সবকিছুর সাথেই তারা একমত।
আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশের মাটিতে যুদ্ধ করতে যায় বা যাচ্ছে, তারা কেন যাচ্ছে। কেন বাংলাদেশে রিত্রুদ্ধটে আসছে, এদেশ থেকে তাদের ওখানে গিয়ে যুদ্ধ করানোর জন্য? আমরা যদি বাংলাদেশে রিক্রুট আসার পেছনের ঘটনাগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে বাংলাদেশ থেকে জিহাদে যাওয়া কিংবা বিদেশের মাটিতে গিয়ে যুদ্ধ করা এই ঘটনাটি কিন্তু নতুন কিছু নয়। একসময় তারা ফিলিস্তিনে গিয়েছিল। এর পর গিয়েছিল আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে। সে সময় জিহাদ একটা খুব ভালো অর্থে ব্যবহূত হতো এবং যারা জিহাদে যেত তাদের জন্য খুব ভালো একটা পুরস্কারও ছিল তাদের তরফ থেকে। আফগানিস্তানের যে যুদ্ধ তা পরিচালিত হচ্ছিল আমেকাির দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এখন সেই দাবার ছক পাল্টে গেছে। এখন সোভিয়েত ইউনিয়নের বদলে টার্গেট হয়ে গেছে আমেরিকা নিজেই। এবং এই আই এস, আল কায়েদা কিংবা নযুয়া গ্রুপ যাদের কাথাই আমরা বলি না কেন তারা সবাই কিন্তু আমেরিকারই তৈরি, এখন সেই তারাই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। এবং তাদের যে দর্শন, তারা কিন্তু অনেক যুবককে তাদের এই আদর্শ এবং দর্শনের দ্বারা মোটিভেট করতেও সক্ষম হয়েছে, তারা মনে করে যে আমেরিকা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যেমন গাজা, লিবিয়া প্রভৃতি দেশ সম্পর্কে তাদের যে দ্বৈতনীতি তার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আমরা পর্যালোচনা করি তবে দেখা যাবে যে, চরমপন্থা বা এক্সট্রিমিজম-এর যে উদ্ভব তা কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন দ্বন্দ্বের ফলে তৈরি হয়নি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আন্তর্জাতিক নানা উসুর কারণে উদ্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে হুজি, বাংলা ভাই তাদের কথা যদি আমরা আলোচনা করি তবে দেখা যাবে যে তারা প্রায় সবাই আফগান ফেরত এবং তাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছিল যে তারা ইসলামের রক্ষক, ইসলামের উপর নানান আক্রমণকে তারা প্রতিহত করবে। কিন্তু হালে তারা টার্গেট করেছে যুবকদের, এই যে যুবকরা তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, যারা তাদের রিক্রুট করতে এসেছে তারা জানে যে ইরাক, গাজা কিংবা সিরিয়ার উপর যে হামলা হচ্ছে তা আমাদের অনেক যুবকের মনেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যুবকরা যারা তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তারা কিন্তু বুঝতে পারছে না যে আই এস পশ্চিমা বিশ্বকে যেভাবে প্রতিহত করতে চাচ্ছে, ধর্মীয়ভাবে সেটা কিন্তু জায়েজ না। কারো রক্তপাত যখন হচ্ছে তখন সেখানে কিন্তু অনেক নিরীহ মানুষও মারা যাচ্ছে। তাদের পশ্চিমা বিশ্বের উপর ক্ষুব্ধ হওয়ার যে কারণ তা যদি সঠিক বলেও আমরা ধরে নিই তবুও তাদের যে সহিংসতার পথ তা কিন্তু কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত যতগুলো দেশ রয়েছে তার প্রায় প্রতিটি দেশ থেকেই কিন্তু কিছু না কিছু লোক ইরাক এবং সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করছে। এখন আমরা যারা মডারেট মুসলমান রয়েছি তারা কিন্তু এই যুদ্ধের পক্ষপাতী নই। তাদেরকে আমার দেখাতে হবে যে, যে পথে তারা চলছে সেটা সঠিক কোন পথ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তা না করতে পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত এই যে টান রয়েছে তাদের উপর তা থেকে আমরা তাদেরকে বিরত রাখতে পারবো না। টানটা হলো মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে তাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করা। সেক্ষেত্রে আমরা যদি কাউন্টার মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদেরকে নিবৃত করতে ব্যর্থ হই তাহলে তার পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
বাংলাদেশে এখন অনেক গোষ্ঠী রয়েছে যাদের আল কায়েদা কিংবা আই এসের সাথে মতাদর্শগত একটা মিল রয়েছে। ভিপ লিংক কতটুকু রয়েছে সেটা কিন্তু আমরা এখনো জানি না। হয়তো খুব একটা নেই। তবে জাওয়াহিরির বক্তব্যের সাথে সাথে বাংলাদেশ যে পুরো একটা চরমপন্থী দেশে পরিণত হবে তাও আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের দেশে তারা যদি এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব না ঘটে সেটাকে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ পায় অথবা তারা তাদের চিন্তাধারা আমাদের মগজে ঢোকানোর কোন সুযোগ না পায় তবে তাদের এখানে এসে ঘাঁটি গেড়ে যে উদ্দেশ্য হাসিল করার ইচ্ছা রয়েছে সেটা কোনভাবেই সফলকাম হবে না। আর তাই আমাদেরকে সবার আগে এই দুটো বিষয়ের উপরই বিশেষ জোর দিতে হবে। সেজন্য যারা যারা এই যুবকদের রিক্রুট করার দায়িত্বে থাকবে তাদের প্রতিহত করা এবং যাদের মাধ্যমে তারা এদেশে ঘাঁটি গাড়তে চায় তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করলে আমার মনে হয় আশংকা অনেকখানিই কমে যাবে। সেজন্য টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্টের পাশাপাশি হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স এরও সেই সাথে প্রয়োজন অতন্দ্র সতর্কতার। যখনই আমরা তা নিশ্চিত করতে না পারবো তখনও পর্যন্ত আমাদের মাঝে সেই ভয়টাই থেকে যাবে যে তারা একে তাদের সোর্স অফ রিক্রুটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
আইএস-এর উদ্ভবের দিকে যদি আমরা তাকাই তবে দেখতে পাবো যে, আল কায়েদা থেকে আইএস-এর উদ্ভব এবং সেই একই সোর্স থেকে উদ্ভব হয় সিরিয়ার আল নসুয়া বাহিনীর। তবে তাদের সকলের লক্ষ্য কিন্তু একটাই। মতাদর্শগত কিছু পার্থক্য হয়তো সেক্ষেত্রে থাকতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য সকলেরই এক। যেক্ষেত্রে আইএস হলো একটু বেশি উগ্র ও জঙ্গীবাদী মনোভাবের। আইএস তাদের নিয়ন্ত্রণে অনেক ভূমি এবং অনেক রিসোর্সেস নিয়ে নিয়েছে। বলা হয় যে, সারা পৃথিবীতে যতগুলো ধনী উগ্রবাদী দল রয়েছে আইএস হলো তার মধ্যে সবচেয়ে ধনী। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নানান খাত থেকে আয় করছে। যা দিয়ে তারা অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ কিনছে। এবং এখানে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আমেরিকার ব্রেন। আল নসুয়া গ্রুপের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখব যে, তার সাথে ড্যান বোনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর সাথে ডান ম্যাক বোনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আইএস-এর হেড এর সাথে ড্যান ম্যাক বোইনের ছবি পর্যন্ত আছে। যেখানে তারা একসাথে বসে আলাপ করছে আরব বসন্তের পর কীভাবে তারা কাজ করবে। আইএস-এর একটা সমস্যা হলো স্থানীয় যারা সুন্নী গ্রুপ রয়েছে তারা কিন্তু আইএসের উপর একটু মনোক্ষুণ্ন কারণ তারা আস্তে আস্তে সাইডলাইনে চলে যাচ্ছে। সেজন্য তারা আইএস-এরও একদম আন চ্যালেঞ্জও প্রতিপত্তি চায় না। এক্ষেত্রে এখানেও একটি মনস্তাত্ত্বিক বিভাজন এসেছে এর প্রতিফলন কীভাবে ঘটবে তা কিন্তু আমরা এখনো জানি না। তবে আইএস-এর জন্য এটি অবশ্যই একটি দুর্বল পয়েন্ট।
আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী শুধুমাত্র মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা আছে তাদেরকেই টার্গেট করে থাকে রিক্রুটের জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হিযবুত তাহরীর কিংবা আল কায়েদা এরা সবাই বেশ শিক্ষিত ও সচ্ছল। কয়েকদিন আগে আইএস-এর জন্য রিক্রুট করতে এসে যে আটক হলো সেও বেশ শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাই বলা যায় যে, শুধুমাত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই নয় আরো অনেক কিছুই এখন রিক্রুটের সময় দেখা হয়, কারণ বর্তমান সময়ে যুদ্ধ চালনার যে প্রযুক্তি তার জন্য এর বাইরেও আরো অনেক কিছুরই প্রয়োজন। এছাড়াও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের বরাবরই বেশ বিব্রত থাকতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ধরা পড়েছে। এই জনগোষ্ঠী ধর্মীয় সহিংসতায় দেশ ছাড়া হয়েছে। এখানেও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। তাই তারা যদি দেখে যে সেখানে গিয়ে তারা বেশি আয় উপার্জনের সুযোগ রয়েছে তবে তারা হয়তো সে পথে পা বাড়াতে পারে। আগেই বলেছি, আইএস হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী জঙ্গী গ্রুপ। তাই শুধু ধর্মীয় ভিত্তিতেই নয় টাকা দিয়েও তারা অনেক ক্ষেত্রে লোকবল রিক্রুট করছে। আর রিক্রুটদের জন্য আমাদের এই দেশকে এক কথায় বলা চলে এক উর্বর ভূমি। তাই শুধুমাত্র জঙ্গী কিংবা ধর্মীয় গোষ্ঠী নয় সামগ্রিকভাবে একে মোকাবিলা করার জন্য চাই সুষ্ঠু ও নির্দিষ্ট পদক্ষেপের। সুত্র
©somewhere in net ltd.