নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের অপচর্চা

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৭

অধুনালুপ্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপ্তাহিকের নাম ‘বিচিন্তা’। তারা দেশবাসীর কাছে একটি প্রশ্ন রেখেছিল, ‘আমাদের জাতির পিতা কে?’ এর উত্তরে বেশি সংখ্যক মানুষ বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ আর বাকিরা বলেছিলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বলতে কেউ নেই, জাতির পিতার দরকার হয় না।’ এই উত্তর থেকে একটা সিনথিসিস আমরা পেয়ে যাই, জাতির পিতা বা রাষ্ট্রের ফাউন্ডার বলতে বঙ্গবন্ধুর বিকল্প কাউকে দাঁড় করানো একেবারে অসম্ভব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর একটি বৈরী সময়ে জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাবার চেষ্টা হয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকতে বিবিসি শ্রোতাদের একটি ভোটাভুটির ফল প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ২০ জন বাছাই করা বাঙালির মধ্যে প্রথম পাঁচজন হলেনÑ বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেরেবাংলা, নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু। ২০ জনের মধ্যে জিয়াউর রহমানের স্থান ছিল ১৯ নম্বর তালিকায়। একজন বিখ্যাত কলাম লেখক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তাহলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়ার ভোটের ব্যবধান কতো?’
যারা আজকাল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হয়েও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অপচর্চা করছেন, প্রশ্নটি তাদের জন্যও প্রযোজ্য। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব প্রশ্ন পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে উত্থাপন করা হয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় করা হয়নি। এমন একটা সময় বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে ছেঁটে ফেলবার চেষ্টা হচ্ছিল, যখন বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ৩২ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে; জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের মিডিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু, বাকশাল, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঢালাও বদনাম প্রচার করা হচ্ছিল, আওয়ামী লীগের আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ ছিল না।
এ প্রশ্নও এড়িয়ে যাবার উপায় নেই, তখন ক্ষমতাসীন হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ম্যান্ডেট বিরোধী পক্ষ। তারা তখন বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার সর্বৈব চেষ্টা চালিয়েছিল। তারাই প্রচার করেছিল বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, ৭ মার্চের ভাষণে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফায় স্বাধীনতার কোনো ইঙ্গিত ছিল না। ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সরকার ছিল ভারতের পুতুল সরকার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৫ বছরের চুক্তিকে বলা হয়েছিল গোলামীর চুক্তি। বাঙালি জাতির সত্তা থেকে ‘বাঙালি’ শব্দটিই উৎখাত করেছিল তারা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। তাকে সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করে প্রত্যাখ্যাত দ্বিজাতিতত্ত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই বিকল্প পক্ষই প্রচার করেছিল বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন ৭ মার্চের মহাভাষণে, ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি।
বলা শুরু হলো জিয়ার রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। জিয়ার ঘোষণায় বাঙালি জাতি চট করে অস্ত্র হাতে লাফিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ‘শেখ মুজিব’ নামের কোনো নেতার কিছু অবদান ছিল তাও সদম্ভে অস্বীকারের চেষ্টা আমরা দেখেছি। তখন ইতিহাসকে এভাবে দাঁড় করানো হয়েছিল, ‘পাকিস্তান ভেঙেছেন শেখ মুজিব আর দেশ স্বাধীন করেছেন জিয়াউর রহমান।’ তখন মোনায়েম খানের মতো ঘৃণ্য ব্যক্তিও বেশ মর্যাদা পেয়ে খাড়া হয়ে উঠেছিলেন, যাকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে বনে-জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। তখন ফকা চৌধুরী, সবুর খান, মোহন মিঞা, নূরুল আমীনরা মর্যাদাবান হয়ে উঠেছেন। তখন রাজনীতির কৌতুক অভিনেতা সাকা চৌধুরী রং মেখে, সং সেজে বাঙালি জাতিকে ভেংচি দিতে শুরু করেছেন। শাহ আজিজ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আবদুল আলীম মন্ত্রী হয়েছেন, মওলানা মান্নান শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন, সবুর খানের মতো পাক্কা রাজাকাররা সংসদ সদস্য হয়েছেন, রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রথমে স্পিকার তারপর রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, আবদুল মতিনের মতো পারফেক্ট রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। এমন একটি কালো অধ্যায়ের কুশীলবরা প্রচার করেছিলেন যে বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন, তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। মুক্তিযুদ্ধের বৈরী পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খাটো করতে পারলে তাদের জন্য মহাতৃপ্তির ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জখম করার মোক্ষম পথ হলো বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিকে জখম করা। স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ শক্তি এই কাজটি করে আসছে বরাবর। তাদের মনে হলো, ‘পাকিস্তান ভেঙেছেন শেখ মুজিব আর দেশ স্বাধীন করেছেন জিয়াউর রহমান।’
আইয়ুব খানের আত্মজীবনী অনুবাদকারী, রবীন্দ্রবিরোধী কবি, প-িত সৈয়দ আলী আহসান নাকি নিজ কানে শুনেছিলেন জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
ইংরেজ মতলববাজ ঐতিহাসিকরা ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস চর্চা করে যে ক্ষতি করেছে ১৯০ বছর বছর ভারত শোষণ করেও সে ক্ষতি করতে পারেনি। এ কথা প-িত জহরলাল নেহেরু বলেছেন তার আত্মজীবনীতে। ইতিহাসের মধ্যে ইংরেজরা সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিষ ছড়িয়েছে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার চরিত্র কলঙ্কিত করা ইংরেজদের এক বিরল অপকীর্তি। ইংরেজ ঐতিহাসিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর, মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন, কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি বাংলা গদ্যের সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অনুরূপভাবে দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী ঐতিহাসিক, লেখক, প-িতরা ইংরেজ ঐতিহাসিকদের মতো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই কাতারে এ কে খন্দকার শামিল হবেন তা ভাবিনি।
একজন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য বলেছেন, ‘শেখ মুজিবের ত্রুটিগুলো পেছনে পড়ে যাবে, গুণগুলো সামনে চলে আসবে।’ মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘শেখ মুজিবের আবির্ভাব বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার সমাধি রচিত হয়ে যায়নি।’ (শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল)।
চিন্তাশীল লেখক আহমদ ছফা বলেছেন, ‘আজ থেকে অনেক অনেক দিন পরে হয়তো কোনো পিতা তার শিশু পুত্রকে বলবেন জানো, খোকা! আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন, যার দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালোবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিক চিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণ ধারায় মায়ের স্নেহের মতো যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি এবং নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তার ভালোবাসা। জানো খোকা তার নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।’ (রাজনীতির লেখাÑ শেখ মুজিবুর রহমান (২), খান ব্রাদার্স এ্যান্ড কোম্পানি, ১৯৯৩)।
বাঙালি জাতির হৃদয়ে দিন দিন কূটভাষ্য পেছনে ফেলে উপরের মন্তব্যগুলো জেগে উঠবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:২১

াহো বলেছেন:

শেখ মুজিবের সঙ্গে জিয়ার তুলনা করতে চাইলে

পড়ে দেখতে পারেন ১৯৭১ সালের সংবাদপত্রগুলো–
কোথাও জিয়ার নাম খুঁজে পাচ্ছি না।

নিউ ইয়র্ক টাইমস, টাইম ম্যাগাজিন, ইউএসএ এবং টাইমস সংবাদপত্র, ইউকেএর ওই সময়কার কপি পেতে পারেন তাদের ওয়েবসাইট থেকে, মাত্র ১ ডলারের বিনিময়ে।





বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা
আমার বইতে স্পষ্ট উল্লিখিত।
[১৪৭-১৪৮, ২৭৪-২৯১, ৩০১-৩১০ পৃষ্ঠা]
শারমিন আহমদ
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা।
http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/21163





বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে–

১৯৭১ সালের অনেক আন্তর্জাতিক নিউজ-মিডিয়া, নিউ ইয়র্ক টাইমস (২৭ মার্চ, ১৯৭১), টাইমস সংবাদপত্র, ইউকে (২৭ মার্চ, ১৯৭১), টাইম Magazine, USA (৫ এপ্রিল, ১৯৭১), আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট– history.state.gov ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ওয়াশিংটন সময় বিকাল ৩.০৩ – ৩.৩২ গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’এর প্রতিনিধি মি. রিচার্ড হেলমস জানান–

“শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন।’’

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: আমাদের জাতির পিতা কে,
বলতে কি বোজানো হয়েছে?
বাঙালি জাতি, মুসলিম জাতি,
নাকি অন্য কোন জাতি...............
সেটা স্পস্ট করা উচিত ছিল মনে হয়।

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

আলাপচারী বলেছেন: জাতির পিতা প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প বলি।

বিবিসির জরিপে বঙ্গবন্ধু শতাব্দি সেরা বাঙালী নির্বাচিত হয়েছেন; জাতির পিতা জাতির পিতা বলে আওয়ামী গলা ভেঙে ফেলছে।

আমাদের এলাকায় তবলীগ জামাতিরা এসেছে দ্বীনের দাওয়াত দিতে, তারা দাওয়াত দেয় আর বর্তমান ইস্যূ নিয়েও কথা বলে। ফতোয়া দিলো, মুসলমানদের জাতির পিতা একজনই, হয়রত ইব্রাহিম (আ:)

আমি মিনমিন করে এক পাকিন্তানি হুজুররে জিগাইলাম, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ কে কায়েদে আজম বলেন কেন ?

হুজুর প্রসঙ্গ পাল্টালেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.