নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলামী আমির ও মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালত বলেছে, তার বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর চারটিতে তাকে যাবজ্জীবন শাস্তির আদেশ দেয়া হয়েছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, একাত্তরে বদর বাহিনী ছিল ‘ডেথ স্কোয়াড’। হত্যা, লুণ্ঠন ও বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ নানা ধরনের জঘন্য অপরাধে লিপ্ত ছিল এই বাহিনী। আল-বদরের প্রধান হিসেবে নিজামী এই বাহিনীকে এই সব ঘৃণ্যতম অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং নিজামীর পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে এই বাহিনী হত্যা, লুণ্ঠন ও বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল। তার অপরাধের গভীরতা এতই বেশি যে, সেই অপরাধে যদি সর্বোচ্চ সাজা দেয়া না হয়, তাহলে তা হবে বিচারের ব্যর্থতা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এই আদেশ দেয়। আদালতে ২০৪ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনান তিন বিচারপতি। মূল রায় পড়া শুরু হয় ১১টা ১০ মিনিটে এবং শেষ হয় ১২টা ২৫ মিনিটে। বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন একাত্তরে নিজামীর ভূমিকা এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আদালতের পর্যবেক্ষণ ও শাস্তির অংশটুকু পড়ে শোনান।
এর আগে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় নিজামীকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছে বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মতিউর রহমান নিজামী আপিল দায়ের করেছেন। আপিলের এখনও শুনানি শুরু হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি ড. তুরিন আফরোজ বলেছেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আরেক কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী বলেছেন, ‘বহুল প্রতীক্ষিত এই রায়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এতে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।’ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই রায় একটি বড় প্রাপ্তি। সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট।’
অন্যদিকে নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এই রায় প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ। আপিলে অবশ্যই এই জাজমেন্ট টিকবে না। আমরা আপিল করব।’ নিজামীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার, রবিবার এবং সোমবার তিন দিন সকাল-সন্ধ্য হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম।
রায় ঘোষণার আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজামীকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। নিজামীকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হয় বেলা ১১টায়। কাঠগড়ায় তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপরে ছিল খয়েরি রঙের কটি। তার মাথায় ছিল জিন্নাহ টুপি। কাঠগড়ায় একটি চেয়ারে তিনি রায় ঘোষণার পুরো সময় চোখ বুজে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।
বিচারপতিরা এজলাসে প্রবেশ করেন ১১টা ৫ মিনিটে। আসন গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে রায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম কখন রায় দিতে পারব। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যমে নানা কথা উঠেছে। এসব কথা আমলে নেয়া ও জবাব দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। জবাব দেয়া উচিতও হবে না। আদালত রাস্তায় গিয়ে কথা বলতে পারে না। আমরা বোবার মতো থাকি। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত, আমরা (আদালত) কোনো জবাব দিতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজের বিবেক, আইন ও সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হই। আমাদের ওপর কোনো নির্দেশ নেই। আমরা আপসও করি না। আপস করি আইন ও সংবিধানের সঙ্গে।’
নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ১৫টি অভিযোগ যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তুলে ধরছে। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ এবং ১৬ নম্বর অভিযোগের প্রত্যেকটিতে আসামি মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১, ৩, ৭ এবং ৮ নম্বর অভিযোগের প্রত্যেকটিতে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, ‘এই আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই অপরাধের পরেও যদি ফাঁসি দেয়া না হয়, তাহলে তা হবে বিচারের ব্যর্থতা।’ রায়ে আরও বলা হয়, “একাত্তরে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান নিজামী নিজে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় অংশগ্রহণ করেন। ৩ নম্বর অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতা এবং ১৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী গণহত্যায় নিজামীর ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হয়েছে।” বাকি আটটি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় এসব অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
যে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড: ২০১২ সালের ২৮ মে মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। মামলাটি ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ শুনানি শেষ হয়ে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তসহ ২৬ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন। তার বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এই অভিযোগগুলো হলো:
অভিযোগ-২: একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে ওই সভায় নিজামী বলেন, শীঘ্রই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (জি), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৪: নিজামীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রাজাকার বাহিনী পাবনার করমজা গ্রামে হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৮ মে নিজামীর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী ওই গ্রাম ঘিরে ফেলে নয়জনকে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনী একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয় আসামির বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৬: নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আবদুল আউয়াল ও তার আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয় নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-১৬: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তত্কালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে। একটি জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ওই ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয় নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (সি) (আই), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যে অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড: ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগের প্রত্যেকটিতে মতিউর রহমান নিজামীকে যাবজ্জীবন করাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগগুলো হচ্ছে—
অভিযোগ-১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালানোর কারণে একাত্তরের ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউস ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয় নিজামীর বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৩: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ব্যবহূত হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হিসাবে। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প খুলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয় নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), (জি) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৭: একাত্তর সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর দেয়া তথ্যে রাজাকার বাহিনীকে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে মুি্ক্তযোদ্ধা আবদুল লতিফ সেলিমের বাবা সোহরাব আলীকে আটক করে। তাকে রাস্তায় নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর স্ত্রী ও সন্তানদের সামনেই হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয় তখনকার বদর নেতা নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ-৮: একাত্তরের ৩০ আগস্ট ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামী তার সংগঠনের তখনকার সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে যান এবং সেখানে আটক মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, বদি, রুমি (শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে), জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে নিজামী বলেন, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। নিজামীর পরামর্শ অনুযায়ী পরে জালাল ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৫, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মতিউর রহমান নিজামীকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা: সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাইকোর্ট এলাকায় কেউ প্রবেশ করলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ এবং করা হয়েছে তল্লাশি। ট্রাইব্যুনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল প্রবেশ পথে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। আদালত চত্বরের প্রবেশপথে রয়েছেন র্যাব সদস্যরা। সাংবাদিকদেরও পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেয়া হয়। হাইকোর্ট পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আবদুস সালাম জানান, আদালত এলাকায় প্রায় সাড়ে চারশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদালত এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কেউ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
রায়ের পর আনন্দ মিছিল: সকাল থেকেই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মী নিজামীর ফাঁসির দাবিতে ট্রাইব্যুনালের সামনে অবস্থান নেয়। ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই ট্রাইব্যুনালের গেটের বাইরে আনন্দ মিছিল করেছে তারা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহ-সভাপতি ইসমত কবির গামা বলেন, ‘এ রায় প্রত্যাশিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার হবে। কিন্তু ’৭৫-এর পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এত বছর অপেক্ষা করতে হলো।’ তিনি সরকারের প্রতি দ্রুত এ রায় কার্যকর করার আহ্বান জানান। শাহবাগে আনন্দ মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। ট্রাইব্যুনালে রায় শুনতে আসা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাসির উদ্দীন ইউসুফ, হাসান আরিফ, মফিদুল হকসহ অনেক সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবী রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খান ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সুত্র
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৪০
তালপাতারসেপাই বলেছেন: সহমত! ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: পাপ বাপকেও ছাড়ে না।
যুদ্ধাপোরাধীরা কোনদিন তামাদী হয়না।
অভিশপ্ত যুদ্ধাপোরাধী
(জামায়াতে ইসলামী আমির ও মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর প্রধান)
মতিউর রহমান নিজামী নিপাত যাক।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২৫
সরদার হারুন বলেছেন:
অপরাধ করে কেউ শেষ পর্যন্ত রেহাই পায় না ।