নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি নেতারা ‘টল-টকে’ ওস্তাদ, কাজে ঠনঠন - কাজী সিরাজ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৯

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশেষে একটি সত্য কথা উচ্চারণ করেছেন, যা সচরাচর লীগ রাজনীতিতে দেখা যায় না। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপিকে দুর্বল ভাবা ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগের ‘হাম্-সে বড়া কোন্ হ্যায়’ মনোভাবের সঙ্গে তার এ বক্তব্য সাংঘর্ষিক হলেও তিনি সত্যোচ্চারণের মাধ্যমে একজন প্রকৃত রাজনৈতিক নেতারই পরিচয় দিয়েছেন। লীগ নেতারা ক’বছর ধরে বিএনপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করে আসছিলেন। তারা এমন দম্ভোক্তিও করছেন, তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক অবস্থানের মুখে বিএনপি ‘বিলীন’ হয়ে গেছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে বিরাজিত দলটির অন্তর্নিহিত শক্তি যে এখনো বিদ্যমান তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে যে, বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর জনসমর্থন পেতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনই তার প্রমাণ। দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের অসহযোগিতা ও অসম প্রার্থী দিয়েও প্রায় এক লাখ ভোট পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বিএনপি হেরেছে তার চেয়েও বেশি আলোচনার বিষয় হচ্ছে তারা এত ভোট পেল কী করে? এই যে নীরব জনসমর্থন তা কাজে লাগানোর কোনো কাজ করছে না কিন্তু দলটি। বরং চলছে বিপরীতমুখী কাজ।

বিএনপিপি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের একটি খবর দিয়ে প্রসঙ্গটা ব্যাখ্যা করতে চাই। ১১ জানুয়ারি ফেসবুকেও তা প্রচার হয়েছে। বিএনপির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা যে কত সঠিক ও যৌক্তিক তার প্রমাণ মেলে এই খবরে। ‘নওগাঁ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে রমরমা বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিএনপির কমিটি ঘোষণা নিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ। চরমভাবে হতাশ হয়েছে ১/১১ থেকে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও মাঠ দখলে রাখা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলে কথা বলে জানা যায়, দুঃসময়ে যারা দলের জন্য সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তাদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। যারা সুবিধাবাদী হিসেবে দলে পরিচিত তারাই টাকা দিয়ে কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছে। নওগাঁ সংসদীয় আসনে সাবেক একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী তৃণমূলের নেতা বিএনপিপি নিউজকে বিএনপি নওগাঁ জেলা কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেন, টাকার বিনিময়ে সেই নেতা মালয়েশিয়া প্রবাসী একজনকে জেলার সহ-সভাপতি করেছেন। কারণ মালয়েশিয়া প্রবাসী নেতা বিএনপির সেই নেতাকে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন দেন নিয়মিত। জানা যায়, এভাবে টাকার বিনিময়ে ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরিরত অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। অভিযোগকারী তৃণমূলের সে নেতা অভিযোগ করেন, ১/১১-এর পর নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে আগলিয়ে রেখেছিলাম এর প্রতিদান পেলাম জেলা বিএনপির একজন সাধারণ সদস্য হিসেবেও মূল্যায়িত না হয়ে। অথচ মূল্যায়িত হয়েছে যারা দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে। এখন আর ভালো মানুষ বিএনপি করতে পারে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নওগাঁর এই নেতা। গত ৬ জানুয়ারি শুক্রবার নওগাঁ জেলা বিএনপির এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। শুধু নওগাঁয় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে যেখানেই নতুন কমিটি গঠনের খবর পাওয়া যাচ্ছে একই সঙ্গে এ খবরও আসছে যে, মাঠের লড়াকু ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। শুধু জেলা নয়, থানা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিটি ও নেতৃত্ব বেচা-কেনার যেন হাট বসে বিএনপিতে। মূল দলের ক্ষেত্রেই বিষয়টা সীমাবদ্ধ নেই, অঙ্গ ও সহযোগী দলেও তা মারাত্মকভাবে সংক্রমিত। একটি রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব নির্মাণ বা গঠনের স্বাভাবিক ও স্বতঃসিদ্ধ প্রক্রিয়াটি মোটেই অনুসরণ করা হয় না বিএনপিতে। প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, সব পর্যায়েই স্ব স্ব স্তরের কাউন্সিলরদের হয় ঐকমত্য অথবা গোপন ব্যালটে কমিটির নেতা নির্বাচিত হয়। বিএনপিতে না কেন্দ্রে, না তৃণমূলে এ প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। এসব নিয়ম-পদ্ধতির কোনো বালাই নেই দলটিতে। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, কেন্দ্রে বা তৃণমূলে কাউন্সিল বা সম্মেলনের দিন কমিটি ঘোষণা করা হয় না। ২০১৬ সালের জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে ১৯ মার্চ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়ে গেছেন কাউন্সিলের আগেই। ব্যাস, এই পর্যন্তই। স্থায়ী কমিটি ও অন্য কমিটিসমূহ কত মাস পরে ঘোষণা করা হয়েছে সবারই তা জানা। কমিটি ঘোষণায় কাউন্সিলর বা তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই দলের মালিকানা যারা দাবি করেন তারা অনুভব করেননি। মনে হয় দলটাকে তারা মনে করেন তাদের পারিবারিক সম্পত্তি-জমিদারি। যারা এ দল করেন তারা সবাই তাদের খাস মহলের প্রজা। প্রজার আবার রাজার কাজে প্রশ্ন কিসের? তাদের আবার মতামত কী? হুকুম তামিল করাই তাদের কাজ। এই মনোবৃত্তির কারণেই যাদের ঘামে আর শ্রমে দল টিকে আছে, যারা মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জুলুমে পর্যুদস্ত ও সর্বস্বান্ত হয়ে দলের মায়ায় দলেই আছেন, কোথাও তাদের মতামতের কোনো পাত্তাই দেওয়া হয় না। ভাবখানা এমন, যেন এরা ক্রীতদাস। যাবে কোথায়? আরও লক্ষণীয়, জেলা কমিটি জেলায় হয় না, ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে থানা কমিটির ‘ওহি’ও নাজিল হয় কেন্দ্র থেকে। মনোপলি কমিটি বাণিজ্যের কী সুবিধা! ইউনিয়ন কমিটিও ইউনিয়নে তো হয়ই না, এমনকি থানাতেও হয় না। জেলা কমিটির ‘খলিফারা’ কেন্দ্রের বুজুর্গদের সঙ্গে ‘সেলামি-হাদিয়া’ বিনিময় করে নিজেদের মতো করে কাজ সারেন। বিএনপি নয় বছর ক্ষমতার বাইরে। তারপরও কমিটি ও নেতৃত্ব বেচা-কেনার বাজার এত ‘তেজী’ কেন এমন একটা প্রশ্ন কারও মনে উঁকি দিতেই পারে। দেশের সর্বোচ্চ থেকে একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত চাঁদাবাজি, তোলাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজিসহ নানা ধরনের ‘বাজিকরির’ বিষয়ে সবাই অবহিত। একটা খবর হয়তো সবার জানা নেই যে, এসব ‘বাজিকরি’ শুধু সরকারি দলই করে না, প্রভাবশালী বিরোধী দলও এসব কাজে একেবারে ‘দরবেশ’ থাকে না। ছোটখাটো ‘কায়কারবারে’ তারাও জড়িত থাকেন। ‘বিগ ডিল’ সরকারি দলের বাজিকররা করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মাঝারি-স্মল ‘ডিলে’ ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি দলও বাধা দেয় না। কোথাও কোথাও মিলেমিশেই তারা কাজ করেন। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের যৌথ ব্যবসার খবরও পাওয়া যায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ‘নেতারা’ও এই ‘সুবিধা’ ভোগ করেন। তাই নেতৃত্ব ‘কেনার’ জন্য বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকেন অনেকে। আবার কেউ কেউ তো বেচাকেনার জন্য ‘দোকান’ খুলে বসেই আছেন। এ অবস্থায় একটি রাজনৈতিক দলের ভাগ্যলিখন যা হওয়ার তাই তো হবে। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি চেয়ারপারসন যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সঙ্গে তার দুঃখবোধও মিশ্রিত থাকার কথা। ছাত্রদলের শুরুটাই ভালো হয়েছিল।



এর প্রতিষ্ঠা, গঠন ও বিকাশ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া যাদের যুক্ত করেছিলেন অতীত ও সমকালীন ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। এখন যারা ছাত্রদল করে তারা কি জানে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি কোথায় হয়েছিল? দলের প্রথম মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরামর্শে সেই আহ্বায়ক কমিটি করার দায়িত্ব কাদের ওপর বর্তেছিল? ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কাজী আসাদ, সাবেক মন্ত্রী এবং ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ডিজিডিএফআইয়ের কর্মকর্তা মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম নিশ্চয়ই ভোলেননি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব তো জানেনই। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরাও জানেন, কত যাচাই-বাছাই করে কমিটিতে সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। খুলনা বিএল কলেজের তৎকালীন নির্বাচিত সহ-সভাপতি শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দনের প্রতি কিছুটা অবিচারের কথা মনে পড়ে। তবে একজন আদর্শবাদী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে আস্থাশীল চন্দন দলের মূল নেতৃত্বের পছন্দ কাজী আসাদকে সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে মেনে নিতে কোনো আপত্তি করেননি। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছেন। মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে তারা ছাত্রদলকে যে শক্ত পাটাতনের ওপর ভিত্তি দিয়ে যান, একসময় সেই ছাত্রদল দেশের প্রায় ৭০-৮০ ভাগ কলেজ ছাত্র সংসদ নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিএনপির প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কাছেও ছাত্রদল ছিল একটি ঈর্ষণীয় ছাত্র সংগঠন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের গৌরবদীপ্ত ভূমিকা এখন ইতিহাসের অন্তর্গত বিষয়। তৎকালীন ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমান ছিলেন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আতঙ্ক। আমান-খোকন-আলমের নেতৃত্বাধীন ডাকসু ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের প্রাণ। দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল তাদের সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায়। তবে এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের বিচক্ষণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার মূল দলের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করেছিলেন বলে তার সংগঠনে সমালোচিত ছিলেন। যাই হোক, বলছিলাম ছাত্রদলের অতীত-ঐতিহ্য আর গৌরবগাথার কথা। বেগম খালেদা জিয়া যখন দলের দায়িত্ব নেন, এরশাদীয় নিপীড়নে বিএনপি এবং তার সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন দারুণ কোণঠাসা ছিল। বিএনপির যারা প্রবীণ, মনে করুন তো, এখনকার চেয়ে বিএনপি কি তখন কম প্রতিকূলতার মুখে ছিল? তারপরও দায়িত্ব গ্রহণের পর বেগম খালেদা জিয়া একটি কমিটেড, আদর্শবাদী ও দলানুগত কর্মীবাহিনী পেয়েছিলেন। একটা সুরক্ষিত ও মজবুত দলীয় প্লাটফর্ম পেয়েছিলেন, যা জিয়ার হাতে তৈরি, জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত। ছাত্রদল ছিল সবচেয়ে সুগঠিত, শক্তিশালী। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থানে এই ছাত্রদল অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল বললে অত্যুক্তি হবে না। ম্যাডামের অহঙ্কারের সেই ছাত্রদল নষ্ট হলো কার হাতে? মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা এখন ছাত্রদলের প্রতি আকৃষ্ট নয় কেন? নব্বই-পূর্ববর্তী ছাত্রদলের অনেক সমর্থক-কর্মী, এমনকি নেতা মেধার বলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন, দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়েছেন, প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজেও দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই এখন অবসর জীবনযাপন করছেন।

ছাত্রদলের ওপর, দলীয় নেতাদের ওপর দলনেত্রীর ক্ষোভের কারণ বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর তিনি যত কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, একটি কর্মসূচিতেও নেতারা কেউ মাঠে নামেননি। নেতারা নামেননি বলেই কর্মী-সমর্থকরাও কেউ নামতে সাহস করেনি। সব কর্মসূচি ফ্লপ। বিগত নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণ করানোর জন্য সরকার স্বীয় অবস্থান থেকে পিছু হটে ‘সর্বদলীয় সরকারের’ প্রস্তাব দেওয়ার পরও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থেকে যে দলীয় সর্বনাশ করেছে সে সর্বনাশা ‘ঘা’ সারানোর চেষ্টা দলটি নতুন করে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তেমন সদিচ্ছারই পরিচয় বিএনপি দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি জনসমর্থনশূন্য কোনো দল নয়— তার প্রমাণ মিলেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে। ‘কোর’ সমর্থন তাদের অটুট আছে বলেই ধারণা স্পষ্ট করেছে সে নির্বাচন। তাতে প্রায় ১ লাখ ভোট প্রাপ্তি বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে অনুপ্রাণিত করার কথা। কিন্তু দলের ভীতু, কাপুরুষ নেতৃত্বকে তা স্পর্শ করেছে বলে মনে হয়নি। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সরকার তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা নয়াপল্টনে সভা করার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল, সারা দেশে কিছু কিছু কর্মসূূচি পালিত হতে দেখা গেলেও ঢাকা ছিল প্রতিবারের মতোই নিথর, নিস্তব্ধ। বিএনপি নামক একটি দল ঢাকায় আছে বলেই মনে হয়নি। কেন এমন হলো? ব্রিফিংবাজি করে কি আন্দোলন হয়? নির্বাচন ও আন্দোলন একটি রাজনৈতিক দলের কাছে খুবই সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয়। নির্বাচনকে বলা হয় আন্দোলনের অংশ। আবার আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ধারণ করে দেয় নির্বাচনের ফলাফল। ঢাকায় আন্দোলন ব্যর্থ হলে বাদবাকি জেলায় সফল হয়ে কোনো লাভ নেই গণতান্ত্রিক সংগ্রামে। সারা দেশেও যে আহামরি কিছু বিএনপি করতে পেরেছে তেমনও নয়। কেন পারল না তার পর্যালোচনা কি হবে সেই দলে? জনসমর্থন থাকলেই বিএনপির মতো একটি শান্ত-সমর্থকনির্ভর দল ভোটের ফলাফলে ভালো করতে পারে না। জনসমর্থনকে ক্যাশ করার জন্য প্রয়োজন মজবুত সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক এবং সৎ, সাহসী ও যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব— যারা নীতি-আদর্শে অবিচল, রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। এখানেই আসে এ লেখার শুরুর প্রসঙ্গ। যারা নানা ধরনের ব্যক্তিগত-গোষ্ঠীগত সুবিধা নেওয়ার জন্য সংগঠনে পদ-পদবি কিনে নেন বা ‘দেবতা’ যে ভোগে তুষ্ট তা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নেন, তারা মাঠে কেন নামবেন? তারা কেন ঝুঁকি নেবেন? দল করে, স্রেফ দল করে বড় বড় অবস্থানে থেকে যারা বিপুল বিত্ত-বৈভব গড়েছেন তারা তা হারানোর ঝুঁকি নেবেন কী করে? আগামী নির্বাচনে লড়ার মতো লড়তে হলে শুধু নির্বাচন কমিশনের মাজা শক্ত হলেই চলবে না, বিএনপিকেও নিজের মাজা শক্ত করতে হবে। মর্যাদার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে যাদের ‘আমলনামা’ খারাপ তাদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরা ‘টল-টকে’ ওস্তাদ, কাজের বেলায় ঠনঠন। কমিটি বেচাকেনা, নেতৃত্ব বেচাকেনার ব্যাপারী ও পাইকাররা তো বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে অজানা, অচেনা হওয়ার কথা নয়। সৎ, নিষ্ঠাবান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত নেতৃত্বে বিএনপি তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে আজ না হোক কাল সাফল্য আসবে। জনগণের একটি বিরাট অংশ তো তাদের সঙ্গে আছে।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ জনগণ বিএনপির কোনো নেতানেত্রীর ‘রায়ত’ নন। দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী, ধর্মপ্রাণ জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অংশ দলটিকে সমর্থন করে একান্তই রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কালোত্তীর্ণ দর্শন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার প্রতি দলের ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার এ সমর্থনের কারণ। বিএনপি আজ সেখান থেকেও বিচ্যুত। দলটির গায়ে এখন সাম্প্রদায়িকতার দুর্গন্ধ। কাজেই বর্তমান বাস্তবতা যাই হোক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির জনসমর্থনকে যতই সমীহ করে কথা বলেন না কেন, লম্বা লম্বা কথা না বলে কাজের কাজ করতে না পারলে, সংগঠন মজবুত করতে না পারলে এ জনসমর্থন আখেরে কোনো কাজে আসবে না। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন ৫৯৬ জন। অঙ্গ-সহযোগী দলসমূহের কেন্দ্রীয় কমিটি মিলে আরও তো হাজারখানেকের ওপরে হবে। বিক্ষোভ দিবসে দলের স্থায়ী কমিটি, ৩৫ ভাইস চেয়ারম্যান আর ৭৮ উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঢাকায় একটা মিছিল করলেই তো দেড় হাজার ‘নেতার’ একটা মিছিল হতো। পুলিশের বাধার কথা বলবেন। পুলিশের বাধার মুখে আগে এরশাদ আমলে, শেখ হাসিনার আগের আমলে বিএনপি মিছিল-বিক্ষোভ করেনি? গ্রেফতারের ভয়? ওমা! রাজনীতি করবেন, নেতা হবেন, এমপি, মন্ত্রী ছিলেন এবং আবার হতে চাইবেন, জেলের ঝুঁকি নেবেন না? সব ঝুঁকি বেগম জিয়া আর তারেক রহমানকেই নিতে হবে?
সূত্র

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনিও রাজনৈতিক এনালিস্ট, ওবায়দুল কাদেরও রাজনীতিবিদ! লিলিপুটের গল্প

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৩২

মুন্সি পালোয়ান বলেছেন: যে দেশে গোলাম আযমের জানাজায় হাজার মানুষ হয় সে দেশে বিএনপির সমর্থকের অভাব হবে না।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন:

যেভাবে লিখা আছে মনে হয় শুধু বিম্পি একাই তৃণমূলের অবমূল্যায়ণ করে আওয়ামী ধোয়া তুলসি পাতা। কেমন তুলসি পাতা এর একটি উদাহরণ দিচ্ছি:


কথা দিয়ে ছিলাম শরীয়তপুরের গোসাইরহাট তৃণমূল আওয়ামীলীগের প্রভাব/ভূমিকার বিশ্লেষণধর্মী লেখা উপহার দিব। সেটা পেরেছি কিনা জানি না।তবে, কারো মতের অমিল হলে গঠণমূলক সমালোচনা করবেন।কোন উগ্র পাঠকের এই লেখা পাঠ করা দরকার নেই।

ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে মানুষের উদ্দীপনা ও আগ্রহ অনেক। এতে উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ঘরে ঘরে চলে এ উৎসব। প্রিয় মানুষদের, পছন্দের মানুষদের, কর্মঠ সংগঠকদের তারা ভোট দিয়ে জেতাতে চায়, অসৎ পথে নয়। এবার যেহেতু নির্ধারিত মার্কায় ভোট হয়েছে তাই এ প্রতিপত্তি আরও বেশি, বিশেষ করে সরকারি দলের। সরকারি দলও মনোনয়ন নিয়ে কোনো সিস্টেম বা জরিপের ধার ধারেনি। অনেকের ধারণা এক্ষেত্রে বাণিজ্য হয়েছে। এখানে বিরোধী দলশূন্য মাঠে সরকারি দলের লোকরা নানাভাবে সুযোগ নিতে চেয়েছে। কিন্তু সেটি গোসাইরহাটে হয়নি। মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যন্ত অভিজাত আওয়ামীলগের যে বার্তা তা অনেকটা অশুভ এবং অসৎ-নীতিবর্জিত! পার্টিসুলভ নয়, গণতন্ত্রমনস্ক তো নয়ই। কারণ তা না হলে পরপর তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি ঘটত না। তৃণমূলের রাজনীতিতে সরকারি দল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। তারা হয়তো মনে করে, কমিশন তাদের, থানা তাদের, পুলিশ তাদের, এছাড়া অর্থ-‘অস্ত্র’ ছাড়াও দেহে-মনে ক্ষমতার যে তাপপ্রবাহ আছে সেটা কে বাধা দেবে কে! সবই তো আমাদের! এই নিশানা ভোটের পরিবেশকে দূষিত করে তুলছে। ফলে গোসাইরহাটে উপর্যুপরী কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী মনোনীতি প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে।

আসুন গোসাইরহাটের তিনটি ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী পোষ্টমর্ডেম জেনে নেই।

এপ্রিলে অনুষ্ঠিত কোদালপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ মনিরুজ্জামান ভোট কারচুপির অভিযোগ করে ভোট বর্জন করেছিলেন। তার অভিযোগগুলো ছিল নিম্নরুপ:

1।প্রশাসনের সহায়তায় বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান সরদারের সমর্থকরা মারধর করে আওয়ামী লীগের এজেন্ট, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

নোট: প্রাশসনের সহায়তায় যদি বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী এজেন্ট, নেতা, কর্মীদের তাড়িয়ে দেয় তাহলে জনগণ এর প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করেনি কেন? আমরা জানি, দল থেকে নমিনেশন পেতে হলে জনগণের সার্পোট লাগে। সেই জনগণ কোথায় গেল? আর এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে কোথাও তেমন কোন প্রতিবাদ বা মিছিল হয়নি কেন? ভোট কারচুপি হলে জনগণই প্রথম প্রতিবাদ করে। সেটি কোদালপুরে হয়নি।আর হওয়ার তেমন কোন কারণ ছিল না।

2। ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা দখলে নেয়।

নোট: ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিরোধ করেনি কেন?
কারণ তারা জানত সরকার দলীয় সমর্থক ছাড়া কারো সাহস নেই ককটেল ফুটানো। আর যদি ফুটাতে কেউ সাহস করে তাহলে অন্যান্য ইউনিয়নের মতো তাকে গুলি খেয়ে মরতে হত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ছিল এটি সরকার সমর্থকদের কাজ। তাই তারা গুলি ছুড়েনি।

3। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
নোট: প্রশাসন প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন কিছু করতে পারে না। তাদের ধারণা ছিল ক্ষমতাসীনরা যেহেতু অভিযোগ করছে তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আর স্বাভাবিক রাখাটা তাদের দায়িত্ব।তাই তারা অভিযোগ আমলে নেয়নি।
4। ভোটের দিন সকালে ১নং ওয়ার্ডে আমার ভাইয়ের ওপর হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা।

নোট: আমার জানামতে, উনি একজন আওয়ামীলীগের থানা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান। তার উপর বিদ্রোহী জনগণের অতির্কিত হামলা করা ঠিক হয়নি।বিদ্রোহীদের দৃষ্টিতে উনি যদি অন্যায় কিছু করে থাকেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

5। কোদালপুর ইউনিয়নের ৫নং কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ছবি তুলতে গেলে এটিএন বাংলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান পারভেজের ক্যামেরা নিয়ে নেয় পুলিশ এবং তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ফুটেজ ডিলেট করে এএসপির হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়।

নোট: এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী বা তার সমর্থকদের কোন ভূমিকা নেই। এর দায় দায়িত্ব পুলিশ ও প্রশাসনের।

6। বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোট কারচুপির খবর স্থানীয় সংসদ সদস্য কে জানিয়েও লাভ হয়নি।

নোট: আমার জানা মতে ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় এম.পি মহোদয়ের হস্তক্ষেপের কোন রিগ্যাল রাইট নেই। তিনি নির্বাচন আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করতে পারেন মাত্র। তাই লাভ হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

উল্লেখ্য যে,উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শরীয়তপুরের গোসাইরাট উপজেলায়র কোদালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান কে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান সরদার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

শেষ কথা: দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সকাল ৮টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং জনগণের ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যারা ভূমিকা রেছেছেন তারা হলেন,
শরীয়তপুর সহকারী পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) সুমন দেব, গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন ও শরীয়তপুর-৩ আসনের এমপি নাহিম রাজ্জাক এমপি।

এবার আসি আলাওলপুর ও কুচাইপট্টি ইউপি নির্বাচনে:

১৪ বছর পরে নির্বাচন হয়েছে গোসাইরহাট উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলের আলাওলপুর ও কুচাইপট্টি দুইটি ইউনিয়নে। গত ৩১ অক্টোবর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা আর বিপুল উৎসব মুখরতায় অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। নির্বাচনে দুইটি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে সরকার সমমির্থত আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের নৌকা প্রতীকের শোচনীয় পরাজয় হয়। এতে দুই ইউনিয়নেই ব্যাপক ব্যবধানে বিজয় লাভ করেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পেরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি অংশ অহেতুক দোষ চাপাচ্ছেন প্রশাসনের ওপর। দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য দুই ইউনিয়নেই একাধিক নেতা কর্মী চেষ্টা চালায়। কিন্তু মনোনয়ন পান ১৪ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে থাকা কুচাইপট্টির আবুল বাশার মুন্সি এবং আলাওলপুরের আমজাদ হোসেন বেপারী। উল্লেখিত ইউনিয়ন দুটি আওয়ামলীগ সমর্থকদের সংখ্যাধিক্য থাকার পরেও তৃণমূলের আওয়ামীলীগ সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা এক যুগেরও বেশী সময় ক্ষমতায় থাকাদের ভোট না দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কিন্তু জনগনের এই রায়কে মেনে নিতে পারেনি পরাজিতরা। তারা নিজেদের জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার দায় না নিয়ে, একটি চমৎকার সুষ্ঠ নির্বাচনে পরাজয়ের দায় চাপাচ্ছেন সরকারের নির্দেশ পালনকারি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাড়ে। আলাওলপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ, বিএনপি উভয় দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। এরা হলেন, নৌকা প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, আ’লীগের বিদ্রোহী চশমা প্রতীকে মো. উসমান বেপারী, ধানের শীষ প্রতীকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির স্ত্রী মিসেস কস্তুরম্নবা ইসলাম সাথী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, আনারস প্রতীকে মো. জাকির হোসেন ও অটো রিক্সা প্রতীকে মো. রাসেল মিয়া।

এদিকে, কুচাইপট্টি ইউনিয়নে মাত্র ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। তারা হলেন, নৌকা প্রতীকে সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার মুন্সি, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন স্বপন এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মো. আলমগীর হোসেন।

নির্বাচনের ফলাফল শেষে দেখা গেছে, আলাওলপুর ইউনিয়নে মোট ১১ হাজার ৩ শত ৭৫ জন ভোটারের মধ্যে ৭৭.১৯ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। এতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. উসমান গনি বেপারী ৩ হাজার ৭ শত ৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আমজাদ হোসেন বেপারী পেয়েছেন ২ হাজার ৭ শত ৩৭ ভোট। অপর দিকে কুচাইপট্টি ইউনিয়নে ১১ হাজার ৮ শত ৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ৭৫.৩৩ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেন। এতে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও বিদ্রেহী প্রার্থী নাসির উদ্দিন স্বপন ৬ হাজার ২২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি হিসেবে নৌাকার প্রার্থী আলহাজ আবুল বাশার মুন্সি পেয়েছেন ২ হাজার ৩ শত ৯৬ ভোট! (এবার বুজুন ঠেলা)
নির্বাচনের দিন আলাওলপুর ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্র র্যা ব, বিজিবি, পুলিশ সহ বিপুল পরিমানের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, জুডিসিয়াল মেজিষ্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকতৃাবৃন্দ নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহনের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন।

কুচাইপট্টি ইউনিয়নেও একই চিত্র সম্পর্কে জানা গেছে। ওই দিন সকালে কুচাই পট্টি ভিমখিল বাজারে বহিরাগত সন্দেহে বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স এর সদস্যরা কিছু লোকের ওপর চড়াও হয়ে লাঠি চার্জ করেন। এতে জনৈক যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজন আহত হন।
আলাওরপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আমজাদ হোসেন বেপারীর বাড়ির সামনে ৪ নংওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র উত্তর কোদালপুর বেপারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর ২ টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। সাধারণ জনগণের ধারণা গোসাইরহাটের বাইরের ভিন্ন একটি উপজেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান অবৈধ অনুপ্রবেশ করে ভোট কেন্দ্রে হামলা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে এলে পুলিশের ইউনিফর্মে তিনি হাত দেন এবং তার সাথে থাকা লোকেরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে।

নোট:
দুপুর ২ টার দিকে কিছু লোক দেশী অস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্রের বাইরে হামলা করে। ওই কেন্দ্রের ১ হাজার ৬ শত ১ ভোটের মধ্যে ততক্ষনে ১ হাজার ২ শত ৩৬ ভোট গ্রহন করা হয়। পুলিশ বাধা দেয়ায় হামলাকারিরা কেন্দ্র ত্যাগ করে। হামলার পর প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।

কুচাইপট্টিতে বিজিবি সদস্যরা সেখান থেকে বহিরাগতদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় কোন ভোটারের গায়ে তারা হাত দেয়নি। কোন কর্মকর্তার উপর দোষ চাপানো সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।

পরাজয়ের কারণ: যারা ১৪ বছর একটা ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার পরেও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তারা তাদের অতীত কৃত কর্মের কারনেই এই পরাজয় বরণ করেছেন । উচ্চ আদালতে মামলা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ রেখে, বছরের পর বছর জনগনের ভোটাধিকার হরণ করায় মানুষ তাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন নি। এখানে প্রশাসনকে মিথ্যে অপবাদ দেয়ার কোন কারন থাকতে পারে না।

উল্লেখ্য, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এবং দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিঃস্কৃতরা হচ্ছেন কুচাইপট্রি ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সমম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন স্বপন, কুচাইপট্রি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতা মোঃ খোকন বেপারী, ইব্রাহিম হরকরা, কুচাইপট্রি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মনির কাজি, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক ইব্রহিম সরকার ।
আলাউলপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য ওসমান বেপারী, বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, আলাউলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম সরদার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক নুরমোহাম্মদ বেপারী, আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মোসলেম বেপারী, বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাকে ও বহিস্কার করা হয়।
এছাড়াও আলাওলপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা কাজি মনির ও কয়েকজন কে বহিস্কারের কথা জানা যায়।

নোট: যেহেতু দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেনে এবং জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছেন তাই তাদের কে সাহসী হিসেবে ধরা নেওয়া যায়। অতএব, তাদের পদ খুব শ্রীগ্রই ফিরিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

শেষ কথা: গত ৫০ বছরের মধ্যেও এত সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রশাসন নিয়ে যে কথা উঠেছে তা একবারেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতেই প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।

সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে। তাই অহেতুক কোন কথা বলে কোন লাভ নেই। যে নির্বাচিত হওয়ার সে হয়ে গেছে।

মতামত: স্থানীয় আওয়ামীলীগ কে এখনই পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে হবে। তা না হলে সামনে উপজেলা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
পরিশেষে: এই নির্বাচনে হেরে গেছেন বলে সব শেষ হয়ে গেছে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। আপনিও হতে পারেন আগামী দিনের চেয়ারম্যান। সেই জন্য আপনাকে দলীয় মুখাপেক্ষী না হয়ে কল্যাণমুখী কাজ করতে হবে। ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানদের ভালো কাজের সহযোগিতা করতে হবে এবং ভুল কাজগুলো জনগণকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। এবং বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের সেবা করে যান। তাহলে আপনিও হতে পারেন কোদালপুর, আলাওলপুর কিংবা কুচাইপট্টির চেয়ারম্যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.