নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক ভুলের চক্করে বিএনপি

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০০


বড় অসহায় বোধ করি যখন দেখি আমাদের রাজনীতি এগিয়ে যাওয়া বিশ্বের পরিমণ্ডলে ডিজিটাল রূপ পাওয়ার বদলে এনালগ হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির মাঠে কৌশল পাল্টাতে হয়। জনগণকে বোকা না ভেবে সম্মান জানাতে হয়। চলনে বলনে স্মার্ট ও আধুনিক হওয়াটা সকলের কাছে প্রত্যাশিত। আমাদের রাজনীতিকরা কি তবে তাদের পুরনো মেঠো বক্তব্য রেখে নিজেরাও যেমন অসম্মানিত হচ্ছেন, তেমনি আমাদেরও বিব্রত করছেন না?

নারায়ণগঞ্জের এক মননশীল প্রবীণ সাংস্কৃতিক কর্মী টেলিফোন করে আক্ষেপের সঙ্গে বললেন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন ফলাফল বিএনপির মেনে নিতে কষ্ট হতেই পারে কিন্তু ভোটারদের অপমানিত করার দুর্মতি হচ্ছে কেন তাদের। যারা যে যে দল করেন তারা হয়ত সামর্থ্য বিবেচনা না করেই দলের সাফল্য দেখতে চান। কিন্তু নির্মোহ জায়গা থেকে যখন সাধারণ মানুষ বিচার করেন তখন আসল সত্যটি অনায়াসেই সামনে চলে আসে। আমরা নারায়ণগঞ্জ আর বন্দরে ডা. আইভীর জনপ্রিয়তা কতটুকু ভালো করেই জানি। পাশাপাশি বিএনপির সামর্থ্যের খোঁজও আমাদের কাছে আছে। নিরপেক্ষ পরিচ্ছন্ন নির্বাচন হলে এই ফলাফলই আমাদের প্রত্যাশিত ছিল। বাস্তবেও তেমনটিই হয়েছে। অর্থাত্ জনগণের রায়ের প্রতিফলনই ঘটেছে ভোটের ফলাফলে। সেখানে যখন বিএনপি নেতারা ‘রাতের অন্ধকারে কী হয়েছে, ভোট চুরি হয়েছে’ ধরনের গত্বাঁধা বাক্যে বা শব্দে প্রকাশ্যে নির্বাচনের সমালোচনা করেন তাতে যে ভোট প্রয়োগকারী নাগরিকদেরই অপমান করা হয় এ সত্য তারা বুঝতে পারবেন কবে? জনগণকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আর যাই হোক জনগণের রাজনীতি করা যায় না।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিএনপি রাজনীতিতে যুক্ত একজন শিক্ষক নেতাকে প্রশ্ন করেছিলাম—নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে সকলেই সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলছেন। প্রার্থীরাও কোনো অভিযোগ তোলেননি। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা তৈমুর আলম খন্দকারও নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলেছেন। মিডিয়ার পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। সকল নির্বাচন পর্যবেক্ষকই এককথায় নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলেছেন। সেখানে বিএনপি নেতারা এত উদ্ভ্রান্তের মতো কথা বলছেন কেন? আমার স্নেহভাজন শিক্ষক নেতা সলজ্জ হাসি দিয়ে বললেন, দলীয় কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে অমনটি বলতে হয়।

আমি বুঝলাম, গোটাটাই তাহলে অ্যানালগ।

মানতেই হবে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই নেতাদের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তবতা বোঝেন। আমি নির্বাচনের আগে নিজ এলাকা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ ঘুরে এসেছিলাম। তখন এক জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে কলাম লিখেছি। আমি অনেক বিএনপি সমর্থকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের অনেকেই আইভীর উন্নয়নমূলক কাজে সন্তুষ্ট। তারাও আইভীর বিজয় প্রত্যাশা করে। তাদের অনেকেরই বক্তব্য, ধানের শীষের প্রার্থী জেতার যদি কোনো সম্ভাবনা থাকত তবে তাঁরা অবশ্যই অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত খানের জন্য কাজ করতেন। দলীয় মার্কায় না দাঁড়ালে তারা অবশ্যই আইভীকে ভোট দিতেন। বিএনপি করেন বলে মার্কা এখন তাদের বাধা। একারণে তারা ভোট দেবেন না। এই অংকের ফলাফলে নির্বাচনে আইভীর বিপুল ভোটেই নির্বাচিত হওয়ার কথা।

আমি ভাবলাম বিএনপি কর্মীরা যেখানে বাস্তবতা বুঝে বক্তব্য রাখতে পারেন সেখানে নেতারা কেন পুরনো বলয় থেকে বেরুতে পারছেন না। প্রায় সন্ধ্যায় চার দেয়ালের ভেতর সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির কয়েকজন নেতা ভারী ভারী শব্দে কিছু দুর্বোধ্য কথা বলে যাবেন এটি সকলেরই জানা। সাধারণ মানুষের সামনে এর তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। নির্বাচন করেও বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত ‘রাতের আঁধারে ভোট চুরি’র বিষয়টি বুঝতে পারলেন না। আর ঢাকার নেতারা সব বুঝে গেলেন! বিএনপি কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে বারবার? ক্লাসে প্রায়ই ছাত্রছাত্রীরা ইতিহাসের পারম্পর্য জানার পর কৌতুকের সঙ্গে বিএনপির দাবি অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চায়। আমি জানি ততক্ষণে ওরা ইতিহাস থেকে প্রকৃত সত্য বুঝে গেছে।

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনোত্তর বিএনপি নেতারাও সেই একই ভঙ্গিতেই যেন কলের গান বাজাচ্ছেন। আমি জানি না বিভ্রান্ত নাবিকের মতো দিনে দিনে দলীয় বক্তব্যের ছক পাল্টে যায় নাকি। নাহলে মির্জা ফখরুল ইসলামের মতো প্রাজ্ঞ নেতা শুরুতে বেশ কৌশলী বক্তব্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নাসিক নির্বাচনের ফলাফল তাদের আন্দোলনের আংশিক সাফল্য। অর্থাত্ তাঁরা যে স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি করেছেন সরকার তা মানতে বাধ্য হয়েছে। আমরা বেশ স্বাগত জানিয়েছিলাম এই বক্তব্যকে। কিন্তু দিন পেরুতেই সুর পাল্টে গেল। তাঁর মতো নেতা যখন এমন সুরে কথা বলেন তখন দলটির বিপন্ন বিভ্রান্ত দশার কথাই মনে হয়।

জনকল্যাণমুখী রাজনীতির আদর্শ এখন কেতাবী কথা। বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। তাই আওয়ামী লীগ রাজনীতি দিয়ে মৌলবাদী শক্তিকে রুখতে পারেনি। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হয়ে, নিজেদের পক্ষপুট থেকে জন্ম নেওয়া আলবদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার কলঙ্ক গায়ে মেখেও দিব্যি রাজনীতি করে যাচ্ছে। দেশের জন্ম রুখে দিতে চেয়েছে যারা, তারা মন্ত্রী হয়ে সে দেশের পতাকা উড়িয়ে গাড়ি চড়ে বেড়িয়েছেন মুক্তিযুদ্ধস্নাত দেশের মাটিতে। জামায়াতকে কোলে বসিয়ে বাড়-বাড়ন্ত করায় বিএনপি ভূমিকা রাখলেও আওয়ামী লীগ আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবিদার দলগুলো জামায়াতকে পদ্ধতিগতভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি দীর্ঘকাল। বরঞ্চ রাজনৈতিক হিসাব মেলাতে জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানোর কলঙ্কও আছে আওয়ামী লীগের ভাণ্ডারে। এখনওতো সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরে জামায়াত ঢুকে পড়ছে আওয়ামী লীগে। এদেশের সরল সাধারণ মানুষের কাছে যখন ইসলাম ধর্মের রক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে নেমেছিল জামায়াত তখন ধর্মের প্রকৃত রূপ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরে জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত করার যে কর্মসূচি নেওয়া উচিত ছিল, তেমন কোনো কর্মসূচি নিতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো। এই দুর্বলতার পুরোটাই গ্রহণ করে জামায়াত। তাই স্বাধীন দেশের মাটিতে যাদের শক্ত পায়ে দাঁড়ানোর কথা নয়, সেই জামায়াত একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনসহ সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সাফল্য পায়। এখন জামায়াত একটু কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও চলমান রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতা আবার দলটিকে উজ্জীবিত করতে পারে যেকোনো সময়।

আমরা পুরনো কথা কি মনে করতে পারি না? বিএনপি নিজের বুদ্ধিতে হোক বা ধার করা বুদ্ধিতেই হোক, প্রথম থেকে দেশবাসীর সামনে কঠিন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। নির্বাচন নিয়ে বরাবরই ছিনিমিনি খেলেছে দলটি। সেই ১/১১এর পর থেকে তা অনেক দৃশ্যমান হয়। বিএনপি নেতৃত্ব নির্বাচনের পথে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে চায় কিনা এ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ তৈরি হয়েছিল এক সময়। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বার বার সরকারি চেষ্টা আর অনুরোধের পরও ভোটার হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন অনেক দিন। গণতন্ত্রের কথা বলা জনগণের নেত্রী হয়ে তিনি নিজেকে এত আলাদা ভেবেছিলেন কেন? নাকি তাঁকে কোনো পক্ষ থেকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল যে, দল ও জোটের যে অবস্থা নির্বাচনের পথ ধরে মসনদে পৌঁছা যাবে না। তাই একটি জট পাকাতে নেত্রীর ভোটার না হওয়ার ইস্যুটি কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে গুড়ে বালি দিয়ে রেখেছিল। খুব একটা প্রথাসম্মত না হলেও কমিশন বলেছে, নির্বাচনের আগের দিনও ভোটার হওয়া যাবে।

নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জল ঘোলা করার পর সরকারি প্রস্তাবেই সায় দিতে হয়েছিল বিএনপি ও এর জোটবন্ধুদের। তবু ভালো, বিএনপি তার সংকটটি বুঝতে পেরে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে এসেছিল তখন। কিন্তু আবার গুবলেট করে ২০১৪ সালে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ব্যাপক জল ঘোলা করে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খুঁজেছিল। এবার নাসিক নির্বাচনের পর এই প্রশ্ন আবার সামনে চলে আসছে। বিএনপি নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনে সন্দেহ হয়, নিজেদের সামর্থ্যের ব্যাপারে ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ছে কিনা দলটি। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কি না।

আমরা মনে করি গত্বাঁধা অ্যানালগ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপি যদি আরো স্মার্ট ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দল পুনর্গঠন করতে মনোযোগী হয় তবে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। দেশজুড়ে বিএনপির কর্মী সমর্থক কিন্তু অনেক। এই দুঃসময়ে নেতাদের আচরণ ও বক্তব্যে এই কর্মী-সমর্থকরা যদি আরো হতাশ হয়ে পড়ে তবে কিন্তু দলটিকে গর্ত থেকে টেনে তোলা অনেক কঠিন হবে।

সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:



রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষকে বোকা বানায়, আপনি ব্লগারদের বোকা বানানোর বড় দায়িত্ব নিয়েছেন, দেখছি

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: বিএনপি’র আরেকজন বড় মাপের বুদ্ধিজীবীর আত্ম প্রকাশ করেছে। ম্যাডামের গুলশান কার্যালয়ে মিলাদ পড়ানো দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.