নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
একজন অল্পবয়সী ছেলে বা পরিণতবয়স্ক মানুষ কেন মাদক গ্রহণ করে? প্রথমেই হতাশার কথা বলি, হতাশা মানুষকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো উপায় না পেয়ে মাদক সেবন করে একপর্যায়ে। কেউ কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সিগারেট খেতে খেতে একসময় মাদক ধরে ফেলে। ভঙ্গুর পরিবারের সদস্যরা সহজেই মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। বেকারত্ব থেকেও মানুষ জীবন সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। কারণ প্রত্যেক মানুষের কাজ দরকার। শখের বশবর্তী হয়ে খাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, সমাজে আদর্শ ব্যক্তির অভাব, শারীরিক সমস্যা, একাকীত্ব ও মানসিক অশান্তি, দাম্পত্য কলহ, মাদকের সহজলভ্যতা প্রভৃতি কারণে একজন মানুষ মাদকাসক্ত হতে পারে।
মাদকাসক্তরা যে কতটা কষ্টকর ও অমানবিক জীবন-যাপন করে, তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। যাহোক ওরা আমাদের ভাই-বোন, সন্তান, ওদেরকে রক্ষা করতে হবে; ফিরাতে হবে স্বাভাবিক সুন্দর জীবনে। আমরা খুব চেষ্টা করেছিলাম মাদক সরবরাহ বন্ধ করার জন্য এবং কমাতেও পেরেছিলাম। ফলে ফেন্সিডিলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা থাকায় বিকল্প একটি মাদক দেশের ভেতর তৈরি হতে থাকলো। মাদক মূলত দু’ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমত, চাহিদা (ডিমান্ড) কমিয়ে এবং দ্বিতীয়ত, সরবরাহ (সাপ্লাই) কমিয়ে। কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ করে জল, স্থল ও অন্তরীক্ষ দিয়ে। সুতরাং আমাদের চাহিদা (ডিমান্ড) কমানোর উপর জোর দিতে হবে। এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার পর ইন্টারোগেশনে জানা যায় মাদক খুবই লাভজনক এক ব্যবসা। কেউ যদি একবছর এ ব্যবসা করে তাহলে সে কোটিপতি হয়ে যাবে। সুতরাং এহেন লাভজনক ব্যবসা থেকে লোভী ব্যক্তিরা সহজে বের হবে না। সেজন্য আমাদের ডিমান্ড কমাতে হবে।
ডিবিতে থাকাকালীন মাদক উদ্ধারে অনেক অপারেশন করেছি। দেখা গেছে, দেশে মাদক ব্যবসার একটা বিরাট অংশ, বিশেষ করে বেচা-কেনা ও পরিবহন (ক্যারি) করা হয় মহিলা ও শিশুদের দ্বারা। দরিদ্র পরিবারের মহিলা ও শিশুদের এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মাদকের চাহিদা কমানোর পাশাপাশি সমন্বিতভাবে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থাকে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। একসময় কারওয়ান বাজারের রেলগেট বস্তিতে একজন মহিলা ব্যাপকভাবে মাদকের ব্যবসা শুরু করলো। কিন্তু তাকে কোনোভাবে ধরা যাচ্ছিল না। এক কোরিয়ানকে ধরার পর সে ঐ মহিলার নাম বলে। তখন আমি সাব-ইন্সপেক্টরকে নির্দেশ দিলাম ঐ মহিলার নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করতে। পরে ঐ মহিলাকে ধরা হয়েছিল। এভাবে কৌশলে বড় মাদক ব্যবসায়ীর নাম মামলায় আনতে হবে এবং তাদেরকে ধরতে হবে। শুধু মাদকের সরবরাহ কমিয়ে বা মাদক উদ্ধার করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। মাদকাসক্তরা অসুস্থ, তাদেরকে চিকিত্সা করাতে হবে। তাদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে। এদের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। একযোগে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে চিকিত্সা দিতে হবে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে এবং সরবরাহ কমাতে হবে। চিকিত্সা নেয়ার পর সে যখন সমাজে ফেরে, তখন সমাজের লোক তাকে ভালোভাবে নেয় না। কেউ বলে সে মাতাল, আবার কেউ বলে পাগলা। তাকে অসম্মান বা ভর্ত্সনা করা যাবে না, তাকে কাজ দিতে হবে। তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
মূলত সমাজের সকল গোষ্ঠী বা কমিউনিটিকে একত্রে ইতিবাচকভাবে কাজ করতে হবে। এখন কমিউনিটি পুলিশিং শুধু পুলিশের কাজে ব্যবহার করলে হবে না। এটা এখন এক দর্শন। এ দর্শনকে কাজে লাগিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে বিপথগামী এবং মাদকাসক্তদের চিকিত্সা ও পুনর্বাসন করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে হবে। তাহলেই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের কাজ সফল হবে।
সূত্র
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০৪
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আজকের পোষ্ট ভাল লেগেছে। দেশে আরো সমস্যা আছে আশা করি সেগুলো নিয়ে লিখবেন। সীমান্ত সিলগালা করে দিলে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বন্ধ করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ব্যবসার গড ফাদারেরা কোন না কোনভাবে ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। তাদের হাত আগে ভাঙ্গতে হবে না হলে মাদকাসক্তি নির্মূলে কমিউনিটি পুলিশিং কোন কাজে আসবেনা। বরং ক্ষমতাশীলরা গরীব এ পুলিশ ভাইদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কে এ কাজে ব্যবহার করতে পারে।
দেশে এখন মাদক ও জুয়ার মহাউৎসব চলছে, যা হতাশা জনক মাদক ও জুয়া নিয়ে আমার একটি পোষ্ট পড়ন