![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম থেইকা উইঠাই, ঘরের বাইরে সরু গলির মতো একমাত্র উঠানটা পার হইয়া ই রাস্তার পাশের ড্রেইনে প্রসসাব করতে থাকে রাব্বি। শেষ করে প্যান্ট এর চেইনটা আবার ও সেইপটিপিন দিয়ে আটকায়া রাখে।
আটকানো শেষ হইতেই তানিয়ার মা চিল্লায়া উঠে
দেখসনি, বাবুইল্লার পুতে করেকি করেকি... আমার তরকারির লগে খারায়া মুতল!!
তানিয়ার মা, একটা ভাঙ্গা চকির মধ্যে তরকারির দোকান করে এই বাড়ীতে আসার প্রথম থেকেই। দোকানের ঠিক পিছনের ঘরটা তে ই সে থাকে তার ২ মেয়ে নিয়ে, তানিয়া আর সুমি। সুমির বিয়ে দিয়েছে কাওরান বাজারে আরত করে ছেলের কাছে। জামাই নিয়ে তানিয়ার মা বেশ খুশি, সকাল বেলা তরকারি আনতে কাওরান বাজার গেলে জামাই তাঁর জানপরান দিয়া শাশুড়িকে সাহায্য করে। আর তানিয়া পারার স্কুলএ পরে ফাঁকে মা কে সাহায্য করে। তানিয়ার বাপ নাই, আরেকটা বিয়ে করে চলে গেসে। তবে পাশের সেলুন এর দাদা অথবা আশেকে রাসুল ফার্মেসির রোকন কেউ ই দিনে অনতত ২ বার তানিয়ার বাপ খুঁজতে ভুলেনা কখনো।
১২ বছর বয়সী, রাব্বি বিরস মুখে দুলতে দুলতে আবার ও গলিতে ঢুকে পরে। এই সরু গলির ২ পাশে ৫ টা ৫ টা করে মোট ১০ টা ঘর। এই বাড়ির মালিকের আরও ২ টা বাড়ি আছে। একটায় থাকে আর ২ টা ভাড়া খাটায়। গলির একদম শেষ ঘরটায় রাব্বিরা থাকে। ভাড়া সব খরচ সহ ৩০০০ টাকা। ঐ ঘরের ঠিক পরের ঘরটাই রান্না ঘর। শীতের দিনে একটু আরাম লাগলেও গরমের দিনে ভাপ টা অনেক কষ্টের। ফ্যান ছাড়লেও ঘাইমা যায় ঘরের মানুষ। বাড়িওয়ালীরে বইলা রাখছে অনেকদিন আগে কিন্তু কোন ঘরই খালি হয়না তাই পরিবর্তন করাও সম্ভব হয়না।রাব্বি রান্না ঘরের দিকে আগাইতে থাকে আর শুনতে পায়, তাঁর মারে মনুর বোনে বলতেসে,
কিরে রাব্বির মা, তরে না কয়দিন কইলাম, ১০ টার আগে আমারে চুলা খালি কইরা দিবি, আমার জামাইর কি কাজকাম নাই!
জাইতাসিগা, আমর পোলারও স্কুল আছে। লও তুমার চুলার পার।
মুখ ভেনচি দিয়ে রাব্বির মা হাতে ভাতের ডেকচি নিয়ে ঘরের দিকে আগায়। রাব্বি ঘরে ডুকেই বলে,
মা!! ভাত কো?
নবাবের পুত উঠসস, যাহ্... মুখ ধুইয়া আয়। দাঁত টা তর কোন বাপে মাইজা দিব??
মার খেঁকানি শুনে রাব্বি আবারও বের হয়ে, কল পারের দিকে রওনা দেয়।কলপার থেকে দাঁতের মাজন নিয়া তানিয়ার মার তরকারির চকির পাশে দাঁড়াইয়া দাঁত মাজতে থাকে। হঠাৎ দেখে, সামনের ২ তলা বাড়ির নিচে একটা লাল রঙের মোটরবাইক দাড় করানো। ঐ বাড়ির মামায় চালায় এইটা। মামায় অনেক দিন আগে রাব্বির একটা ছবি তুলছিল, কোন দিনও সে ঐটা রাব্বিরে ফিরায়া দেয়নাই। রাব্বি অনেকদিন বলসে কিন্তু বার বার বলে দিব কিন্তু দেয়না ছবিটা। মামার বাইকটা রাব্বির অনেক পছন্দ। যেইদিন মামা এইটা প্রথম কিন্না আনল সেই দিনই রাব্বি তার বাপেরে কইসে এইরকম একটা মোটরবাইক তারে কিনা দিতেই হবে। বাবায় রাব্বিরে কিনা দিতে রাজি হইসে। কইসে টাকা জমাইয়া কিন্না দিব।
রাব্বি দাঁত মাজা শেষ কইরা কল পারে যায় মুখ ধুইতে। কলপার থেকে সে ঘরে যায়, স্কুল এর শার্টটা পইরা জলদি সে খাইতে বসে। খুব জলদি খাওয়া শেষ কইরা সে দওরাইয়া বাইর হয় গলি থেকে। মা পিছন থেকে চিল্লায়,
কিরে... পানি খায়া গেলিনা?
রাব্বি এক দউরে লাল মোটরবাইকের পাশে আইসা দারায়। দেখে মামা, মোটরবাইকে চরে বসেছে। হেলমেট পরে, বাটন লাগায়। রাব্বি মামার হাঁটুর সামনে গিয়া দাঁড়াইয়া এক হাত দিয়া মামার হাঁটু ঝাকায় আর বলে,
মামা, তুমি কি স্কুল এর হোনদা যাইবা? ঐ মামা, তুমি কি হোনদা যাইবা, কওনা?
আর কিছু বলার আগে ই, মামা রাব্বির হাত টা তার নিজের হাঁটু থেকে সরাইয়া দেয়, আর বলে, নাহ!
তারপর, মামা মোটরবাইক টা চালিয়ে চইলা যায়।
©somewhere in net ltd.