![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাদলের বাপের ঝিমুনি আসে। সারাদিন ঘুম হয়নাই। না ঘুমায়া সারারাত গ্যারেজ পাহারা দেওয়া কঠিন। তবুও সে চেষ্টা করে চোখ খুলে বসে থাকতে। ছোট্ট একটা গ্যারেজ, মাত্র ২ টা গাড়ি আর কয়েকটা মোটরবাইক রাখে। বাড়ির লোকজন সব বিদেশি, ছোট পোলাটা থাকে খালি। কয়দিন আগে চোরে লয়া গেসে একটা মোটরবাইক তাই তারে রাখা হইসে পাহারায়।
যোগালির কাজ করতো বাদলের বাপ। দাড়ি চুল পাকার পর জুরাইন রেইলগেইটে বইসাও এখন আর কাম পাওয়া যায়না। মানুষ আইসা তাগড়া জোয়ান পোলাপান খুঁজে খালি।
গেইটের চিপা থেইকা হঠাৎ কুকুরটা কেও কেও করে উঠল। আসতে আসতে চিপা থেইকা বের হইয়া আইসা বাদলের বাপের পায়ের কাছে এসে দাড়ায় আর লেজ নাড়তে থাকে। বাদলের পায়ে গা টা লাগতেই চেঁচিয়ে উঠে লাথি দেয়।
সর চুতমারানি...
কুকুরটা লেজ গুটাইয়া কু কু করতে করতে রাস্তায় গিয়া দাড়ায়।
কইথেইকা যেন এই কুকুরটা হাজির হইসে, কয়েকদিন হইল থাকে এইখানেই। একদম মাদি কুকুরের মত ডরাইল্লা। গেইটের ভীতরে থাইকে চিল্লায় থিকই কিন্তু কেও কিছু বাইরে থেইকা কইলেই কু... কু... কইরা লেজ গুটাইয়া পালায়। চিকায়ও রাইতে অরে জালায়। বাড়ির সামনের সেলুন আর মুদি দোকানি অরে ডাকে আবছার কইয়া। সারাদিন কই কই ঘুরে, আর রাইত হইলেই বাড়ির গেইটের চিপায় আইসা ঘুমায়।
বাদলের মায় বাড়িওালিনি, ভাড়া তুলে আর খায়। তাই বাদলের বাপে নিশ্চিত। তেমন টেঁকা টুকা দেয়া লাগেনা। বেশী দরকার হইলে বউ এর কাছে উলটা পায়।
কোমরের লুঙ্গির ভাঁজ থেইকা পোটলা বাইর করে বাদলের বাপ। ২ ভাগের এক ভাগ হাতের তালুতে রাখে আর বাকিটা পরের বারের জন্নে আব্ারও গুঁজিয়ে রাখে আগের জায়গায়। দিন কে দিন কামাইল্লার স্পটের পোটলার সাইজ ছোট হইতাসে। হাতের তালুর গসাঘসি শেষ করে সিগারেটের তামাকটা বের করে ভালো করে মিলয়ে নেয়। মেলানো তামাক পুরে দিয়ে আগুন দেয় তাতে।
প্রথম সুখ টানটা দেয় বেশ লম্বা, ঢোক গিলে আটকে রাখে বেশ কিছু সময়। তারপর ছারতে থাকে থুতনিটা উপরের দিকে করে। গান ধরে...
পেয়ার হুয়া একরার হুয়া হে...
পেয়ার সে ফির কিউ ডারতাহে দিল।
তামাকে আরও বেশ কিছু বার টান পরে। ২ বার বলে থেমে যায়, আবার
একটু চিকন গলায় শুরু করে।
কেহতাহে দিল রাস্তা মুশকিল...
মালুম নেহিহে কাহা মাঞ্জিল...
হুমমম হু...হু...হুমমম... হু... হু... হু...
তামাক প্রায় শেষ এর দিকে, তার গুন গুন করে গান চলতে থাকে। হটাৎ শুনতে পায়, দূর থেকে টক টক করে শব্দ আসছে। বাড়ির সামনে কেউ কোথাও নাই। বাতিগাছ টার লাইট জলে আর নিভে। এই গলির ডান দিকের শেষ পযন্ত বাকি ২ টা লাইট জ্বলে আছে দিব্যি আর ঠিক অপর দিকের গল্লির মাথা পর্যন্ত ২ টা লাইটই নষ্ট, একদম ঘুট ঘুটে অন্ধকার।
বাদলের বাপ দেখে একটা সাদা ঘোড়া দাঁড়াইয়া আছে, পিঠে সাদা আলখাল্লায় একটা মানুষ, মুখে সাদা দাড়ি। সোয়ারি সহ ঘোড়া টক টক করে তার দিকে এগিয়ে আসছে। বাদলের বাপ ভয় পায়, চিৎকার করে...
ঐ কেডারে, কেডা হোনে?
ঘোড়াটা রাস্তার মাথা থেকে মাঝখানে আসে। বাদলের বাপের চোখে সোয়ারির মুখটা স্পষ্ট হয়ে উথে। সে তার শ্বশুরকে চিনতে পারে, সেই চেহারা আর তাঁর সেই ঘোড়াটা। এতদিন পরও একদম বদলায় নাই।
মাঝামাঝি আসার পর শ্বশুরের ঘোড়াটা ছুটতে শুরু করে। ছুটতে ছুটতে ঠিক বাদলের বাদলের বাপের সামনে দিয়ে অপরদিকের অন্ধকারে ঢুকে পরে, মিলিয়ে যেতে থাকে টক-বগ টক-বগ আওয়াজটা।
সামনে দিয়া যাওয়ার সময়, বাদলের বাপের বুকটা কাপতেছিল, হাতের তামাক মাটিতে। সে একটা শব্দ ও উচ্চারণ করতে পারে নাই। শব্দটা মিলিয়ে যাওয়ার পর চিৎকার করে উঠে,
আব্বা!! ও আব্বা!! কই যান ???
আমরে কিছু কয়ার চান ...?
শ্বশুর তারে অনেক আদর করতো। মনে পরে, বাদলের জন্মের ঠিক ৩ মাস পর সে ইন্তেকাল করে, একদিনের কালা জরে। বাড়ির সকলের চোখের পানি শেষ হয়া গেসে কিন্তু তাঁর প্রিয় ঘোড়াটা রাত দিন শুইয়া বইসা চোখের পানি ফালাইত তাঁর কব্বরে। ঠিক ৭ দিনের মাথায় ঘোরাটাও মইরা গেলো।
বাদলের বাপ আবারও শুনতে পায় ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ। অন্ধকারে তাকায়, শব্দটা স্পষ্ট হতে থাকে আর বাদলের বাপের মাথা টা দপ দপ করতে থাকে। কেন আইল সে, এদ্দিন পর? সে কি কিছু কইবার চায়? ভাবতে থাকে...
ঠিক সামনে এসে ঘোড়াটা দাড়ায়। বাদলের বাপ হাত জোর করে, কাপতে থাকে। ২ পা তুলে ঘোড়াটা চিইইইইই হিইইইইইই ডেকে উঠে। চোখ বুঝে থাকে বাদলের বাপ, খোলার সাহস হয়না। এই বুঝি তাঁর জানটা কবজ হয়া গেলো।
ঘোড়াটা পা নামাইয়া, দওরাইতে শুরু করে গলির আলোকিত মাথাটার দিকে। ঠিক ঐ জায়গায় গিয়া থামে যেখানে প্রথম দেইখা চিনতে পারসিল তাঁরে বাদলের বাপ। বাদলের বাপ আস্তে আস্তে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে। দেখে তাঁর শ্বশুর যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে মিলিয়ে গেলো।
©somewhere in net ltd.