নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তামীম কিশোর

তামীম কিশোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোটরবাইক ৫

১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:০৭



বাবা, ড্রিংস টা খুলে দাও না প্লীজ... বাবা বাবা,ও বাবা...

জাহিন কেক টা বাক্স থেকে খুলে টেবিল এ রাখতে না রাখতেই তাঁর ছেলে ইন্তি অস্থির হয়ে পরে। এই ছেলে একবার অস্থির হইলে আর কোনোভাবেই তাকে থামানো যায়না। সে যা চাবে তাকে সেটা দিতেই হয়। জাহিন, কেকটা রেখে তবেই তাকে ছোট একটা পানিয় বোতলের মুখ খুলে দিল।

সারা বাড়িরতে অতিথিতে থই থই করতেসে। প্রথম সন্তান ইন্তি, জাহিন আর তিন্নির। তিন্নি প্রথমে বলল কিছুই করবেনা তাঁর ৪র্থ জন্মদিনে। শুধু একটা কেক আর বাসার মানুষএর জন্নে কিছু রান্না বান্না। কিন্তু সন্ধ্যায় জাহিন যখন একটা বড় কেক নিয়ে বাড়ি ফিরল তখনই সুত্রপাত হতে থাকল পরবর্তী ঘটনা গুলোর। তিন্নি, বড় কেক দেখে বলে এ বসলো,

এতো বড় কেক, নষ্ট হবে তো!!!
আচ্ছা, এক কাজ করো, শুধু ছোট আপা কে বলো আসতে, বলো না প্লীজ, তাঁর পিচ্চিদের নিয়ে চলে আসতে।

জাহিন, কিছু না ভেবেই ফোন করে বসলো ছোট আপার বাসায়। তড়িঘড়ি করে বলে বসলো সব। ঐ পাশ থেকে ছোট আপার বাসায় থাকা মেঝ আপা আর দুলাভাই শুনলেন। ব্যাস, হয়ে গেলো এক এ সাথে ২ পরিবারের দাওয়াত।

এরপর জাহিন এর মনে খুত খুত শুরু হোল। বড় আপা আর পাশের বাড়ির ছোট মামাকে না বললে ব্যাপারটা আর স্বাভাবিক থাকেনা। অগত্যা একরকম সবাইকেই বলতে হোল। তারা আসার আগেই বাইরে থেকে কিছু খাবার নিয়ে এল জাহিন। এতে করে তিন্নি বেজায় খুশি হয়ে, আঁচল বেঁধে রান্নার কাজে নেমে গেলো।

চারিদিকে কিলবিল করা পিচ্চিগুলোর চিৎকার চেঁচামেচিতে মাথাটা গরম হয়ে যাবার যোগাড়। তবে জাহিনের নজর তাঁর বইের সেলফ এ। কখন যে হামলা করে বসে কে জানে।
কেক টেবিলে রাখার পর চারিদিক থেকে বাচ্চারা টেবিল ঘিরে ফেলল। যেন কোন এক হেমিলনের বাশিওয়ালা বাঁশি বাজাচ্ছে আর চারিদিক থেকে ইঁদুরের দল তাকে ঘিরে আছে। জাহিন বাচ্চাদের দলে ইন্তিকে খুঁজে পেলনা। চোখ পরল তাঁর ঘরের কোনে কারপেটএ রাখা উপহারের বাক্স গুলোর দিকে। ইন্তি একটা প্যাকেট নিয়ে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে ভিতরটা দেখে ফেলার জন্নে। তার যে অস্থিরটা, জাহিন ভালো করেই জানে, তাকে থামানো মুস্কিলের। সুতরাং জাহিন ইন্তির কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো। ইন্তির হাতে থাকা বাক্সটা খুলে বের করে দিল ছোট্ট একটা মোটরবাইক। ইন্তি বেজায় খুশি, হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগলো হাতল উচু করা ছোট্ট একটা খেলনার ক্যাফে রেসার মোটরবাইক।

ইঞ্জিন আর ইঞ্জিন থেকে বের হওয়া পইপটা শুধু ষ্টীলের মতো ঝক ঝক করতেসে, ঠিক জুলির সেই মোটরবাইকটার মতো। জাহিন ১০০ ইউরো খরচ করে একটা হেলমেট কিনেছিল শুধু জুলির বাইকের পিছনে বসার জন্নে। জুলি মোটরবাইকটা ফ্রান্স থেকে তার কাভারভ্যান এ করে নিয়ে এসেছিল ডাবলিন শহরে। জাহিনের সাথে পরিচয় কলেজে। সাহিত্য পরা শেষে ভিসুয়াল মিডিয়াতে পড়তে ডাবলিন শহরে আসে জুলি।নিচের ক্লাসে পরলেও জাহিনের সাথে সখ্যতা হয় কাজের পরিচয়ে। দিনের পর দিন জাহিন আর জুলি ঘুরেছে ডাবলিন এর পথে পথে। জাহিনের অনভিজ্ঞ হাতে রাঁধা বিফ কারি হয়ে উঠেছিল জুলির অন্যতম প্রিয় খাবারের মাঝে একটি। ড্যাম স্ট্রিটের বার গুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা শেষে ভোরের দিকে জুলির কাউচে শুয়ে পরেছে। ডাবলিন ছাড়ার আগের দিনের ফেয়ারওয়েল পার্টিতে জাহিন মনে প্রানে চেয়েছিল জুলি কিছু একটা বলুক।

জাহিনের এখনো জানতে ইচ্ছে করে, চিলেকোঠার ফ্লাটের জানালায় বসে জুলিকি এখনো শীতের পাতা ঝরা দেখতে পায়? এখনো কি কলেজের গেইটে সময়ে অসময়ে কেও এসে দারিয়ে থাকে তাকে একটিবার দেখার আশায়। কোন এক জন্মদিনের সারাটাদিন অপেক্ষা করে কেউ একজন তাকে অভিনন্দন জানাবে বলে। জাহিনের জানতে ইচ্ছে করে, জুলির নিত্য নতুন সাহিত্য কর্ম
পরার জন্নে এখনো কি কেও উতলা হয়?

এই... তুমি আমাদের কিছু ছবি তুলে দিবা প্লীজ!

তিন্নি ইন্তিকে নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্নে, কেক কাটার ছবি তুলতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.