নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্ষণিকের অতিথি

তাহ্িনয়া

সহজ সরল চিন্তা পছন্দ করি এবং সেভাবেই চলার চেষ্টা করি

তাহ্িনয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহংকার

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:১৯

একদিন এক পরিচিত মানুষ আমাকে বললো, “তুমি আগে খুব অহংকারী ছিলে, কিন্তু এখন না।” কথাটা শুনে বুকের ভিতর একটা ধাক্কা খেলাম। চোখে পানি চলে আসছিলো।বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। সারাক্ষন মনে হচ্ছিল আমি কিভাবে অহংকারী হলাম? আমিতো অনেক সাবধানে চলার চেষ্টা করি।নিজের অজান্তেই হোক অথবা ইচ্ছে করেই হোক মানুষটা আমার উপকার করলেন।প্রথমত তিনি বলেছিলেন যে, আগে অহংকারী ছিলাম এবং দ্বিতীয়ত এখন আমি অহংকারী না (দ্বিতীয় পর্যায়টি আমার জন্য একটি বড় পাওয়া।তবে তাই বলে আমি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে যাইনি)।



আমি বিনীতভাবে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম এবং যার কারনে তিনি আমাকে অহংকারী বলেছিলেন তার কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিলাম। যদিও আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না, কি ভুল করেছিলাম। কারন মানুষটি স্পষ্ট করে কিছুই বলতে চাননি। তারপরেও আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম এই কারনে যে, আমিতো ফেরেশতা না, ভুল হতেই পারে আমার। আমার একটা অভ্যাস হচ্ছে যে, কোনো ব্যাপার যদি আমার মাথায় ঢুকে যায় তাহলে সেটা নিয়ে একটু পড়াশুনা করা।আমার মাথায় ঢুকলো যে, একজন মানুষ যদি আমাকে ভুল বুঝতে পারে তাহলে অনেকেই ভুল বুঝতে পারে অথবা আসলেই যদি অহংকারী হই তাহলে তো আমার অবস্থা খুবই খারাপ।যদি ভুল করি বা করে থাকি তাহলে কয়জনের কাছে ক্ষমা চাবো, তার থেকে নিজেকে শুধরানো উত্তম।



‘অহংকার’ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম। তাই বিভিন্ন বই-পত্র, ইন্টারনেট ঘেটে জানার চেষ্টা শুরু করলাম যে, আসলেই কি আমি অহংকারী ? অর্থাৎ কি কি কাজ করলে বা লক্ষন থাকলে অহংকারী হয়? আর যদি কেউ অহংকারী হয়, তা থেকে পরিত্রানের উপায় কি? আমার এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়নি। যা কিছু পেয়েছি সেগুলো সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।আমি কখনোই চাই না আল্লাহ আমার এবং আমার আশেপাশের মানুষের উপর রাগ করে থাকুক। আমি মনে করি, নিজেকে শুধরানোর সাথে সাথে অন্যকেও শুধরানোর জন্য সহযোগিতা করা দরকার। যাই হোক, আমার নিজের এবং অন্যের সুবিধার জন্য ঠিক পরীক্ষার খাতার মত করে পয়েন্ট আকারে লেখার চেষ্টা করলাম।



যতই পড়ছিলাম ততই শংকিত বোধ করছিলাম নিজের জন্য, সবার জন্য।অহংকার হচ্ছে শয়তানের চরিত্রের একটা অংশ। অহংকার শয়তানকে এমন একটা স্তরে পৌছিয়েছিলো যে, অহংকারবশত সে আল্লাহর নির্দেশ পালন করেনি। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আদম(আঃ)কে সেজদা না করার জন্য চিরতরে অভিশপ্ত হয়ে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। কোরআন-হাদিস পড়ে জানতে পারলাম যে, অহংকার একমাত্র আল্লাহতায়ালাই করতে পারেন। অহংকার আল্লাহর চাদর। আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাটানি করা ঠিক না।অহংকারী ব্যক্তি নাকি কখনোই জান্নাতে যেতে পারবে না, যদিও তার মনে সরিষা পরিমান অহংকার থাকে এবং তাদের অন্তরে নাকি আলাহতায়ালা মোহর মেরে দেন। (এখানে এত বিস্তারিত কোরআন হাদীস উল্লেখ করলাম না। যদি কেউ রেফারেন্স চায় তাহলে অবশ্যই তা পরে উল্লেখ করবো ইনশাল্লাহ)



অহংকার কি?

অহংকার একটি অতি জঘন্য স্বভাব। এটা আত্মার মারাত্মক মরনব্যাধি। মানুষ নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলে মনে করলে মনের মধ্যে একধরনের আনন্দের হাওয়া বয়ে যায়। এই হাওয়ার কারনে মন ফুলে ফেপে উঠে। এটাই অহংকার।



অহংকারের লক্ষণঃ



• নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং অপরকে ক্ষুদ্র বলে বিবেচনা করা।

• নিজের জন্য যা পছন্দ করে, কিন্তু অপরজনের জন্য তা পছন্দ করে না।

• অন্যের সাথে নম্র ব্যবহার করতে পারে না।

• অন্যের নিন্দা ও কুৎসা রটনা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারে না।

• কোন লোক তাকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানে সম্মান না করলে তার বিরুদ্ধে নিজের মনে কিছু না কিছু ভাবা।

• নিজের কাজ কে অন্যের কাছে বড় করে দেখানোর জন্য মিথ্যা ছলনা ও প্রতারণা করা।

• হক কথা মেনে নিতে পারে না। সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করা।

• ধর্মীয় বিধান সমূহ নির্বিবাদে মেনে নিতে পারে না। বরং তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে প্রবৃত্ত হয়।

• অহংকারী লোক নিজের সামনে অপরকে দাঁড় করিয়ে রাখতে ভালবাসে। সে ইচ্ছা করে যে, কনো স্থানে সে উপস্থিত হওয়া মাত্র সেখানকার লোকজন দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুক।

• অহংকারী লোক কারো সাথে সাক্ষাত করতে যায় না। যদিও বা যায় তা শুধু নিজ প্রয়োজনে।

• কনো দরিদ্র লোক অহংকারী লোকের কাছে দাঁড়ালে বা বসলে সে পছন্দ করে না।

• অহংকারী ব্যক্তি নিজের হাতে গার্হস্থ্য কাজ-কর্ম করে না। অপর লোককে খাটিয়ে তা সমাধা করে নেয়।

• অহংকারী ব্যক্তি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার হতে হাতে করে বাসায় নিয়ে আসতে পারে না।

• অহংকারী লোক মনোরম বেশ-ভুষা পরিধান না করে বাজারে বা সভা-সমিতিতে যেতে চায় না। তবে এটা মনে করা যাবে না যে, একটু ভালো পোষাক পরলেই অহংকারী হবে। কারণ অনেক মানুষ স্বভাববশত ভালো পোষাক পরে। স্বভাবগত হলে তা চেনার উপায় হলো ঘরে বাইরে সে সবসময় ভালো পোষাক পরবে।

• ইগো নিয়ে চলাফেরা করা।

• জেনে বুঝে ভুল কাজ করা।

• নিজেকে অগাধ জ্ঞানী মনে করা এবং অন্যকে গাধা মনে করা।

• অন্যের কাছ থেকে আশা অনুযায়ী খাতির বা সম্মান না পেলে অবাক হওয়া।

• আমলে এবাদতে আল্লাহর কাছে নিজেকে সাধারন লোক অপেক্ষা উৎকৃষ্ট বলে মনে করা।

• নিজের ভালো কাজের জন্য পারলৌকিক পরিত্রানের দৃঢ় আশা পোষন করা।আর সাধারন লোকের পরিত্রান লাভ সম্বন্ধে আশংকা ও সন্দেহ প্রকাশ করা।

• কৌলিন্য ও বংশ মর্যাদায় নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা।

• সৌন্দর্যে ও অংগ সৌষ্ঠবে নিজেকে বড় মনে করা।

• ধনে জনে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা।

• দৈহিক বলে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা।

• প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা।

• আল্লাহর পথে ব্যয় করে না এবং অন্যকেও ব্যয় না করার জন্য অনুপ্রেরনা যোগায়। অবশ্য তারা ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য।

• এবাদত করে লোক দেখানোর জন্য।

• অন্যের কাছে ভালো হওয়ার জন্য সমস্ত ভালো কাজ করে থাকে

• অন্যের প্রশংসা করতে কষ্ট হয়।

• অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না। মনে অনেক হিংসা আর ঈর্ষা থাকে।

• শুধু নিজের ভালোর কথাই চিন্তা করে অর্থাৎ স্বার্থপর।





কি মনে হচ্ছে এখন ? নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছেন? উপরের লক্ষনগুলোর মধ্যে যদি একটি লক্ষন মিলে যায় তাহলে আমরা অহংকারীর কাতারে থাকবো। এই মরনব্যাধি যদি আমাদের অন্তরে বাসা বাধে তাহলে তো সৌভাগ্য লাভের পথ বন্ধ হয়ে যাবে, বেহেশ্তের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। একটু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি। সঠিক ভাবে চলছিতো?



ইনশাল্লাহ পরবর্তী পর্বে আমরা কিভাবে অহংকার থেকে মুক্ত থাকতে পারি তা আলোচনা করবো।







মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:২৫

মাহমূদ হাসান বলেছেন: অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ............. প্রিয়তে রাখলাম।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৩১

তাহ্িনয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে...কষ্ট করে পড়েছেন।প্রিয়তে রেখেছেন জেনে খুশি হলাম। আমি চাই আমার লেখা পড়ে সবাই একটু হলেও উপকৃত হোক

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:২৭

িনর্বাক বলেছেন: দারুন পোস্ট........+++++++++++++++++++++++

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৩২

তাহ্িনয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ঃ)

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৩৪

নুবিয়া বলেছেন: আপনার ইমেইল আইডিটি দেয়া যাবে?


[email protected]

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪

তাহ্িনয়া বলেছেন: ব্লগেই তো ভাল কথা বলা যায়।

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৫১

সবুজ পাতার ছেলে বলেছেন: eta sobar pora uchit.....amar dharona,ei attmik rog ta somporke amra keu-e socheton noi & mukto o noi..,..khubi vhalo 1ta post.....Dhonnobad.

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৩৫

তাহ্িনয়া বলেছেন: কষ্ট করে পড়েছেন। ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪৩

Observer বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল, ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১২

তাহ্িনয়া বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৮| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.