![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরী দর্শন
পিটার দুপুর রাতে ফোন করে জানতে চাইল, দোস্ত কেমন আছিস? এতরাতে ফোন করায় আমি একটু বিরক্ত হয়েছি। তাই মোটামুটি ঘুমের ঘোরে বললাম, ভালইতো ছিলাম কিন্তু আপনি যেভাবে আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গিয়েছেন তাতে আর ভাল থাকি কি করে? ও প্রান্তু থেকে বলল, ওই শালা চিনতে পারস নাই! আমি পিটার। ওর নাম্বারটা ছিল না, তাই চিনতে পারিনি। সে তাড়াহুড়ো করে বলল, শোন আগামীকাল রাতে ওমুক চ্যানেলে আমার নাটক আছে দেখিস। আমি হেসে বললাম, চোখের পলক কি ফেলা যাবে? নাকি নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে হবে! সে জোর দিয়ে জানতে চাইল, কেন? আমি আবার হেসে বললাম, না মানে আমিতো জানিনা, নাটকে তোর সিকোয়েন্স কতটুকু!
সেই আমাদের পিটার। পাজি পিটার! বাসায় তাকে অভিনয়ে বাধা দেয়ার জন্য বা এরকম কোন কারনে সে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল! তারপর কত হুলস্থুল। তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদোড়ি, পেপারে বিজ্ঞাপন! সপ্তাহখানেক পর যখন ফিরেছিল তখন ওর বাবা বলেছিল, 'আমি তোমার সাথেও নাই পাছেও নাই, তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো!' পিটার ভীষণ খুশি হয়ে আমাদের পরীর দেশের মিষ্টি খাইয়েছিল। আমি বলেছিলাম, 'লেগে থাক একদিন ষ্টার হতে পারবি। তখন যেন আমাদের আবার ভুলে না যাস!'
পিটার আমাদের গ্রামের ছেলে। আমি যখন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন স্কুল খোলারও আগে গিয়ে বসে থাকতাম। তখন দেখতাম একটা ভ্যান এসে পিটারসহ কয়েকজনকে স্কুলে নিয়ে যেত। তাদের পরনে থাকত পুলিশ রঙের ফুলপ্যান্ট, সাদা সার্ট আর পায়ে কাপড়ের সাদা জুতা। জুতাগুলোকে তারা ধুয়ে পরিস্কার করত এবং চক ঘসে রোদে শুকাতে দিত। আমারও মাঝে মাঝে ওরকম বাবু হয়ে স্কুলে যেতে শখ হত। সে পিটার তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার সাথে ভর্তি হল। আমাদের সাথে নীহারিকা নামে এক মেয়ে পড়ত। একদিন বেঞ্চে লিখলাম পিটার প্লাস নীহারিকা! সে কারনেই কিনা মনে নাই তবে আব্বা সেদিন প্রচন্ড মেরেছিলেন। এক পর্যায়ে পড়ে গিয়েছিলাম। আব্বা তখন পা দিয়ে মারছিলেন! আমার চারদিকে লোকজন গোল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিকেলবেলা খেলাঘরের আসরে পিটার হারমনিয়াম বাজিয়ে গান শিখত। তবলা বাজানো শিখত। বিভিন্ন জায়গায় নাটক হলে তার ডাক পড়তো এবং অভিনয় করত। অভিনয় করার কারনে পিটারের মধ্যে মানুষকে আকর্ষন করার মতা ছিল। আমিও আকৃষ্ট হতাম। পরে কয়েকদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে তার সাথে হারমনিয়াম শেখার চেষ্টা করেছিলাম! পিটার সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারত।
একদিন বলল, 'তার সাথে এক পরীর কথা হয়েছে! আমি চাইলে সে আমার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।'
আমি উত্তেজিত হয়ে এক সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম। জানতে চাইলাম, কিভাবে কোথায় দেখা হল, কি বলল এই সব।
>>>
সে জানাল, 'দুপুরবেলায় সে একা শুয়ে ছিল। একটু তন্দ্রাভাব এসেছে এমন সময় পরীটি এসে তাকে বলল গতকাল তুমি যে নাটকে অভিনয় করেছ সেটা আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমাকেও খুব ভাল লেগেছে। তুমি যদি চাও তবে তোমাকে আমাদের দেশে নিয়ে যেতে পারি।'
আমি জানতে চাইলাম, তো তুই গিয়েছিলি তাদের দেশে?
পিটার জানাল সে গিয়েছিল। খুব আদর আপ্যায়ন করেছে। মিষ্টি খেতে দিয়েছিল। জানিসতো পরীদের দেশে মিষ্টি খুব বড় হয়। তারপর পেছনদিকে দুহাত ঘুরিয়ে বলল, এতো বড় মিষ্টি! আমি খেয়ে শেষ করতে পারছিলাম না।
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, তোর পরীদের দেশ কোথায়?
পিটার বলল, ঐ যে সিনেমা হলের পেছনে যেখানে নৌকা বাইচ খেলা হয় সেখানের পেছনে থাকে। জানিস ঐ পরী আমাকে অনেক সোনাদানা দিতে চেয়েছে। সেগুলো বিক্রি করে আমি বড়লোক হতে পারবো!
আমি আর পিটার দুই পিচ্চি মিলে স্বর্ণের দোকানে ঘুরে ঘুরে স্বর্ণের ভরি কত করে চলছে খোঁজ নিলাম! পিটার আমার কাছে জানতে চাইল, আমি পরীর সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক কিনা। আমি রাজি হলাম। সে শর্ত দিল তার ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে হবে। তাহলে কিছুনের মধ্যে পরীর দেখা পাওয়া যাবে। আমি খুব ভীতু প্রকৃতির ছিলাম। দিনের বেলাতেও একা ঘরে থাকতে পারতাম না। ফলে পরীর সাথে দেখা করার মিশন বাদ দিতে হল।
কয়েক দিন পর পিটার জানাল, পরী তাকে স্বর্ন দিতে চেয়েছে এবং আজ দুপুর বেলায় টাকা দিবে। সে টাকা দিয়ে সে হলে সিনেমা দেখতে যাবে। আমি তার সাথে যেতে চাইলাম। পরী পিটারকে দুপুর দুটার সময় গোয়ালঘরে অপো করতে বলেছে। টিফিনের সময় আমি স্কুল থেকে পালিয়ে এলাম। দুজন গোয়ালঘরে অপো করছি। আমার ভয় ভয় করছে। সে অভয় দিয়ে বলল, পরী এখনো আসেনি! পরী আসলে তার ডান হাতে চিনচিনে ব্যাথা হবে তখন সে বুঝতে পারবে! আমি ছবি দেখার চিন্তায় বিভোর। পিটারের কাছে জানতে চাইলাম, 'এই হলে ছবি দেখার জন্য কোনদিকে তাকাতে হয় রে!' সে বলল, 'ভয়ের কিছু নাই হলে গেলেই বুঝতে পারবি।' তিনটা বেজে গেল এখনো পরী আসছে না। হলে শো আরম্ভ হয়ে যাবে। আমি কখনো হলে ছবি দেখিনি। দেরীর জন্য বার বার আফসোস হচ্ছে। চারটা বাজল, পাঁচটা বাজল তবু পরী আসলো না। আমাদের ছবি দেখা হল না। আমি বাড়ি ফিরে গেলাম।
স্কুল থেকে পালানোর জন্য সন্ধ্যায় আব্বা লাঠি দিয়ে পেটালেন।
২| ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:৫৭
হৃদছায়া বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে
প্রথমে ভেবেছিলাম গল্প পড়ছি, এখন মনে হচ্ছে ছোটবেলার কথা পড়ছি, আসলে আগের পর্বগুলো পড়িনি তো তাই ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে ! সোনা, টাকা, সিনেমা হল- সবই গেল !
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:০৮
আকাশচুরি বলেছেন: আর গল্প কই?? তাড়াতাড়ি করেন মিয়া!! +
৪| ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩২
হৃদছায়া বলেছেন: ওহ একটু ভুল হয়ে গেল !! দ্বিতীয় পর্ব ভেবেছিলাম, যাইহোক, মজার লেখা, গোয়ালঘরে পরী !
৫| ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩৮
সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: হায়রে ছোটবেলা!! যন্ত্রজীবনে সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সবকিছু ছেড়ে অজানায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। হৃদছায়া মনের কষ্টটা আরও বাড়িয়ে দিলেন।
ধন্যবাদ বস .....
৬| ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৪২
সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: আকাশচুরি মনটা ভীষন খারাপ। পরশু ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। সপ্তাহ খানেক পরে ফিরেই পোষ্ট দিব।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:৩১
সালিশদার বলেছেন: পরী নিয়া লেকনের জন্য মাইনাস