নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি যে কে্‌্‌্‌্‌্‌্‌

বোকা পাখি

আমি যে কে....

বোকা পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

=======না-মানুষ =======

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:২৯

(এই ব্লগে আমার প্রথম ছোট গল্প )


এমন টিপটিপ বৃষ্টির মাঝে ঘর থেকে বের হওয়া মোটামোটি সাইজের পাপ।
কিন্তু কিছু করার নেই, বের হতেই হবে।
আজ টাকাটা না আনলে রাতে খাওয়া হবে না। আর এই পত্রিকা অফিসে টাকাটা অনেক দিন আটকে আছে।
এডিটর কে এর আগে বেশ কিছুদিন তাগাদা ও দেয়া হয়েছিল। আজ নিজ থেকেই বাড়িওয়ালার ল্যান্ডফোনে কল করে যেতে বললেন।
সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমেই বুঝলাম ছাতা টা নেওয়া হয়নি আর ঘরে তালা ও দেয়া হয়নি মনে হয়।
আমার ভাঙা চিলেকোঠা থেকে চুরি যাওয়ার মতো কিছু না থাকলেও ছাতার জন্য হলেও উপরে যাওয়া দরকার। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আবার উপরে উঠবো কিনা ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেলো, দৌড়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে ঢুকলাম।
ভাবলাম এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টিটা ধরে এলেই ছাতাটা নিতে উপরে উঠবো।
পরপর দু কাপ চা খাওয়ার পর ও বৃষ্টি কমে আসার কোন লক্ষণ নেই।
বরং বেড়েই যাচ্ছে।
চায়ের দোকানে ও তেমন লোকজন নেই।
কোনার দিকে যেখানে বৃষ্টির ছাট পৌঁছাচ্ছে না সেদিকে সরে যেতেই লক্ষ্য করলাম আধো অন্ধকারে সিগারেটের আগুন উঠানামা করছে।
দেখেই নিকোটিনের তৃষ্ণা টা চেপে বসলো।
পকেটে হাত বুলিয়ে নেতনেতে ২০ টাকার নোটের অস্তিত্ব টা নিশ্চিত করে নিলাম।
মনে মনে হিসেব করছি একটা গোল্ডলিফ কেনার পর বাস ভাড়া হবে কিনা।
মনে পড়লো দু কাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে, সিগারেট কিনলে পত্রিকা অফিসে যাওয়া হবে না। এইদিকে বৃষ্টি ও কমবার নামগন্ধ নেই। বেঞ্চের কাছাকাছি সরে বসলাম। সেকেন্ড হ্যান্ড ধোঁয়াতে যদি নেশা কিছুটা কমে।
লোকটা মনে হয় আমার উশখুশ ভাব দেখে বেপারটা আচ করতে পারলো। অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা হাত বেরিয়ে এলো। বেনসনের পেকেট এগিয়ে ধরে বললো নিন।
অচেনা একজন পরিচয়হীন লোকের থেকে সিগারেট নিবো কিনা ভাবতে ভাবতে একটা শলাকা তুলে নিলাম। লোকটাকে আগে এই এলাকাতে দেখি নি।
অন্ধকারে চেহারাটাও বুঝা যাচ্ছে না, ধন্যবাদ বলতেই লাইটার জ্বালিয়ে এগিয়ে ধরলেন, এবার হালকা আলোয় চেহারায় বসন্তের দাগগুলো এক ঝলকের জন্য ভেসে উঠলো। বললাম আপনাকে আগে এই এলাকায় দেখি নি।
'আমি এই এলাকার না '
-আপনি কোথায় থাকেন কি করেন?
'আমি কিছু করি না, শুধু করাই, আপনি কি করেন?"
-প্রশ্ন শুনে বললাম কিছু করি না তেমন, লিখালিখি করি টুকটাক।
ওহ লেখক আপনি? '
আমি বললাম নাম ডাক আছে তেমন কেও না।
উনি বললেন তাতেও চলবে। আমার একটা গল্প লিখে দিতে পারবেন? ভালো পারিশ্রমিক দেব।
শুনে বেশ মজা পেলাম। মজার তো লোকটা ! গল্প ও বলবেন আবার পারিশ্রমিক ও দিবেন।
আমি বললাম আমি তো গল্প তেমন একটা লিখি না, শুনি আপনার গল্প।
-আসলে এইটা কোনো গল্প না সত্যি ঘটনা তা বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনার।
"আমার গ্রামের নাম নিশ্চিন্তপুর। আমি যখন খুব ছোট আমার মা মারা যায়। আমার বাপ্ ছিল নিষ্কর্মা। কাম কাইজ কিছু করতো না। মানুষের থেকে চেয়েচিন্তে চলতো।
আমার বয়স যখন পাঁচ তখন আমার বাপ্ আমারে পালক দিয়া দেয় ছয় গ্রাম পর ভাওয়ালপুরে। আমার পালক পিতা-মাতা ছিল জোতদার। অনেক বিষয় সম্পত্তির মালিক কিন্তু নিঃস্বন্তান। আমি ছিলাম তাদের চোখের মনি।
তবে তারা আমারে আমার বাপের কাছে যাইতে দিতো না। হয়তো ভয় ছিল গেলে আর ফিরে আসবো না। এইভাবেই দিন যাইতেছিলো।
তার চার বছর পর আমার বয়স যখন নয়, তখন একদিন আমার পালক বাপ্ আমারে ডাইকা বললো তোমার আসল পিতা গত পরশু ইন্তেকাল করেছেন, আমি তোমারে জানাই নাই কারণ সে মারা গেছে গণপিটুনিতে।
আমি নিস্বব্দে অন্য ঘরে চলে গেলাম।
তার ১৬ বছর পর আমি জানলাম কি কারণে আমার বাপ্ গণপিটুনিতে মারা গেছিল।
এই ঘটনার দশ বছর এর মধ্যে আমার পালক পিতা মাতা দুইজন ই মারা গেলেন। আগেই বলেছি আমার পালক পিতামাতা অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলেন। আমি সেই সব সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকায় চলে আসি। প্রথমে পুরান ঢাকায় বাতিল মালের দোকান কিনি একটা। এখন পুরান ঢাকায় আমার সাত টা দোকান। তার মধ্যে ২ টা কেমিক্যাল ফেক্টরি।
আমি অবিবাহিত।
যৌবনে টাকা বানানো আমার নেশা হয়ে গেছিল, সেই নেশায় পরে বিয়ে সাদি করে উঠা হয় নাই। আমার আরো একটা নেশা আছে। সেই গল্পটাই আপনারে বলবো।
আমার নিষ্কর্মা বাপ্ মারা যায় গণপিটুনিতে চোর সন্দেহে। আমার বাপ্ ভিক্ষুক ছিল, শেষে হয়তো ভিক্ষা তেমন না পাইয়া চুরি করা শুরু করে। গ্রামের মানুষ ভিক্ষা দিবে কি নিজেরাই খাইতে পায় না। এই ঘটনার ১৬ বছর পর আমি যখন জানলাম তখন ভিক্ষুকদের উপর আমার একটা অমানুষিক ক্রোধ ভর করে।
তারপর প্রথম আমি এই কাজটা করা শুরু করি আজ থেকে উনিশ বছর আগে। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে শক্ত সামর্থ্য ভিক্ষুক ধরে আনা শুরু করলাম। সবাই যে স্বইচ্ছায় আসছে তা না।
যারা স্বইচ্ছায় আসে নাই তাদের লোভ দেখায়ে, যারা লোভে পরে নাই তাদের উঠায়ে নিয়ে আসছি। তাদের কে ধরে আমার কেমিকেল ফ্যাক্টরি তে নিয়ে আসতাম।
আমার একটা ফেক্টরি আন্ডারগ্রাউন্ড। উপরে দোকান নিচে কারখানা। আমি সেইসব ভিক্ষুকদের ধইরা প্রথমে আমার বাসায় নিয়ে যাইতাম।
তারপর অজ্ঞান করে আন্ডারগ্রাউন্ড কারখানাতে নিয়ে যাইতাম। পায়ে শেকল দিয়ে কাজ করাইতাম তার বিনিময়ে খাদ্য দিতাম। প্রথম প্রথম অনেকেই কাজ করতে চাইতো না।
খাবার দেয়া দুইদিন বন্ধ রাখলেই কাজ করা শুরু করতো। তারপর যখন তারা কাজে অভ্যস্ত হইয়া পড়তো তখন তাদের আবার অজ্ঞান করে যে কয়দিন কাজ করছে সেই টাকা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসতাম।
ছাড়ার আগে বলতাম, তোমাদের উপর আমার লোকরা নজর রাখবে, যদি আবার ভিক্ষা করে তা হলে আবার ধরে নিয়ে আসা হবে এই জায়গাতে। আসলে ভয় দেখাইতাম। এতো ভিক্ষক এর উপর নজর রাখা তো সম্ভব না। তবে এতেই কাজ হতো। তারা কেউ আর ভিক্ষায় ফিরে যায়নি। এইভাবে আমি এই পর্যন্ত মোট ৬৮৩ জন ভিক্ষুক রে পুনর্বাসন করছি। "
আরেকটা সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বললেন "বলেন আমার মতো সমাজ সংস্কারক আরেকটা দেখছেন জীবনে ? "
আমি তখন লাইটারের আলোয় এই নির্লিপ্ত লোকটাকে দেখে বিস্মিত না হবার চেষ্টা করছি।
তারপর লোকটা পকেট থেকে দশটা এক হাজার টাকার নোট বের করে টেবিলে রেখে বললো "গল্পটা আপনার না লিখলেও চলবে।
প্রত্যেক বছর এই দিনে আমি এই গল্পটা একজন মানুষ কে বলি। গল্প বলার মতো আমার কেউ নাই। কথাটা শেষ করেই লোকটা অন্ধকার বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে গেলো।
আমি পেছন থেকে তাকিয়ে দেখছি একজন না মানুষ কি করে অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প পাঠে ভাল লাগা জানাই গেলাম।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪২

বোকা পাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪৯

ওমেরা বলেছেন: বেশী বুঝি নাই যদিও তবু ভাল লাগছে ।ধন্যবাদ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:১০

বোকা পাখি বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


শক্ত প্লট নয়, মোটামুটি

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮

বোকা পাখি বলেছেন: আপনি শেষ পর্যন্ত পড়ছেন এইটাই আপাতত এই গল্পের সার্থকতা। শক্ত প্লট তৈরী করার মতো শক্ত লেখক এখনো হই নাই, একদিন হবো আশা রাখি। ধন্যবাদ

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৪

সুমন কর বলেছেন: আগে কোন ব্লগে লিখেছিলেন ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.