নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীম আহমেদ একক

লেখা লিখি করি শখের বশে

তানজীম আহমেদ একক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেকেন্ড পার্সোনালিটি

২৪ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, ছাতাতে মানে না এমন বৃষ্টি, তার ওপর বেশ রাত হয়েছে। এর মধ্যে যদি হেঁটে হেঁটে কোথাও যেতে হয় তাহলে কারোরই ভালো লাগার কথা না। ভালো লাগছে না মিলনের ও, হেঁটে হেঁটে যেতে হচ্ছে কিছুদুর সামনের বাচ্চুর বাসায়। বাচ্চু মিয়া ব্যবসা করে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে, ছোট্ট ব্যবসা তার, চায়ের টং দোকান। ব্যবসা চলে মোটামুটি, মা মরা মেয়ে ২টা কে নিয়ে তার ভালোই চলে যায় সংসার। সপ্তাহের নির্দিষ্ট এই দিনে চাঁদা নিতে আসে মিলন ও তার লোকজন। আর এদেরকে চাঁদা দিতেই হয়। আজ চাঁদা দেয়ার টাকা তার কাছে নেই, ছোট মেয়েটার ওষুধ কিনতেই বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু মিলন কখনই কোন অজুহাত শুনতে রাজি না। চাঁদার টাকা না পাওয়ায় হাত-পা ভেঙ্গে লুলা করে দেয়ার রেকর্ডও আছে মিলনের। আজ বাচ্চুর কি হবে এইটা ভেবে বাচ্চুর কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। মিলন আসতেই বাচ্চু গিয়ে মিলনের পায়ে পড়ে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো।

- আমারে মাফ কইরা দেন ভাইজান, এই হফতায় তেমুন ইনকাম হয়নাই। চান্দা দিলে পোলাপাইন নিয়া না খায়া মরমু।

- আরে বাচ্চু ভাই, এইটা কোনো কথা কইলা? তুমি হইলা আমার আপনা ভাই, ইনকাম না হইলে পরের হপ্তায় দিবা, এইডা নিয়া আবার পায়ে পড়ার কি আছে? পা ছাইড়া ওপরে ওঠো।

বাচ্চু অবাক হলো মিলনের এমন ব্যবহার দেখে, চারিদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। বাচ্চু একরাশ বিস্ময় নিয়ে পা ছেড়ে ওপরে উঠে আসতেই বুকের ওপর মিলনের প্রচন্ড লাথি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

- শূয়োরের বাচ্চা, আমার লগে বিটলামি করস? আমারে ভূগোল বুঝাস তুই?

বাচ্চুর কথা বলার মত শক্তি ছিলোনা।

- ১০ মিনিটের মইধ্যে টাকা জোগাড় কইরা দিবি, খান** পোলা।

.........

- আব্বা, আব্বা।

ছুটে আসলো একটা মেয়ে, মেয়েটার বয়স, ১৬-১৭ হবে। বাচ্চুর বড় মেয়ে, নাম আলেয়া।

- আলেয়া, তুই এইহানে আইছোস ক্যান মা?

কোনোমতে উঠে দাঁড়ালো বাচ্চু, পড়ে যাচ্ছিল, আলেয়া ধরে ফেলল।

- ঘরে চলো আব্বা।

আলেয়ার কথায় মনোযোগ নেই বাচ্চুর, সে তাকিয়ে আছে মিলনের দৃষ্টি লক্ষ্য করে। মিলনের দৃষ্টি যে তার সদ্য বেড়ে ওঠা কিশোরী মেয়েটির দিকে পড়েছে সেটা বুঝতে চুলে পাক ধরা তেতাল্লিশ বছরের বাচ্চুর সময় লাগেনা। আলেয়ার প্রতি নাকি নিজের ভাগ্যের প্রতি প্রচন্ড আক্রোশে আলেয়াকে প্রচন্ড চড় মেরে বসল বাচ্চু...

- হারামজাদী, তুই এইহানে আইছোস ক্যান?

থাপ্পড় খেয়ে মেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, পানি চিকচিক করে উঠলো তার চোখে।

- আহা আহা, করো কি বাচ্চু ভাই? এত বড় মাইয়ার গায়ে হাত তুলে কেউ? এত গুলা মানুষের সামনে তুমি......ঐ তোরা কি দেখস, যে যার কামে যা, আর আমি আইতাছি, প্যাকেট রেডি রাখিস।

মিলন এই কথা বলে সবাইকে যার যার কাজে পাঠিয়ে দিলো। এই সুযোগে বাচ্চু তাড়াতাড়ি মেয়েকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।

- কি বাচ্চু ভাই, মাইয়ারে বাসায় পাঠায়া দিলা?

কাঁধে হাত রেখে বাচ্চুর দিকে একটা শয়তানী হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো মিলন। বাচ্চু ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে পরাজিত সৈনিকের মত তাকিয়ে রইলো মিলনের দিকে।

- শোনো বাচ্চু ভাই, আমি চিন্তা কইরা দ্যাখলাম, তুমি গরিব মানুষ, পোলাপাইন লইয়া খাইতে তোমার বড়ই কষ্ট হয়। তাই তোমার আর চান্দা দেওন লাগবো না, তুমি ফিরি ব্যবসা করবা, আর যদি ব্যবসা বাড়াইতে চাও তাও আমারে কইবা, টাকা পয়সা দিয়া আমি সাহায্য করুম...কি কইছি বুঝছো?

বাচ্চু কিছু বলে না, জ্বলজ্বল দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে থাকে।

- আর আইজকা তোমার আর বাসায় যাওনের দরকার নাই, বৃষ্টি নামবো মনে হইতাছে, তুমি এরচেয়ে দোকানেই রাইত কাটাও।

চুপ করে চেয়ে থাকে বাচ্চু।

- শরীলডা ভালা ঠেকতাছে না, ভাবতাছি তোমার বাসায় গিয়া একটু ঘুমামু। তোমার বাসাডা জানি কই বাচ্চু ভাই?

শয়তানী হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করে মিলন।

.......................................

থ্যাপ !!

কাদার ভেতর পা প্রায় অর্ধেকটা ডেবে গেল মিলনের। অশ্লীল একটা গালি দিয়ে পা উঠাতেই টর্চ লাইটের আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেল মিলনের।

- কোন কুত্তার বাচ্চায় লাইট মারে রে?

গালি খেয়েও লাইটের মালিক বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না, সে মিলনের চোখকে টার্গেট করেই লাইট জ্বালিয়ে রাখলো।

এই পর্যায়ে মিলনের হাসি পেয়ে গেল। নিশ্চয়ই এই এলাকায় নতুন কেউ, নাহয় মিলনের কন্ঠ শুনেও এতোটা সাহস দেখানোর মত লোক এই তল্লাটে নেই।

হঠাৎ লাইটের আলো নিভে গেল, ধপ করে একটা শব্দ হল। মিলনের চোখ অন্ধকার সয়ে আসতেই সে সামনে তাকিয়ে দেখল লোকটা একদম তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। পরনে কালো টি-শার্ট, কালো প্যান্ট।

- কে রে তুই?

লোকটা মিলনের কথার উত্তর না দিয়ে তার দু’হাত সামনে আনতেই তার হাতের জিনিসটা দেখতে পেয়ে মিলন বুঝে নিল কি হতে যাচ্ছে, সে ঘুরে দাড়ানোর আগেই তার মাথার ওপর নেমে এলো ৫ সে.মি. ডায়ামিটারের ৩ ফুটি লোহার রড। টু-শব্দ করতে পারলোনা মিলন, লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।

তবে মাটিতে পড়ার আগেই মৃত্যু হল তার।



অ্যালার্ম ঘড়িটা কর্কশ শব্দে জানিয়ে দিচ্ছে এখন দুপুর ২ টা বাজে। কোনমতে হাতড়ে হাতড়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লো তূর্য। মিনিট দশেক পর সে তার বিছানা থেকে উঠলো। আজ শুক্রবার, ছুটির দিন, তার ইউনিভার্সিটি বন্ধ ছিলো, অবশ্য তার ঘুমের কারণ সেটা নয়, ইদানিং তার ঘুম বেড়েছে। তূর্যদের বাসার পাশেই একটা কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে, সারাদিন মেশিনারী জিনিসপত্রের শব্দ, কিন্তু তাতে তূর্যের ঘুমের কোন প্রবলেম হয়না, সে দিব্যি আরামে ঘুমায়। এই কারণে ইউনিভার্সিটির সকালের ক্লাসগুলা সে মিস করে প্রতিদিন। ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসে পেপারটা হাতে নিলো সে। একটা শিরোনামে চোখ আটকে যায় তার। একটা রহস্যময় খুনের খবর। কিন্তু মায়ের কারণে সে মনোযোগ দিতে পারে না। শুক্রবার হওয়ায় তার মা ও আজকে বাসায়।

- তূর্য,তোমার সাথে কথা আছে আমার।

- বলো মা।

- আগে পেপার থেকে মুখ তুলে এইদিকে মনোযোগ দাও।

- আহা, বল না মা।

- কি বলছি কানে যাচ্ছেনা তোমার? এইদিকে মনোযোগ দাও।(একটু রাগত স্বরে)

মাকে আগে বেশ ভয় পেত তূর্য, এখন আর তেমন ভয় লাগে না। তবু মায়ের দিকে তাকালো তূর্য।

- বলো এইবার, কি বলবে?

- কি করছো তুমি আজকাল?

- কি করছি মানে? আমি তোমার কথামত তোমার পছন্দ অনুযায়ী বুয়েটে পড়ছি।

- আমি সেটার কথা বলিনি, আমি তোমার প্রতিদিনের রুটিনের কথা জানতে চাচ্ছি। আজকাল তুমি বেশ রাত করে ঘুমুতে যাচ্ছ, এর কারণটা কি?

- অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয় মা।

- অ্যাসাইনমেন্ট আগে করতে হত না? আর আমি যতদূর জানি আগের সেমিস্টারের চেয়ে এই সেমিস্টারে তোমার পড়ার চাপ কম, তাই না?

- হুমমম।

- হুমমম আবার কি? বল জী।

- জী মা।

- তো তোমার এই অযৌক্তিক কথা বাদ দিয়ে তুমি কি আমাকে বলবে, তোমার জীবনযাপনের এই পরিবর্তনের কারণটা কি?

তূর্য চুপ হয়ে থাকে।

- কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন? আর আমি শুনেছি তুমি নাকি ইদানিং সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসো, রাতের বেলা রুমে থাকো না, এই ব্যাপারগুলার কারণটা কি?

- আমি রাতের বেলা রুমে থাকিনা এটা তোমাকে কে বলল?

- ফিরোজ বলেছে। ও কয়েকদিন দেখেছে তোমার রুমের দরজা হাট করে খোলা, তুমি মূলত যখন বাসায় থাকো তখন তোমার রুমের দরজা আটকানো থাকে, ওইদিন ফিরোজ তোমার রুমের দরজা খোলা দেখে অবাক হয়েছিলো, তোমার নাম ধরে নাকি বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করেছে, তুমি সারা দাওনি। কোথায় ছিলে?

- একটু ছাদে গিয়েছিলাম মা (তূর্যর ঝটপট উত্তর)।

- সময়কে গুছিয়ে নাও তূর্য। এভাবে সময় নষ্ট না করে সময় কে কাজে লাগাও। দেখবে, অনেক কিছু পাবে জীবনে।

তূর্য মনে মনে তার মাকে বলে, সময়ের এত সদ্বব্যবহার করে তুমি কি পেয়েছো জীবনে? ধন-সম্পত্তি কি জীবনের সব? তোমার কারণে সেই ছোটবেলা থেকে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমি। টাকা আর ক্ষমতার জন্যে সবাই সামনে সমীহ করে তোমাকে, তুমি ভাবো সেটা সম্মান, কিন্তু সেটা আসলে তোষামোদ ছাড়া কিছু নয়, প্রকৃতপক্ষে কেউ পছন্দ করেনা তোমাকে। কিন্তু চুপ করে থাকে তূর্য।

- কি হলো, কথা বলছো না কেন? আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন চাইলে যেতে পারো। আর শোনো, আমি একটু অফিসের কাজে সাভার যাব, এখুনি বেরিয়ে যাব আমি, তুমি ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নিও।

- আচ্ছা ঠিক আছে।

তূর্য ডাইনিং টেবিল থেকে পেপারটা হাতে নিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল, দরজার কাছে পৌছাতেই তার মা পেছন থেকে ডাক দিলেন।

- তূর্য, আরেকটা কথা শোনো।

তূর্য তার মায়ের দিকে তাকালো।

- এত রাতে আর কখনও একা ছাদে যাবেনা, আমি যেন আর কখনও না শুনি, বুঝতে পেরেছো?

তূর্য হ্যাঁসূচক ঘাড় কাত করে তাড়াতাড়ি তার রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল।



সন্ধ্যা হবে হবে করছে, সূর্যটা পশ্চিম আকাশের একদম নিচুতে। এই সময়টা তূর্যের খুব পছন্দের, তূর্য একা দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট নদীটার পাড়ে, নদীর জলে সূর্যের সোনালী আভাটা খুব মোহনীয় একটা দৃশ্য। তূর্য আজকে একা, এই নদীর পাড়ে কোনদিন তূর্য একা আসেনি, সবসময় কেউ না কেউ ছিলোই, সবচেয়ে বেশি ছিলো জারা। জারা হচ্ছে তূর্যের সবচাইতে ভালো বন্ধু। সেই স্কুল লাইফের ফ্রেন্ডশীপ তাদের, এরপর একসাথে কলেজ এবং সব শেষে দুজনেই বুয়েটে চান্স পেল। জারা ছিল তূর্যের সবচেয়ে কাছের মানুষ, তূর্যকে যেন পড়তে পারত জারা। তূর্যের মন খারাপ? জারা কে বলতে হতনা, জারা এমনিতেই বুঝতে পারত, আর বুঝতে পারার কিছুক্ষনের মাঝে তূর্যের মন ভালো করে দিত। ইদানিং কি যেন হয়েছে জারার, ক্যাম্পাসে আসে না, ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায় ওর নাম্বারটা, মাঝে মাঝে অবশ্য ফোন খোলা পাওয়া যায়, কিন্তু ওর কথা-বার্তাও কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ হাসি-খুশিতে মেতে থাকা মেয়েটা কেমন করে যেন কথা বলে, মনে হয় ও এই পৃথিবীতে নেই। মাস খানেক আগে অবশ্য জারা কে প্রপোজ করেছিল তূর্য, জারা রাগ করেছিলো। তূর্যকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলো, তারা দুজন শুধুই ভালো বন্ধু, তূর্য যেন ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে আর কথা না বলে। তাহলে কি এটা নিয়েই জারা ওকে এখনো ইগনোর করছে? নাকি ফ্যামিলি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়েছে, কিংবা দীপু নামের সেই মাস্তান ছেলেটা ওর কোন ঝামেলার সৃষ্টি করেছে। দীপু হচ্ছে জারাদের এলাকার এম.পির ছেলে, বাবার ক্ষমতার জোরে এলাকার মাঝে অপকর্ম করে বেড়ায়। একদিন একটা মেয়েকে দীপুর লোকজন টিজ করার সময় জারা দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায়, ঐ ছেলেগুলার সাথে কথা বলার সময় কথা কাটাকাটি হয়, এক পর্যায়ে জারা একটা ছেলেকে চড় দিয়ে ঐখান থেকে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে, কিন্তু দীপুর নজরে পড়ে যায় জারা। সেই থেকে জারার জীবনটা জাহান্নাম করে দেয় দীপু, আসতে যেতে জারাকে টিজ করা, বাজে মন্তব্য করা দীপু ও তার চ্যালাদের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়ায়। ওরাই কোন ঝামেলা করল কিনা ভাবছে তূর্য।

- তূর্য।

- জারা তুই !! এখানে এলি কীভাবে? একা একা? তোকে না বলেছি সন্ধ্যার পরে একা একা কোথাও যাবি না? তুই কি কখনো আমার কথা শুনবি না? আর তোর ফোনের কি হয়েছে বলতো? আমি বিকেলে ফোন দিয়েছি অনেকবার, কিন্তু প্রতিবারই সুইচড অফ দেখাচ্ছিল।

জারা কিছু না বলে শুকনো একটা হাসি দিল, যদিও সেটা অন্ধকারের জন্য স্পষ্ট দেখল না তূর্য।

- তূর্য, তোকে একটা কথা বলার ছিল।

- আগে আমার সব কথার উত্তর দে।

জারা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

- আচ্ছা বল কি বলবি?

খুব কাছে আসল জারা, একদম কানের কাছে এসে বলল...

- তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?

হঠাৎ এই প্রশ্নে একটু থতমত খেয়ে গেল তূর্য...তূর্যের নীরবতা দেখে জোরে হেসে উঠলো জারা। হাসিটা কেমন যেন অপার্থিব। হাঁসতে হাঁসতে হঠাৎ থেমে গেল জারা।

- আমি ভালো নেই তূর্য।

- কি হয়েছে তোর?

- আমার ভালো থাকাটা তোর ওপর নির্ভর করছে, একটু ভেবে দেখিস।

……………………………………………………………………………………………………………………………………

- কার সাথে কথা বলছেন ভাইজান?

হঠাৎ একটা পুরুষকন্ঠে পিছে ঘুরে তাকালো তূর্য।

- আপনি কে? আর আপনার কি চোখে সমস্যা নাকি দেখতে পান না আমি কার সাথে কথা বলি?

লোকটা একবার তূর্যের মুখের দিকে আর একবার আশেপাশে তাকালো। তূর্য তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেল। জারা নেই !! তূর্য বোকার মত লোকটার দিকে তাকাল।

- আপনার কোন দোষ নেই ভাইজান, জায়গাটা ভালো না, বেশিক্ষণ থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা।

এই বলে লোকটা চলে গেল।

বোধহয় ড্রাগ নেয়ার এফেক্ট এটা। জারা মানা করে দেয়ার পর তূর্য খুব ভেঙ্গে পড়েছিল, আর জারাও তখন তূর্যর পাশে ছিল না। প্রচন্ড হতাশা আর একাকীত্ব থেকে ড্রাগ এর প্রতি ঝুঁকল তূর্য। কৌতূহল বশত শুরু করলেও সেটা আর কৌতূহল ছিলো না। এখন সে মাদকের দাস হয়ে গেছে, তাতে অবশ্য তূর্যের আফসোস নেই।

গাড়িটা স্টার্ট করে মেইন রোডে উঠে ড্রাইভ করতে করতে ভাবতে লাগল, কিন্তু বুঝতে পারল না জারা কি সত্যিই এসেছিলো, যদি এসেই থাকে তো হঠাৎ কোথায় চলে গেল? নাকি পুরোটাই ওর কল্পনা? ভাবতে ভাবতে ও যখন বাসায় আসলো তখন ৯ টার কাছাকাছি বাজে, ওর মা তখনও বাসায় ফেরেননি। ফিরোজকে ডেকে বলে দিল, মা যেন কোনভাবেই না জানে যে তূর্য ড্রাইভার না নিয়ে বের হয়েছিল। নিজের ঘরে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে শাওয়ারে গিয়ে সন্ধ্যার ঘটনাটা ভাবতে লাগলো, কিন্তু কিছুই মেলাতে পারলো না। শাওয়ার থেকে বের হয়ে বিছানায় বসতেই ফিরোজ দরজার সামনে দাঁড়ালো...

- ফিরোজ ভাই, কিছু বলবা?

- ম্যাডাম একটু আগে ফোন করেছিলেন, বললেন আজ আর আসবেন না, আপনার ছোট খালামনির ঐখানে থেকে যাবেন।

- ও আচ্ছা।

- আপনাকে রাতের খাবার খেয়ে নিতে বলেছেন, খাবার দেব ভাইয়া?

- না, ফিরোজ ভাই, আমি রাতে খাবো না।

- আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া। কিছু লাগলে ডাক দিয়েন ভাইয়া।

- আচ্ছা ঠিক আছে ফিরোজ ভাই, তুমি এখন যাও।

ফিরোজ চলে যেতে লাগলো, তূর্য তাকে ডাকল...

- ফিরোজ ভাই, শোনো।

- বলেন ভাইয়া।

- মা বলল তুমি নাকি কবে আমাকে ছাদে দেখেছ? কথা কি সত্যি?

ফিরোজ চুপ করে রইল।

- কি হলো ফিরোজ ভাই, কথা বলছ না কেন?

- জী ভাইয়া, দেখেছি।

- কয়দিন দেখেছ?

- ২দিন।

- আনুমানিক কয়টার দিকে?

- ৩টার দিকে ভাইয়া।

- আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এবার যাও।

- জী আচ্ছা ভাইয়া।

- ও আরেকটা কথা...সত্যি উত্তর দেবে তো?

ফিরোজ কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

- তুমি কি আমাকে ভয় পাও?

ফিরোজ আবারো চুপ করে রইল।

তূর্য হো হো করে হাঁসতে লাগল।

- আচ্ছা তোমাকে উত্তর দিতে হবেনা, আর তুমি এরপর যদি আমাকে কখনো ছাদে দেখো, আমার মনে হয় সেটা মা কে না বলাটাই ভালো হবে। তুমি এখন যেতে পারো, ফিরোজ ভাই।

ফিরোজ মনে হয় দৌড়ে পালিয়ে গেল। এটা দেখে তূর্যের আবার হাসি পেল। সে আপনমনে হাঁসতে লাগল। হঠাৎ চুপ হয়ে গেল তূর্য, সে ভাবছে ফিরোজের কথা, কিছুতেই মেলাতে পারেনা তূর্য, তার একদমই মনে পড়ছেনা ছাদে যাবার কথা। সে কখন ছাদে গেল, কেন গেল কিছুই মনে পড়ছে না। সে যদ্দুর জানে তার ঘুম হয়েছে ভালোই। স্লীপ ওয়াকিং অভ্যাসও নেই তার। এসব ভাবতে ভাবতে বিছানার ওপর তাকাতেই আজকের পেপারটা দেখতে পেল তূর্য। পেপারটা দেখে সকালের সেই রহস্যময় খুনটার কথা মনে পড়ে গেল। খবরটা খুঁজে বের করে পড়তে লাগল সে। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি ট্রেন লাইনের পাশে পাওয়া গেছে মৃতদেহটা। লোকটার ওপর খুনীর প্রচন্ড আক্রোশ ছিলো, তার মাথাটা দেখলেই আন্দাজ করা যায় এটা, ভারি কিছুর প্রচন্ড আঘাতে মাথা গুড়িয়ে গেছে। তূর্য ভালো করে মৃত ব্যাক্তিটিকে দেখল, খুব পরিচিত মনে হচ্ছে লোকটাকে, কিন্তু মনে করতে পারছে না তূর্য। লোকটাকে কোথায় দেখেছে এটা ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল তূর্য...



জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বাঁধা অবস্থায় আবিস্কার করলো সাজ্জাদ, সেই সাথে মাথার পেছনের দিকটায় প্রচন্ড ব্যাথাও অনুভব করলো সে। বুঝতে পারলো বিপদে পড়েছে সে, মাথা ঠান্ডা রেখে সব ভাবতে হবে। আস্তে আস্তে তার সব মনে পড়তে লাগলো সাজ্জাদের। রাত ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিল সাজ্জাদ, গলিটা সবসময়ের মত ফাঁকাই ছিলো, কিন্তু তাতে সাজ্জাদের মত ক্যাডারের কোন প্রবলেম হবার কথা না, তাকে কিছু বলার মত সাহস কারো নেই এটা জানা কথা। হাঁটতে হাঁটতে বাসার কাছাকাছি আসতেই একটা কাশির শব্দ শুনতেই পিছে তাকালো সে, সাথে সাথে মাথায় প্রচন্ড আঘাতে জ্ঞান হারায় সে। আর জ্ঞান ফিরতেই এই অবস্থা। একটু অবাক লাগলো তার, কার এত বড় সাহস সে বুঝতে পারলো না। সাজ্জাদের বস্ জানতে পারলে এই লোকের কি করবে এইটা চিন্তা করে একটু হাসিও পেয়ে গেল তার।

হটাৎ প্রচন্ড আলোর ঝলকানিতে সাজ্জাদ প্রায় অন্ধ হয়ে গেল। ধীরে ধীরে আলোটা সয়ে আসতেই সে একটা মানুষের অবয়ব সামনে দেখতে পেল, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না চেহারাটা।

- কে রে তুই?

অজানা লোকটার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো সাজ্জাদ। সাথে সাথে মুখে প্রচন্ড আঘাতে ২য় বারের মত জ্ঞান হারালো সাজ্জাদ। খানিক বাদে জ্ঞান ফিরলো সাজ্জাদের, এবার সাজ্জাদের মুখে একটু ভয়ের ছায়া দেখা গেল। আর সেটা খেয়াল করেই হয়তোবা অজানা লোকটি একটু শব্দ করে হেসে উঠলো।

- কে আপনি?

আগের বারের মত ভুল করলো না আর সাজ্জাদ।

- কোন প্রশ্ন করবে না, শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে।

আশ্চর্য রকম ঠান্ডা কিন্তু আদেশের সুরে কথাটা বললো তার সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটি। কথার ভঙ্গীতেই সাজ্জাদ বুঝতে পারলো এই লোক প্রফেশনাল নয়। আর তাতেই সাজ্জাদের পেটের মধ্যে ভয়ে একটা পাক দিয়ে উঠলো। কারণ অ্যামেচারদের কাজ-কর্মের কোন প্যাটার্ন নেই, কি করবে আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে সাজ্জাদ ভয় পেলেও লোকটাকে সেটা লোকটাকে বুঝতে দেবেনা সংকল্প করলো।

- আর যদি না দেই উত্তর?

কোন উত্তর না দিয়ে হাসতে লাগলো লোকটা। তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল আলোর মাঝে, সাজ্জাদ দেখতে পেল তার হাতে একটা প্লায়ার্স।

- এটা দিয়ে একটা একটা করে তোমার হাতের নখগুলো উপড়ে ফেলবো, তারপরও যদি তুমি উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানাও কিংবা মিথ্যা উত্তর দাও তবে তোমার পায়ের নখগুলো তো আছেই। তবে আমার মনে হয় তার দরকার হবেনা।

- উত্তর যদি ঠিকভাবে দেই তবে কি আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে?

- বলেছি না কোন প্রশ্ন করবে না?

এই কথাটা বলে লোকটা সামনে আসলো। লোকটা সামনে আসতেই সাজ্জাদ দেখলো খুব মায়াবী চেহারার এক যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে, যার চোখে ঘৃণা ঠিকরে পড়ছে। মায়াবী যুবকের চেহারা দেখে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার দ্বারা সবই সম্ভব। সাজ্জাদ কুলকুল করে ঘামতে লাগলো।

পরবর্তী দেড় ঘন্টা প্রশ্নপর্ব চলল। এর মাঝে সাজ্জাদ মিথ্যা উত্তর দেয়ার অপরাধে তার বাম হাতের তিনটে নখ হারালো, এরপর সে আর মিথ্যা উত্তর দেয়ার সাহস করেনি।

- আপনার সব প্রশ্নের উত্তর তো আমি দিলাম, এখন কি আমাকে ছেড়ে দেয়া যায়না?

জবাবে যুবকের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি দেখা গেল।

- তোমার বন্ধু মিলনের কাছে পাঠাচ্ছি তোমাকে, আর আমার জন্যে তোমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।

সাজ্জাদ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

পরপর ৩টা গুলিতে সাজ্জাদের বুকের রক্তে মেঝেটা ভেসে গেল।



“দেখা হবে নরকে, ইউ বাস্টার্ড।” মনে মনে আওড়ালো যুবক। ঘৃণার দৃষ্টিটা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেল যুবকের।





ব্যাপারটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না দীপু। পরপর তার দলের দুজন চৌকস লোক রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছে। সাজ্জাদ আর মিলনের খুনের পেছনে কার হাত থাকতে পারে ভেবেই পাচ্ছে না সে। আর খুন গুলোও খুব সাবধানতার সাথে করা হয়েছে, কোন রকম ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা অন্য কোন ক্লু খুজে বার করতে পারছে না পুলিশ। এমনিতেই নতুন রাস্তার টেন্ডারটা নিয়ে সে খুব টেনশানে আছে, তার ওপর দলের এই বিপর্যয়ে অ্যান্টি-পার্টি গুলো পেয়ে বসবে একদম, লাভ লস পরের কথা, অন্তত মান-সম্মান ও দাপট রক্ষার খাতিরে টেন্ডারটা তাকে পেতেই হবে। কিন্তু কীভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। আপাতত আর কিছু ভাবতে চাচ্ছেনা দীপু। মাথাটা ঠান্ডা রাখতে হবে। মাথা ঠান্ডা রাখার উপায় তার বেশ ভালো ভাবেই জানা আছে। নারীসংগ আর ড্রিংকস, এ দুটা হলেই তার মাথা একদম পরিষ্কার হয়ে যায়। এই ২৯ বছরের জীবনে সে যে কত মেয়ের সাথে শুয়েছে সেটা মনে হয় সে নিজেও বলতে পারবেনা। হোটেলে যাওয়ার জন্যে সে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলল। গাড়িতে উঠে সে একটা অভিজাত হোটেলে নিয়ে যেতে বলল ড্রাইভারকে। সে জানলো না যে একটা সিএনজি সে মুহূর্তেই তার গাড়ির পিছু নিয়েছে। হোটেলে তার গাড়িটা থামার ৫০ গজ পেছনে সিএনজিটা থামলো। খেয়াল না করে দীপু চলে গেল হোটেলের ভেতরে। ঘন্টা দুয়েক পর মাথা ঠান্ডা করে হালকা টলতে টলতে সে হোটেলের বাইরে বেরিয়ে আসলো, তখন বাজে রাত ১১টা। তার লেটেস্ট এফ প্রিমিও মডেলের গাড়িটা সামনেই ছিল, গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বাসার উদ্দেশ্যে যেতে বলে সিটে হেলান দিলো সে। ২ মিনিট পরও যখন ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করল না তখন সে ড্রাইভারকে একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে জানতে চাইলো সমস্যা কি। ড্রাইভার পেছনে ঘুরে হাতটা সামনে আনতেই সে জ্ঞান হারালো, তবে জ্ঞান হারানোর আগে দীপু এটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো যে হাতটা তার এতোদিনের বিশ্বস্ত ড্রাইভার নিজামের হাত ছিলোনা।

...............................................................................................................

সমস্ত শরীর ঘাম দিয়ে জ্ঞান ফিরলো দীপুর। বুঝতে একটু সময় লাগলো কোথায় আছে সে। চারিদিকে ভ্যাপসা গরম, বদ্ধ একটা জায়গা, সে ধারণা করল, সে একটা পরিত্যক্ত গোডাউনে আছে। তার পরনের কাপড়গুলোও অপরিচিত মনে হচ্ছে। চেয়ারে বসা অবস্থায় সে নিজেকে মুক্ত আবিষ্কার করল। চেয়ার ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করতেই তার মনে হল, তার বাম হাতটা পুরোটা ছিড়ে যাবে, মুহূর্তেই প্রচন্ড যন্ত্রনায় মাথা ঘুরে উঠলো তার, কোনমতে চোখ খুলে দেখলো তার বাম হাতটা টেবিলের সাথে একটা মাঝারি আকারের গজাল দিয়ে গাঁথা অবস্থায় আছে। যন্ত্রনায় সে একটা অমানুষিক চীৎকার দিয়ে উঠলো, তার চীৎকার প্রতিধ্বনিত হয়ে বার বার ফিরে আসতে লাগলো বদ্ধ ঘরের মাঝে। প্রতিধ্বনি থামতেই একটা টিটকারির হাসি শুনতে পেল। সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে তাকালো দীপু। সুদর্শন, লম্বা, চেহারার মধ্যে একটা মায়া আছে মানুষটার তবে এই মুহূর্তে সেটা দেখা যাচ্ছে না। দীপু বুঝতে পারছে না এই লোকের তার সাথে শত্রুতা কি, কখনও দেখেছে বলেও মনে করতে পারছে না। ছেলেটা মনে হচ্ছে তার অ্যান্টি পার্টি শামীমের দলের লোক। শামীমকে গতবারের মত শিক্ষা দিতে হবে আরেকটা, না গতবারের মত বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা, মেরে গুম করে ফেলতে হবে, তবে তার আগে এখান থেকে বের হতে হবে। দীপু কথা চালানোর চেষ্টা করল।

- তুমি মনে হয় আমাকে চিনতে ভুল করেছো?

- আমি তোকে ঠিকভাবেই চিনেছি। (হিসহিস করে বলল সামনে দাঁড়ানো লোকটা)

- আমিতো তোমাকে চিনতে পারলাম না, তোমার সাথে আমার শত্রুতাটা কি?

- কেন মেরেছিস মেয়েটাকে?

চোয়ালে প্রচন্ড ঘুসির সাথে প্রশ্নটা শুনতে পেল দীপু। ঘুসির সাথে সে একটু ডিসপ্লেসড হয়ে যেতেই বাম হাতের ব্যাথাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে কোনমতে সে চীৎকারটা চাপলো।

- এখান থেকে একবার বের হয়ে নেই, তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলব।

- বের হতে পারলে। মেয়েটাকে কেন খুন করেছিস?

চোখ জ্বলছে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার।

- কোন মেয়ে?

- জারা নাম ছিল মেয়েটার, তুই আর তোর লোকজন মিলে রেপ করেছিস যে মেয়েটাকে, তারপর নৃশংসের মত খুন করেছিস মেয়েটাকে।

সাথে সাথে দীপুর মনে পরে গেল সেই মেয়েটার কথা। ২ দিন আটকে রেখে যে দীপু, সাজ্জাদ আর মিলন মেয়েটাকে অগণিতবার রেপ করেছিল, সেই মেয়েটার কথা বলছে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা। মিলন আর সাজ্জাদ যে এর হাতেই খুন হয়েছে সে বিষয়টা এখন স্পষ্ট। দীপু বুঝতেই পারছে ছেলেটা স্যাডিস্ট, খুব সাবধানে এর হাত থেকে বাঁচতে হবে।

- দেখ, ওইটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।

ছেলেটা আবার মারতে উদ্যত হতেই দীপু বলে উঠলো

- দাঁড়াও দাঁড়াও, আমরা কথা বলতে পারিতো।

- কি কথা বলবি, শুয়ো*র বাচ্চা ?

- তুমি কি চাও? আমি তোমাকে সব দিতে পারি।

- সব দিতে পারবি?

- বলেই দেখ। টাকা, ক্ষমতা সবই দিতে পারি আমি তোমাকে।

- জারাকে ফিরিয়ে দিতে পারবি?

দীপু বুঝতে পারলো, এর সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই, সে বাঁচার উপায় খুঁজতে লাগলো। হাতের প্রচন্ড যন্ত্রণাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।

- কি করতে চাও তুমি?

- কি করতে চাই জানতে চাস? তোকে দুনিয়ায় থাকতেই আমি নরক দেখাবো…

বলেই পাগলের মত হাঁসতে লাগলো ছেলেটা। দীপু দেখলো ছেলেটা নাগালের মাঝেই আছে, কিন্তু ছেলেটার ওপর আক্রমণের চিন্তা পরমুহূর্তেই ছেড়ে দিলো সে, সে চুল পরিমাণ নড়লেই ব্যাথার ঢেউ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে কাউকে আক্রমণ করার চিন্তাটা একেবারেই অমূলক।

ছেলেটা একটু দূরে গিয়ে টিভি ছাড়লো। এই মুহূর্তে টিভি ছাড়ার কারণটা দীপুর কাছে পরিষ্কার হল না। টিভিতে নিউজ চলছে। কিছুক্ষন বাদে একটা নিউজ হেডলাইন শুনে দীপু আতংকে জমে গেলো। নিউজরিডার পড়ছে, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ লিটন খন্দকারের একমাত্র ছেলে দীপু খন্দকার গতকাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর কিছুক্ষণ আগে তার লাশ সনাক্ত করেছেন তার বাবা। দীপু খন্দকারের গাড়িটি গতকাল রাত আনুমানিক আড়াইটা নাগাদ রাজধানীর হাতিরঝিলে অ্যাক্সিডেন্ট করে। পুলিশ ধারণা করছে দীপু এবং তার ড্রাইভার নিজাম ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গাড়িটির পেছনের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অংশ দেখে ধারণা করা হয়, কোন ভারী যান গাড়িটিকে পেছন দিক থেকে আঘাত করেছে। তার ড্রাইভারের চেহারা দেখে সনাক্ত করা গেলেও দীপুর চেহারা দেখে পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দীপুর বাবা লিটন খন্দকার পোশাক দেখে কিছুক্ষণ আগে লাশ সনাক্ত করেন। আরো জানা যায়…

আর কিছু জানার মত অবস্থা দীপুর ছিলো না। কিছুক্ষণ আগেও তার এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে আশা ছিলো সেটা এখন আর নেই। চেহারায় প্রচন্ড জিঘাংসা নিয়ে ছেলেটিকে এগিয়ে আসতে দেখে দীপু হতাশায় চোখ বুঝলো। চোয়ালে প্রচন্ড ঘুসি খেয়ে জ্ঞান হারানোর আগে তাকে নিয়ে ছেলেটির উদ্দেশ্য সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে।



পরিশিষ্ট : তূর্য এখন একটা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আছে। ভয়াবহ এল.এস.ডি (Lysergic Acid Diethylamide) ড্রাগসের কবলে পড়েছিলো তূর্য। এই ড্রাগস নিলে হ্যালুসিনেশনের মাত্রা এত বেশি হয় যে মাদক গ্রহণকারী হ্যালুসিনেশন আর বাস্তবের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারেনা। অনেক ক্ষেত্রে বিস্মৃতি হওয়া সহ সেকেন্ড পার্সোনালিটির উদ্ভবও হয়ে থাকে। তবে তূর্য এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে। তবে তাকে এখনো প্রায়ই একা একা কথা বলতে দেখা যায়…

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: উউফফফ..

২৪ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

তানজীম আহমেদ একক বলেছেন: মন্তব্য মাথার ওপর দিয়ে গেল :/

২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পরে পড়ে নেব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.