নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানজীম আহমেদ একক

লেখা লিখি করি শখের বশে

তানজীম আহমেদ একক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা রিভেঞ্জ (পার্ট ০১) (গল্প)

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩১



ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। জীপটা থামতেই সামনের সিট থেকে বের হয়ে আসলো ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের মেধাবী গোয়েন্দা শাকিল মাহমুদ। ডিপার্টমেন্টে শাকিল মাহমুদের প্রচুর নাম-যশ আছে, একটু ঘাড়ত্যাড়া হলেও তার সাফল্য ঈর্ষনীয়, অনেকেই বলে আজ পর্যন্ত সে নাকি কোন কেসে হারেনি। তার দম্ভ কিছুটা তার হাটার মাঝে প্রকাশ পায়।

জীপ থেকে নামতেই ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসলো স্থানীয় সাব-ইন্সপেক্টর, নেমপ্লেট দেখে জানা গেল তার নাম মিজানুর রহমান। পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট ও লাইটার বের করে আয়েশ করে সিগারেটটা ধরিয়ে ভালো করে ছেলেটাকে দেখলো শাকিল। বয়েস তার থেকে ভালই কম হবে, তাড়াহুড়ো করে আসতে হয়েছে তাকে, হাতার ফোল্ডিংটাও কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে। পুলিশের নেভি-ব্লু প্যান্টের বাম পায়ে হাটুর একটু ওপরে হলুদ রঙের ছোপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাতে জেমস বন্ডের কোন একটা মুভিতে জেমস বন্ডের ব্যবহৃত মডেলের রেপ্লিকা ঘড়ি। একই মডেলের একটা ঘড়ি শাকিল নিজেও ব্যবহার করেছিল বছরখানেক আগে। ঘড়িটা তার আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধুর গিফট করা। আলাপ জমানোর উদ্দেশ্যে মিজানের দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরলো।
- না স্যার।
- সিগারেট খান না?
- ইয়ে মানে খাই তবে…
- নেন, প্রবলেম নেই।
- ধন্যবাদ স্যার, আমাকে তুমি করে বলবেন…
সিগারেট নিতে নিতে মিজান বলল…


- ক্রাইম সীন এখান থেকে কত দূর? আচ্ছা, তোমরা কয় ভাই-বোন?
সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শাকিল জিজ্ঞেস করল।
আচমকা পার্সোনাল প্রশ্ন শুনে একটু অবাক হল মিজান। পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলল…
- আমি ছোটবেলা থেকেই একটা অনাথআশ্রমে বড় হয়েছি স্যার। ক্রাইম সীনটা বেশি দূর না স্যার, ৫-৭ মিনিট হাঁটলেই আমরা পৌছে যাব। আপনি আসুন স্যার আমার সাথে।
- হুমম, রহস্যজনক ব্যাপারে খুব ইন্টারেস্ট মনে হয় তোমার।
- জী স্যার, কিন্তু আপনি কীভাবে বুঝলেন?
- খুব সহজেই বোঝা যায়, তুমি নাস্তাটাও তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছ, তোমার ইউনিফর্মের দিকে তাকালে মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। আর তাছাড়া যে পুরুষ সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রেখে এই সাত সকালে তাড়াহুড়ো করে পুলিশের দায়িত্ব পালনে চলে আসে তার রহস্যজনক ব্যাপারে ইন্টারেস্ট থাকার ব্যাপারটা অনুমান করাটা তেমন দোষের কিছু নয় বলে আমার বিশ্বাস।
- আমি যে সদ্য বিবাহিত সেটা বুঝলেন কীভাবে?
অবাক হয়ে কিছুক্ষণ হা করে থাকার পর প্রশংসাসূচক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো মিজান।
- তোমার শার্টের ৩ নাম্বার বোতামটা ছিঁড়ে গিয়েছিলো। সেটা পরবর্তীতে সেলাই করা হয়েছে, সুতোর কালারটা দেখে বোঝা যাচ্ছে। আর সেলাইটা যে কোন মেয়েলি হাতের করা সেটা মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছে, কারণ ছেলেরা করলে এতোটা পারফেক্ট হবার কথা না। আর কোন টেইলর যদি করতো তাহলেও পারফেক্ট হত তবে সেক্ষেত্রে সুতোর কালারটা ম্যাচ হবার কথা। আর তুমি যেহেতু বললে তুমি অনাথ সুতরাং তোমার মা কিংবা বোন হবার সম্ভাবনাটাও বাদ পড়ে গেল। সেক্ষেত্রে একটাই সম্ভাবনা ছিলো তুমি বিবাহিত। আর সদ্য ব্যাপারটা পুরোটাই অনুমান।
মুচকি হেসে বলল শাকিল।
- আপনার সম্পর্কে যা শুনেছি সব একেবারে সত্যি।
প্রশংসা যেন একেবারে ঝরে পড়ছে মিজানের চোখ থেকে।
- ভিক্টিমের সুরতহাল রিপোর্ট সংক্ষেপে বল।
প্রশংসাটুকু উপেক্ষা করে জিজ্ঞেস করলো শাকিল।
- জী স্যার। লাশটা পাওয়া গেছে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন থেকে একটু দূরে, কোন ছিনতাই বা ডাকাতের কবলে পড়েনি এটা নিশ্চিত স্যার, ব্যাপারটা স্রেফ খুন।
- এতটা শিওর হচ্ছ কীভাবে?
- কারণ লাশের পকেটে দামি ফোন ও লাশের পাশে একটি নাইকন এর দামি ক্যামেরা পাওয়া গিয়েছে। ছিনতাইকারী হলে এগুলা নিশ্চই থাকতো না।
- মৃত্যুর কারণ?
- ভিক্টিমের ঘাড়ের বাম পাশে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, ছুঁচালো কোন অস্ত্র তার ঘাড়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এই আঘাতকেই ধারণা করা হচ্ছে।
- আর কিছু?
- আর লাশের পকেটের আইডি কার্ড থেকে তার নাম জানা গেছে জয়িতা চৌধুরী, পেশায় সাংবাদিক, একটা অনলাইন পত্রিকায় কাজ করত?
- রেপ কেস?
- বাইরে থেকে দেখে সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না, ফরেনসিক রিপোর্টে আসল ব্যাপারটা জানা যাবে। তবে খুনটা যে প্রতিহিংসামূলক এটা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ফিল্টারটা দূরে ছুড়ে ফেলে মিজানের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল শাকিল।
- কারণ স্যার, লাশের চোখ দুটো তুলে ফেলা হয়েছে, সম্ভবত কাঁটাচামচ বা ছুঁচালো কোন ছুরি দিয়ে। আর স্যার ঘাড়ের আঘাতটা দেখলে বোঝা যায় আঘাতটা করা হয়েছে পেছন দিক থেকে, সেক্ষেত্রে এটুকু ধারণা করা যায় আততায়ী লেফট হ্যান্ডেড, কারণ পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে ঘাড়ের ঐ অন্তত ৩ ইঞ্চি ফুটোটা করার জন্যে যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন।
এই প্রথম মিজানের দিকে একটু সমীহমাখা দৃষ্টিতে তাকাল শাকিল মাহমুদ। সে সাথে কেসটাকেও রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্রাইম সীনে চলে আসলো তারা। মিজান মোটামুটি সব তথ্যই বলে ফেলেছে এর মধ্যে। ভিক্টিমের ঘাড়ের আঘাতটা দেখে মিজানের ধারণার সাথে একমত হল শাকিল। পেছন দিক থেকেই আঘাতটা করা হয়েছে এবং বা হাতে এইরকম একটা আঘাত করার জন্য তাকে অবশ্যি বাঁহাতি হতে হবে। আর একটা রহস্যজনক বিষয় হল, লাশের পাশে একটা অদ্ভুতদর্শন মুখোশ পাওয়া গিয়েছে। মুখোশটা একটা বিদ্রূপাত্মক হাসি হাসছে। রহস্যজনক মুখোশটা হাতে রেখে ভিক্টিমের ফোনটি হাতে নিয়ে কল লগ চেক করে দেখতে লাগলো শাকিল। লাস্ট ইনকামিং কলটি দেখা যাচ্ছে বস নামে সেভ করা। কল দেয়া হলে দেখা গেল সেটি বন্ধ। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। এখানে আর দেখার মত কিছু নেই। লাশটা ফরেনসিকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রেলষ্টেশনের দিকে আগাতে লাগলো শাকিল। সেখানকার টং দোকানের দোকানদার আবুল মিয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো জয়িতা গতকাল রাতে রেলষ্টেশনের ছন্নছাড়া যাযাবর মানুষগুলোর বাসস্থান ও অন্যান্য ব্যাপারের ওপর একটা রিপোর্ট করার জন্য এসেছিল। আবুল মিয়ার তথ্য অনুযায়ী তাকে এখানে শেষ দেখা গিয়েছিল রাত ১১টার দিকে। তারপর সে কোথায় গিয়েছিল বা রহস্যজনক কিছু ঘটেছিল কিনা এ ব্যাপারে আবুল মিয়া আর কোন তথ্য দিতে পারলো না। আবুল মিয়ার সাথে কথা শেষ করে গাড়িতে এসে বসল শাকিল। হাতের মুখোশটির দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো।

কে এই বস? আর এই বিদ্রূপাত্মক মুখোশটার রহস্যটাই বা কি?

…………………………………………………………………………………………………………………………………………

ফরেনসিক ল্যাবের ওয়েটিং রুমে সিগারেট টেনেই যাচ্ছে ডিটেকটিভ শাকিল মাহমুদ। এই মুহূর্তে তার মেজাজ সপ্তমে। মেজাজ খারাপ হবার অন্তত দুটো মোক্ষম কারণ আছে। প্রথম কারণ হল দুটো দিন পার হয়ে গিয়েছে খুনের, কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কোন দরকারী ইনফরমেশন নোট করতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ডাক্তার তানিয়া। ফরেনসিক ল্যাবে ঢুকতে গিয়ে শুনতে পেল ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে নতুন জয়েন করা ডাক্তার তানিয়া নাকি কাজ শেষ না হওয়া কাউকে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। পিওনের কাছ থেকে এ কথা শুনে তাকে ঝাড়ি দিতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে সামলে নিল শাকিল, এ বেচারার তো কোন দোষ নেই। কাজ শেষ হলে তাকে যেন ডাকা হয়, এ কথা বলে ওয়েটিং রুমে চলে এলেন।
২০ মিনিট পার হয়ে গেল কিন্তু কোন খবর নেই। আধখাওয়া সিগারেটটা মেঝেতে ফেলে সেটাকে ইচ্ছেমত পা দিয়ে পিষে মেজাজ খারাপটা ঝাড়ল শাকিল। ডিপার্টমেন্টে কথা তুলে মেয়েটার একটা হেস্তনেস্ত করবে বলে যখন সিদ্ধান্ত নিল শাকিল তখন পিওন এসে কাঁচুমাচু করে জানালো যে, তার ম্যাডামের কাজ শেষ।
দরজাটা একটু জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলতেই দেখতে পেল ডাক্তার তানিয়াকে। দরজা খোলার শব্দের তীব্রতায় খানিকটা তাচ্ছিল্য নিয়ে শাকিলের দিকে তাকালো তানিয়া।
- আপনিই তাহলে সে বিখ্যাত গোয়েন্দা শাকিল মাহমুদ? বিখ্যাত হলে কি হবে? ন্যুনতম ভদ্রতাটাও দেখি জানা নেই আপনার?
দরজা খোলার ব্যাপারটা ইঙ্গিত করে যে খোঁচাটা মেরেছে এই মেয়ে সেটা আঁচ করতে পেরে শাকিল মাহমুদ ভেতরে ভেতরে ফেটে পড়লো। মনে মনে “তোমাকে এর মাশুল দিতে হবে মেয়ে” আওড়ালেও দাঁতে দাঁত চেপে মুখে বলল…
- সরি।
সরি বললে যে তাবৎ দুনিয়ার সব মেয়েই খুশি হয় সেটা আরেকবার প্রমাণ করে মিষ্টি হেসে ডাঃ তানিয়া বলল…
- ইটস ওকে।
- এবার আপনি দয়া করে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা যদি সংক্ষেপে আমাকে একটু বলতেন তাহলে আমি কৃতার্থ থাকতাম আপনার কাছে।
- হুম, ঘাড়ে আঘাতজনিত কারণে প্রচুর রক্তপাত এবং এই রক্তপাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে। ঘাড়ের ৭ টা ভার্টিব্রা এর মধ্যে ২টা প্রচন্ড আঘাতে গুড়িয়ে গেছে। আঘাতটা করা হয়েছে আধভোঁতা কোন অস্ত্র দিয়ে। অস্ত্রটা হতে পারে কোন মাঝারী আকারের স্ক্রু-ড্রাইভার, ৩ ইঞ্চি লম্বা ও ১.৫ ডায়া সে.মি. আঘাতটা দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। তবে যদি রডও হয় সেক্ষেত্রে অবাক হব না।
একনিঃশ্বাসে এটুকু বলে থামলেন ডাঃ তানিয়া। তাকে একটু রেহাই না দিয়ে আবার প্রশ্ন করে বসলো শাকিল…
- আর চোখের ব্যাপারটা?
- মৃত্যু হবার কমপক্ষে ১৫ মিনিট পর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সম্ভবত পকেট নাইফ ব্যবহার করা হয়েছে।
- ওয়াজ শী রেপড?
- না, তাকে রেপ করা হয়নি।
- ভিক্টিমের শরীরে কোন হাতের ছাপ পাওয়া গেছে?
- না, ভিক্টিমের নিজের হাতের ছাপ ছাড়া অন্য কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি।
ডাঃ তানিয়ার কাছ থেকে আর কিছু জানার নেই। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিন্তিত মুখে বেরিয়ে আসলো শাকিল মাহমুদ।
গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে ভাবতে শুরু করল শাকিল, মূলত তথ্য গুলোকে একসাথে করার চেষ্টা করছিল। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি জয়িতার মায়ের সাথে কথা বলেছেন। তিনি তেমন কোন তথ্য দিতে পারেননি, বারবার মেয়ের শোকে কাঁদছিলেন। সান্ত্বনা জাতীয় কথাবার্তা শাকিলের মুখ দিয়ে বের হয়না, তাই সে যখন বুঝতে পারলো যে জয়িতার মায়ের কাছ থেকে জানার মত কিছু নেই তখন সময় নষ্ট না করে চলে আসলো। আততায়ী অতিমাত্রায় ধুরন্ধর, তার সম্পর্কে তেমন কোন তথ্যই এখন পর্যন্ত যোগাড় করা যায়নি।
অফিসে এসে এভিডেন্স ক্যাবিনেট থেকে জয়িতা চৌধুরীর ক্যামেরাটা নিয়ে বসলো শাকিল। ক্যামেরা থেকে মেমরী কার্ডটা নিয়ে পিসিতে কানেক্ট করে সেখান থেকে সেখান থেকে জয়িতা চৌধুরীর লাস্ট তোলা ছবিগুলো ঘাটতে লাগলো। সেখানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন ছবি নেই, সবই তার রিপোর্ট রিলেটেড ছবি।
মোবাইল ফোনটা বাজতেই কম্পিউটার স্ক্রীন থেকে মুখ সরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার অ্যাসিস্ট্যান্ট টুম্পার ফোন।
- হুম বল।
- স্যার, আপনি যে নাম্বারটা দিয়েছেন সেটার ব্যাপারে এই মাত্র ফোন কোম্পানী থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছে সিমটা মোঃ কবির চৌধুরী র নামে রেজিস্ট্রেশন করা। আমি খবর নিয়ে জেনেছি কবি চৌধুরী হচ্ছেন doinikbarta.com এর সম্পাদক, যেটাতে জয়িতা চৌধুরী কাজ করতেন।
দ্রুত বলে গেল টুম্পা।
- গুড জব। তুমি আরেকটা কাজ করো, কবির চৌধুরীকে ফোন করে দেখ তিনি কোথায় আছেন, আজকে তার ঢাকায় ফেরার কথা। সে যদি ঢাকায় থাকে তবে তার সাথে আমার আগামী এক ঘন্টার মাঝে একটা মিটিং ফিক্সড কর। তাকে আসতে হবে না, আমিই তার অফিসে যাবো। তার সাথে কথা বলে আগামী ১০ মিনিটের মাঝে আমাকে কনফার্ম করো। মনে রেখো, সে যতই ব্যস্ততা দেখাক না কেন এই মুহূর্তে তার সাথে আমার দেখা করাটা জরুরী, সো তুমি তার কোন অজুহাত শুনবে না। ওকে?
- জী স্যার।
ফোনটা রেখে দিয়ে চিন্তার সাগরে আবার ডুবে গেল শাকিল। সিমটা যে কবির সাহেবের সে ব্যাপারে শাকিল আগেই সন্দেহ করেছিল, কিন্তু পত্রিকা অফিসের কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি, কারণ সে চাচ্ছিল না কবির সাহেব যে তার সন্দেহভাজন লিস্টে আছে এটা কেউ বুঝুক। জাস্ট বলে এসেছিল কবির সাহেব এলে যেন তাকে বলা হয়, শাকিলকে ফোন করার কথা।

৭ মিনিটের মাথায় টুম্পা জানালো কবির সাহেব ঢাকাতেই আছেন এবং তিনি দেখা করতে রাজি হয়েছেন।

…………………………………………………………………………………………………………………………………………

এই মুহূর্তে শাকিল বসে আছে doinikbarta.com এর সম্পাদক মোঃ কবির চৌধুরীর এর অফিসে। এই অফিসে সে ঘটনার দিনই এসেছিল, তবে কবির সাহেবকে পাওয়া যায়নি। তিনি নাকি দেশের বাড়ি ছিলেন।
পরিচয় পর্ব শেষ করে শাকিল কালক্ষেপন না করে সরাসরি প্রশ্নে চলে গেল।
- কবির সাহেব, আপনি গত ৩ দিন কোথায় ছিলেন?
- আমার দেশের বাড়ি সিলেট গিয়েছিলাম।
- কেন গিয়েছিলেন?
- ব্যক্তিগত কারণে।
- ওহ, আচ্ছা। কবে, কখন গিয়েছিলেন?
- বৃহস্পতিবার রাত ১১.১৫ এর ট্রেনে।
- ওহ আচ্ছা, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ঘটনার রাতে আপনি ঢাকাতে ছিলেন না? কোন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন?
- জী না, ছিলাম না। কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি আমি। এক মিনিট অফিসার, আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
উত্তর না দিয়ে প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে অনুমতির তোয়াক্কা না করেই সিগারেট ধরাল শাকিল।
- ০১********* নাম্বারটা চেনেন?
- হ্যাঁ, আমার নাম্বার ছিল।
- ছিল বলছেন যে?
- ছিল বলছি কারণ বৃহস্পতিবার অফিস থেকে বেরিয়ে আমি অফিসের গাড়ি নিয়ে স্টেশনের পথে রওনা হই। পথে একটা যায়গায় আমার ড্রাইভার রিকশার পেছনে লাগিয়ে দেয়, যদিও দোষটা আমার ড্রাইভারের ছিল না, তাও ঝামেলা এড়ানোর জন্যে আমি ১০০০ টাকা জরিমানা দেই। গাড়িতে ফিরে এসে দেখি আমার মোবাইলটা নেই। তাই বলছি, নাম্বারটা আমার ছিল, এখন আর নেই।
- ব্যাপারটা প্রমাণ করতে পারবেন?
- আপনি চাইলে আমার ড্রাইভারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
- হুম, আপনার কি সন্দেহ হয়নি কিছু? মানে আমি জানতে চাইছি সন্দেহজনক কিছু কি চোখে পড়েছে এই চুরির ব্যাপারে?
- দেখুন বাংলাদেশের মত একটা জায়গায় এইসব চুরি-চামারি খুব সাধারণ একটা বিষয়।
- যতটা সাধারন ভাবছেন ততটা সাধারণ নয় ব্যাপারটা। মৃত্যুর পূর্বে জয়িতা চৌধুরীর শেষ রিসিভ করা কলটি আপনার ফোন থেকেই এসেছিল, যে ফোনটি হারিয়ে গেছে বলে আপনি দাবী করছেন। তবে ফোনটি কে করেছিল সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
- কি বলছেন ! দেখুন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। আমি আগেই বলছি, আমার ফোনটি হারিয়ে গিয়েছে।
কবির চৌধুরীর অবাক হওয়াটা অভিনয় নাকি সত্যি সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তার কাছ থেকে আর কিছু জানার মত নেই আপাতত। চলে আসার আগে তাকে একটি ফোন নাম্বার দিল শাকিল। বলে আসলো যদি সন্দেহজনক কিছু মনে পরে তবে সাথে সাথে যেন এই নাম্বারে জানানো হয়।

তার অফিস থেকে বের হয়েই তার ড্রাইভারের সাথে কথা বলেছে শাকিল। তার ড্রাইভার জানালো সত্যিই ফোনটা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে এ থেকে প্রমাণ হয়না যে, কবির চৌধুরী নির্দোষ। তার ড্রাইভার মিথ্যা বলতেই পারে তাকে বাঁচানোর জন্য। আপাতত তাকেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহ হচ্ছে শাকিলের।

তবে পরদিন যে সংবাদ শুনে ঘুম ভাঙল শাকিল মাহমুদের, সে সংবাদের পর কবির চৌধুরীর ওপর আর কোন সন্দেহ থাকলো না তার।

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
তৃতীয় পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
চতুর্থ এবং শেষ পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

কোলড বলেছেন: Nice build up.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.