নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোট ভোট ভোট!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৩৭

আমাদের মত দেশগুলোর সবচে বড় ট্রাজেডি হচ্ছে এসব দেশের আইন সভার সদস্য নির্বাচিত করার প্রার্থীদের যোগ্যতার প্রশ্নে জনগন কথিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্ম বা প্রকল্প বাস্তবায়ন তথা আর্থিক বিষয়াদির সংশ্লিষ্টতাকেই একমাত্র মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন! এদেশের উন্নয়ন কর্ম বলতে নিঃসন্দেহে রাস্তা ঘাট সেতু কালভার্ট মসজিদ মন্দির ইন্টারনেট সহজ করা ও কালভদ্রে দু একটা বিদ্যালয় কলেজ স্থাপন বা এমপিও ভুক্তিকরণকেই বুঝি বা বোঝানো হয়ে থাকে। ইন্টারনেট মেট্রোরেল উড়াল সেতু নিয়মিত বিদ্যুত গ্যাস থাকা তাই উন্নয়নেরই নামান্তর। আমাদের জনগনের কাছে এসব কোনভাবেই একটি সরকারে নিয়মিত কাজের অংশ বা রুটিন ওয়ার্ক নয় তাই। বিরাট উন্নয়ন এসব।

রুটিন ওয়ার্কের অর্জনকে কৃতিত্ব দাবী করাও এক ধরনের প্রবঞ্চনা। কিন্তু এদেশের সরকারগুলো রুটিন ওয়ার্কগুলো আধা সঠিকভাবে করলেও আমরা জনগন মহাখুশি আর মহাপ্রাপ্তিতে ভুগি! প্রয়োজন অনুযায়ী রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট বানানো, শৃঙ্খলা বজায় রাখাই তো সরকারের নিয়মিত কাজ, নয় কি? এসব যদি সরকারের নিয়মিত রুটিন কাজ না হয় তবে সরকারের কাজটা কী?

আইন সভার সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট হচ্ছে অথচ দেখেন আইন কানুন পলিসি সংক্রান্ত কোন আলোচনা সমালোচনা নেই। হচ্ছে উন্নয়নের পরিসংখ্যান ও গাল গল্প নিয়ে। বিবদমান কোন পক্ষের মধ্যেই আইন বা আইন সভা নিয়ে কোন বক্তব্য আলোচনা নেই।

বড় সংকট হচ্ছে আইন সভায় নির্বাচিত হতে উন্নয়ন (?) কর্ম তথা রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট করার প্রতিশ্রুতিকেই ভোট পাবার যোগ্যতা ও সক্ষমতা হিসেবে প্রার্থীরাও জাহির করছেন। বলাবাহুল্য আমরা সাধারণেরা সেসব আমলে নিয়েই ভোট দেবো।

অন্তত এই বিন্দুতে ক্রিকেটার মাশরাফি, বিনোদনকর্মী হিরো আলম আর মহাবামপন্থী জোনায়েদ সাকীতে কোন ফাঁরাক নেই!

আইন সভার সদস্য হিসেবে খুবই স্পষ্টভাবে আইন প্রনয়ন ছাড়া আর কিছুতেই এমনকি সেই আইনের বাস্তবায়নের সাথেও সম্পৃক্ত হবার সুযোগ আইন সভার সদস্যদের থাকার কথা নয়। অথচ আমাদের কী সৌভাগ্য (?) আমাদের জাতীয় আইন সভার সদস্যরা নির্বাচিত হনই রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট করে দেবার সক্ষমতার বিচারে।

আমাদের আইন সভার সদস্যরা তাঁর সংসদীয় আসনের বলতে গেলে সবকিছু। সব কিছুতেই তাঁকে থাকতে হবে। সব উন্নয়ন (?) প্রকল্পে তাঁর খবরদারি নজরদারি থাকতে হবে। আসলে দেনদরবার করে প্রকল্প তো নিয়ে আসেনই তিনি অথচ সেটা তাঁর এখতিয়ার বা কাজ নয়। সব অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথী তাঁকেই হতে হবে। মুহুর্মুহু আধা সরকারি পত্র তাঁকেই জারী করতে হবে। তাঁর আসনে ১ পয়সা আসা বা যাওয়ার খবর তো তাঁকে রাখতেই হবে আবশ্যিকভাবে। এসব না করলে সে কিসের এমপি! জনগনও এভাবে দেখে, ভেবে অভ্যস্ত। অথচ তাঁর কাজটি হবার কথা ছিল কেবলই আইন প্রনয়ণ। পলিসি মেকিং!

আইন প্রণেতার পদটি কিভাবে লাভজনক সেটাই বোধগম্য না! আইন প্রণেতা নির্বাচিত হতে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত বিশাল অংকের অর্থই কেন খরচ করতে হবে সেটাও মাথায় ঢোকে না! নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত অংকের বাইরের খরচার কথা নাই-ই বা বললাম। কিন্তু এদেশে এমপি হবার সাথে টাকা খরচের সক্ষমতার বিষয়টিও যোগ্যতার মাপকাঠি বটে। এমপি পদটির সাথে যাবতীয় আর্থিক বিষয়াদির সংশ্লেষ সংবিধান নির্দেশিত একজন এমপির কর্মপরিধির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট করা, ইন্টারনেট আর নিয়মিত নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা একটি সরকারের রুটিন ওয়ার্কের অংশ। এসব কাজ করার জন্য কেরানীরা আছেন জেলায় জেলায়। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় সেসব কেরানীদের বেতন দিয়ে পুষি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এসব রুটিন ওয়ার্ক যথাযথভাবে করার জন্য। আর স্থানীয় সরকার তো আছেই। এসব কাজ করবার জন্য এমপিদের আইন সভায় পাঠাই না আমরা ভোট দিয়ে- এই বোধটা যতদিন না আসবে আমাদের মধ্য ততদিন আর যাই হোক এদেশের গণতন্ত্র বজায় রাখতে হবে বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে যারা গলা ফাটান তাঁদের আশায় গুড়েবালি!

আইন সভার সদস্যদের প্রকল্প সংশ্লিষ্টতা থেকে, আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হবার পর হতে সরকারি সব ধরনের আর্থিক সংশ্লেষ থেকে যোজন যোজন মাইল দুরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এমপির কাজ আইন প্রনয়ণ, সে শুধু সেটাই করবে। পলিসি হবে তাঁর কাজের একমাত্র অধিক্ষেত্র। এলাকার ব্রিজ কালভার্ট করার প্রতিশ্রুতি দেয়া এমপির কাজ না। শুধু এটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই দেখবেন দেশটার চেহারা পাল্টে যাবে। সমাজতন্ত্র ধর্মতন্ত্র লাগবে না। বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে এটুকু নিশ্চিত করেন। আমরা উতরে যাবো। এগিয়ে যাবো।

তবে এবারের নির্বাচনে এসব পাওয়া সুদূর অস্ত হলেও আশার কথা ধর্ম এবারের নির্বাচনে ইস্যু হতে পারেনি এখন পর্যন্ত। অন্যান্যবারের নির্বাচনের মত সাম্প্রদায়িকতা আর বিষ বাস্প ছড়াতে পারছে না এবার । অন্তত এখন পর্যন্ত পারেনি।

আরেকটা বিষয় কেবলমাত্র ভোট দিতে পারা বা না পারার ভিত্তিতে আপনার গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার প্রয়োগ হওয়া বা না হওয়ার কোন সম্পর্ক আদৌ নেই।

ভোট দিতে পারলে বা না পারলেও আমার আপনার জীবনে খোল নলচে পাল্টানো কোন পরিবর্তন আসবে না। বড় জোড় লাউয়ের বদলে কদু পাওয়ার মত পরিবর্তন আসতে পারে। লাউ এবং কদুর পার্থক্য নিশ্চয় আপনি বুঝেন!

কিন্তু কেবলমাত্র ভোট দিতে পারা বা না পারার প্রশ্নটাকে যারা একমাত্র বিষয় বানিয়ে ফেলছেন তাদের কাছে প্রশ্ন- মৌলিক পরিবর্তন তো দূরের কথা; নির্বাচিত সরকার তার রুটিন ওয়ার্কটাই ঠিকভাবে করবে আপনার ভোট দিতে পারা বা না পারা দিয়ে সেটা নিশ্চিত করা যাবে তো?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.