নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরিত্রীদের মরতে হয়!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১৩


আমাদের শিক্ষকরা ঋষিতুল্য হবেন সাধারণভাবে আমরা এটাই আশাকরি!

ভিকারুননিসা নূনের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষায় নকল করার শাস্তি হিসেবে অরিত্রী ও বিশেষত তার মা বাবাকে অপমান করায় অরিত্রী আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছেন! স্বভাবতই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। আত্মহত্যার ঘটনা ঘটায় অভিযোগটি গুরুতর মাত্রা পেয়েছে। তদন্ত কমিটি হয়েছে একাধিক।

শিক্ষকদের অমানবিক আচরণের শিকার হওয়া আমি নিজের অভিজ্ঞতা বলি। প্রথমটা আমার সহোদরার উচ্চ মাধ্যমিকের ভর্তি বাতিল করতে গিয়ে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের সেই সময়ের ভর্তি কমিটির প্রধানের কাছে। সেই মহান শিক্ষক সম্ভবত সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। মাত্র মিনিট দুৃয়েকের আলাপে তিনি আমার বোন আত্মহত্যা করলেও কিছু যায় আসেনা বলে বসলেন! সেদিন কিছুই বলতে পারিনি। পরেও বলা হয়নি। লোকটার জন্য একরাশ করুনা সেদিন যেমন অনুভব করেছি, আজও করছি।

আরেকটা ঘটনা এই গতমাসের। গাজীপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়া সীমাহীন নির্মমতা দেখিয়েছেন। বিষয়টার আগা গোড়াই জানি। মাত্র ২৩ বছর বয়সী বড় বোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় ছোট বোনটি টেস্ট পরীক্ষার দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি। বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দুটি নেয়ার অনুরোধ নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে গেলে তিনি যার পরনাই রুঢ় ব্যবহার করেন। সন্তান হারা পিতাকে তিনি আবার কাঁদিয়েছেন। সেই পরিবারটিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং পরে জেলাপ্রশাসকের দাড়স্থ হয়ে অংশ নিতে না পারা পরীক্ষা দুটো নিতে অধ্যক্ষকে রাজি করাতে হয়েছে। আমাদের অধ্যক্ষরা এমনই।

যাই হোক, শিক্ষকদের কাছে যেতে হয়নি এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। শিক্ষক ছাড়া আর যাই কিছু হোক শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়।

সমাজের অপরাপর অন্যান্য অংশের মত শিক্ষকেরাও এই সমাজেরই অংশ। শিক্ষকরা আমাদেরই কারো না কারো পিতা মাতা ভাই বোন। আমাদের পরিবারের অন্তত তিনজন শিক্ষকতা পেশায় আছেন।

সমাজ যেভাবে ভাবে, সমাজ যেভাবে আচরণ করে আর সবার মত আমাদের শিক্ষকেরাও সেভাবেই ভাবেন, আচরণ করেন। এখানেই হয়তবা আমরা একটু হতাশ হই। তথাপি শিক্ষকদের কাছে আমরা ঋষিতুল্য আচরণই প্রত্যাশা করি কেবলমাত্র। তাই আমার আপনার শিক্ষকেরা কেমন ছিলেন? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে সমাজকেও জানা বোঝা দরকার।

শিক্ষা এখন নিঃসন্দেহে ভাল ব্যবসা। প্রচুর মুনাফার ব্যবসা। মুনাফা প্রবাহ গতিশীল ও নিশ্চিত রাখতে অন্যান্য ব্যবসাতে যা সব করতে বা মেইনটেইন করতে হয়, শিক্ষার ব্যবসাতেও তাই-ই করতে হয়।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবসার বিষয় হিসেবে অপরাপর ব্যবসার তুলনায় আরো স্পর্শকাতর ও নিশ্চিত মুনাফা প্রদানকারী। কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত যেখানে সেখানে গড়ে উঠা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলো তারই নজির। কী পড়ছে আপনার সন্তান বা কী পড়াচ্ছেন শিক্ষকেরা বা আদৌ পড়ছে বা পড়াচ্ছেন কি না তার চাইতেও বড় বিষয় কথিত নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তকমাধারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারাটা। সবচে করুন ট্রাজেডি হচ্ছে যে মা বাবারা তাঁদের সন্তানদের অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ভিকারুননিসা নূনের মত স্কুল বা কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তাঁদের অনেকেরই মুখে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে এখন বিস্তর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে! এক শ্রেণি বা পাঠ কক্ষে ৮৩ জন শিক্ষার্থী থাকা, শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকাদের বিরুদ্ধে রুঢ় অসংযত স্পর্শকাতরতা ও সংবেদনশীলতাহীন আচরণসহ অনেক অনেক অভিযোগ। সেসবের ভিডিও সহ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সাধারণের মুখে মুখে এখন। অভিযোগ দায়ের করতে না পারার অভিযোগটিও আছে, এটাই সবচে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরতন্ত্র চলে আসছে বলে অনুমান করা যায়। ভিকারুননিসা নূন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সারির শুধু নয় ১নং বিদ্যাপীঠ বলা চলে। সন্তানকে এখানে ভর্তি করাতে মা বাবারা কতই না ব্যতিব্যস্ত ও উন্মুখ থাকে। সেরা বিদ্যাপীঠের বিরুদ্ধে যদি এহেন অভিযোগ থাকে তাহলে অন্যান্যগুলোর কী অবস্থা? আপনার সন্তানকে কোথায় পড়াচ্ছেন? কোন ইঁদুর দৌড়ে ঠেলে দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারছেন?

বাংলাদেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাতেই গুরুতর গলদ আছে। যেমনটা গলদে ভরা পুরো সমাজটা। সন্তানের মা বাবা হিসেবে সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া। কথিত ভাল রেজাল্ট করার জন্য অনবরত চাপ দিতে থাকা। আর কোন প্রকার বাদ বিচার ছাড়া ভাল বিদ্যাপীঠের তকমা লাগা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে আপনারা সন্তানের মানসে ও সমাজে যে অস্বাভাবিক প্রতিবেশ তৈরি করেন, মনে রাখবেন আপনার সন্তানের শিক্ষকেরা সেই অসুস্থ সমাজেরই একজন মাত্র। ঋষিতুল্য কেউ নন। এসব ছাড়াও বিভিন্নভাবে বহুপথে সমাজে যে অরাজকতা আপনারা জিইয়ে রাখেন আপনার সন্তান ও তাদের শিক্ষকরা সেই অরাজক সমাজেরই একজন। ভীন গ্রহের কেউ নন। কাজেই ঋষিতুল্য আচরণ আপনি কোনভাবেই কামনা করতে পারেন না শিক্ষকদের কাছে। অরিত্রী ও তার মা বাবার সাথে যেটা হয়েছে সেটাই আমাদের চিন্তা ও আচরণগত আদর্শ। মানুন আর না মানুন। ডিসেম্বর চলছে। ক দিন পরেই ভিকুতে ভর্তি হবার লাইনটা আগের মতই থাকবে। ভর্তি করাতে না পারার হতাশা আপনাকে আগের মতই কুড়ে কুড়ে খাবে। আর মাঝে মাঝে অরিত্রীরা পৃথিবী ছেড়ে টুপ টাপ চলে যাবে এই যা! ক দিন পর আবার আগের মত সব।

আমার সহোদরার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে জানি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন কেজি স্কুলের মত হয়ে গেছে। কেজি স্কুলের বাচ্চাদের মত বেধে দেয়া স্বল্প সময়ে ভারি ভারি বই পড়ার চাপে নুইয়ে রাখা হয় তাদের! ঠিকভাবে দিনের পত্রিকাটিও পড়তে পারে কি না আমার সন্দেহ আছে! আমরা সবচে বাজে ও অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পড়লেও একাডেমিক পড়াশুনা যত না করেছি তার চে ঢের বেশি পড়েছি 'আউট' বই। এই 'আউট' বই পড়াটাই আমার কাছে কাজের কাজ মনে হয়েছে, তখনো এবং এখনো। এখনকার বাচ্চারা 'আউট' বই ক জন পড়ে জরিপ চালিয়ে দেখতে হবে। আমি আমার সহোদরাকে 'আউট' বই পড়াতে অভ্যস্ত করাতে পারিনি অনেক চেস্টা করেও।

আর খুপড়ি ঘরের ঘুপচি পাঠ কক্ষে পাঠিয়ে আপনি আপনার সন্তানকে কী শেখাতে চান সেটা আপনিই ভাল জানেন। কেজিস্কুল ও কথিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমার আর যাই হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই মনে হয় না। কেমন যেন দোকান দোকান লাগে! এটা নিঃসন্দেহে আমার সীমাবদ্ধতা! আমার চিন্তার দৈন্যতা!


অরিত্রীদের বাঁচাতে চাইলে সন্তানদের স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। সমাজটা স্বাভাবিক হলে আপনার সন্তানের শিক্ষকরাও স্বাভাবিক হয়ে যাবেন। সমাজ ও প্রতিবেশকে সাবলীল -স্বাভাবিক রাখুন। সেটাই হোক আপনার একমাত্র করনীয়। আমরা নিজেরা মানুষ হয়ে উঠি। আমাদের শিক্ষকেরা মানুষ হয়ে উঠুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.