নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ফাগুন হাওয়ায়’ দেখুন। নিজেকে দেখুন।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:২৭

তৌকিরের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ আশাবাদী হয়েছি। সময় ধরে রাখবার মত বেশ কয়েকটা চলচ্চিত্র আমরা পেয়েছি । ‘ফাগুন হাওয়ায়’ তার মধ্যে অন্যতম সেরাটা সম্ভবত। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এর গল্পটা একেবারেই ইতিহাসের। ইতিহাস তো বাস্তবেরই নির্মোহ বয়ান মাত্র! ‘ফাগুন হাওয়ায়’ পুরোপুরিই বাস্তবের নির্মোহ বয়ান তাই। বয়ান বলার ঢং চমকপ্রদ । ‘ফাগুন হাওয়ায়’ তাই ভাল লেগেছে। সবচে বড় কথা আমাদের চলচ্চিত্র ধীরে ধীরে একটা মেজাজে পৌছাচ্ছে , সেটা ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’।

‘ফাগুন হাওয়ায়’ আরো কয়েকটা জরুরী বিষয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের সমাজ ৫২ থেকে পিছিয়েছে! ৫২ তে ভাষার প্রশ্নে যে মুসলমান বাঙ্গালি হতে পেরেছিল, সে বাঙ্গালি এখন এসে আবার কেবলমাত্র মুসলমান হওয়াতেই তার জীবনের স্বার্থকতা খুঁজছে! লালনের গান গাইবার অপরাধে ৫২ তে যেমন বাউলের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হত, এখনো আমরা তাই করছি। তাহলে আমরা এগিয়েছি এমন দাবী করার সুযোগ আমাদের থাকছে কী? ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এ জায়গাটায় আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাড় করায়। এর কোন সদুত্তর আমাদের কাছে নেই। আমরা তো পিছিয়েছিই আসলে। আমাদের পিছিয়ে পড়াটাই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে।

ভাষা মতিন বলে খ্যাত ভাষা সৈনিক শ্রদ্ধেয় আব্দুল মতিনের সাথে সৌভাগ্যক্রমে একই সাথে রেল যাত্রার সুযোগ হয়েছিল। গ্রামের সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখেন কোন ভাষায় এই প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবতই মানুষ বাংলা ভাষায় স্বপ্ন দেখার কথাই বলেছিলো ৫২ তে। আর স্বপ্ন যেহেতু বাংলা ভাষা দেখেছে , কাজেই বাংলাও উপরওয়ালারই ভাষা । এমন করেই সাধারণকে বাংলা ভাষা যে হিন্দুর ভাষা নয়, ভাষার যে র্ধম হয় না; সেটা বোঝাতে হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে এভাবেই মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগঠনের কথা সেদিনের সেই রেল যাত্রায় জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় এই ভাষা সৈনিক । ‘ফাগুন হাওয়ায়’ দেখতে দেখতে এ কথাই বারবার মনে হচ্ছিল । ভাষার তো র্ধম হয় না। পৃথিবীর কোন ভাষাই পৃথিবীর কোন ধর্ম পালনেই বাধার কারন হতে পারে না তাই। এই সত্য ৫২ তেই বাঙ্গালি বুঝে নিয়ে বাংলার জন্য রক্ত দিয়েছিলো। অথচ এখনকার মানুষ সব কিছুর সাথে ভাষার প্রশ্নেও যেভাবে ধর্মকে টেনে আনছে, যেভাবে লালনের গান করার অপরাধে বাউলদের মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছে; সেই মানুষ এগিয়েছে সেটা কোনভাবেই বলা যায়না। ৫২ তে পড়ে থাকা মানেও তো অন্তত ৬৭ বছর পিছিয়ে থাকা! বদরুদ্দীন উমর ভাষা আন্দোলনকে বাঙ্গালি মুসলমানের ঘরে ফেরার আন্দোলন বা বাঙ্গালি হবার আন্দোলন বলেছিলেন। ভাষার জন্য রক্ত দেয়া বাঙ্গালি এখন কোথায় এসে দাড়িয়েছে সেটা 'ফাগুন হাওয়ায়' এর আয়নায় তা দেখা সম্ভব। এখানেই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ স্বার্থক।

‘ফাগুন হাওয়ায়’র গল্পটা যেহেতু বাস্তবের সেহেতু এর নির্মাণে আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। কখনো কখনো দু একবার হলেও অন্তত ৫২' র আগের সময়কালে আছি না ২০১৯ এ চলে এসেছি এই অনুভুতি দিয়েছে মনে যা অস্বস্তি তৈরি করেছে আদতে।গল্পের নায়ক নাসির যখন তার মাকে পুরনো ছবি উদ্ধারের কথা জানাতে ছবি Restore করার কথা বলে তখন ৫২ থেকে হুট করে নায়ক ২০১৯ এ চলে এসেছে এমনটাই মনে হয়েছে। ৫২ পূর্ব সময়ে কেউ ইংরেজি Restore শব্দ ব্যবহার করে ছবি উদ্ধারের কথা তার মাকে বলবে এটা একেবারেই বেমানান । এরকম আরো বেমানান বিষয় খচ খচ করেছে। আরেক মুল চরিত্র নায়িকা দীপ্তির ঠাকুরদার বাড়িটি ও অন্দরমহলের ঠাট বাট আর যাই হোক ৫২ পূর্ব সময়ের মনে হয়নি। একেবারেই সমসাময়িক লেগেছে। অন্য কারো গল্পের সময়ের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ মনে হলে সে দায় আমার না। গল্পের সময়টাকে ধরতে কোথাও কোথাও বিচ্যুতি তাই চোখে খটকা লাগাবারই মত ছিল। নায়িকা দীপ্তির সাথে ডাক্তারের সম্পর্কটা ঠাকুরদা ও নাতনীর। পুরো সিনেমাতে নায়িকা দীপ্তি শুদ্ধ উচ্চারনে ঠাকুরদা ঠাকুরদা ডেকেছে। কথ্য উচ্চারণে বা দৈনন্দিন জীবনে কাউকে এতো শুদ্ধভাবে ঠাকুরদা ডাকতে আমি শুনিনি। ঠাকুদ্দা বা দাদু বা আরো সংক্ষেপে শুনেছি হরদম। শুদ্ধ ও স্পষ্ট ঠাকুরদা উচ্চারন আরোপিত ও শ্রুতি কটু লেগেছে। কথ্য বা সংক্ষেপিত উচ্চারনই সুখ দিতো দর্শক -শ্রোতাকে। নাসির-মঞ্জু ভাইদের মুরগি পুড়িয়ে খাবার আয়োজনটাও সেকেলে মনে হয়নি। একালের মানুষ যেভাবে বারবিকিউ করে অনেকটা তেমনই লেগেছে। নায়ক হিন্দু নায়িকা মুসলমান এমনটা দেখাবার ঝুঁকি সম্ভবত এপার বাংলার কোন গল্পকার বা পরিচালকই নেবেন না। তৌকর আহমেদও নেননি। প্রথাগত হিন্দু নায়িকা আর মুসলমান নায়কেই লগ্নিকারককে ঝুঁকিমুক্ত রেখেছেন তাই ‘ফাগুন হাওয়ায়’তে।

‘ফাগুন হাওয়ায়’র এই সব সামান্য নির্মাণ বিচ্যুতি ও প্রথাগত প্রবনতার চর্চা ‘ফাগুন হাওয়ায়’র গুরুত্ব কমায় না। আবারো বলতে হচ্ছে, ‘ফাগুন হাওয়ায়’র গল্প আপনাকে ৫২’র সাথে আপনার এখনকার সমাজের হুবহু মিল পাইয়ে দিবে অনেকাংশে। আমাদের পড়াশোনা এখন শূণ্যের কোটায় বা পড়লেও সেটা লক্ষ্য কেন্দ্রিক। রুটি রুজির কাজে না লাগলে সেটা আমরা পড়তে চাই না। ইতিহাস ও ত্যাগের বয়ান তাই আমাদের আর ভাল লাগেনা। রক্ত দেয়া ভাষা আন্দোলন তাই আজ শহীদ মিনারে বছরে একদিনের ফুল দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যখন বড় পর্দায় ৫২ সালে বাউলের মাথা ন্যাড়া করে দেবার সাথে এখনকার সময়ে কুষ্টিয়ার বা সারাদেশের বাউলদের মাথা ন্যাড়া করবার মিল দেখবেন, যখন দেখবেন ৫২র মতই বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষা হিসেবে বাংলা বলার অপরাধে বর্তমানেও আপনাকে বিভ্রান্ত অপরাধবোধে ভোগাতে চাইবার লোকের অভাব হবেনা তখন আপনি হয়ত থমকে যাবেন। আত্মজিজ্ঞাসা তৈরি হবে। তখনই ‘ফাগুন হাওয়ায়’দারুন গুরুত্বপূর্ণ ও সফল। তাই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ দেখুন। নিজেকে দেখুন।
ছবি : সংগৃহীত

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৪৪

ইসিয়াক বলেছেন: দেখতে হবে।ধন্যবাদ

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫০

তন্ময় সাগর বলেছেন: হুম । দেখা দরকার। দেখুন।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তৌকির আহমেদ এর সব ক'টা ছবিই ভালো লেগেছে। ভিন্ন আঙ্গিকের এই ছবিটাও ভালো লাগবে আশা করি।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই ছবিটা বেশ ভালো হবে এই ধারনা আমার আগে থেকেই ছিল।

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:১৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গুড রিভিউ। দেখার ইচ্ছে আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.