নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাটল ট্রেন

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪০

প্রথমেই বলে রাখা ভাল ‘শাটল ট্রেন’ যে গল্পের উপর নির্মিত মোহছেনা ঝর্ণার সেই ‘‘বহে সমান্তরাল’ আমার পড়া হয়ে উঠেনি। এটা একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে। গল্পের সাথে মিল বা অমিল খুঁজবার দায় আমার তাই নেই।

শাটল ট্রেন । শাটল ট্রেন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র? শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ? শাটল ট্রেন নির্মাতা বা গল্পকারের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার ও যৌক্তিক করনের চলচ্চিত্র?

‘শাটল ট্রেন’ এ শাটল ট্রেন তো আছেই, থাকবেই। শুরু, শেষ শাটল দিয়েই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে শাটল ট্রেন থাকেনা। শাটল ট্রেন তো বটেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাপিয়ে গল্পকার বা নির্মাতার সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার ও সেই মতাদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাবার-প্রমাণের চলচ্চিত্র মনে হয়েছে ‘শাটল ট্রেন’কে।

আবার সেই রাজনৈতিক মতাদর্শও জগাখিচুরি । অন্তত আমার কাছে। কীসের সাথে কীসের সমন্বয় করা যায় সেই পরিমিতি বোধটারও অভাব ছিল। চে, মার্কস , এঙ্গেলস, লেনিন এর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এক সারিতে এই প্রথম দেখলাম। এদশে বামপন্থী দাবীদারদের মিটিং করার পার্টি অফিস থেকে শুরু করে শয়ন কক্ষে পর্যন্ত চে, মার্কস , এঙ্গেলস, লেনিনের যে ধাচের- রংয়ের ছবি আমরা ঝুলতে দেখি; চেস্টা করে সেই ধাচের -রংয়ের বঙ্গবন্ধুর ছবি এদের পাশে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, যদিও শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ছবি চে, মার্কস , এঙ্গেলস, লেনিনের ছবির মত দৃষ্টি নন্দন লাগেনি। রং তুলনামুলক সাদা বা ফ্যাকাশেই লেগেছে। ব্যাপারটা সাযুজ্যপূর্ণ হয়নি। উচিতও হয়নি। যেমনটা উচিত হয়নি, নায়কের হাত দিয়ে নায়িকার হাতে লেনিন ধরিয়ে দিয়ে জাতির জনক ও ৭২ এর সংবিধানের যথার্থতা তুলে ধরবার বয়ান।

এদেশে বামপন্থী দাবীদারদের মধ্যে ফিরকার অভাব নেই। এরা কোন ফিরকার সেটা এরাই ভাল জানে। আরেক ফিরকার লোকজন এদের কিভাবে গালিাগালি করে আর সেই গালাগালি এরা কিভাবে হজম করে সেটা দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর করণীয় নেই। যারা ‘শাটল ট্রেন’ এ চে, মার্কস , এঙ্গেলস, লেনিনের ছবির পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি ঝুলিয়ে দিয়েছেন তারা আদতে একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ ফেরি করবার চেস্টা করেছেন। মজার বিষয় এবং অবাক হব না , বাস্তবে তাদের মিটিং করার পার্টি অফিস থেকে শুরু করে শয়ন কক্ষে পর্যন্ত চে, মার্কস , এঙ্গেলস, লেনিনের পাশে বঙ্গবন্ধুকে না ঝুলতে দেখলে এবং এই সন্দেহ যদি সত্যি হয় তাহলে ‘শাটল ট্রেন’এ দেখানো এই অস্বাভাবিক অবাস্তব দৃশ্য- যা ইতহাসে প্রথমবার দেখলাম, হোক সেটা বড় পর্দায় -যারা নির্মাণ করলেন তারা আদতে কার উপকার বা কার ক্ষতি করলেন?
ক্ষতি করলেন ‘শাটল ট্রেন’ এর । ‘শাটল ট্রেন’ এই অদেখা এবং বির্তক তৈরি করা রাজনৈতিক বক্তব্যের বয়ান না হয়ে শাটল ট্রেনে ঘটা অনেক নিটোল ও বাস্তব গল্পের বয়ান হতে পারতো এবং তাতেই শাটলের যথার্থতা যথাযথ হত মনে করি। এই বিচারে নির্মাতা বা গল্পকার শাটলের সাথে অবিচার করেছেন। শাটলের এই রাজনীতির বয়ান শাটলে যাতায়াতকারি বহুজনকে বা অধিকাংশকেই কষ্ট দেবে বলে ধারনা করি। ‘শাটল ট্রেন’ এর রাজনৈতিক ক্যারিকেচার শাটলকে ছাপিয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে বির্তক তৈরি করবে। একই সাথে এই অযথা বির্তক বামপন্থী দাবীদার অনেককে কিছুদিন মজার খোড়াক জোগাবে।

কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষেরা এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে এসছিলো এমনটা তথ্য সম্বলিত বিটিভিতে প্রচার হওয়া অনুষ্ঠান উপস্থাপনা বা সঞ্চালনা করেছিলেন এক সময়ের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা জনাব ইনু । এসবে সবাই সহমত হন , এমন তো না। সবার ভালও লাগেনা হয়ত। আবার বহুজনের ভাল লাগে। এ দেশে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পুরোভাগে থাকেন সরকারি দলের লোকজন। সরকারি দলকে অক্টোবর বিপ্লবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যারা মনে করেন তারা নিশ্চয় এতে করে বগল দাবাবার সুযোগ পান। আবার হয়ত বহুজনের উষ্মার কারন ঘটে। এসব রাজনৈতিক বিষয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। আর বঙ্গবন্ধু সবার বা নিজের কাছে কেমন এটা বোঝাতে বা প্রমাণে বঙ্গবন্ধুর উপর আর কী কী আরোপ করা হবে ভবিষ্যতে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম আমরা।

আমাদের আগ্রহ ছিলো ‘শাটল ট্রেন’ এ। সেখানটায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। শাটলকে ছাপিয়ে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বক্তব্য বায়ানের সিনেমা দেখছি এমনটা অনুভুত হয়েছে। এটা ‘শাটল ট্রেন’ নির্মাতাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা এবং সবকিছুতেই রাজনীতি মেশাবার দৈন্যতার ফল। সবকিছুতেই রাজনীতিকে মূল জায়গায় না আনলে কী এমন ক্ষতি হয়? ‘শাটল ট্রেন’ দেখলে আপনার মনে হতে পারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস কেবলমাত্র বামপন্থী রাজনীতি করবারই ক্যাম্পাস। এর বিপরীতে কথিত জঙ্গী রাজনীতিকে দেখানো হয়েছে দুর্বোধ্যভাবে।

শাটলে প্রেম হয়। প্রেম দেখানো হয়েছে। শাটলে স্বতঃ স্ফুর্ত গান হয়। গান দেখানো হয়েছে। শাটলে কী কখনো মারামারি হাতাহাতি হয়নি? শাটলে কখনো অনাকাঙ্খিত বা বহুল কাঙ্খিত কিছু হয়নি ? শাটল কখনো কারো জীবন বাঁচায়নি? সেসব নেই ‘শাটল ট্রেন’ এ।

বাংলাদেশে নির্মিত কোন সিনেমাতেই হিন্দু নায়কের সাথে মুসলমান নায়িকার প্রেম দেখাবার সাহস কোন নির্মাতা করেননি। ‘শাটল ট্রেন’ এ আশাবাদী হয়েছিলাম। এই বুঝি ইতিহাসের স্বাক্ষী হবার সুযোগ পেলাম এমনটা ভেবে বেশ রোমাঞ্চিত হতে না হতেই সে আশা উবে গেছে। অনেক সতর্ক ছিলেন নির্মাতা নায়ক নায়িকার ধর্মীয় পরিচয় স্পষ্টভাবে না বলতে। বন্ধুর সাথে করা নায়িকা তিথির আলাপচারিতা থেকে দর্শককে বুঝে নিতে হয়েছে। নির্মাতা সাহসী হলে ইতিহাস নির্মাণ করতে পারতেন এক্ষেত্রে।

গণঅর্থায়ণে নির্মিত বলা হচ্ছে। অথচ শেষে সার বেধে কন্ট্রিবিউটকারীদের ছবি ও নাম দেখানোটা রুচি হীন কাজ মনে হয়েছে।

ক্যাম্পাসের সব স্থাপনা প্রকৃতির ছবি প্রাসঙ্গিকভাবে দেখালেই ভাল হত। ক্যাম্পাসের স্থাপনা বা প্রকৃতি শুধুমাত্র দেখানোর জন্যই একের পর এক দেখানো হচ্ছে এমনটা লেগেছে কয়েকটা জায়গায়। এভাবে দেখানোটা এড়ালে ভাল হত।

গল্পের নায়িকা পাপড়ির গ্রন্থাগার থেকে বের হয়ে সাইকেল চালিয়ে দলীয় আড্ডায় আসবার সময় গ্রন্থাগারে প্রবেশকারী চরিত্র, পাপড়ির আড্ডায় পৌছাবার পর আগে থেকে থাকা সেই একই চরিত্র এবং বাউলের গানের সময় পিছনে বা পাশে থাকা সেই একই চরিত্রের তিন জায়গাতেই একই পোষাকে থাকাটা বেমানান লেগেছে। অথচ ঘটনা তিন সময়ের তিন স্থানের। একই চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পোষাকে থাকাটাই স্বাভাবিক।

তদুপরি শাটল ট্রেন ভাল লেগেছে। ‘শাটল ট্রেন’ এর শেষটাতেই শাটলের এক সময়ের যাত্রীরা ‘শাটল ট্রেন’ এর সাথে বেশিমাত্রায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়বেন ধারনা করি। রাজনৈতিক ক্যারিকেচার এড়িয়ে ক্যাম্পাসের গল্প নির্ভর আরো সিনেমা দেখতে চাই আমরা। নস্টালজিক হবার সুযোগ পাক সকলে। সমানভাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধান ভানতে শিবের গীত।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: রিভিউ ভাল লেগেছে। সুযোগ পেলে সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.