নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধকে না বলুন!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫২

হালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা অন্তত একটা বিষয় আবারো স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ এখনো ভয়ংকর রকম সাম্প্রদায়িক। যুগ পাল্টেছে, সময় এগিয়েছে বলা হলেও এখানকার মানুষেরা ভয়ংকর রকমের সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী মনোভাবাপন্ন রয়ে গেছে।

এ উপমহাদেশের ১৯৪৭ সালের বিভাজন ধর্ম - সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে হওয়ায় অনেকে যেমন আশা করেছিলো ধর্ম-সম্প্রদায় জাতীয় জীবনে আবেদন হারিয়ে ফেলবে চিরতরে ; আবার তেমনি অনেকে আশংকা করেছিলো ধর্মের ভিত্তিতে উপমহাদেশের এই বিভাজন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে চিরস্থায়ী কাঠামো দেবে; আদতে হয়েছেও তাই। পৃথিবীর ভদ্র ও উন্নত হিসেবে চিহ্নিত দেশগুলোতে ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবন যাপনের অংশ হিসেবে গণ্য করে সেসব দেশের নাগরিকেরা ধর্মকে জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ করার সুযোগ দেয় নি, দেয় না। অথচ এ অঞ্চলের মানুষেরা ঠিক তার উল্টো। এখনো ৪৭ সাল বা ৪৭ পূর্ব সময়ের মতই ধর্মকে আঁকড়ে ধরে আছে। এখানকার কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই ধর্মনিরপেক্ষতা বা রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের ব্যবহার রোধের বক্তব্য দিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব না। সব রাজনৈতিক দলই তাই অন্তত ধর্মের প্রশ্নে চরম শঠতা করে। ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো তো বটেই, যারা কথিত ধর্মনিরপেক্ষ বলে নিজেদের দাবী করে সেসব দলও আসলে ধর্মের প্রশ্নে নিরপেক্ষ না! কথিত ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলো রাজনীতিতে ধর্মের প্রশ্নে এমনকি ইউরোপের চরম ডানপন্থি দলগুলোর মত উদার ও আধুনিক মনস্ক নয় বলে করা অভিযোগ পুরোনো এবং যা প্রতিষ্ঠিত সত্যও বটে।

কথিত জইশ-ই- মোহাম্মদের কথিত সন্ত্রাসী হামলার পর আবারো একবার এই অঞ্চলের মানুষের মুখোশ খুলে গিয়ে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক চেহারাটা বের হয়েছে। যুদ্ধ যুদ্ধ এই খেলায় ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের নাগরিকদের উত্তেজিত হবার কারন অনুমেয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া এ দেশ দুটিতেই বর্তমানে প্রকাশ্যে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করা দল ক্ষমতায়৷ উভয় দেশের মানুষদের বিপুল একটা অংশ চরমভাবে ধর্মাশ্রয়ী মৌলবাদী- চরম সাম্প্রদায়িক। এর বাইরেও এদেশ দুটোর মধ্যে বিভাজনের সময় থেকে চলে আসা বিরোধ এবং অমীমাংসিত বিষয় সমূহের জের তো রয়েছেই। কাশ্মীর এর মধ্যে অন্যতম। কাজেই, যুদ্ধাবস্থা দেখা দিলে এই দেশ দুটির নাগরিকেরা উত্তেজিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

অপ্রয়োজনীয় এবং অস্বাভাবিক হচ্ছে ভারত- পাকিস্তানের কথিত এই যুদ্ধাবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া। সেই সাথে এদেশের মিডিয়ার আচরণ। এদেশের একদল মানুষ রীতিমত পাকিস্তান আর্মির সৈনিকের ভূমিকায়, যা শুধু হাস্যকরই নয়, বিরাট আশংকার। ধর্মাশ্রয়ী এই মানুষগুলো 'হিন্দু' ভারতকে শায়েস্তা করবার মোক্ষম উপলক্ষ পেয়েছে। 'মুসলমান' পাকিস্তানের জন্য পারলে এখান থেকেই ভারতে গোলা নিক্ষেপ করে ভারতকে ধ্বংস করতে চায়। ভুলে যাচ্ছে যুদ্ধটা ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে হচ্ছে, আর সে বাংলাদেশের নাগরিক। শুধুমাত্র ধর্মের কারনে পাকিস্তানের প্রতি ঐক্য ও পাকিস্তান প্রীতি অনুভব করাটা এদেশের জন্য চরম লজ্জার। আরো লজ্জার, কথিত এই যুদ্ধাবস্থায় নিজের দেশ কাল ভুলে গিয়ে স্পষ্ট- অস্পষ্ট ভাবে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন যোগানো। একইভাবে আরেকদল পাওয়া যাবে যারা বিভিন্ন মনগড়া উদ্ভট বানোয়াট তথ্য উপাত্ত দিয়ে এই যুদ্ধে ভারতকে এগিয়ে রাখছে বা পারলে ভারতকে জিতিয়ে দেয়! পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র, জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক, তাই ভারত পাকিস্তানকে শায়েস্তা করুক এরকমই তাদের মনোভাব। ভারত রাষ্ট্রকে শুভ বোধ সম্পন্ন হিসেবে দেখাবার চেষ্টা চালাচ্ছেন যা নিজেই একটা অশুভ প্রবণতা। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আগ্রাসী ও দখলদারী মনোভাবাপন্ন। প্রতিবেশির প্রতি অসংবেদনশীল। আমাদের সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ মারছে ভারত। পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে অনেকে নিজেদের এমনকি ভারতীয় আর্মির সৈনিক ভাবতেও পিছপা হচ্ছে না । পথে ঘাটে অফিসে মাঠে বা সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে কথিত এই যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য পড়লে আপনার মনেই হবেনা আপনি কোন বাংলাদেশীর বক্তব্য শুনছেন বা পড়ছেন! হয় ভারতীয় নতুবা পাকিস্তানীর বক্তব্য মনে হবে নিশ্চিতভাবে। এদেশের মিডিয়াও এ দেশের মানুষদের মতই অবিমৃষ্যকারী। ভারত -পাকিস্তানকে জিতিয়ে বা হারিয়ে দেবার দায় যেন এদেশের মিডিয়ারই। পৃথিবীর আর কোন দেশের মানুষ বা মিডিয়া ভিন্ন কোন দেশের ইস্যুতে এভাবে নিজেদের নাগরিকত্ব ভুলিয়ে দেয় কি না জানা নেই। শুধুমাত্র ধর্মের প্রশ্নে বিভ্রান্তিকর অনুভুতির কারনেই এমনভাবে সম্পৃক্ত হবার বা অকারন ঘৃণা দেখাবার অপ্রয়োজনীয় ঘটনাগুলো ঘটছে বলে ধারণা করা যায়। এ যুদ্ধের বিরোধীতা করা ছাড়া আর কোনভাবে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ নেই।

পৃথিবীর কোন ধর্মই ইহজাগতিক হতে নিষেধ করেনি। ইহকালকে অনিশ্চিত বিপদসংকুল করবার কথা কোন ধর্মেই বলা হয়নি। ভদ্র ও উন্নত হিসেবে চিহ্নিত কোন দেশেই কারো ধর্ম পালনে বাধার কথা জানা যায় না। ইহকালকে সুন্দর স্বাভাবিক রেখেই পরকালের জন্য নিয়োজিত থাকা সম্ভব। আমাদের জানামতে ধর্মের নির্দেশও তাই। ধর্মের প্রশ্নে অহেতুক উন্মাদনা থেকে বের হয়ে আসা দরকার যেখানে, সেখানে কোন আশায় আরো উন্মাদ হয়ে উঠছেন? ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধে আপনার ইতিবাচক কিছু অর্জন হবে না। বরং আপনার জীবন, আপনার পরিবারের জীবন বিপন্ন হবার আশংকা আছে। নগর পুড়লে দেবালয় আস্ত থাকবে না। একটা পুরোদস্তুর যুদ্ধ এদেশের অর্থনীতির বারোটা বাজাতে পারে। আপনি বেসরকারি চাকরীজীবী বা ক্ষুদ্র পেশাজীবী হয়ে থাকলে সেটা হারাবার বা ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা তৈরি করবে। আপনার রুটি রুজির সংস্থান না থাকলে দোজখ দেখবার জন্য আপনাকে পরপারে যেতে হবে না, এপারেই সেটার নাগাল পাবেন নিশ্চিতভাবে। কোন যুদ্ধই কারো জন্য শান্তি স্বস্তি আনেনি, আনতে পারে না। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আর যুদ্ধ কী করে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায় বরং সেটা নিয়ে ভাবুন। নিজেকে ভারতের বা পাকিস্তানের নাগরিক বা যোদ্ধা ভাবার চাইতে আপাতত বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। আর কোন ধর্মই আপনাকে অমানুষ হতে বলেনি। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা হতে বের হয়ে আসুন। মানুষ হন। স্পষ্টভাবে যুদ্ধের বিরোধীতা করুন।

#যুদ্ধকে না বলুন!
যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাও চাই না।
জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল হোক।

ছবিগুলো অর্ন্তজাল হতে সংগৃহীত

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: এতো হিংসা আসে কই থেকে তাঁদের মনে?
মায়া-দয়া কি তবে উঠে গেছে হৃদয় থেকে?
এই হিংসা প্রতিহিংসা বন্ধ কর ওহে বর্বর,
নিরীহ আত্মা কষ্ট পেলে পাবি নাকো পার।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৭

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সুন্দর কথা বলেছেন। আপনার কথাগুলো ভালো লাগল ।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: এই আধুনিক যুগে এসেও মানূষ কেন বুঝে না!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.