নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় উৎসবঃ সার্বজনীনতা ও অর্থনৈতিক উপযোগ

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫

ধর্মীয় উৎসবগুলোর অর্থনৈতিক উপযোগীতাই বেশি।

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে ধর্মীয় উৎসবগুলো যুৎসই ভূমিকা রাখে। দ্যোতনা যোগ করে অর্থে ও অর্থনীতিতে।

বড়দিন, ঈদ, দূর্গাপূজা, শ্যামা পূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ পৃথিবীতে চালু থাকা অন্তত ৪২ হাজার ধর্মের প্রধান প্রধান উৎসবগুলো স্ব স্ব অনুসারিদের ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যে উদ্বেলিত-উদ্ভাসিত করার পাশাপাশি, দারুন রকমের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও সম্পাদন করায় নেয়! ধর্মাচারনের আর্থিক গুরুত্ব এখানেই। আর নশ্বর পৃথিবীতে টাকার গুরুত্ব কে উপেক্ষা করে? সাধু সন্তদেরও ধর্মাচারে টাকার গুরুত্ব উপেক্ষা করার সুযোগ নাই।

বলা হয়ে থাকে, পশ্চিমের অর্থনীতি বড়দিনের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের দেশের গরুর খামারিরা যেমন ঈদ-উল আযহার অপেক্ষায় থাকে। ব্যবসায়িরা রমজানের অপেক্ষায় থাকে। হাজার হাজার কোটি টাকার হাতবদল হয় এই উৎসবগুলোতে। টাকা যতবার হাত বদল হবে ততই দ্যোতনা তৈরি হয় অর্থনীতিতে।

গরুর খামার থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর হাত অবধি যেতে যতবার হাত বদল হয় টাকার, ততবারই অর্থনীতিতে দ্যোতনা তৈরি করে এই টাকা। কসাই, কামাড়, মসল্লার খরচ তো আছেই। তাই বলা যায়, গরুর দাম যত চড়া থাকবে গরুর গরীব খামারিদের পাশাপাশি অর্থনীতিও তত লাভবান হবে। অবশ্য আমাদের দেশে প্রকৃত কৃষক, প্রকৃত প্রান্তিক খামারির অস্তিত্ব বা স্বার্থের সুরক্ষা বড়ই কঠিন ও অনিশ্চিত বিষয়। নেপালের 'মেষবধ' অনুষ্ঠানের কথা আমরা জানি। একই দিনে একই সাথে নেপাল জুড়ে হাজার হাজার মেষ বধ করা হয়, মানে জবাই দেয়া হয়। মেষ কেনা বেচা বা দানে পাওয়া মেষ, নেপালের অর্থনীতিতে দ্যোতনা তৈরি করে।

দূর্গাপূজা বাংলাভাষী হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দীপাবলী বা কালিপূজো বাংলা ভাষী নয় এমন হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এখনকার দূর্গাপূজা শরতে হয়, তাই শারদীয়া। বসন্তে আরো একটা দূর্গাপূজার কথা জানি আমরা। বাসন্তী সেই দূর্গাপূজা এখন বিরল। কালে ভদ্রে হতে দেখা যায়।
দূর্গা ও কালি পূজা বিস্তর কেনাবেচার উপলক্ষ্য এখন। দেবী দূর্গার সাজ থেকে শুরু করে পাড়ার বৌদীর সাজে তো টাকাই মূখ্য। টাকা যত কম, সাজ তত সাধাসিধে। টাকা যত বেশি, সাজে তত জৌলুস। মাগুড়ায় কাত্যায়ণী পূজা শত শত প্রতিমায় হয়। প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে বিসর্জন অবধি প্রতি ধাপে কত কত টাকার হাত বদল! কত শত লোকের সংসারে টাকার আয় বৃদ্ধি। কালিপূজায় বাতি, ঝাড় বাতি জালিয়ে ঘড় বাড়ি যেমন আলোকিত করা হয়, তেমনি অর্থনীতিও আলোকিত করে এই পূজা গুলো। পূজার মন্ডপের প্রত্যেকটা জিনিস তো টাকা দিয়েই কিনতে হয়। সেই বাজার থেকেই।

অলক্ষ্যে, ধর্মীয় উৎসবগুলো আদতে চুড়ান্ত আর্থিক সংযোগও। অর্থনীতি কিন্তু ধর্মে ধর্মে বাদ বিভক্তি করে না৷ এখানে সবাই অর্থনীতির অংশ ও অংশীজন মাত্র। ভিন্ন ধর্মীলম্বীর সাথে আপনাকে লেনদেনে যেতেই হবে। হোক সেটা ব্যক্তি পর্যায়ে বা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে। অর্থনীতি বিষয়টাই সার্বজনীন, সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী। কোন ভেদাভেদ নেই।

ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ইদানিং ধর্মীয় বহুমাত্রিকতা বা অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বোঝাতে বহুল চর্চিত শ্লোগান এটা। যদিও বিস্তর মত ভিন্নতা আছে এটা নিয়েও। সবাই মনে ধারন না করলেও ধর্মীয় উৎসবের আর্থিক যোগ কিন্তু সত্যি সত্যিই ধর্মীয় উৎসবকে সার্বজনীন করে দিতে পারছে। হিন্দুর দূর্গাপূজায় দাড়িওয়ালা চাচাকে ঢোল বাজাতে দেখি আমরা। তাঁকে তো পারিশ্রমিক দিতে হবে। আবার রমজানে ছোলা মুড়ি বুট বিক্রি করতে দেখি হিন্দুকেও। প্রতিমা তৈরির মাটি খড় ও মন্দির সাজাবার উপকরণ মুসলমানের কাছ থেকে কিনতে হয়। গরু কোরবানীর দা কুড়াল থেকে শুরু করে কত কিছুই হিন্দুদের কাছ থেকে কিনতে হতে পারে মুসলমানদের। এটা তো বাস্তবতা, না চাইলেও একে অপরের সাথে টাকার লেনদেনে মানুষকে যেতেই হয়। যে টাকা হিন্দুর হাতে ঘোরে, সেই টাকাই মুসলিম খ্রিস্টানের হাতেও। যে টাকা মেথর মুচির হাতে ঘোরে, সেই টাকাই ব্রাহ্মণ বা আশরাফের হাতেও ঘোরে। সেই টাকাই পূজার প্রতিমা তৈরি করা মালাকারের হাতেও ঘোরে, ঘোরে গরুর খামারি আর কোরবানী দেয়া মুসল্লীর হাতেও। অর্থনৈতিক প্রয়োগগম্যতা বিবেচনায় ধর্মীয় উৎসবগুলো তাই সার্বজনীনই। অস্বীকারের কোন উপায় নেই। কোন মোল্লার বা কোন পুরুতের বা কোন নাস্তিকের মানা বা না মানায় এই বাস্তবতা মিথ্যে হয়ে যায় না।

এই বিবেচনায়, ধর্মীয় উৎসবগুলোর সার্বজনীনতা চমকপ্রদ একটা ব্যাপার। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই বোধ সবাই ধারণ করেন না। সচেতনভাবেই করেন না। ধর্মীয় অনুভুতির প্রশ্নে ধার্মিক তো বটেই এমনকি নাস্তিক দাবীদারদেরও বিভ্রান্তি ও বিভাজনের শেষ নেই। সাম্প্রদায়িকতার শেষ নেই। কিন্তু ধর্মীয় উৎসবে অর্থনীতির এই সার্বজনীনতা উপেক্ষা তো দূরের কথা, এমনকি অংশগ্রহণ না করেই বা থাকবেন কী করে?

পৃথিবীর সকল উৎসব মুক্তি পাক। মানুষ আনন্দে থাকুক

ছবিঃ সংগৃহীত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৮:০১

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আর আকা নেই তাদের কোনো উৎসব নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.