নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসুর

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৯



একজন শিল্পীর জীবন কেমন হয়? কেমন হওয়া উচিত? একজন মানুষ ঠিক কী কী করলে বা কী কী পেলে শিল্পী হয়ে উঠেন? একজন শিল্পী কতটা স্বাধীন?

ভারতীয় শিল্পকলার আধুনিকতার পুরোগামী শিল্পী হিসেবে 'রামকিঙ্কর বেইজ' কে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সেই রামকিঙ্কর বেইজের সম্মানে রামকিঙ্কর বেইজের জীবনের আলোকেই রঙ্গিন পর্দার ক্ষ্যাপাটে, পাগল, বোহেমিয়ান, ছন্নছাড়া নিখাঁদ-নিরেট ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী 'কিগান মান্ডি'র গল্পের ছবি 'অসুর'। কিগান মান্ডি আসলে রামকিঙ্করেরই আধুনিক রুপ। বলাবাহুল্য কিগানকে তৈরি করা হয়েছে রামকিঙ্করের অনুরুপ বা প্রতিচ্ছবি হিসেবেই। কিগানে রামকিঙ্করে সবটাই ঢালতে চেয়েছেন পরিচালক নিঃসন্দেহে। অসুরে কিগান মান্ডির যেমন জীবনের শেষ কাজটি একটি বিরাটাকার দূর্গার Sculpture নির্মাণ, ঠিক তেমনি রামকিঙ্কর বেইজ মৃত্যুর আগে আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ শিল্পকর্ম দূর্গা প্রতিমাই গড়েছিলেন।

কিগান মান্ডির জীবন যা আদতে রামকিঙ্করেরই জীবন। একজন শিল্পীর স্বাধীনতা স্বকীয়তা কতটা প্রয়োজনীয় ও শিল্পীকে নিজের মত জীবন যাপন করতে দেয়া বা বাঁচতে দেয়া কতটা জরুরী সেটা 'অসুর' দেখলে বোঝা যায়। শিল্পের প্রতি ঐকান্তিকতা একাগ্রতা শিল্পীকে কতটা ক্ষেপাটে, পাগলাটে করে দিতে পারে তার উদাহরণ কিগান মান্ডি।

তরুণ বয়সে কিগান মান্ডির জীবন আমরা প্রত্যেকেই চেয়েছি হয়ত কম বেশি। শিল্প ভাস্কর্য না বুঝলেও কিগানের ছন্নছাড়া বোহেমিয়ান জীবন সকলকে টানে । এরকম স্বাধীন জীবন কে না চায়? চুড়ান্ত বিচারে কিগানদের মত স্বাধীন, শুধু কিগানরাই হতে পারে, থাকতে পারে। কী নির্লোভ জীবন! পনের বছরের নিবিড় বন্ধু অদিতির মত রুপবতীকেও প্রত্যাখান করা যায়। প্রত্যাখান করা যায় জীবনের প্রথাগত সব মোহ ও জৌলুস কে। আর ভালবাসা শুধু শিল্পকেই।

'অসুর' একজন মহৎ প্রাণ শিল্পীর জীবনের গল্প হলেও, 'অসুর' ত্রিভূজ প্রেমেরও গল্প! চারুকলার ছাত্র কিগানের সাথে চারুকলার ছাত্রী অদিতির বন্ধুত্ব অন্তত পনের বছরের। কিগানের দিক থেকে নিখাঁদ বন্ধুত্ব হলেও অদিতির দিক থেকে শতভাগ প্রেম শুরু থেকেই। কিগানের প্রতি। সময়ের সাথে সাথে তা আরো বেড়েছে। এই দুইজনেরই আরেক বন্ধু বোধিসত্ব শুরু থেকেই অদিতিকে পাগলের মত ভালবেসে গেছে। ঘটনাচক্রে অদিতিকে বিয়ে করে ফেলতে পারলেও অদিতিকে পাওয়া হয়ে উঠেনি বোধিসত্বের। অসুরের ট্রাজেডিটা এখানেই। কিন্তু তাতে কিগানের মহত্বে বিন্দু মাত্র আঁচ লাগোনা বরং বাড়িয়ে দিয়েছে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই ত্রিভুজ প্রেম, তাই না চাইলেও কিগানের জীবনেরও গল্প। এই সংকটই কিগান কে ভাবতে বাধ্য করে যে, কিগানই অসুর! আদতে অসুর কি বোধিসত্ব? 'অসুর' নামের এই ছবিতে অসুর আসলে কে তা দর্শককেই ঠিক করতে হবে। কিন্তু শিল্পী কি অসুর হতে পারে? তবে পুরো ছবি তে কিগানকে 'অসুরের জাত, হ কে হ, ন কে ন' বলতে শোনা যায় এবং সেটা কিগানের একরোখা স্বাধীন স্বতন্ত্র জেদের প্রকাশ হিসেবে। ঠিক একইভাবে রামকিঙ্কর বেইজকেও তাঁকে বলা রবীন্দ্রনাথের
'যখন কিছু দেখবে, বাঘের মতো ঘাড় মুচড়ে ধরবে। পিছনে আর তাকাবে না।’ এই কথা বারবার আওড়াতে পাওয়া যায় জীবন জুড়ে।

কিগানের পরিণতিও বড় শৈল্পিক। বড়ই কিংবদন্তিতুল্য। চাইলেও শতচেস্টা করেও যে শিল্প ও শিল্পীকে দমানো যায় না তার বড় উদাহরণ আবারো সেই কিগান। জীবন দিয়ে নিজের সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে গেছে। কিগান অদিতির কোন এক দুর্লভ দুর্বল মুহুর্তের ফসল তাদের ছেলে 'বাবুয়া' যাকে বোধিসত্ব নিজের পিতৃপরিচয়ে বড় করছিলো। বিয়ে করেও অদিতিকে না পেয়ে খুবই সচেতনভাবে কিগানের ছেলেকে কিগানের বিপরীত চরিত্রের নিজের মত করে গড়ছিলো বোধি। যদিও অদিতি চায় বাবুয়া আরেক কিগান হোক। কিগান চলে যাবার পর কিগানের ছেলের হাতেই কিগানের আইকনিক স্কেল ঘড়িটা পাওয়া যায়। তাৎপর্য্যের বিষয় কিগান যেভাবে ঘড়িটার স্কেল টানতো বাবুয়াও ঠিক সেভাবেই স্কেল টেনে জানিয়ে বুঝিয়ে দেয় বাবার রক্তই তার শরীরে। আজীবন কিগানকে পরাজিত করতে চাওয়া বোধি আরো একবার হেরে যায় কিগানের কাছে, কিগানের অনুপস্থিতিতে!

অসুরে কিগান মান্ডির চরিত্রে জিতেন্দ্র মদনানী যাকে আমরা জিৎ বলে চিনে থাকি তাকে অনেক জায়গাতেই বেখাপ্পা লেগেছে। ওপার বাংলায় আরো অনেকেই ছিলেন কিগান মান্ডির চরিত্রের জন্য। এই একটা জায়গায় পরিচালক অবিচার করেছেন সম্ভবত। কিন্তু জিৎ কে এড়াবার উপায় ছিল না, কেননা ছবিটাই জিৎের প্রোডাকশন হাউজের! তবে আবির ভাল ছিল। হালের সংসদ সদস্য নুসরাতও দারুন। তবে, কিগান মান্ডির চরিত্র করার পর জিৎ যদি এমনকি অভিনয়ও ছেড়ে দেয় তবুও তার আফসোস করার কিছু থাকবে না। কেননা জিৎ তার জীবনের সেরা গল্পের সেরা ছবিতে সেরা চরিত্রে অভিনয় করে ফেলেছে সম্ভবত এই অসুরে!

পৃথিবীর সকল শিল্পীর প্রতি অতল শ্রদ্ধা।

রামকিঙ্করের ছবি ও তথ্য সংগ্রহঃ Wikipedia, ভারতের বিভিন্ন পত্রিকা ও জার্নাল। সিনেমার পোস্টার গুগল সার্চ করে সংগৃহীত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Respect

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা গতকালই দেখলাম।
জিত অভিনয় ভালো করেছে। নায়িকা নুসরাতকে ভালো লাগে নি।
কাহিনি প্রথম ঘন্টা ঠিকঠাক ছিলো। তারপর কাহিনি খারাপ হতে শুরু করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.