নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপালী আলোর পথে

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

একরামুল হক শামীম

http://www.facebook.com/samimblog আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ব দেখতে এবং স্বপ্ন দেখাতে চাই আজীবন।

একরামুল হক শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

'মেহেরজান' : ভুল পরিপ্রেক্ষিত ও ভুল ভালোবাসার গল্প

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১০





অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম ‘মেহেরজান’ আসছে। এই আসছে আসছে মাতমের পেছনে নির্মাতা বাহিনীর চমক দেওয়ার চেষ্টাটাই হয়তো বেশি ছিল। অভিনয়ের ক্রেডিট লাইনে জয়া বচ্চনকে নিয়ে আসা সেই চমক বাণিজ্যেরই অংশ। 'মেহেরজান' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো দেখার সুযোগ এলে তাই চমকৃৎ হতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু মেহেরজান আসছে, আসছে রবটা যতোটা জোরে শুরু হয়েছিল এবং নানাবিধ আলোচনা শুনে চলচ্চিত্রটি নিয়ে যতোটা উচ্চাশা তৈরি হয়েছিল, প্রত্যাশা ঠিক ততোটাই মিইয়ে গেল চলচ্চিত্র দেখার পর।



'মেহেরজান' চলচ্চিত্রের ট্যাগলাইন ‘একটি যুদ্ধ ও ভালোবাসার ছবি’। যুদ্ধ ও ভালোবাসা পাশাপাশি আসলেই শুরুতেই একটি কথা মনে পড়ে। ভালোবাসা ও যুদ্ধ কোনো নিয়ম মানে না। চলচ্চিত্রটা দেখে মনে হয়েছে এটিও কোনো নিয়ম মেনে চলে নি। এটি যদি নির্মাতার ইচ্ছাকৃত হয় তাহলে বলতে হয় তিনি যথেষ্টই সফল। আমার কাছে ’একটি যুদ্ধ ও ভালোবাসার ছবি’ শেষ বিচারে হয়েছে ভুল পরিপ্রেক্ষিত আর ভুল ভালোবাসার গল্প।



চলচ্চিত্রের কাহিনীর ব্যাপারে বলা যাক। তার আগে বলে নেওয়া ভালো, চলচ্চিত্রটিতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন সময়, দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট, দুটি ভিন্ন সামাজিক অবস্থান উপস্থাপিত হয়েছে পাশাপাশি। পরিণত বয়সের ভাস্কর নিভৃতে শহরে বসে শিল্প চর্চা করছেন, আবার তিনি পুরনো ডায়েরির পাতা খুললেই পুরনো সময়ে ফিরে যান। ফিরে যান, বাংলাদেশের ইতিহাসের উত্তাল সময়ে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়। সারাহ নামের একজন যুদ্ধশিশু মায়ের সন্ধানে এসে আবিস্কার করে অতীতকে। মেহেরকে সে দাঁড় করিয়ে দেয় অতীতের সামনে। মেহেরের খালাতো বোন নীলার গর্ভে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশু সারাহকে অতীতের ঘটনা খুলে বলেন মেহের। এই বলার মধ্য দিয়েই মেহের তার অতীতকে আবার দেখে। একাত্তরের উত্তাল সময়ে বাবা-মার সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কিংবা কাত হয়ে সে ডায়েরি লেখে, ডায়েরির পাতায় তুলে রাখে যুদ্ধাক্রান্ত সময়ের স্মৃতি। একসময় পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত খালাতো বোন নীলা হাজির হন। নীলা আত্মগ্লানিতে না ভুগে প্রতিশোধের উপায় খোঁজে। যুদ্ধের উত্তাল সময়ে মেহের গ্রামময় ঘুরে বেড়ায়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থেকে তাকে বাঁচায় পলাতক এক পাকিস্তানী সৈন্য। আহত সৈন্যটির প্রতি মেহের দূর্বল হয়ে পড়ে। শত্রুপক্ষের সৈন্য হওয়া সত্ত্বেও ওয়াসিমকে শুশ্রূষা করে ভালো করে তোলে মেহের। ওয়াসিমের প্রেমে পড়ে যায় মেহের। কিন্তু শত্রুপক্ষের একজন সেনাকে ভালোবাসার অপরাধে পরিবার থেকে কথা শুনতে হয় মেহেরকে, বাবার মার সহ্য হয় তাকে। এক রাতের আঁধারে ওয়াসিমকে নৌকায় উঠিয়ে বিদায় জানায় মেহের। কিন্তু সে ভালোবাসার বিচ্ছেদে আক্রান্ত।



গল্প মোটামুটি এই। চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্যে নানা ধরনের গোলমাল রয়েছে। বলতে গেলে পুরো চিত্রনাট্যই দাঁড়িয়েছে ভুল পরিপ্রেক্ষিত ও সামাজিক অবস্থানকে প্রতিনিধিত্ব করে। মেহেরজান এর চিত্র্যনাট্য ও চিত্রায়ন একাত্তরের উত্তাল সময়ের প্রতিনিধিত্ব কোনোভাবেই করে না।



চলচ্চিত্রের অসঙ্গতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।



১. বীরঙ্গনা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নীলা। যুদ্ধ শুরু হয়েছে। খাজা সাহেবের বাড়িতে যুদ্ধ শুরু নিয়ে নানা কথাবার্তা হয়। হঠাৎ করেই খাজা সাহেবের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় নীলা। এসেই কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানা যায়। কিন্তু নীলার চরিত্র কোনভাবেই কোন বীরঙ্গনার চরিত্রকে রিপ্রেজেন্ট করে না। এই চরিত্রে বীরঙ্গনাদের ব্যাথা আসেনি, বঞ্চনা আসেনি। সংলাপগুলো হয়েছে কৃত্রিম, বড্ড বেশি কানে লাগার মতো। একটি ব্যতিক্রমী দিক- নীলা আত্মগ্লানিতে ভোগে না, প্রতিশোধের পথ খোঁজে। তবে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্যে নীলা চরিত্রের কনফ্লিক্টিং অবস্থান দেখা গেছে। কখনও সে ঘোর পুরুষবিদ্বেষী। মুক্তিযোদ্ধা [চীনপন্থী বাম হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা রয়েছে] সুমনকে অভিযোগ জানিয়ে বলে সেও অন্য পুরুষের মতো তার শরীরটাকেই চায়। সুমন মৃদু ভাষায় প্রতিবাদ করে। পরে সুমন ও নীলাকে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখে ফেলে খাজা সাহেব। সুমনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় খাজা বাড়ির দরজা। সুমন বিয়ে করতে চায় নীলাকে। নীলাও বলে- সুমনের সাথে বিয়ে না হলে আমার কী হবে ভেবে দেখেছো। এই সংলাপেই নীলার অবস্থান সম্পুর্ণই বিপরীতধর্মী।

তাহলে নীলা কি ভিন্ন একজন বীরঙ্গনার চরিত্র? নীলার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশিত হয় এমনভাবে- ছাত্র ইউনিয়ন করা মেয়ে। সব ছেলেরা তাকে ভয় পায়। এইসব যুক্তি কিন্তু অসঙ্গতিগুলোকে পার করতে পারে না। তাই বলতে দ্বিধা নেই বীরঙ্গনার চরিত্রে ব্যর্থ অভিনেত্রী ঋতু এ সাত্তার। তবে এই ব্যর্থতার দায়ভার পরিচালককেই নিতে হবে।

[কেউ বলতেই পারেন- বীরঙ্গনা চরিত্র মানেই সেখানে ব্যাথা, বঞ্চনা থাকবে এমনটা নয়। মেহেরজানে না হয় একজন ব্যতিক্রমি বীরঙ্গনা চরিত্র আসলো। কিন্তু ব্যতিক্রমি আদতে কতোটা হয়েছে? নীলাকে আধুনিক ও প্রগতিশীল চরিত্র দাড় করাতে চেয়েছেন পরিচালক? এতোই যদি আধুনিক হবে, এতোই যদি নিয়ম না মানা হবে তাহলে যুদ্ধশিশু হিসেবে নিজের সন্তানকে অন্যকে অ্যাডপ্ট করতে দিলো কেন! সমস্যাটা হলো পরিচালক বার বার জাহির করতে চাচ্ছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বীরঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, নীলিমা ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলেছেন। এইখানে বলে নেওয়া ভালো নীলিমা ইব্রাহিমের 'আমি বীরঙ্গনা বলছি' বইয়ে বীরঙ্গনা চরিত্র রয়েছে মেহেরজান নামে। যদিও এই মেহেরজানের সঙ্গে 'মেহেরজান' এর মেহেরের মিল নেই। এতো গবেষণার পরেও চলচ্চিত্রে পরিচালক বীরঙ্গনার চরিত্র এমনভাবে উপস্থাপন করলেন কেন সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ চলচ্চিত্রের সংলাপের মাধ্যমে পরিচালক নিজেই অভিযোগ করেছেন- 'দু লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা' এই বাক্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানকে সরলীকরণ করা হয়েছে। 'মেহেরজান' চলচ্চিত্রের দর্শক হিসেবে বলতেই পারি- পরিচালক 'নীলা' চরিত্রের মাধ্যমে বীরঙ্গনাদের অবদানকে বিকৃতি করেছেন।]



২. নীলা প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ে। এটা নীলার মিঠু খালার ভাষ্য থেকে জানা যায়। নীলা এমন একটি পরিবারের সদস্য যে পরিবারের অধিকর্তা খাজা সাহেব গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী। চলচ্চিত্রের সংলাপ অনুযায়ী, গ্রামের লোকজন তাকে পীরের মতো মানে। এমন প্রভাবশালী একটি পরিবারের পক্ষে অ্যাবরশন করানোটাই খুব স্বাভাবিক ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অ্যাবরশনের ঘটনাগুলোই তা-ই প্রমাণ করে। অনেক নির্যাতিত নারীই মেনে নিতে পারে নি পাকিস্তানীদের সন্তান তিনি গর্ভে ধারণ করবেন। কেউ যদি বলতে চান, অ্যাবরশনের সময় পেরিয়ে যেতে পারে। সেটিও ঠিক মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি নয়। কারণ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে যান নীলা। ওই স্টেজে নিশ্চয়ই অস্ত্র নিয়ে সম্মুখ সমরে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকার কথা না। গল্পের খাতিরে যুদ্ধশিশুর দরকার ছিল। বেশ কয়েকজন যুদ্ধশিশু পরে বাংলাদেশে মায়ের সন্ধানে এসেছেন এমন ঘটনা আমরা জানি। এমন একটা বিষয় পরিচালকের দরকার ছিলো বলেই জোর করে পারিপার্শ্বিকতা বদলে দিয়েছেন।



৩. যুদ্ধের সময় বন বাদাড়ে (জঙ্গল বলাই বোধ হয় ঠিক) ঘুরে বেড়াচ্ছে মেহের। এক প্লাটুন পাকিস্তানী সৈন্য তখন গাছ ঘেরা বনের রাস্তার মধ্যে। মেহেরের কোনো দিকে খেয়াল নেই। সে বিমুগ্ধ হয়ে দেখছে গাছের সৌন্দর্য। হঠাৎ করেই দৃশ্যপটে পাকিস্তানী সেনা ওয়াসিমের আবির্ভাব। পাকিস্তানীদের হাতে ধৃত হওয়া থেকে মেহেরকে রক্ষা করে সে। শুরুতে মেহের তা বুঝতে পারে না। এক পর্যায়ে ওয়াসিমকে আঘাত করে বসে মেহের। কপালে করা আঘাতে মেহেরের হাতের চুড়ি ভেঙে যায়। তখনো ওয়াসিমের জ্ঞান আছে। বলার চেষ্টা করছে- তাকে বাঁচানোর জন্যই এই কাজ করেছে সে। আর এই বিষয়টিই দুর্বল করে তোলে মেহেরকে। সে ভাবতে থাকে আহত পাকিস্তানী সৈন্যের সেবা করা উচিত কিনা। নির্যাতনের শিকার হওয়া বোন নীলার পরামর্শ চাইতে গেলে বলে - সে হলে এক কোপে কল্লা কেটে ফেলবে। তারপর কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের খালা সালমার পরামর্শে ওয়াসিমকে বাঁচাতে যায় মেহের। তখনও মেহেরের মনে চিন্তা - পাকিস্তানী সৈন্যটি বেঁচে আছে কিনা! পরে সেই বনে গিয়ে পাকিস্তানী সৈন্য ওয়াসিমকে নিয়ে এসে সুস্থ করে তোলে মেহের।

এইটুকু দেখে কয়েকটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মাথায় আসে। প্রথমত. চুড়ির সামান্য আঘাত কি এতোটাই বেশি ছিল যে ওয়াসিমের জীবন মরণের প্রশ্ন চলে আসে। আহত অবস্থায় দেখা গেছে ওয়াসিম পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। পায়ে ব্যাথা পাওয়ার ঘটনাটি রহস্যে ঘেরা। [ব্যাখ্যা খোঁজা যেতে পারে- দলত্যাগী পাকিস্তানী সেনা মসজিদের মুসলমানদের গুলি না করায় তাকে অত্যাচার করেছে পাকিস্তানী বাহিনী]। পাকিস্তানী বাহিনীর কেউ পালিয়ে বনে বাদাড়ে লুকিয়ে থাকছে, খাচ্ছে কোথায়, থাকছে কীভাবে এই ভাবনাটা মনে হয় পরিচালকের ভেবে নেওয়া উচিত ছিল। চিত্রনাট্যকারদেরও ভাবা উচিত ছিল হয়তো।



৪. সাইকোলজিক্যাল দিক থেকে মেহের ও ওয়াসিমের প্রেমে ত্রুটি রয়েছে অনেক। গড়পড়তা বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাদের মতো, নায়িকার জীবন বা মান বাঁচালো নায়ক, আর ওমনিই নায়কের প্রেমে পড়ে গেল নায়িকা। [দলত্যাগী পাকিস্তানী সৈন্যের কাহিনী শুনে মেহেরের সহানুভূতি জাগতে পারে, সেই সহানুভূতির খাতিরে ওয়াসিমকে নিরাপদে পার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।] কিন্তু পরিচালক ভুলে গেলেন মেহেরের সামনে তখন পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত বড় বোন নীলা রয়েছে। নীলা বিভিন্ন সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা বলে, অত্যাচারের কথা বলে। এই মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের গল্প শুনে মেহেরের ভালোবাসার এমন রূপ হওয়া স্বাভাবিক না। পাকিস্তানী বাহিনীদের কাছে নির্যাতিত একজন নারীর, যে কিনা কাছের একজন মানুষ, তার মর্মবেদনা মেহেরকে স্পর্শ করলো না, অবাক করার মতোই ঘটনা বটে। মেহের আর ওয়াসিমের প্রেমের ব্যাপারটিও অদ্ভূতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তারা পরস্পর প্রেম করে বেড়িয়েছে, গ্রামে একত্রে ঘুরে বেড়িয়েছে, নৌকায় চলেছে। সবই ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধরত একটি দেশে। অথচ গ্রামের কেউ , মুক্তিযোদ্ধাবাহিনী, রাজাকারবাহিনী কেউই ওয়াসিমের সন্ধান পেল না, ব্যাপারটি রীতিমতো অবাক করার মতো।



৫. চলচ্চিত্রের পোশাক আশাক কোন সময়ের তাও বোধগম্য হলো না। প্রেমে মগ্ন মেহের আর আহত পাকিস্তানী সৈন্য ওয়াসিম ঘন ঘন পোশাক পরিবর্তন করলো আর অদ্ভূত রকমের পোশাক পড়ে প্রেমে মগ্ন থাকলো, পুরো বিষয়টিই দৃষ্টিকটু লেগেছে।



৬. শত্রুপক্ষের সৈন্যকে ভালোবাসার জন্য দীর্ঘ ৩৮ বছর গ্লানিতে ভুগিয়েছে মেহেরকে। ছবির শেষ দিকে দেখা যায় মেহের আত্মগ্লানিবোধ থেকে মুক্তি পায়। সে তখন চিত্রপ্রদর্শনীর প্রস্তুতি নেয়। ভাস্কর্য করে তার অতীত ভালোবাসার কথা মনে করে। পুরো আত্মগ্লানির ব্যাপারটিই আরোপিত। ছবির ফ্ল্যাশব্ল্যাকে, মানে একাত্তরের দৃশ্যপটে, শত্রুশিবিরের কাউকে ভালোবাসা নিয়ে আত্মগ্লানি ছিল না মেহেরের। সেখানে বরং প্রতিবাদের ভাষা ছিল। ওয়াসিমকে যখন জেরা করা হচ্ছিলো তখন সে সবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। সেখানে অন্তত কোনো আত্মগ্লানি ছিল না। ওয়াসিমকে বিদায়ের দৃশ্যে বিচ্ছেদ বেদনা ছিল, কিন্তু কোনো ভাবেই আত্মগ্লানির ব্যাপারটি প্রস্ফূটিত হয়নি।



৭. চলচ্চিত্রটিতে যতগুলো মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তার প্রতিটিই নিজেদের উপস্থাপিত করেছে ক্লান্ত যোদ্ধা হিসেবে। বলতে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র উপস্থাপনা করা হয়েছে বিকৃতভাবে। মুক্তিযুদ্ধ করতে করতে এরা ক্লান্ত, ক্লান্ত হয়ে এরা বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে পাকিস্তানী সৈন্য ওয়াসিমকে মহান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিষয়টি কনটেকচুয়ালি ঠিক রয়েছে কিনা তা পরিচালককে অবশ্যই ভাবতে হবে।

[প্রশ্ন হতে পারে- মুক্তিযোদ্ধাদের তো ব্যক্তিগত জীবন থাকতেই পারে। বিয়ের ইচ্ছাও হতে পারে। নয় মাসের সময়টাতে ব্যক্তিগত চাহিদা থাকবে না, এমন ভাবনাই বরংচ ভুল। কিন্তু যখন একটি চলচ্চিত্রের সবগুলো মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রকে ক্লান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে বিয়ে করায় আগ্রহী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তখন পরিচালকের এই চাওয়ার প্রতি সন্দেহ জাগে।]



৭. হুটহাট প্রেমে পড়া দেখানো হয়ছে চলচ্চিত্রে। পুরো ব্যাপারটিই হাস্যকরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।



৮. মেহেরজান-এ ব্যবহৃত ভাষা কোন সময়ের? কোন অঞ্চলের? আসতাছি, করতাছি জাতীয় ভাষার ব্যবহার তো খুব সাম্প্রতিক সময়ের। ঢাকার এই আধুনিক ভাষাগত প্রকৃতি কি একাত্তরে ছিল? একাত্তরের প্রেক্ষাপটে একটি গ্রামের লোকজন এভাবে কথা বলছে তা কতোটা সঠিক! ‘আমি তোমাকে জেনুইনলি ভালোবাসি।’ এমন সংলাপ হাস্যকর বটে।



৯. চলচ্চিত্র দেখে মনে হবে সিনেমাটোগ্রাফি ভালো হয়েছে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা এটি কোন সময়ের? উত্তর স্বাভাব্কিভাবেই আসবে এটি উপস্থাপিত হয়েছে বর্তমান সময়ের হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নয়। গ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃংশতার কোনো দৃশ্যই ছবিতে নেই। অবশ্য এক দৃশ্যে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। তবে যুদ্ধের ভয় পুরো চলচ্চিত্রে উপেক্ষিত। একইভাবে উপেক্ষিত যুদ্ধকালীন সময়ের সংকট।



১০. পরিচালকের কারণে কোন চরিত্রই দাঁড়াতে পারে নি। ভিক্টর ব্যানার্জির করা খাজা সাহেব চরিত্রটি যা একটু দাঁড়িয়েছে। জয়া বচ্চনের অভিনয়কে আলোচনার মধ্যে রাখা যেতে পারে। তবে সেটিও আশানুরূপ নয়। বাকি চরিত্রগুলো বিকাশ লাভ করেনি নির্মাতাদের অবহেলায়।



চরিত্রগুলোর বিন্যাস এই ফাঁকে দেখে নেওয়া যাক-



নীলা- পাক সেনাদের ক্যাম্পে ধর্ষিত হয়ে ফেরত আসা নারী। আত্মগ্লানিতে না ভুগে সে সবসময় পথ খোঁজে প্রতিশোধের। পাক বাহিনী যখন গ্রাম আক্রমণ করে তখনো তাকে দেখা যায় দা হাতে বেরিয়ে পড়ার চেষ্টায় রত।



খাজা সাহেব- উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতি নিয়ে বেশ জ্ঞান। দেশ ভাঙার বিরোধী, তবে মনে করে একসময় জনগণ অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। বনেদি মুসলমান পরিবারের অধিকর্তা। নিজের গ্রামকে যুদ্ধের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে চান। এজন্য পাকিস্তানী বাহিনী, রাজাকার বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী এই তিন বাহিনীর চাপ মোকাবেলা করতে হয় তাকে। সবাই তাকে এসে শাসিয়ে যায়।

[তার কথা শুনেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে কোনো বাহিনীই গ্রাম আক্রমন করতে সাহস পায় না। কিছুটা অবাক করার মতোই।]



সালমা- পাগলাটে স্বভাবের। বিয়ে পাগল।



মেহের- চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাবা মার সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। প্রেমে পড়ে পাকিস্তানী এক সৈন্যের।



ওয়াসিম- পালিয়ে থাকা পাকিস্তানী সৈন্য। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে যুদ্ধে আসা। মেহেরের প্রেমে পড়ে।



সুমন- মুক্তিযোদ্ধা চরিত্র হিসেবে সুমন বিকশিত নয়। তার রাজনৈতিক ওরিয়েন্টশনও ধোঁয়াটে। [যদিও সুমন চরিত্রকে চীনপন্থী বাম নেতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা ছিল চলচ্চিত্রে। কিন্তু খাজা সাহেবের সঙ্গে সুমনের রাজনীতি বিষয়ক কথোপকথন তার রাজনীতি জ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।]



মেহেরজান এর প্রচরণার জন্য যে বুকলেটটি করা হয়েছে তাতে চলচ্চিত্রটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে এভাবে- মেহেরজান ‘অপর’কে ভালবাসার মানবিক বোধের ছবি। পুরুষতন্ত্রের একক ক্ষমতায়নের পথকে পাশ কাটিয়ে নারীত্বের আবেগ ও অনুভূতির বহুবিচিত্র সংবেদনশীলতাকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস 'মেহেরজান'। অন্যদিকে, এই ছবির অন্যতম পরিপ্রেক্ষিত জাতীয়তাবাদের যে চোরাগুপ্তা পথে ছাড় পেয়ে যায় যুদ্ধ, হত্যা ও নৃশংসতা তারই সূক্ষ্ম সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত ‘মেহেরজান’ যুদ্ধ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে নান্দনিক সমাধান দিতে ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিকতার পথে আশ্রয় খোঁজে।’ কিন্তু দেখা চলচ্চিত্রের সঙ্গে এই বড় বড় কথাগুলোকে মেলাতে গেলে হতাশ হতে হয়। পরিচালক কী বানাতে চেয়েছিলেন এবং কী বানালেন সে ব্যাপারে বোধহয় নিজেই নিশ্চিত নন। যেভাবে মিডিয়াগুলোতে মেহেরজান চলচ্চিত্র সম্পর্কে এসেছে যে এটি -একাত্তরের নারী নির্যাতনের অনালোচিত অধ্যায়কে সামনে নিয়ে আনার প্রয়াস। কিন্তু নিয়ে আসা হলো ভুল ভাবে। শুধু ভুল বললে হয় না, সম্পুর্ণই ভুলভাবে।



পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ায় অধ্যয়নকালে বীরঙ্গনা ও একাত্তরে নারীর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন বলে জানা যায়। এটিও জানা যায় যে, সেই গবেষণাকালেই মেহেরজানের কাহিনীর বীজ অঙ্কুরিত হয়। কিন্তু এই যদি হয় পরিচালকের গবেষণা তবে তা আমাদের হতাশ করে। এ যাবত করা সকল গবেষণাকেই যেন ‘না বিচার’ করলো পরিচালকের নতুন এই গবেষণা। প্রযোজক স্বীকার করতে চেয়েছেন, মেহেরজান শেষপর্যন্ত কোনো গবেষণাধর্মী তত্ত্ব ও তথ্যনির্ভর ছবি নয় বরং জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের আঙ্গিকে প্রেম-নির্ভর আবেগ অনুভূতির নাটকীয় প্রকাশ। কিন্তু শেষ বিচারে মেহেরজানকে ভুল সময়ের ও ভুল ভালোবাসার গল্পের ছবি বলা যায়। ট্যাগ লাইনে বলে দেওয়া ‘যুদ্ধ ও ভালোবাসার গল্প’কে বদলে ‘বিনোদনমূলক নিটোল ভালোবাসার গল্প’ রাখলেই ভালো করতেন পরিচালক।





অভিনয়



জয়া ব্চ্চন, ভিক্টর ব্যানার্জী, হুমায়ুন ফরিদী, খায়রুল আলম সবুজ, শর্মিলী আহমেদ, আজাদ আবুল কালাম, ঋতু এ সাত্তার, নাসিমা সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, ইকবাল সুলতান, মনিরা মিঠু, রিফাত চৌধুরী, অরূপ রাহী, শায়না আমিন ও ওমর রহীম।



কাহিনী ও পরিচালনা : রুবাইয়াত হোসেন

প্রযোজনা : আশিক মোস্তফা

সহযোগী প্রযোজক ও প্রধান সহকারী পরিচালক : ইশতিয়াক জিকো

চিত্রনাট্য : এবাদুর রহমান ও রুবাইয়াত হোসেন

চিত্রগ্রহণ: সমীরণ দত্ত



ফরম্যাট ৩৫ মি.মি.

ব্যবহৃত ভাষা : বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, সাবটাইটেল- ইংরেজি

দৈর্ঘ্য : ১১৯ মি.

মন্তব্য ৫৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: প্রাসঙ্গিক হিসেবে কল্লোল মোস্তফার করা রিভিউটা এইখানে মন্তব্য আকারে দেওয়া হলো

মেহেরজান: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গোলাপি ফ্যান্টাসির ছবি

মেহেরজান ছবির ব্রশিওর এ ছবিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ছবিটি phallocentric unitary masculine(ব্রশিওরে যার বাংলা করা হয়েছে: পুরষতন্ত্রের একক ক্ষমতায়ন হিসাবে) আখ্যানের বাইরে গিয়ে নারীত্বের আবেগ ও অনুভুতির বহুবিচিত্র সংবেদনশীলতা কে এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস। নারীত্বের আবেগ অনুভুতির “বহু বিচিত্র সংবেদনশীলতা”র প্রকাশ ঘটানোর জন্য মূলত কেন্দ্রিয় চরিত্র মেহেরজান এবং পাশাপাশি মেহেরের খালাতো বোন নীলা,‘পাগলাটে’ খালা সালমা এবং নীলার সন্তান যুদ্ধ শিশু সারাহ এই চারটি চরিত্র বেছে নেয়া হয়েছে।যুদ্ধের ৩৮ বছর পর শত্রু সেনার প্রেমে পড়ার অপরাধবোধে ভুগতে থাকা মেহেরের “নিরবতা ভঙ্গ করে সারাহ- খালাতো বোন নীলার ঔরসজাত যুদ্ধশিশু যাকে বিদেশী এক দম্পত্তির কাছে দত্তক দেয়া হয়েছিল- সে তার বীরাঙ্গানা মায়ের সন্ধান করতে এসে মেহেরকে আরেকবার দাড় করিয়ে দেয় সেই ভুলে যেতে চাওয়া অতীতের মুখোমুখি।”মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা মেহেরজানের ডায়েরীকে অলম্বন করে ফ্ল্যাশ ব্যাকের মাধ্যমের মেহেরজানের আখ্যান রচিত হয়।

যে পুরুষতান্ত্রিক পুজিবাদী সমাজ নারীকে নরম কোমল, আবেগী, যুক্তি-বুদ্ধিহীন প্রাণী হিসেবে দেখতে এবং দেখাতে চায় তারই নির্মিত একটি স্টেরিওটাইপ হলো গোলাপি রং এর সাথে নারীত্ব বা ফেমিনিটির সম্পর্ক। গোলাপি বার্বি ডল যার একটি উদাহরণ। এ স্টেরিওটাইপ অনুসারে নারী জন্মগত ভাবেই কতগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট ও প্রবণতার অধিকারি, সে নরম কোমল মানসিকতার অধিকারি, সে যুক্তির চেয়ে আবেগ দ্বারা বেশি চালিত হয়। নারীত্বের প্রতিক হিসেবে গোলাপি রং এরকমই একটি স্টেরিওটাইপ যে স্টিরিওটাইপ ব্যাবহার করে ভোক্তাহিসেবে নারীর জন্য বার্বি ডল থেকে শুরু করে গোলাপি জামা, অন্তর্বাস, ব্যাগ, বই, খেলনা, কলম, পেন্সিল, মাথার রিবন ইত্যাদি অসংখ্য পণ্য বাজারজাত করা হয় সারা দুনিয়া জুড়ে।



ছবি: নারী শিশুর গোলাপি করণের হরেক উপকরণ

যে মেহেরজান ছবি পুরুষতান্ত্রিকতার বিপরীতে দাড়িয়ে নারীর বিচিত্র আবেগ অনুভুতির প্রকাশের দাবী করছে সে ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মেহেরের(সায়না আমিন)তারুণ্য কিন্তু গোলাপি আবহে রাঙানো। নরম কোমল গোলাপি মেহের গোলাপি জামা/ওড়না পড়ে, গোলাপি রঙের চাদর বিছানো বিছানার উপরে ইলিশ কাত হয়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে ডায়েরি লিখে আর ইলিশ কাত হওয়া,বলিউড ধাচের আটোসাটো জামা পড়া, বুকের খাজ দেখানো মেহেরকে পুরূষতান্ত্রিক ক্যামেরার চোখ বার বারই চেটে যায়।









ছবি: গোলাপি শাড়ির ফ্রেমে বন্দী গোলাপি মেহেরজান

তো এই গোলাপি নারীত্বের প্রতীক মেহের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে পরিবারের সাথে গ্রামে আশ্রয় নেয়। গ্রামে সে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়, সাইকেল চালানোর প্র্যাকটিস করে ইত্যাদি। এরকমই এক ঘুরে বেড়ানোর সময় বনের মধ্যে পাকসেনাদের মুখোমুখি হয়ে যায়। নিশ্চিত ধর্ষণের হাত থেকে তাকে রক্ষা করে এক দলচ্যূত পাকসেনা ওয়াসিম। বাঙলা ছবির ফর্মুলা অনুযায়ী নায়িকারা জীবন কিংবা ইজ্জত বাচানোর কৃতজ্ঞতা স্বরুপ নায়কের প্রেমে পতিত হয়। এছবিতেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাঙালির দুশমন এক পাকসেনা মেহেরের ইজ্জত রক্ষা করলে মেহেরের কৃতজ্ঞ হয়ে উঠতেই পারে। মেহের তা প্রকাশ করেও বটে। আহত অবস্থায় ওয়াসিম রাহী নামের এক গায়েনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে সে ওয়াসিমের সেবাও করে। কিন্তু মেহের কি কারণে শত্রু সেনা ওয়াসিমের প্রেমে পড়ে সে রহস্য কিন্তু ঘোচেনা। এই যুদ্ধের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকবাহিনী উভয়ই যে ওয়াসিমকে খুজছে সেই ওয়াসিমকে নিয়ে মেহের দিব্যি গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। প্রেম করে। একসময়ে তার প্রেমাকাঙ্খি মুক্তিযোদ্ধা খালাতো ভাইয়ের চোখে পড়ে যায়। ওয়াসিম বন্দী হয়। সেই খালাতো ভাই মেহেরকে তার "জেনুইন" ভালোবাসা জানাতে গিয়ে চড় খায় । আবার পাকসেনার প্রতি ভালোবাসা জানাতে গিয়ে মেহেরকে তার বুদ্ধিজীবি পিতার হাতে চড় খেতেও হয়েছে।

এই “নারীবাদী” ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা বা বাঙালি বুদ্ধিজীবী পুরুষ চরিত্রের নির্মাণটি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। মেহেরের বুদ্ধিজীবি পিতা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে আশ্রিত, যে সরাসরি যুদ্ধে না গেলেও পাকসেনার সাথে প্রেমের অপরাধে নিজের মেয়ের গায়ে হাত তুলে তার পৌরুষের প্রকাশ ঘটায়। মেহেরের খালাতো ভাই মুক্তিযুদ্ধে গেলেও যুদ্ধের মাঝখানে এসে মেহেরকে বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখা যায় “যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত” হয়ে যাওয়ার কথা বলে মেহেরের “পাগলাটে” খালাকে বিয়ে করতে। মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী “সুমন সাহেব”কে দেখা যায় পাকসেনা কর্তৃক ধর্ষিত “খানেলাগা” নীলার সাথে শরীরি সম্পর্ক তৈরী করতে। নীলা তার শরীর লোভের কথা তুললে সে মৃদু প্রতিবাদ করে বলে: “এভাবে বলোনা।



“ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত” সমাজের প্রতিনিধি, একসময়ের মুসলীম লিগার, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিসহানুভূতিশীল, খাজা সাহেবের সাথে সামন্ততন্ত্র, যুদ্ধ, রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে তর্কে কুলিয়ে উঠতে পারেনা বিপ্লবী “সুমন সাহেব”। ছাত্র ইউনিয়ের সাবেক কর্মী নীলার মুখ থেকে দর্শক জানতে পারে নীলার বামপন্থী স্বামীর দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হওয়ার খবর। গোটা ছবিতে একজন মুক্তিযোদ্ধারও কোন পজিটিভ চরিত্রায়ন আমরা পাইনা যেন সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা পুরুষতান্ত্রিক, বিয়ে পাগল, দুর্বল চিত্ত, কোন্দল প্রিয়। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে পাকসেনাদের মধ্যথেকে ওয়াসিমের মতো একটা পজিটিভ চরিত্রকে পাই যার মধ্যে নারী ও প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতার প্রকাশ ঘটে! ওয়াসিম চরিত্রটির রিপ্রেজেন্টেশানটিও লক্ষণীয়।



যুদ্ধকালীন সময়ে পলাতক ওয়াসিমকে মেহেরজানের সাথে প্রেমকরবার সময় যে পোশাকে এবং যে ভঙ্গিতে হাজির করা হয় তাকে পরিচালকের ফ্যান্টাসি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! গত শতাব্দির বিশের দশকে হলিউডের আইকন রুডলফ ভ্যালেন্টাইনের ফেমিনিন ইমেজের কথা এ ক্ষেত্রে স্মরণীয়। ভোক্তা হিসেবে ক্রমশ গুরুত্ব পেতে থাকা নারীদের জন্য তার এই ইমেজ গড়ে তোলা হয়।



ছবি: রুডলফ ভ্যালেন্টাইন



ছবি: শেখ (Sheikh)ছবিতে রুডলফ ভ্যালেন্টাইন

নিজের এইধরণের ইমেজ সম্পর্কে রুডলফ ভ্যালেন্টাইনের বক্তব্য:

“Women are not in love with me but with the picture of me on the screen. I am merely the canvas on which women paint their dreams.”

“নারীরা আমাকে ভালোবাসেনা, ভালোবাসে সিনেমার পর্দায় আমার ইমেজকে। আমি তো স্রেফ একটা ক্যানভাস যার উপরে নারীরা তাদের স্বপ্ন আকে।”

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত নারী দর্শকদের মধ্যে যে একটা ভোক্তাশ্রেণী তৈরী হয়েই আছে যারা মেইল গেইজ বা পুরুষালী দৃষ্টিতে নারীর শরীর দেখতে দেখতে ক্লান্ত। ফলে এখন তাদের আবজেক্ট অব ডিজায়ার হিসেবে, ফিমেইল গেইজ এর উপভোগ্য হিসেবে ওয়াসিম চরিত্রটিকে নিয়ে পরিচালকের এই “সময়পোযোগী” ফ্যান্টাসি।



ছবি: ওয়াসিমকে নিয়ে মেহেরের ফ্যান্টাসি

মেহেরজান ছবির “দেরাজ ভর্তি গল্পের ভান্ডারে” আরও আছে সালমার গল্প; মেহেরের খালা, “অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন পাগলাটে” স্বভাবের যে তার নিজের তৈরী কল্পনার রাজ্যে থাকে। মেহেরজান ছবির কল্পনারাজ্যের কর্তা, ছবির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন স্বয়ং এই চরিত্রটির ভুমিকায় অভিনয় করেন। পরিচালকের নির্দেশে যেমন ছবি আগায়, তেমনি সালমার অন্তদৃষ্টি অনুসরণ করেই যেন মেহের পাকসেনা ওয়াসিমের প্রেমে পড়ে। সালমা যেন বাস্তবের পরিচালকের ফ্যান্টাসির পারসনিফিকেশান। নারীবাদি ডিসকোর্সের জায়গা থেকে এই চরিত্রটি সম্ভাবনাময় হলেও শেষ পর্যন্ত সালমার কল্পনা পুরুষ শাসিত সমাজ নির্দেশিত নারীর চূড়ান্ত পরিণতি “বিয়ে”কে ঘিরেই আবর্তিত হয় এবং এক পর্যায়ে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত “লম্বু” এক মুক্তিযোদ্ধার সাথে বিয়েতেই পরিসমাপ্ত হয়।

ছবিতে মেহের চরিত্রের সমান্তরালে বিকশিত হয় মেহেরের খালাতো বোন নীলার চরিত্রটি। ছবির ব্রশিওর অনুসারে নীলা “পাক সেনাদের ধর্ষনের শিকার হয়ে ফিরে আসে কিন্তু আত্মগ্লানিতে না ভুগে পথ খোজে প্রতিশোধের।“ নীলা শেষ পর্যন্ত পেয়ারা বাগানে যুদ্ধরত নারীদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু আর আগপর্যন্ত নীলাকে একরকম হিস্টিরিয়া গ্রস্থ হিসেবেই হাজির করা হয় যেন ধর্ষণের শিকার হয়ে হিস্টিরিয়া গ্রস্থ না হলে নারী মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেনা! নীলার মুখে পাকসেনাদের দ্বারা ধর্ষণের আগেও পুরুষ শাসিত সমাজব্যাবস্থায় পুরুষের লালসার শিকার হওয়ার কথা শোনা গেলেও, সুমন সাহেবের মতো “ভাউরা” পুরুষের প্রতি বিবমিষা ফুটে উঠলেও পরক্ষণেই দেখা যায় নীলা একরকম জোর করেই ভাউরা সুমনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে এবং এরপর নানা খাজা সাহেবের কাছে “সুমনের সাথে বিয়ে না হলে আমার কি হবে” জাতীয় কথা বলছে!



আখ্যান শেষে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে; পরিণত বয়স্ক মেহেরকে দেখা যায় ভারমুক্ত হয়ে নতুন ভাস্কর্য গড়তে আর সারাহ চলে যায় নিজের জীবনের পথে “A passionate nomad” এর মতো।



ছবির সংলাপ ভীষণ দুর্বল- বক্তব্য ও পক্ষেপণ উভয় বিচারেই। ৩৮ বছর আগের ঘটনা-পরিস্থিতি নিয়ে নির্মিত ছবিতে ডিজুস উচ্চারণ বেশ কানে লাগে। একই সাথে সেসময়ের মেহেরের গায়ে বলিউড ধাচের পোশাক চড়িয়ে দেয়াটাকে বেশ “সাহসী” ফ্যান্টাসী বলা যেতে পারে। অবশ্য পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন মেহেরজান ছবির উপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি তে বলেছেনই যে ছবিটা রিয়েলিটি আর ফ্যান্টাসির সমন্বয়। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্ভরকরে নির্মিত এই কথিত “যুদ্ধ ও ভালবাসার ছবি”তে এই রিয়েলিটি আর ফ্যান্টাসির মাখামাখি করতে গিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত একটা “ফ্যান্টাসাইজড রিয়েলিটি” বা কল্পিত বাস্তবতা তৈরী করে বসেছেন যেখানে মুক্তিযুদ্ধ খুব বেশি হলে বিকৃত/খন্ডিত/আরোপিত এক ব্যাকগ্রাউন্ড।

কল্লোল মোস্তফার লেখার লিংক- Click This Link

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: সচলায়তনে প্রকাশিত অনিন্দ্য রহমানের রিভিউটা এইখানে মন্তব্য আকারে দেওয়া হলো

‘মেহেরজান’: পাকিসঙ্গমের ফোকফ্যান্টাসি

সিনামাঠাকুর

লালনরে নিয়া গৌতম ঘোষ সিনামা করল। সেইটার নাম রাখল ‘মনের মানুষ’। সেই সিনামায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে - যেহেতু সে জানতই না দেশে লালনের মত রত্ন আছে সেহেতু লালনকে এই প্রশ্ন - আপনার জন্য কী করতে পারি বলুন? লালনের উত্তর সিনামাখান দেখলেই জানবেন। যা জানবেন না সেইটা হইল লালন আসলে কী বলছে।

বাঞ্ছা করি লালন এই কথা বলছিল: কিছুই করার দরকার নাই গো ঠাকুর, খালি পারলে আমারে নিয়া আর সিনামাটিনামা বানায়েন না।

ঠাকুর কথা রাখে নাই।

তারা কথা রাখে না। বড়লোকের নাতিরা আমাদের উপর সিনামা কইরা দেয়। কেউ কেউ নিশ্চয়ই চায়, তারা এইসব আর না করুক। কিন্তু তারা আমাদের রেয়াত দিবে ক্যান? তাই একদিন আমাদের উপর ‘মেহেরজান’ নামের সিনামা কইরা দিল বড়লোকের নাতিরা।

কারা এই বড়লোকের নাতি

বড়লোকের নাতি কি কোনো গালি? যেকোনো কিছুর নাতি হওয়া কি দোষের? জন্মে তো কারো হাত নাই। তাইলে আসো, এই বিষয়টা নিয়া একটু ভাবি। বড়লোক বড় কারণ সে পূঁজির মালিক। যার কাছে যত পূঁজি সে তত বড়লোক। বড়লোকের নাতি জন্ম থাইকা পূঁজি হাতে পায়। দিনকাল ভাল থাকলে সে ঐ পূঁজির উপব্যবস্থাপক হয়া উঠে। বড়লোকের নাতি অর্থ পুঁজির উপব্যবস্থাপক। পুঁজি হারাম হইলে সে হারামিপনা করে। হালাল হইলে হালালিপনা। আর হারাম না হালাল বুঝা না গেলে, স্রেফ উপব্যবস্থাপনা।

‘মেহেরজান’ নাম রাখা সিনামার রুবাইয়াত নামের ডাইরেক্টর আপাতত পুঁজির উপব্যবস্থাপনা করছে। সিনামা করতে এইটা করতেই হয়।

ছোটলোকের কথাকিরিঞ্চি

কিরিঞ্চি শব্দের মানে আমি জানি না। আপাতত এইটা ইংলিশ প্রবলেমেটাইজেশনের বাংলা। গায়ত্রী চক্রবর্তীর ইংলিশ লেখায় দেখছি সে এই শব্দ ভালো পায়। গায়ত্রী ছোটলোকের কথাকিরিঞ্চি নিয়া উনিশশো অষ্টআশি সনে একটা কাহিলকরা লেখা লিখছে। নাম ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক’। ছোটলোকেরা কি কথা কইতে পারে?

আঁকায়া বাঁকায়া সে অনেক কথা বলছে সেইখানে। কিন্তু সোজা উত্তর হইল, পারে না।

উত্তরঔপনিবেশিককালে, সাদা চামড়া ও মন-সাদারা ছোটলোকের না বলা কথা নিয়া ব্যপক উত্তেজিত হয়া পড়ে। তারা ছোটলোককে শিল্পসাহিত্যসিনামায় কথা বলতে দিতে চায়। কেউ কেউ ‘বাকি ইতিহাস’ লিখতে উদ্যোগী হয়। এতকাল ছোটলোকেরা নির্বাক আছিল। তারা এই না-ইনসাফি মানে না। দারুণ।

কিন্তু গায়ত্রী বলে, থামো, পারবা না। কারণ, এক, তোমরা ছোটলোকদের ছোটলোক ছাড়া আর কিছু ভাব না। তাদের ছাতুর গোলার মতো কিছু একটা ভাব। আর দুই, তাদেরকে কথা বলতে না দিয়া তুমি নিজেই মাইক্রোফোন অ্যাবিউজ কইরা যাইতাছ।

ছোটলোকের শিল্পসাহিত্যসিনামা ফালানির সময় নাই। আর সে যখন সত্যিই কথা বলবে, তখন ‘বাকি ইতিহাস’ কপচানোর সুযোগ তুমি পাইবা না।

তারপরও ‘মেহেরজান’ বাকি ইতিহাস লিখতে চায়।

উফ! যুদ্ধটুদ্ধ

যুদ্ধের সময় বড়লোক মেহেরজান তার নানা খাজাসাবের এলাকায় যায়। খাজাসাব, যে নাকি ছোটখাট জমিদার, চায় না এইসব ব্লাডশেড হোক। তাই সেই এলাকায় যুদ্ধটুদ্ধ হয় না। খালি একদিন মিলিটারি আইসা পড়লে, এক বালুচিসেনা মেহেরজানেরে সম্ভাব্য ধর্ষণের হাত থাইকা বাঁচায়। মেহেরজান বালুচির প্রেমে পড়ে। মেহেরজানের আঠারো, তার এইসব যুদ্ধটুদ্ধ ভাল্লাগেনা। আর বালুচি ওয়াসিম খান, যেহেতু মুসলমান মারতে অপারগ, তাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর চোখে গাদ্দার। এহেন ভাল বালুচিরে খারাপ মুক্তিযোদ্ধা, মেহেরজানের খালত ভাই, মারতে চায়। কারণ, মেহেরজানের খালত ভাই মেহেরজানকে বিয়া করতে চায়। সুতরাং, ওয়াসিম খানরে একদিন পালায়া যাইতেই হয়। সে আর ফিরে নাই।

এইটাই মেহেরজানের ট্র্যাজিডি।

উফ! এইসব যুদ্ধটুদ্ধ না হইলে চলত না?

বীরাঙ্গনার নাবলা কথা

মেহেরজান সিনামার ইউএসপি হইতেছে বীরাঙ্গনা। সিনামাওয়ালারা বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যমগুলায় বীরাঙ্গনা বীরাঙ্গনা বইলা ফেনা তুলে ফেলছিল। এই ছবিতে বীরাঙ্গনা আছেও একজন, তার নাম নীলা। নীলা, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে, পাকিস্তানী মিলিটারি ক্যাম্প থাইকা ছাড়া পায়া খাজাসাবের বাড়িতে আসে। খাজাসাব, যে নাকি ছোটখাট জমিদার, তারও নানা লাগে। মেহেরজান খালত বোন। নীলা প্রতিশোধ নিতে চায়। পাকিস্তানী মারতে চায়। কিন্তু মাঝখান দিয়া তার সাথে প্রেম হয় চিনপন্থী বামনেতার সাথে। সে যুদ্ধ শেষ না হইতেই জানে, এই যুদ্ধ ‘বেহাত’ হবে। মুসলিম লিগার খাজা সাবের সাথে সে একমত। এইভাবে চিনপন্থী আর মুসলিম লিগারদের তালমিলের অনিচ্ছাকৃত আলামত পাওয়া যায় এই সিনামায়। তো, এই চিনাবামও নীলাকে শারীরিকভাবে পাইতে চায়। নীলা ডায়লগ দেয়, সব পুরুষ এক। পাকিস্তানি মিলিটারির আগেও সে যৌন নিপীড়নের শিকার হইসে।

তোমরা খামাখা খালি পাকিস্তানিদের এক তরফা দোষ দাও।

‘যুদ্ধে যুদ্ধে আমি ক্লান্ত’

মেহেরজান সিনামায় তিন মুক্তিযোদ্ধার দেখা পাই।

একজন মেহেরজানের খালত ভাই, তার বিশেষ ডায়লগ হচ্ছে, মা আমি মরতে চাই না। আমি বিয়া করতে চাই। মানে তার যুদ্ধ ভাল্লাগেনা। মেহেরজানকে পাইলে, সে এইসব আকাজে আর কালক্ষয় করত না। কিন্তু আফসোস মেহেরজানের মনে বালুচি সেনা।

দ্বিতীয়জন, মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার। সে খাজাসাবের এলাকায় ঘাঁটি গাড়ছে। খালি ঘুইরা ঘুইরা খাজাসাবের কাছে আসে। ‘খাজা সাহেব অনুমতি দেন, আমরা অ্যাকশনে যাই’। খাজাসাব বলে নো। আমি এলাকায় মারামারি চাই না। তাই মুক্তিবাহিনী মুক্তিযুদ্ধ নামের মারামারিতে ফাইনালি যাইতে পারে না।

তৃতীয়জন, ছোট মুক্তিযোদ্ধা। সে খাজাসাবের মেয়েরে বিয়া করতে চায়। তারও মুক্তিযুদ্ধ ভাল্লাগেনা। সে খাজাসাবের বিয়া-পাগল মেয়েরে চায়। খাজাসাবকে বলে, যুদ্ধে যুদ্ধে আমি ক্লান্ত।

বাংলাদেশে এই তিন প্রকারেরই মুক্তিযোদ্ধা আছিল বইলা প্রত্যয় হয়।

খাজা

- যে নাকি ছোটখাট জমিদার, তার পরিচয় দেই। খাজা পুরান মুসলিম লিগ নেতা। আলিগড়ের পড়াশুনা। কলকাতায় থাকত। সাতচল্লিশে পূর্বপাকিস্তানে দেশের বাড়িতে চইলা আসে। সেইখানে অনেক জমিজমা। সবাই তাকে পীরের মতন মানে। সে বড়লোক। চিনাবামরা তাকে গরিবের রক্তচোষা জোতাদর বইলা চিনে। যদিও লতায়পাতায় আত্মীয়।

খাজার মনে ছিচল্লিশের দাঙ্গার ঘা। সে পাকিস্তানের অখণ্ডতা নিয়া ঘোলা ঘোলা কথা বলে। কিন্তু শান্তি কমিটির মেম্বার হয় না। সে শান্তিকামী। কিন্তু একাত্তরের মানুষ মারা নিয়া একবারও মুখ খুলে না।

খাজা এই সিনামায় ভালো মানুষ। একাত্তরে মুসলিম লিগ হইলেই কেউ খারাপ মানুষ এমন ভাবা ভুল। সে কেমন মুসলিম লিগ একটু দেখা যাক।

খাজাসাব বলে সে লাহোর প্রস্তাবে বিশ্বাস করে না। লাহোর প্রস্তাবে নাকি বাংলার কথাই নাই। লাহোর প্রস্তাব উনিশশো চল্লিশ সনে আনা হইলে, একত্রিশ বৎসর ধইরা সে কেন মুসলিম লিগ এই প্রশ্নের জবাব ডাইরেক্টর দেয় না। এবং ডাইরেক্টর জানাইতেও চায় না, লাহোর প্রস্তাবে ভারতে পশ্চিম আর পূর্বাঞ্চলে মুসলমান প্রধান স্বাধীন ‘রাষ্ট্রসমূহে’র কথা পষ্ট লিখা আছে। তাইলে, খাজাসাব ক্যান মুসলিম লিগ? উপরন্তু খাজাসাব এও দাবী করছে ‘জিন্নাহর দ্বিজাতিত্ত্বে’ তার ঈমান নাই।

বড়লোকের ইতিহাস

খাজাসাব ক্যান মুসলিম লিগ, এই হিসাব দিতে গেলে বলতে হয়, পুরানা সামন্তছক থাইকা সে সরতে পারে নাই। তার মুসলিম লিগ করার কারণ তার শ্রেণীপরিচয়। সংক্ষেপে, এ-ই বাংলাদেশের বড়লোকের বেসিক। তারা, ছোটলোকের কারিগরিতে গণপ্রজাতন্ত্রের উত্থান আজও মানতে পারেন নাই।

তাই এই বড়লোকের নাতিরা মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা নিয়া অস্বস্তিতে থাকে। তারা বলে যুদ্ধ। আর যেকোনো যুদ্ধই তো খারাপ।

‘মেহেরজান’ ছবিতে খারাপ শব্দ যুদ্ধ প্রতি তিন মিনিটে একবার হইলেও আসছে।

আজকে বড়লোকের নাতিরা আমাদের উপর ‘মেহেরজান’ সিনামা কইরা দেয়ার পর মনে হইতে পারে, ১৯৭১ এ যুদ্ধ নামের খারাপ কাজটা আমাদের করা উচিৎ হয় নাই।

নাকি অতটা অনুচিতও হয় নাই? দেশ স্বাধীন তো সেন্সর বোর্ডও স্বাধীন ...

পাকিসঙ্গম

১৯৭১ সনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অগুনতি নারী ও পুরুষকে হত্যা ও অগুনতি নারীকে ধর্ষণ করে। তারা বাংলাদেশরে মারতে পারে নাই। বাংলাদেশ হত্যা-ধর্ষণের চিহ্ন মুছে, উঠে দাঁড়াইছে। খুব দ্রুত, বাঘের ক্ষীপ্রতা নিয়া, উল্টা পাকিস্তানকে হত্যা করছে। পৃথিবীতে ১৯৭১ সনের পর পাকিস্তান বইলা আর কিছু জীবিত নাই। পাকিস্তানের ধারণাকে আমরা মাটিপোঁতা দিছি ঐ বৎসর শীতকালে।

তারপরও, পাকিস্তানের প্রেতাত্মার সাথে সঙ্গমসুখ অনুভব করে, এমন লোক দেখতে পাই। ‘মেহেরজান’ সিনামা ঐ কল্পসঙ্গমের ফোকফ্যান্টাসি।

অনিন্দ্য রহমানের লেখার লিংক- http://www.sachalayatan.com/aninda21/37291

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:২৬

এ আর খান বলেছেন: এইসব লেখার ভীড়ে আমি আর কি বলতে পারি!!! অসাধারন বর্ননা।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৯

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুভিটা দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:২৭

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
1971 - a LOVE story !

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৩৪

Neelpoddo বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে যা বুঝলাম টিপিকাল বাংলা ছবির মানসিকতা থেকে পরিচালক এখনো বের হতে পারেননি।কাহিনী এবং পটভূমি অনেক কিছুর প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই শূন্য দিয়ে গুণই মনে হল।তবুও এ কথা অনস্বীকার্য গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে কিছু একটা করে দেখানোর প্রচেষ্টার জন্য ডিরেক্টরের কিছু সাধুবাদ প্রাপ্য।অল্পকিছু দিনের মধ্যেই বেশকিছু ভাল বাংলা ছবির মুক্তি আমাদের নতুন প্রজন্মের দর্শকদের আবার হলমুখী করেছে।আশাকরি এই ট্রেন্ড বজায় থাকবে সবসময়।এবং এ ধরনের ছবিগুলোর ব্যাবসায়িক সাফল্য কামনা করছি।

দু একদিনের মধ্যে দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।

ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুভি দেখে জানায়েন কেমন লাগলো।

৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪১

কবি ও কবিতা বলেছেন: ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও

৭| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫১

আলোকিত পৃথিবী বলেছেন: ছবির বিজ্ঞাপন দেখেই ছবিটি দেখার জন্য আগ্রহী হয়েছিলাম। মেহেরজানের এই রিভিউ পড়ার পর বুঝতেছিনা ছবিটা হলে দেখবো কিনা। :| :|

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুভি দেখবেন অবশ্যই। নিজে দেখে বুঝতে হবে না?

৮| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫৪

আরাফাত হোসেন অপু বলেছেন: কালকে দেখতে পারি.............মেহের টারে একটু কেমন কেমন লাগে........টিভিতে এড দেখার পর থেকে>>>>>

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:২৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন: দেখা হইলে একটা পোস্ট দিয়েন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো মেহেরকে আপনি কেমন দেখলেন :)

৯| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৩

চতুষ্কোণ বলেছেন: বেশ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। তারপরও ছবিটা দেখার ইচ্ছে আছে। ভালো থেকেন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৭

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ছবি দেখে আপনার মতামত জানায়েন চতুষ্কোণ ভাই।

ভালো থাকবেন সবসময়

১০| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২৮

অ্যামাটার বলেছেন: গঠনমূলক সমালোচনা। সিনেমাটা দেখা হয়নি। পরে মিলিয়ে নিব:)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: পরে মিলিয়ে একটা পোস্ট দিও :)

১১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪৮

সবাক বলেছেন: ওইদিন তাহলে এ সিনেমা দেখার সময় কল দিয়েছিলাম। যাউগ্গা। শামীম যে এতো ভালো সিনেমা সমালোচক, জানতাম না। ব্র্যাভো ব্রাদার! :)

আসলে আমাদের দেশের নির্মাতারা এখনো চমকপ্রদ ঘটনা নিয়ে মুভি বানানো থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। হয়তো তারা পরিশ্রমের মূল্য ফেরত না পাবার দুশ্চিন্তা থেকেই এমনটি করে থাকেন। তবুও ধীরগতি হলেও একটি শুভ দেখা যাচ্ছে। একটু "ব্যতিক্রম" হতে চেষ্টা চলতেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে নির্মাতার উদাসীনতা কিংবা রাজনৈতিক জ্ঞান না থাকার কারনেই বোধ করি বীরঙ্গনা বিষয়টাকে যত্ন করতে পারেননি। তবে একদিকে নির্মাতা এতো বিশাল বিষয় নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানোর সাহস দেখিয়েছেন। আশা করবো এ "সাহস" দিয়ে ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ন কোন বিষয়ে আমাদেরকে পুষিয়ে দেবেন।

খুবই গঠনমূলক সামলোচনার জন্য শামীমকে ভার্চুয়াল কোলাকুলি :)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: তোমার মতো আমিও বলতে চাই- নির্মাতা যে বিশাল বিষয় নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানোর সাহস দেখিয়েছেন আশা করবো সে "সাহস" দিয়ে ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ন কোন বিষয়ে আমাদেরকে পুষিয়ে দেবেন।

মুভিটা দেখে তোমার মতামত জানাইয়ো।

১২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০২

হাসান ইকবাল বলেছেন: আজ মেহেরজান ছবির ১১টার শো দেখার জন্য বের হয়েছিলাম....বন্ধুর ফোন পেয়ে চলে গেলাম আজিজ সুপারের পাঠক সমাবেশে। অনেকগুলো বই নিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।

এখন ব্লগে গঠনমূলক সামলোচনা পোস্টিং >>'মেহেরজান' : ভুল পরিপ্রেক্ষিত ও ভুল ভালোবাসার গল্প>> পড়ে ভালো লাগলো। ছবিটা দেখার ইচ্ছে আছে আগামী সপ্তাহে।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৪০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুভিটি দেখা হলে আপনার মতামত জানায়েন ।

১৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০৯

রেজোওয়ানা বলেছেন: আপানর রিভিউটা ভাল লাগলো।

সিনেমা তেমন দেখা হয়না, এটা কেন যেন দেখতে ইচ্ছা করছে!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৪৪

একরামুল হক শামীম বলেছেন: দেখলে জানায়েন কেমন লাগলো।

১৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৫

আমি রাইন বলেছেন: হয়তো মেহেরজান ছবিটির সব কিছুই ভুল । তবুও আমাদের প্রজন্মের অনেকেই দেখবে এটি। দেখে হয়তো ভাল লাগবেনা তাদের, এমন রিভিউ আমাদের আরও পড়তে হবে। কিন্তু তবুও আমাদের ছবি। অন্তত দেখার আকাংখা জাগার মত ছবি।

এর চেয়ে অনেক নিম্নমানের হিন্দী ছবি দেখে আমরা তৃপ্তি লাভ করি। সেখানে না হয় দেখাই হল একটা বাংলা ছবি।

আপনার রিভিউটা ভাল । অবশ্যই +++ । কারণ আমার নিজের ছবিটি দেখার ইচ্ছা ছিল । এখন আর হয়তো দেখতে যাবোনা।

কিন্তু আর একটি কথা । সিনেপ্লেক্সে কিন্তু আমরা অনেক বিদেশী মুভি দেখি, সেগুলোর সবই মানসম্মত তা কিন্তু না। টাকা যদি জলেই যয়, না হয় দেশী ছবি দেখেই গেল। তাই এমন নেতিবাচক রিভিউগুলো সাথে সাথে না দিলেই মনে হয় ভাল। সমালোচনা তো কদিন পরেও করা যাবে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০৯

একরামুল হক শামীম বলেছেন: এই ছবিটাকে আমার কাছে খুব ভালো মানের মনে হয়নি।

১৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪৩

সামদ বলেছেন: অসাধারন রিভিউ। প্রিয় পোষ্টে নিলাম।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৬| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৪৬

লাল দরজা বলেছেন: বাংলাদেশের অনেক নির্মাতাই জীবনের প্রথম ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মণ করে থাকেন। এ যেনো স্বাধীনতাকে স্যালুট করে পথচলা শুরু করা।

ছবি দেখি নাই লেখা গুলো পড়ে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে করছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি সত্য ঘটনা কোন কল্পকাহিনী নয়। এ নিয়ে গান কবিতা ছায়াছবি যে যাই করুন যেন সত্য নির্মান করেন।

ছবিটা দেখতে দেখতে কত দিন লেগে যাবে কে জানে।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২৭

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ তো আর ইচ্ছামতো উপস্থাপিত হওয়ার মতো বিষয় নয়।

১৭| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:০০

রিমন ঢাকা বলেছেন: ইতিহাস জানতে চাইলে বই পড়েন।সিনেমা সিনেমাই, ঐ টার মাঝে ইতিহাস খোজা বোকামি ছারা আর কিছু না।

সব যুদ্ধের সিনেমায় কল্পিত কিছু থাকে। ডিরেক্টর কখনো ৫% দেয় কোনো টা তে ৮৫% কল্পনা মিশায়।


০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৩০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ছবিটা না দেখেই দুই লাইন বেশি বুঝে এমন মন্তব্য করলেন।

১৮| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৪৪

মা-নবি০৩ বলেছেন: ছবি টা যেহেতু এখন ও দেখিনি তাই এ ছবির বাইরে কিছু বলি । তথাকথিত ভিন্ন ধারার চলচিত্র নির্মাতা এবং (ভিন্ন পেশা থেকে আসা নির্মাতা গামেন্টস ব্যবসায়ি অনন্ত জলিল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা প্রফেসর ও ) ভাব রাজ্যের এমন জগতে বাস করে জগতে আর কোন ভাল সিনেমা হ্য নাই তারা যেটা বানাচ্ছেন সেটা সিনেমা না অবতার একদম সরাসরি উপর থেকে গায়েবী ভাবে নেমে আসবে ।
এটাই সমস্যা

৮০ ভাগ দর্শক ই সিনেমা দেখে সাধারন বিনোদনের জন্য। এ সব পরিচালকরা ২০ ভাগ দর্শকের জন্য ( সুশিল ,বাংলা সিনেমা বিমুখ মধ্যবিত্ত থেকে উপরের দিকের জন্য ,বোদ্ধাদের জন্য ) ছবি বানায় গরম গরম বক্তৃতা সহকারে । অথচ এ দের ৮০ ভাগ দর্শকের চাহিদা আছে এ রকম সিনেমা বানানোর যোগ্যতা আর ক্ষমতাই নে্ই

আর এরা বাংলা বানিজ্যিক ধারার সিনেমার (?!) সমালোচনা করে অবাস্তব আজগুবি কাহিনিী , ঝীবন বোধ হীনতা ,উদ্ভট পোষাক আর অশ্লিলতার জন্য সুতরাং তাদের সিনেমা গুলোতে অন্তত এ দোষ মুক্ত থাকবে নস আশা করি আবার সিনেমা হলে যাই এবং নিরাশ হই (@ রিমন ঢাকা এ টাই হত্শার কারন , ) ঝন্টু পল্টুর ছবি নিয়ে কোন বক্ত্যব নাই কারন তারা যা বানায় তা নিয়ে কোন বকোয়াজ আশা দেয় না

আমি অনেক সিনেমা তাড়ুয়াদের দেখি যাদের জীবনের স্বপ্ন দ্যান একটা সিনেমা বানানো এ সব স্বপ্ন বাজ ( আপাতত অক্ষম) তরুনরা হয়তো এমন ছবি বানাবে যা সব ধরনের ৬০ ভাগ দর্শকের (শিল্প বোদ্ধা থেকে সাধারন জনগনের) ভাল লাগবে

ততদিন পর্যন্ত পরিচালকদেরবলি জাতিকে তাদের স্বপ্নের ছবি এটা না বলে বলুন যে এটা আপনার স্বপ্নের ছবি। জাতি সিনেমা হলে গিয়ে দেখে নেবে তাদের স্বপ্নের সাথে যায় কিনা ।

শেষে বলি তবু ও আপনারা সিনোমা বানান আমরা্ও দেখি (তবে ভাল সিনেমা বানাতে বেশী সময় নিয়েন না in this globalized world every thing run fast আর ভক্তের বন্দনা ভুর হরে তার সমস্ত ভক্তিই কি বৃথা যায় এর কোন যৌক্তিক জবা্ব নেই )

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১৪

একরামুল হক শামীম বলেছেন: এইভাবে বললে তো অনেক কথাই বলা যায়। নিজে চলচ্চিত্র না বানালে কি অন্যের বানানো চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলা যাবে না?

১৯| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:২৪

অনিন্দ্য রহমান বলেছেন: আপনার রিভিউটা ভাল হইসে। আমারটার চেয়ে গোছানো। ধন্যবাদ।

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১৩

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ অনিন্দ্য ভাই।

২০| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪২

আবদুর রাজ্জাক শিপন বলেছেন:
রিভিউ খুবই ভালো হয়েছে শামীম ।

মুভিটা না দেখেও , তোমার বিশ্লেষণে অসঙ্গতিগুলো ধরতে পারছি ।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:০৩

একরামুল হক শামীম বলেছেন: মুভিটা দেখলে আরও বুঝতা, অসঙ্গতি কতো প্রকার

২১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৪৩

ধ্রুব তারা বলেছেন: ভাল লেখস। কাল দেখলাম মুভিটা। হাস্যকর প্রেম কাহিনী। কিছু সময় মনে হয়েছে এই হাস্যরস উদ্দেশ্য প্রণোদীত।
ছবিটিতে সোশালিস্ট-কমিউনিস্টদের পাকিদের কাতারে দাড় করানো হয়েছে। যে পাকি আর মুক্তি সবাই চায় ব্লাডশেডিং। দু'দলই রক্তলোভী।
এমনকি শেষ পর্যায়ে খাজাকে বস্তুত কে হত্যা করেছে তা-ও দেখানো হয়নি। সুমনের হাতে বন্দুক ছিল। পাকিদের হাতে-ও।
আবার নরম্যাল পোষাক ফ্যান্টাসি বাদেও স্লিভলেস বা অতোটা আঁটো জামা বাস্তবে ঐ সময় কতজন মেয়ে পরতো তা দেখার বিষয়। আর নীলা-এর চরিত্রটা কিন্তু সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত সাহসী। হয়তো সময়ের তুলনায় বলা চলে উগ্র। তাকেও দেখানো হয়েছে আবার ইউনিয়নের।
হয়তো আমি-ই বেশি কন্সপাইরেসির কথা বলছি।কিন্তু তারপরেও চোখে বড্ড বাঁধছে ব্যাপারগুলি।
তবে একটা জিনিষ মুভির একেবারেই বুঝিনি সেটা হল ঐ পাকিস্তানী ছেলেটিকে মাঝে মাঝে গ্রীক দেবতার মতো পোষাক পরালো কেন? আবার মাঝে একবার (নদীর মাঝে ছেলেটা লাফ মারে) শাহরুখ খানের 'দিল সে' মুভির মতো একটা সিন ও ছিল।
রিভিউ ভাল লাগসে...

২২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৫৬

সামী মিয়াদাদ বলেছেন: ঢাকা এসে প্রথম কাজ হচ্ছে মেহেরজান দেখা।

২৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:১২

মনির হাসান বলেছেন: পুরাই তো ছাগ'বান্ধব সিনেমা মনে হচছে । গুড । এরপর ৭১'রের পাক'গাথা পর্দায় আসলে ষোল কলা ।

রুপালী পর্দায় মাইল্ড আকারে ছাগু প্রোপাগান্ডা শুরু হয়ে গেল বোধয় ।

২৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:২৮

শেখ আমিনুল ইসলাম বলেছেন: এক নজর চোখ বুলিয়েই বুঝেছি অসাধারণ রিভিউ। সকালে মনোযোগ দিয়ে পড়ব :)

আপনি অনুমতি দিলে ই-বুকের জন্য এই রিভিউটাও নিতে চাই :)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৩১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ঠিক আছে আমিনুল ভাই।
অনুমতি থাকলো।

২৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪২

হাসান ইকবাল বলেছেন: আজ দুপুরে STAR CINEPLEX-এ মুভিটা দেখলা........মেহেরজান নিষিদ্ধ হবার প্রেম মত কিছুই পেলাম না.......এেত করে নিষিদ্ধবাদীদের জয় হবে।

হুম....... তাদের হুমকি ও নিন্দার মধ্যে সুস্থ বিতর্ক করতে যাওয়াও আত্মঘাতী।

২৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৩৮

সৈয়দ ফয়সল রেজা বলেছেন: রিভিউ পড়ে দেখার ইচ্ছা মরে গালো। রিভিউটা ভালো হয়েছে। +

২৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫৮

মাসিক চন্দ্রবিন্দু বলেছেন: আমি কি আপনার ফেসবুক বন্ধু হতে পারি? (ফেসবুক আইডি)
Click This Link


২৮| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:১৮

ল্যাটিচুড বলেছেন: মুভি রিভিউ চমৎকার হয়েছে ....... দেখার ইচ্ছে রইল।

আপনি ভাল থাকুন

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১৩

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ভালো থাকবেন।

২৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৩৪

কালকুট বলেছেন: রিভিওটা চমৎকার হয়েছে।


আপনার সাথে আমি পুরাই একমত।

আগেই প্রিয়তে নিয়েছিলাম, এবার পড়লাম।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৪৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৩০| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৭

সত্যবাদী মনোবট বলেছেন:
বসন্ত ডাকছে তোমায়
তুমি কোথায়......

বসন্তের হাত ধরে চলে এসো এই ঠিকানায়.....আহা!! আজি এ বসন্তে

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: দেখলাম ছবিগুলো।

৩১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা ভাল। পড়ে ভাল লাগল

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ২:০১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৩২| ০৬ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:৫৬

মানবী বলেছেন: দীর্ঘদিন পর এতো বড় বাংলা লেখা পড়া হলো, রিভিউয়ের স্টাইলটি চমৎকার বলেই প্রায় পুরোটা একটানে শেষ হলো :-)

সঙ্গত কারনেই চলচ্চিত্রটি'র নাম ব্লগেই প্রথম দেখেছি। কি কারনে এতো হৈ চৈ তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয় তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বল ক্লান্ত হিসেবে প্রেজেন্ট করা এবং মুক্তিযুদ্ধকালিন সময় যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়িয়ে যাওয়া দৃষ্টিকটূ ও অসঙ্গতিমূলক মনে হলো।

তবে যে যোদ্ধা নিজের দক ত্যাগ করে নিজ দলের শত্রু হয়ে উঠেছে তাকে সেই সময়ও শত্রুবাহীনি মনে করা কতোখানি যৌক্তিক! দেশ জাতি নির্বিশেষে সকল দেশের সামরিক বাহীনি তাদের দেয়া হুকুম বা নির্দেশে চলতে বাধ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকবাহীনির বর্বরোচিত হামলা ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ দেখে যদি পাকবাহীনির কেউ দলত্যাগ করে তা সাধুবাদ পাবার যোগ্য বলেও মনে হয়। প্রধান কারন, একজন পাকসেনার দল ত্যাগের অর্থ আমাদের একজন আক্রমণকারীর সংখ্যা কমা, এক জন পাকসেনাকে ঘায়েল করতে যেয়ে অনেক সময় বাংলদেশী যোদ্ধারা আহত অনেক সময় নিহত হয়েছেন.. এটা অনেকটা রক্তপাত বিহীন জয়ের মতো!

তাই শুধু এই কারনে চলচ্চিত্রটি যদি আলোচিত ও সমালোচিত হয় তাহলে তা অযৌক্তিক হবে।

চলচ্চিত্রের পোশাকের ব্যাপারটি ইন্টারেস্টিং! মন্তব্যের ঘরে দেয়া সমালোচনা পড়া হয়নি তবে ছবিগুলো দেখে হাসি পেলো.. বিশেষ করে রোমান সম্রাটদের মতো সেলাই ছাড়া আলখেল্লা আকারে পড়া রোব জাতীয় পোশাকটি দেখে :-)

পোস্টটি পড়ে সিনেমাটি দেখার আগ্রহবোধ করছি।সুন্দর রিভিউয়ের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: এই চলচ্চিত্রের আলোচনা-সমালোচনার বড় কারণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা। সবাই ক্লান্ত, বিয়েপাগল।

আপনার মন্তব্যটা পড়ে ভালো লাগলো আপু। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.