নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোজা

মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ।

তানভীর- বিন- হাসান

ভোরের আলোয়, দুপুর রোদে আর হয়নাকো সুড়সুড়ি। হচ্ছি আমি বুড়োই ভীষণ, হচ্ছ তুমি বুড়ি। [email protected]

তানভীর- বিন- হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিডল ক্লাস ইয়ু হেইল।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

বৈকালিক আড্ডায় বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় দেখি জটলা। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ মারা গেছেন। খুব একটা বিখ্যাত লোক ছিলেন না, কিন্তু সবার মধ্যে সচরাচর যা দেখি তার চেয়ে বেশী শোকের ছায়া।



ঘটনা পুরোপুরি জানার পরে বুঝলাম, যতটা না মানুষ টার বিদায়ের দুঃখ, তারচে ঢের বেশী আর্থিক ক্ষতির।



সাধারণ বাঙ্গালী বড় অদ্ভুত। বাংলাদেশে ব্যাংকের অভাব নেই, কিন্তু তারা অর্থ গচ্ছিত রাখবে অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রতিষ্ঠানে। ইয়ুনিপেটুইয়ু, স্পিক এশিয়া, নানা এমএলএম ব্যবসায় ধরা খাবে, প্রতারিত হবে, নিঃস্ব হবে, সর্বস্ব খুইয়ে রাস্তায় বসে থাকবে। আবার অর্থের মালিক হবে, আবার সেই একই ভুল করবে।



জনতার এই লোভী অংশকে নিয়ে খেলা করার জন্যে খুব বেশী বুদ্ধিমান হতে হয় না। মৃত ব্যাক্তি নিজেও অসৎ ছিলেন না। তার একমাত্র ছেলে সন্তানকে মাসিক পনের হাজার টাকার একটি চাকুরী দিয়ে ও তাকে তার গচ্ছিত ৭৫ লক্ষ টাকার উপরে বার্ষিক ২৪ শতাংশ হারে লাভের(বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা আরোপিত তফশিলী ব্যাংক গুলোর সিলিং ১২ শতাংশ) ব্যাবস্থা করে দিয়ে প্রথমে একটি সমবায় সংগঠন তার বিশ্বস্ততা কেনে। তিনি এলাকার লোকেদের বিশ্বস্ত ছিলেন, এরপর তার নিজের বিশ্বাস টুকু দায়ে রেখে তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্যে এই এলাকা থেকেই প্রায় কোটি টাকার উপরে জোগাড় করেন নানা মানুষের।



বেশী লাভের লোভের লকলকে জিভ টা কাওকে ছাড়ে না। গত তিন চার মাস ধরেই অনেকের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যার্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে পাওনাদারেরা চাপ দিয়ে আসছিলেন ঐ ব্যাক্তিকেই। কারণ, সবার কাছে প্রতিষ্ঠানটি ছিলেন তিনি-ই।



আজ আর সহ্য হোল না তার। পাওনাদারের ক্রমাগত চাপে ভেঙ্গে পড়ে, এক পাওনাদারকে দেখেই স্ট্রোক করে মারা গেলেন তিনি। রেখে গেলেন ২২ বছরের একমাত্র ছেলেকে অজস্র ক্ষুধার্ত দৃষ্টির সামনে।



আমাদের পাড়া টি কোন অজপাড়াগায়ের পাড়া নয়। এখানকার মানুষ শিক্ষিত, যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষিত। শহরের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদস্থ একটি পাড়া। বানিজ্যিক অঞ্চল। এখানেই এইসব আকাশ কুসুম স্বপ্নের চাষ করে, হাজার মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ, পরিবার ভাঙ্গনের অযাচিত কষ্ট দেখতে হবে ভাবিনি কখনো।



অদ্ভুত... কি অদ্ভুত...!!!!!!



বাংলাদেশে সহজে ধনী হতে গেলে আপনার হতে হবে গড়পড়তার চেয়ে একটু বেশী চালাক। হতে হবে একটি অসৎ মনের অধিকারী, আর ঝুঁকি নিতে হবে না কিছুই।



এখনো কোটিখানেক মানুষ বসে আছে বোকা হবার জন্যে। জাল ফেললেই এরা কুপোকাত হবে। মধ্যবিত্তের আদর্শ নিয়ে মানুষ করেছেন মা। মধ্যবিত্তের আদর্শ থেকে বেরুনো তাই সম্ভব না।



নচেৎ, হয়তো আমিও হতাম বিশাল প্রাসাদসম কোন অট্টালিকার মালিক। কষ্টের চাকুরীর বেতন দিয়ে ধীরে ধীরে, শম্বুক গতিতে কবে জীবন সাজাবো, বোনদের কবে মানুষ করব সেসব না ভেবে করতাম ডিজেতে ঢুকে লুঙ্গি ড্যান্স... সিসা বারে প্রতিদিনের ধুম্রপান আর ডজনখানেক জিএফ/ বিএফ দের সাথে নিয়ে গ্র্যান্ড ডেট।



উহু, সে ভাবনা কখনোই আসলে আসেনা মধ্যবিত্তের।



বরং, ফেবু- ব্লগে আদর্শ বিলাস অনেক বেশী সুখ দেয় আমাদের। কেউ কিছু বলুক, মুখ- ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকুক, কি-বোর্ড চাপতে আর কলম পিষতে কষ্ট হয়না এতটুকুও।



এত কিছুর মাঝেও, এত অসঙ্গতির মাঝেও দিন শেষে কিন্তু ঠিকই আমরা মধ্যবিত্তেরাই তাই সবচেয়ে ধনী। মাথা উচু করে সত্য কথাটা আমরাই বলতে পারি। আদর্শের বুলি আমাদের মুখেই মানায়। সততার কথা আমাদের মুখেই মানায়।



বাড়ির বেডরুমেতে এসির শীতল হাওয়া বাইরের চামড়া হয়তো শীতল করবেনা কখনো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা আমাদের বেডরুমের নিরাপত্তা হয়তো বিধান করবেন না কখনো...



কিন্তু মনটা ঠিকই শীতল থাকবে।



হাজার টনি এসির বাতাস মারবে ফেইল...



মিডল ক্লাস ইয়ু হেইল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এত কিছুর মাঝেও, এত অসঙ্গতির মাঝেও দিন শেষে কিন্তু ঠিকই আমরা মধ্যবিত্তেরাই তাই সবচেয়ে ধনী। মাথা উচু করে সত্য কথাটা আমরাই বলতে পারি। আদর্শের বুলি আমাদের মুখেই মানায়। সততার কথা আমাদের মুখেই মানায়।

বাড়ির বেডরুমেতে এসির শীতল হাওয়া বাইরের চামড়া হয়তো শীতল করবেনা কখনো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা আমাদের বেডরুমের নিরাপত্তা হয়তো বিধান করবেন না কখনো...

কিন্তু মনটা ঠিকই শীতল থাকবে।

হাজার টনি এসির বাতাস মারবে ফেইল...

++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.