নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাস্থের জন্যে চরম ক্ষতিকর সিগারেটের পাল্লায় প্রথম পড়ি ক্লাস থ্রি তে।
ইঁচড়ে পাকা চাচাতো ভাই বাপ্পা, আমার সামান্য কয়েক মাসের বড়। ওরা থাকতো আমার দাদা বাড়িতে। পুরোনো আমলের দোতলা বাড়ি। কড়ি বর্গার ছাদ। আনেক বড় বাড়ি। যেখানে সেখানে সারাদিন লুকিয়ে থাকলে কেউ খুজে পাবে না। এক ই শহরে আমাদের বাড়ি থেকে বেশ কাছেই।মাঝে মাঝে ঐ বাড়িতে দাদির সাথে দেখা করতে যেতাম বাবা মায়ের সাথে। ঘোরানো প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে খেলা করতাম, ঘুড়ি ওড়াতাম, ছাদে খুব চওড়া রেলিং ছিলো ওর উপরে উঠে বাঁদরামি ও করেছি অনেক।
তা একদিন গেলাম ঐ পাড়ায় মায়ের সাথে। আমার নানা বাড়ি কাছেই, তাই মা আর কাকিমা গেলো সেখানে। দূর্গা পুজো চলছিলো আর ঐ এলাকায় তখন শহরের বিখ্যাত সব পুজা হতো। আমি আর বাপ্পা কয়েকটা পুজা মন্ডপ ঘুরে দুপুরে বাড়ির দিকে ফিরলাম। ফেরার পথে এক দোকান থেকে বাপ্পা কিনলো এই জিনিষ! ১৯৮৯ সাল, ১ টাকা ২৫ পয়সা পিস।
এর পর রান্নাঘর থেকে ৫০ পয়সা দামের ট্যাক্সি ম্যাচ আর দুটো উইলস কিং নিয়ে সোজা ছাদে।
তার পর মাঝে মাঝে বাপ্পার সাথে দেখা হলে দুই ভাই মিলে টানতাম, আমার খুব বেশী ভালো লাগতো না আবার খারাপ ও লাগতো না। আর ঈদ পর্বে এলাকার কিছু সমবয়সি বন্ধু বান্ধব মিলে আড়ালে আবডালে গিয়ে হালকা পাতলা খাওয়া হতো। বেশীর ভাগ খেতো ক্যাপস্টান (৭৫ পয়সা পিস, তখন এটার ফিল্টার ছিলো না) আর গোল্ডলিফ (অতিরিক্ত কড়া, দেড় টাকা পিস)। শুধু আমার জন্যে একটা উইলসকিং কেনা হতো।
এই জিনিষ খেয়ে বাসায় ফেরার সময় চুইংগাম, ক্যান্ডি থেকে শুরু করে জাম অথবা পেয়ারা গাছের পাতা পর্যন্ত চিবাতে চিবাতে আসতাম। তাও একদিন মা ধরে ফেললো গন্ধ পেয়ে। স্বাস্থগত ক্ষতির কথা কিছু বলেনি, কেন সেটা জানিনা, তবে এখন বলে। হয়তো ঐটুকু বয়সে আমি বুঝতে পারবোনা, তাই বললো, ১৮ বছর বয়স না হলে এই জিনিষ খাওয়া যাবে না! আমার মা কিন্তু যথেষ্ট সচেতন ও মোটামুটি শিক্ষিত একজন মহিলা। একটা ডিগ্রি কলেজের ইকোনোমিক্সের এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে রিটায়ার করেছে ২০২০ সালের শেষে। সে কেন আমাকে এই নিয়ে আর কিছু বললোনা সেটা আমার কাছে একটা রহস্য। আমি তার কাছে এখনো জানতে চাইনি। মায়ের সাথে এই ঘটনা নিয়ে এখনো গল্প হয়। মা যখন সিগারেটের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এখনো আমাকে বলে তাও আমি ইচ্ছা করেই জানতে চাই না কেন বললো আঠারোর আগে খাওয়া যাবে না। আমিতো তখন ভেবেছিলাম তাহলে ১৮ হলে খাওয়া যাবে! তাহলে অপেক্ষা করি ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত।
আমার নানাকে সিগারেট খেতে দেখিনি, কিন্তু নানির বাপের বাপের বাড়িতে তার ভাই রা খেতো। দাদির বাপের বাড়ির কেউ খেতো না শুনেছি। দাদাও শুনেছি খেতো না। আর বাবা, চাচা, কাকারা সবাই সিগারেট খেতো। বড় দুই চাচা তো দাদির সামনেই খেতো। তবে কোন ছোট ভাই তার বড় ভাই বা বোনের সামনে সিগারেট খেতো না। এমনকি ইমিডিয়েট বড় ভাই বোনের সামনেও না।
যাই হোক, আঠারো বছর পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারিনি। স্কুলের বন্ধু শুভ র পাল্লায় পড়ে ক্লাস সেভেনে থাকতে আবার শুরু করলাম। উইলসকিং তখন মার্কেটে নেই। আমার প্রিয় চাচাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিলেক্ট করলাম এই টা।
১৯৯৩ সাল, ২ টাকা ৫০ পয়সা পিস। ১০ টাকায় চারটে দিতো, আমার দিন চলে যেতো। ১৯৯৬ সালে এর দাম হলো ৩ টাকা পিস।
এভাবে চলতে থাকলো। মা অনেক নিষেধ করলো, বুঝালো, বাদ দেয়ার জন্যে পুরষ্কার পর্যন্ত ঘোষনা করলো কিন্তু বাদ দিতে পারলাম না। ছোট ভাই একদিন অনেক কান্নাকাটি করে অনুরোধ করলো, ওর কথায় আমি বেশ কয়েক দিন সিগারেট না খেয়ে ছিলাম।
কথা রাখতে পারলাম না, আবার চলতে থাকলো। তারপর ২০০৬ সালের শেষের দিকে জনপ্রিয় বাংলা ফাইভ State Express 555 বাংলাদেশের মার্কেট থেকে বিদায় নিলো
অনিচ্ছা স্বত্তেও কিনতে বাধ্য হলাম এইটা!
১৯৯৬-১৯৯৭ সাল থেকেই Benson & Hedges বাংলাদেশে তাদের প্রোডাকশন শুরু করে তাই আগের চেয়ে কমে দাম হলো তিন টাকা। আমি যখন খাওয়া শুরু করি তখন ২০০৭ সাল, চার টাকা বা সাড়ে চার টাকা পিস। বাধ্য হয়ে খাই কারণ বাংলা ফাইভ মার্কেটে নেই। মাঝে একবার বিদেশি 555 কিনে খেয়ে দেখলাম, একেবারে অখাদ্য, একজন লন্ডন থেকে এনে দিলো, তাও খাওয়া যায় না। আমার সিগারেট খাওয়া চলতে থাকলো বেনসন দিয়েই। তার পর এলো এই ভ্যারিয়েন্ট!
আমি ভাবলাম লাইট সিগারেট, ক্ষতি কম হবে তাই এটাই খেতে লাগলাম। বাংলা ফাইভ ছাড়া কোন সিগারেট আর সিগারেট মনে হয় না, কিন্তু নিকোটিনের ক্রেভিং আমাকে সিগারেট খাওয়া চালিয়ে যেতে বাধ্য করলো।
তারপর বাবা, মা, ছোটভাই, স্ত্রী সবাই মানা করতে করতে হাল ছেড়ে দিলো। বেনসন লাইট তার বহুজাতিক ভাঁওতাবাজি রেগুলেশনের চাপে বাধ্য হয়ে বেনসন ব্লু গোল্ড নাম ধারণ করলো। আর আমি ভুলে গেলাম বাংলা ফাইভ। বোকার মতো তাও সিগারেট খেয়ে যাচ্ছি, বেনসন ব্লু গোল্ড।
আজকাল নাকি দিন বদলেছে। অনেকে বলে সিগারেট এখন আনস্মার্ট, অশিক্ষিত নিম্নশ্রেণীর লোকে খায়। আমি মনে করি নিজের ভালো বুঝতে না পারা বোকা লোকে খায়। তবুও আমি খাই। অনেক স্বাস্হগত ঝুঁকি আছে আমি জানি। হয়ত এর জন্যে বড় কোন অসুখ হতে পারে তাও জানি। আর্থিক অপচয় ও কম না। এখন একটা সিগারেট ১৫ টাকা পিস। এখন আমি অসুস্থ হলে ছোট বাচ্চা মেয়ে দুটোকে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে পড়তে হবে। তবুও এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারি না।
১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৩৭
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: গুনে খাওয়া শিখতে পারলাম না এখন ও। তবে ১০ টার বেশী খাই না মনে হয়।
২| ১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৩৪
লিংকন১১৫ বলেছেন: মনে পরে গেলো
সেই পেয়ারা পাতা, মুখে পুরে চাবাতাম আর হাতে ডলে নিতাম
লেবু পাতা হাতে ডলে নিতাম, সাথে মাঝে আব্বার আঁতর ও রাখতাম
যেহেতু ঢাকায় বড় হয়েছি, তাই বিভিন্ন বিল্ডিং এর চিপায় গিয়ে খেতাম ২ বা ৪ জন মিলে একটা খেতাম ।
লিজেন্ট নামে একটা আসছিলো হটাত করে আসছিলো আবার হটাত করেই চলে গিয়েছিল ।
মাঝে মাঝে তেজপাতা দিয়ে বানিয়ে খেতাম
১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৫০
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: খারাপ জিনিষ। খাওয়া যাবে না। ভালো থাকবেন।
৩| ১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৩৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বেরিয়ে আসেন। আপনি খুব সহজেই বেরিয়ে যেতে পারবেন আমার ধারনা।
এই জিনিসের প্রতি কোনো টান আমি কখনো অনুভব করি নাই। এক দুইবার টান দিয়েছি, গন্ধ ছাড়া আর কিছু অনুভব করি নাই।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪৫
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: ধন্যবাদ মরুভূমির জলদস্যু। আমার বাবা সৌভাগ্যক্রমে সিগারেট ছেড়ে দিতে পেরেছে প্রায় ১০ বছর আগে। চাচারা যারা সিগারেট খেতেন তারা কেউ আজ বেঁচে নেই, তবে সবাই মোটামুটি ছেড়ে দিয়েছিলেন সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে। এই জিনিষ ছাড়তে গেলে আসলেই শুভকামনা দরকার হয়। আপনি ভালো থাকবেন।
৪| ১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪০
বিজন রয় বলেছেন: চা, কফি, সিগারেট, পান কিংবা অন্য কিছু থেকে আমি একবারেই মুক্ত।
আমার কোন ঝামেলা নেই, নেশা নেই।
আমি ভাল আছি।
সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে হলেও আপনি এসব ছেড়ে দিন।
একবারে না পারেন আস্তে আস্তে কমান।
যেমন প্রথম ৫ দিন ১০, পরের ৫ দিন ৯টা, তার পরের ৫ দিন ৮, এভাবে চেষ্টা করুন।
আশাকরি মুক্ত হবেন।
১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪৯
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: এখন বেশ কমিয়ে দিয়েছি। আমি ইচ্ছা করলে সারাদিনে ৪ টা খেয়ে দিন পার করে দিতে পারি। আসল কথা হলো, পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। আমার জন্যে আশীর্বাদ করবেন।
৫| ১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৫১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বাংলা ফাইভ নিয়ে শুরু করেছিলাম। ঐটাই আমার ব্র্যান্ড ছিল। পরে বন্ধ হয়ে গেলো। আর ২০১৪ থেকে তো ছেড়েই দিয়েছি। এক থেকে দেড় প্যাকেট সিগারেট লাগতো দিনে।
বাংলা ফাইভ এর কথা মনে হয় খুব।
১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৫৪
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: আমার ও মনে হ্য়। তবে সিগারেট আর সোডা, এই দুটি ক্ষতিকর জিনিষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
৬| ১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:২০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
নিকোটিন ছাড়া যায় না সহজে,সর্ব্বোচ ৪ মাস ছিলাম। একটা দিক হলো,আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা নিষেধ করতে করতে হাল ছেড়ে দেয় একসময়।
গোল্ডলিফ লাভার আমি।
১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৩০
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: আমার বাবার সিগারেট ছাড়া নিয়েও একটা গল্প লিখে ফেলা যায়। আসলে খুব শক্ত মানসিকতা দরকার হয় সিগারেট ছাড়তে গেলে। আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা হাল ছেড়ে দেয় এই কারণে যে, এটা এখনো একটা সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য বদঅভ্যাস হিসাবেই দেখা হয়। কিন্তু এটা তার চেয়েও অনেক অনেক বেশী ভয়াবহ একটা আসক্তি।
৭| ১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:২৭
প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: ভালো লেখা।
।
।
অতিরিক্ত কথা -
ধোঁয়ায় যদি স্ট্রোক হতো তবে গ্রামের মানুষ রান্না করা ছেড়ে দিতো
আর প্রত্যেক দেশের সরকার সিগারেট কারখানা বন্ধ করে দিতো
তর্ক অনেক করা যায় ,আসলে সিগারেটের বিরুদ্ধে বলাটা
"বহুজাতিক ব্যবসা".(তবে না খেয়ে থাকাটা ভালো )
১২ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৩২
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: স্ট্রোক তো আর শুধু ধোঁয়ায় হয় না। আরো অনেক ক্ষতিকর ক্যামিকাল আছে সিগারেটে।
বলেন তো, বিড়ি সিগারেট কেনো খাই?
৮| ১২ ই মে, ২০২২ রাত ৮:৪৬
সোনাগাজী বলেছেন:
সিগারেট খাওয়া মানে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনা।
১৫ ই মে, ২০২২ সকাল ১১:৩৪
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: দু:খের বিষয় আমাদের দেশে এখনো এটাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিরীহ একটা বদঅভ্যাস হিসাবে দেখা হয়।বিপদের ব্যাপারটা ঠিকভাবে তুলে ধরা হয় না।
৯| ১২ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫১
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ৫৫৫ খেতাম একসময় । এখন বেনসন।
১০| ১২ ই মে, ২০২২ রাত ১১:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: দাঁড়ান একটা সিগারেট খেয়ে আসি আগে। তারপর মন্তব্য করবো।
১১| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ১১:২২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি সিগারেট খাই না। কাশি আসে তাই কয়েকবার চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। কিন্তু আমার বাবা চেইন স্মোকার ছিলেন। কমপক্ষে দুই প্যাকেট খেতেন প্রতিদিন। হার্টের অসুখ ধরা পড়ার পরও খেয়েছেন। তবে কম মাত্রায়। ৯০ এর দশকে অনেককে ডানহিল খেতে দেখেছি। অনেকে সিগারেট বানিয়ে খেতেন। একটা সিগারেটের নাম ছিল গুডাং গারাম ( জাপানি বা ইন্দোনেশিয়ার সম্ভবত)। অনেক দামী সিগারেট। এক প্যাকেটের দাম ৯০ এর দশকে ছিল প্রায় দুইশ টাকা।
আমার নানীকে সিগারেট খেতে দেখেছি। উনি গ্রামের মানুষ ছিলেন।
১২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
শেরজা তপন বলেছেন: হুম বেশ ইন্টারেস্টিং কাহিনী! দাম দস্তুর সব মনে আছে দেখি
একেবারে সিগারেট ছেড়ে দিলে মনে হয় শেষ বিশ্বস্ত সঙ্গীটাকে হারালাম!!
২২ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৫১
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় লেখক। আমি কিন্তু ব্লগে ঢোকার সময় পেলেই আগে আপনার লেখা পড়ি। সময়ের অভাবে মন্তব্য জানাতে পারিনা তাই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। ভালো থাকবেন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:২৫
বিজন রয় বলেছেন: এখন দিনে কয়টা খান?