নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলা হল না, আর ফেরা হল না

রহমান,তানভীর

বই পড়তে ভালবাসি । কবিতার বই হলে কথাই নেই । হেলাল হাফিজের অন্ধ ভক্ত ।

রহমান,তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প : দ্বিতীয় পর্ব

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

রোজ সকালের মত আজও ছেলেটির রাতের ঘুম হয় না । মাঝে মাঝে সে ঘুমের ওষুধ খাবে বলেও ঠিক করে । কিন্তু কেন যেন ওটা আর করা হয়ে উঠে না । যা হোক সকালের নাস্তার সময় মা যখন ডাকে তখন ঘুম ভালো হয়নি বলে যে দাবি করা হয় প্রতিদিন তা এক অর্থে সত্যিই । কিন্তু মাকে তো আর বলা যায় না । তাই জোর করে উঠে নাস্তার টেবিলে গিয়ে কিছু একটা খেতে হয় । এব্যাপারে সে আর কারো সাথে খুব বেশি কথা বলে না । বলার মত কেউ নেই অবশ্য । আছে, কিন্তু সবাই কে তো আর সব বলা যায় না আর সবাইকে সব বলা হয়ে উঠেও না । ওকে এর ব্যাখ্যা দিতে বললে বলে,"সবাই তো আর সবাই না !" এ কথার আগা-মাথা কেউই বুঝে না । বুঝতে চেষ্টা আগে করত অনেকেই, এখন আর করে না। বৃথা চেষ্টা কতবার করা যায় !



যা হোক, প্রতিদিনের মত সেল ফোনটা খাটেই রেখে এসেছিল সে । অত সকালে ঘুম না হওয়া অবস্থায় কত কিছু দেখবে ও ! তাছাড়া ও তো ঐ কলের অপেক্ষা রাতেই করে । ঘুম না হবার একটা কারণ পাওয়া গেল বটে ! কল না পেতে পেতে ও অভ্যস্ত হয়ে গেছিল । আসলে অপেক্ষা বিষয়টা প্রথমে ভালো । কারণ প্রথম দিকে অপেক্ষার জিনিসটা পাওয়ার একটা প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকে । কিন্তু অপেক্ষা বাড়তে থাকলে শেষ দিকে না পাওয়ার ভয়, শেষ দিকে কোনটাই আর থাকে না । মানুষ ভুলতে শুরু করে । এরকম একটা সময়েই ও কলটা পেয়েছিল । কিন্তু সেলটা কাছে না থাকায় আর ধরা হয়ে উঠে নি । এটা নিয়ে দুই দিকে দুইরকম অভিজ্ঞতা হয় । ছেলেটা কল না ধরতে পারার অপরাধ বোধে কল ব্যাক করতে সাহস পায় না । আর মেয়েটা এতদিন পর কল করে উত্তর না পেয়ে কেন কল করল তার জন্য নিজকে গালি দিতে লাগল । অদ্ভুত এই দ্বৈত অবস্থা !



যা হোক সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ছেলেটি কল দিতে পারল না । আর তীব্র অভিমান নিয়ে ছেলেটা কেন কল ব্যাক করল না তা জানতে রাতে ছেলেটাকে মেয়েটা কল দিয়েই দিল ।



-"তোর লজ্জা নাই । নারে প্রীতম ?'

- "সেটা তোর থেকে আর ভালো কে বলতে পারবে ।"

-"সকালে ঘুমাচ্ছিলি বলে তো মনে হয় না.. "

- "খেতে গেসিলাম রে ভাই "

-"সেই চিরচারিত বাহানা "

- "আছিস কেমন রে অনু "

-"এনামে আমাকে না এখানে কেউ ডাকে না "

-"ডাক্তারদের এরকম ছোট্ট বিষয়ে অভিযোগ মানায় না, মিস রয় "

-"উফ! এনামে আমাকে তুই ডাকবি না ।"

-"তোকে অনুপমা বললে আর সবার সাথে যে কোন ভেদ থাকল না!"

-"তুই তোর মতই ডাক । আমি শুধু বললাম অনু বলে আমায় কেউ বহুদিন ডাকে নি ।"

-"যাক আমাদের কোন কারণে তো মনে রাখা হবে তাহলে "

-"ঢং রাখ । আছিস কেমন ?"

-"ঐ চলে যাচ্ছে ।"

-"ও এসেছে নারে ?"

-"হ্যাঁ । আসলো তো ।"

-"ও কি আসলেও অনেক সুন্দর ?"

-"আরে ধ্যাত ! আমার ওর সাথে কিছু নাই রে বাবা ।"

-"তাহলে তুমি আজকাল ব্যাখ্যা দেয়াও শুরু করেছে !"

-"তুই বলেই বললাম । মানুষের কোথায় আমার এখনো কিছু আসে যায় না ।"

-"তোর এ বিষয়টা না আমার আসলে ঈর্ষা হয় । মানুষের দিকে না তাকিয়ে, ওরা কি ভাবল তা না দেখে অবলীলায় চলে যাস!"

-" কি করব ? ওদের কাছে গিয়ে আমার কাজের প্রসংশা চাইব ?"

-"থাক থাক । এ নিয়ে আপনার পুরো বক্তব্য আমার মুখস্ত আছে ।"



অনুপমা এটা বলতেই দুজনে একসাথে হেসে উঠল ।

-" তুই দাক্তারি পড়তে গিয়েও আগের মতই আছিস "

-"কি করব ? তোমার জন্য বসে থাকব ।"

-"আহা তা বলেছি নাকি ?"



এটা বলতে বলতেই ওরা সেই অবধারিত দিকে চলে গেল । দুজনেরই অস্বস্তি লাগতে লাগল । বিষয়টা নিয়ে দুজনের কেউই কম ভাবে নি । কিন্তু ওইটুকু বয়সে প্রীতম অত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়ে অনুপমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ঝুকি নিতে চায় নি । কিন্তু ও অনুকে সবসময় উল্টোটাই বলে । ও নাকি অন্য ধর্মের মেয়ের সাথে কিছু করার ঝুকি নিতে পারবেনা । ও কখনোই চায় নি অনু নিজেকে এ নিয়ে দোষী ভাবুক । বরং ওর উপর রাগ করে যদি বিষয়টা এড়ানো যায় তাতেও ও রাজি । আসলে ভিন্ন ধর্মের বলে প্রীতম কিছু মনেও করে না । ও আসলে এই বিষয়টাকে (ধর্ম) এক্ষেত্রে অত বড় করে কখনোই দেখে নি । কিন্তু একথা অনু জানলে যে বড় বিপদ । প্রথমে যখন অনু ওর কাছ থেকে এব্যাপারে শুনে তখন একটু অবাকই হয়েছিল । ও যে মানুষটিকে চিনে সে কি করে এই কথা বলে তাকে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে ডাক্তারি পড়তে যেতে বলে ! আজও সে অনুকে এতটুকু বুঝতে দেয় না । আর অনু নিজের ক্ষেত্রে এসে কেন এমন করছে তার ব্যাখ্যা চাইলে প্রীতম আজও নিশ্চুপ থাকে । একটা চাপা অভিমান নিয়ে অনু নতুন মেয়েটিকে দোষারোপ করতে গিয়েও পারে না । কারণ ও এটা ভাবতেই পারে না । কিন্তু আর কোন কারণও খুঁজে পায় না ।



কারণ খুজতে গেলে অনেক কিছুরই খোঁজা যায় । এটা নিয়ে নাহয় আরেকদিন কোন বার কথা বলা যাবে । সেই কল কবে যে কে দিবে তারও ঠিক নেই । এবারের কথা কাটাকাটি যে ঝগড়ায় রূপ নিয়েছিল । তারপর আর না পেরে ও কলটি কেটেই দিল । মিথ্যা কথা ওর সাথে ও কখনোই খুব বেশি বার বলে পার পায় না । এবারে ধরা পরলে যে বিপদ ! তার চেয়ে নতুন অনিঃশেষ অপেক্ষাও ভালো !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১৩

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: ভালইতো লেখেন!! অভিনন্দন!!!

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৪৬

রহমান,তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ । ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম । ভালো থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.