নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলা হল না, আর ফেরা হল না

রহমান,তানভীর

বই পড়তে ভালবাসি । কবিতার বই হলে কথাই নেই । হেলাল হাফিজের অন্ধ ভক্ত ।

রহমান,তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউঃ 'জাল'~ একজন পাঠকের মূল্যায়ন

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৩

বাংলাদেশের বই নিয়ে আমার বেশি লেখা নেই । এই অভ্যেসের পেছনে আমার যা দোষ তা আমার পছন্দের বইয়ের সংখ্যার চেয়েও কম । হ্যাঁ, আমি মূলত থ্রিলার পড়তে পছন্দ করি । ঐটাই আমার পছন্দের সাহিত্য শাখা(genre, এটার উচ্চারণ যনরা ), কবিতা বাদ দিয়ে ধরুন । তবে বাতিঘর প্রকাশনী আমার মত ইংরেজি না জানা ছেলেদের জন্য ভালো ব্যবস্থা করেছে । যে কোন ভালো বইয়েরই আজকাল বাংলা অনুবাদের সংস্করণ পাওয়া যায় । রকমারি ডট কম এ গেলে সার্চ দিলেই হয় । আমাদের স্কুলে থাকতে কত কষ্ট করে ইংরেজি গুলো পড়তে হত । অনুবাদক হিসেবে শুরু করলেও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এখন পুরোদস্তুর লেখক । এ পর্যন্ত ছয়টা থ্রিলার লিখেছেন । 'জাল' তার পাঁচ নম্বর বই । আগের চারটি একই সিরিজের, এটি আলাদা । নতুন কোন সিরিজ শুরু হল কিনা বলতে পারছি না এখনই । তবে শুরুটা একেবারে মন্দ হয়নি এটা বলাই যায় ।



গল্পটা ঘুরে রুহিন মালিক নামে এক তরুণ, লেখকের ভাষায় "প্লেবয়" ব্যারিস্টারকে কেন্দ্র করে । ভদ্রলোক এক ক্লায়েন্টকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই খুনের দায়ে ফেঁসে যায় । আধা মাতাল অবস্থায় পুলিশের ( উচ্চারণ পোলিস ) কাছে আটকা পড়ে যায় । কিন্তু এতবড় একজনকে ধরতে পুলিশের বাধে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা ঠিকই আছে । কিন্তু সিনে অন্য কারো থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় তাকেই মূল আসামী ধরে পুলিশ আগানোর কথা চিন্তা করে । এ অবস্থায় ব্যারিস্টার মালিক শরণাপন্ন হন খোদাদাদ শাহবাজ খান বা কে এস খানের । এই ভদ্রলোক একজন অবসরপ্রাপ্ত ডিবি কর্মকর্তা । সারা বছর তার কোন না কোন অসুখ লেগে থাকে, বই থেকে বোঝা যায় তার সাথে তার বউয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, যদিও এখনো প্রতিদিন কথা হয় তাদের মধ্যে । তার ফাইলে কোন অসমাপ্ত কেইস নেই। এজন্যই মালিক তার কাছে যায় । এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এখন পুলিশে ক্রিমিনলজি পড়ান । তার ছাত্র আমিনুলের কাছেই এই কেইসটা শেষ পর্যন্ত যায় । যা হোক, খান এই কেইস টা নেয় ।



প্রথম থেকেই মালিক বলতে থাকে খুনটা করেছে মাহবুব নামে তার একটা পুরনো শত্রু, ঠিক তার শত্রু নয় যাকে খুন করেছে, রফিক সাহেব যিনি মালিকের বন্ধু, তার শত্রু । কিন্তু পুলিশের কাছে এইটা বিশ্বাসযোগ্য হয় না কারণ ঐ সময় মাহবুব হাসপাতালে অপারেশনের জন্য ভর্তি ছিল । এই প্রেক্ষাপটে উপন্যাস শুরু হয় । ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব বা উত্তরা ক্লাবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে । আমি জানি না এটা সঠিক কিনা, যাওয়া হয় নি ওদিকটায় কখনও । যা হোক থ্রিলার হিসেবে মূল্যায়ন করতে গেলে এটা ভালো নম্বর পেয়েই পাশ করবে, যদিও এ প্লাস পাবে না ।



খুনের ঘটনাটার বর্ণনা শেষ দিকে বড্ড একপেশে মনে হয়েছে । অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু অনুমান করা গেছে ঘটনা প্রবাহ । এটা হতে পারে আমার অনেক থ্রিলার পড়ার কারণেও । আর কিছু ভুল তথ্য দেয়া আছে । একটার উদাহরণ দিচ্ছিঃ নিক কার্টার নামে একজন লেখকের কথা বলা হয়েছে এই গল্পের একটা কথোপকথনে । আসলে নিক কার্টার কোন নির্দিষ্ট লেখকের নাম নয় । এটা একটা ছদ্মনাম । কম করে হলেও ২৬১ টা বই প্রকাশিত হয়েছে এই নামে । আমিও দু একটা পড়েছি, ওতটা খারাপ নয় যেভাবে বলা হয়েছে । উদ্দিনের মত থ্রিলার লেখকের কাছে এসব ছোটখাটো ভুলও গ্রহণযোগ্য না । বাতিঘর কোন লেখাই বোধ করি সম্পাদনা করেনা । না হলে এত বানান ভুল থাকতে পারে না । এটা শুধরানোর সময় এসে গেছে ।



থ্রিলার লিখতে গিয়ে তিনি মালিককে দেখিয়েছেন "প্লেবয়" হিসেবে, কিন্তু উনি রোমান্সের বর্ণনা দিতে গিয়ে কার্পণ্য করেছেন, ভয় পান নি এটা বলাই যায় যেহেতু উনার অনুবাদ (যেমনঃ গডফাদার ) বইগুলোতে উনি ঠিক অনুবাদই করেছেন । এটার ক্ষেত্রে আরও একটু মনোযোগি হতে পারতেন লেখক । আগের বইগুলোতে পুরনো ঢাকা বা দিল্লির বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন এই বইয়ে নতুন ঢাকার কথা ওভাবে বলেন নি । হয়ত উনি নিজের কমফোর্ট জায়গা থেকে বের হয়েছেন । খানের কথাগুলো অনেক জায়গাতেই ঠিক হয়নি । মানে এভাবে আমাদের কেউ চলিত ভাষা বলে না, তবে উনি এটা আমাদের সাহিত্যে আনার সাহস দেখিয়েছেন এটার জন্য প্রশংসা পেতেই পারেন ।





কাহিনিতে নতুনত্ব খুব আছে বলা যাবে না। একজনের খুনের দায় আরেকজনের উপর চাপান পুরনো কথা । কিন্তু পড়তে গেলে ভালই লাগবে । আমাদের দেশের খুব বেশি বই এই ক্ষেত্রে লেখা হয়নি । উনি একাই লিখছেন মোটামুটি, এবং বেশ ভালই লিখছেন । সাহসি হতেই গিয়েও হন নি, যেমন উনা লেখায় সরকারি কেউ কখনোই দোষী থাকেন না । এই কথাটা এই বইয়ের জন্য নয়, বরং উনার আগের চারটি বইয়ের জন্যেও প্রজোয্য । লেখকের কৃতিত্ব হচ্ছে ছোট একটা ঘটনা নিয়ে এত বড় বই লিখলেও কখনোই পড়তে খারাপ লাগবে না। আমি এক রাতেই শেষ করেছি । উনার সব বইয়েই নারী চরিত্র গুলো একদম সাদামাটা কেন জানি । অন্তত তাদের উপস্থাপন আরেকটু আকর্ষণীয় হতেই পারত । অনেক বইয়েই আছে । তবে একটা কথা না বললেই না, মাহবুব যেভাবে ব্যারিস্টারকে ফাঁসিয়েছেন তা উপভোগ্যই । লেখকের কৃতিত্ব দিতেই হবে, কোন উপায় নেই । তাছাড়া খানের চরিত্রটা লেখক ইচ্ছে করেই পুরোটা বিকশিত করেন নি মনে হয় । পরের বইয়ের জন্য রেখে দিয়েছেন । ডাক্তার লুবনার চরিত্রটা বিশ্বাসযোগ্য করা যেত আরও । তবে আবারো সবাইকে বলে দেই আমি তুলনা করছি মারিও পুজো, ডেভিড বালদাশি বা ফ্রেডরিক ফরসাইথদের মত লেখকদের সাথে । উদ্দিনকে আরও সময় দিতে হবে । যদি আমাকে কেউ বলত তুমি উদ্দিনকে একটা সাজেশন দাওঃ তাহলে আমি বলতাম এবার সময় হয়েছে প্রেক্ষাপট আরও বড় করার । লেখার সময় আরেক্তু বেশি সময় নিয়ে রিসার্চ করার । অনুবাদের থেকে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে এখন নিজের আলাদা অভিজ্ঞতা করার সময় হয়েছে ।



'জাল' বইটি ভালো লাগার মত বই । কাহিনি ভালো, প্রেক্ষাপট ভালো, তবে নতুন মোড় নেয়ার কথা খুব কম ভেবেছেন এবার লেখক । একটা বইয়ে এটা হতেই পারে । হাজার হোক নতুন সিরিজ । অপরাধের মত লেখাতেও একটা কথা প্রজোয্য ঃ ভুল সব চেয়ে বেশি প্রথম বারেই হয় । চরিত্র চিত্রায়ণও ভালো । পৃষ্ঠা গুলো উল্লেখ করার মত ভালো । বইটির মলাটের পিছন দিক ভালো, সামনের দিকে আরও ভাবার সুযোগ ছিল । দাম সাধ্যের মধ্যেই । ভাষা সাবলীল, ঢাকার বাইরের লোকদের কয়েকটি জায়গায় দুবার পড়তে হতে পারে, নাও পারে । সব মিলিয়ে এক কথায় বইটি উপভোগ্য । পড়তে পারেন দ্বিতীয়বার না ভেবেই । খারাপ লাগবে না একথা বলে দিতে পারি ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.