নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলা হল না, আর ফেরা হল না

রহমান,তানভীর

বই পড়তে ভালবাসি । কবিতার বই হলে কথাই নেই । হেলাল হাফিজের অন্ধ ভক্ত ।

রহমান,তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবারে ভারতবর্ষ দর্শন : পর্ব -১

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

আজ যাত্রার, বোধ করি, চতুর্থ দিন ৷ কলকাতা থেকে দিল্লী যাচ্ছি ৷ এখানকার সব থেকে আরামদায়ক এবং বহুল প্রচলিত যানব্যবস্থা রেলপথ ৷ মমতা ব্যানার্জী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হবার পর কলকাতা থেকে দিল্লীসহ বড় বড় শহরগুলোতে রেল ব্যবস্থা বেশি ভাল হয়ে গিয়েছে ৷ সবাই কিন্তু তা করেনি, যেমন বিহারের লালু প্রসাদ যাদব অনেককাল রেলমন্ত্রী থাকলেও বিহারের রেলপথ একেবারেই জঘন্য ৷ এজন্য ওখানকার লোকজন এ প্রদেশের রেলের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল ৷





এবারে আসি কলকাতা অবস্থানকালের খবরে ৷ এতদিন গল্প-উপন্যাসে বা কবিতায় কলকাতা সম্পর্কে অনেক পড়েছি ৷ এ শহরটায় একটা টান ছিল আমার ৷ কল্পনার অনি, অর্করা ছিল কিন্তু নিজ চোখে না দেখলে এটা পূরণ হত না ৷ 'চক্ষু-কর্ণের বিভেদ' মিটেছে ৷ আমি শহরটার সম্পর্কে এত বেশি শুনেছি যে বাস্তবতা অনেক সময় সন্দেহ জাগিয়েছে ৷ নিউ মার্কেট (হগ মার্কেট) এলাকার পাশে হোটেলে ছিলাম ৷ এখানকার হোটেলগুলো সস্তা, ঢাকার তুলনায় একেবারে সস্তা ৷ কিন্তু সত্যি বলতে মান ততটা নয় ৷ বিশেষ করে বেড বাগ আমার সঙ্গী মুকুল ভাইকে ভুগিয়েছে ৷ ঢাকার খাবার পাওয়া যায়, মিষ্টির কথা শুনছি খুব ৷ তবে কলকাতার চেয়ে আমাদের মিষ্টিই মিষ্টি, মানে স্বাদে ভাল ৷ এ শহরটায় বিশ্বখ্যাত বিপণীগুলোর শাখা আছে, কাপড় বলুন আর পিজা-কফির দোকান বলুন আছে সবই ৷ সাদারা অনেক করে দিয়ে গেছে, তাই বনেদিয়ানা আছে ৷ নেতাজি বোস দমদম এয়ারপোর্ট, আর শিয়ালদহ রেলস্টেশন দেখা হয়েছে ৷ এয়ারপোর্ট তেমন কিছু নয়, কিন্তু স্টেশনগুলো বড় ৷ বড় মানে যেনতেন বড় নয়, অনেক বড় ৷ হাওড়া স্টেশনে তো প্ল্যাটফর্মই গোটা চব্বিশেক ৷ এক মহা ব্যাপার ৷ এক-একটা ট্রেনে হাজার তিনেকের মত যাত্রী যাওয়া আসা করে ৷ চাট্টিখানি কথা! লোকোৎসবের প্রাত্যহিক উদাহরণের এক মস্ত প্রমাণ হাওড়া জংশন প্রতি মিনিটেই বোধ হয় দিয়ে চলেছে ৷





কলকাতায় ফেরত আসতে গেলে হাওড়া থেকে দুটো উপায় ; বাস বা ট্যাক্সি করে হাওড়া ব্রিজ দিয়ে অথবা জলযোগে লঞ্চে ৷ লঞ্চে পাঁচ টাকা নিবে, ভাল ব্যবস্থা, ভাল অভিজ্ঞতা হবে ৷ কলকাতার ব্যস্ততা ওভাবে পাই নি ৷ প্রথম দিন সাপ্তাহিক ছুটি, দ্বিতীয় দিন বনধ্, আর তৃতীয় দিন লোকসভা নির্বাচনের জন্যে ৷ এত পুরনো একটা শহর যেন পুরো বছরের বিশ্রাম নিচ্ছে ৷ ফাঁকা কলকাতা দেখার বিরল একটা সুযোগ পেলাম ৷ ফাঁকা বলে কেমন যেন নিষ্প্রাণ লাগল ৷ মানুষ ছাড়া শহর জমে নাকি ৷ শুধুমাত্র মানুষ কম বলে গ্রাম ভাল লাগেনা আমার ৷ অপরিচিত মানুষ দেখার মাঝে একটা মজা আছে ৷ কত বিচিত্র কাজ, কত বিচিত্র মানুষ ! 





এখানকার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভাল নয়, মানে বাংলাদেশেরটাই বেটার লাগছে এখন ৷ শহরটায় ধুলো সে অর্থে নেই তবে পরিষ্কার বলা যাবে না ৷ গল্প বা ছবি থেকে আমার কল্পনার কলকাতার চেয়ে এ কলকাতা অনেক দীন, আগেকার প্রতাপ এখন দৈন্যে রুপ নিয়েছে ৷ ব্রিটিশ আমলে রাজধানী এ শহর মনে হয় ভারতবর্ষের উপর রাগই করেছে ৷ একটু যেন অভিমান, ভারত স্বাধীনতার পেছনে এ শহরটাই যে বড় ভূমিকা রেখেছিল ৷ তারপর বেশির ভাগ সময় দিল্লীর শাসকদের সাথে এ শহরটার বনিবনা হয়নি ৷ ওটা এখানকার ধাতে নেই ৷ একটু যেন উচ্ছন্নে না গেলেই না ৷ যা-হোক, এখনো এ শহরে নদীর পানিতে চেহারা দেখা যায়, হাওড়া নদীতে সূর্যাস্ত দেখা যায় ৷ কম নয় কিন্তু ৷ চিল, বক আর ঈগল পর্যন্ত দেখলাম কয়েকটা !





এ শহরটার প্রতি একটা রোমান্টিসিজম কাজ করলেও দেশভাগ হয়ে যে ভাল হয়েছে তা বুঝতে পারছি ৷ ঢাকার কাছে কলকাতা এখন নস্যিই লাগবে ৷ প্রাণের শহর হয়ত সব সময়ই কলকাতা থাকবে, কিন্তু মেগাসিটি এখনো হতে ঢেড় কাজ বাকি এদের ৷ আমাদের ঢাকা ও ধাপটা পেরিয়েছে বহু আগেই ৷ রাইটার্স বিল্ডিং, পোস্ট অফিস, ইডেন গার্ডেনস শহরটার ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেবে তৎক্ষণাৎ সন্দেহ নেই ৷ ধর্ততলা থেকে পার্কস্ট্রিট আসতে গেলে বোঝা যাবে যে শহরটা অনেকটা থমকে আছে ৷ তবে মানুষগুলো অনেকটাই মিশুক ৷ আমার এখানকার কন্ট্রাক্ট প্রলয় মজুমদার বড্ড ভাল লোক, আমাদের সাথে দিল্লী পর্যন্ত যাচ্ছেন ! বড় ব্যবসা আছে, সরকারী চাকুরে, ছোট বয়সে বাবা হারানো লোকটা নিরামিষাসী, এবং আচারেও তাই ৷ নিয়ে তো ঘোরালেন উনিই এ শহরটা ৷ সমরজিৎ দাদা বা বাপ্পা দা আর মুন দিদি এতটা করবেন ভাবিনি ৷ এত সহজে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে ওরা ! বাপ্পা দা তো খাবার বেঁধে দিল দিল্লীর পথে ! এযুগে এতটা পাব ভাবিনি ৷ মানুষগুলোর জন্য শহরটাকে একদম আপন মনে হচ্ছিল ৷ থেকে যেতে ইচ্ছে করছে ৷ নতুন করে শুরুর ইচ্ছেটা হচ্ছে ৷ 

প্রথম লেখা বলে অতটা গভীরে গেলাম না ৷ দ্বিতীয়টা থেকে পুরো বিস্তারিত লেখা হবে ৷ এ যাত্রায় এতটুকু থাকুক ৷ কারও অভাব ছিল বৈকি ৷ তবে ক্যালকাটা থেকে শহরটা সত্যি কলকাতা হয়ে গেছে !



হাওড়া জংশন, পশ্চিম বঙ্গ

মে ১৩, ২০১৪

সকাল : ৬ টা বেজে ০৭





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বর্ননা সুন্দর, ছবি যুক্ত করা চাই।

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

রহমান,তানভীর বলেছেন: ছবির আলাদা অ্যালবাম আলাদা দেব ভেবেছি ৷ এখানে হোটেলের ওয়াইফাই এর মাধ্যমে আইপ্যাড দিয়ে আপলোড করছি ৷ ল্যাপটপ তো আনার সাহস পেলাম না :) ৷ ভাল ভাবতাম না তো এদেশের মানুষ সম্পর্কে :( ৷ অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ছিল ৷

২| ১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা।

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:০০

রহমান,তানভীর বলেছেন: ভাল লেগে থাকলে ধন্যবাদ ৷ জেনে সুখ পেলাম :)

৩| ১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩০

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
দারুন

১৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

রহমান,তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.