নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলা হল না, আর ফেরা হল না

রহমান,তানভীর

বই পড়তে ভালবাসি । কবিতার বই হলে কথাই নেই । হেলাল হাফিজের অন্ধ ভক্ত ।

রহমান,তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবারে ভারতবর্ষ দর্শন: পর্ব-৪

১৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩২

আজ যাত্রার নবম দিন ৷ আজ ছিল বরাদ্দ বিশ্রামের ৷ কিন্তু সকালে নাস্তার সময় ভূত চাপল তাজমহল দেখতে যাব ৷ তাজমহল দেখার পরিকল্পনা এবার ছিল না ৷ ছাত্র অবস্থায় চাকরির কাজে বাইরে এসে এরকম বাহুল্য মানায় না ৷ তারপরও উঠে গেলাম ৷ কী আর করা? এটা তাজমহল ! 





ট্রেনের ভাড়া ৩০ টাকা থেকে শুরু ৷ আমরা কাটলাম ৮০ টাকারটা ৷ মানে রিটার্নসহ দিতে হল একজন ১৬০ টাকা ৷ ভাবলাম ডাবলের বেশি দামে কেটে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই যাব ৷ কিসের কী, সিট তো নেই-ই, দাঁড়াবার জায়গাটুকুও নেই ৷ দাঁড়িয়ে ২০০ কিলোমিটার যাওয়া কম কথা নয় কিন্তু ৷ মানে মান যা-ই হোক, ওরা ২০০ কিলোমিটার আসার ভাড়া ৩০ টাকাও নেয় ! আমরা যাওয়ার সময় গেলাম কেরালা এক্সপ্রেসে ৷ এখানকার লোক যথেষ্ট ভদ্র, কিন্তু ইউপি আর বিহারের লোকগুলো আক্ষরিক অর্থেই অসভ্য ৷ একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে তো বেচারা পুলিশের কাছেই ধরা খেল ! এদের কোন লজ্জাও নেই ৷ হাসছে ! 





মন্দের ভাল যে ট্রেনটা ঠিক সময়ে পৌছুনোর দিকে এগুচ্ছিল ৷ কিন্তু আমরা যে স্টেশনে নামব ঐটার বাইরে আউটারে মিনিট দশেক দাঁড়াতে হয় ৷ ওতেই অবস্থা ত্রাহি ৷ শেষ পর্যন্ত এসে গেলাম আগ্রা ক্যান্ট স্টেশনে ৷ কতযুগ থেকে যে এখানে আর্মি আছে ৷ সেই আকবর আমল থেকে শুরু ! প্রথমে অটো ড্রাইভারের সাথে ২৫০ থেকে ভাড়া নামিয়ে ৫৫(!) রূপিতে নামিয়ে গেলাম তাজমহলের দিকে ৷ সারা রাস্তা জুড়ে তার কত রকম যে অফার! সারাদিন ঘুরলে ৪০০ রূপি, ৪ ঘণ্টা ঘুরলে ২০০ রূপি ৷ এদের মোবাইল কোম্পানিগুলোর মত অটোড্রাইভাররাও বিভিন্ন অফার দেয়; মিল এক জায়গাতেই- সবগুলোই ভুয়ো ৷ 





তারপর উটের গাড়িতে করে জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে তাজমহলের টিকেট কাউন্টারে পৌছে দেয়ার কথা বলে নিয়ে গেল কোন এক কারুশিল্পের দোকানের সামনে ! ওখান থেকে মিনেট দুয়েক হেঁটেই তাজমহলের গেটে ৷ ভিনদেশী বলে আমাদের টিকেট ৭৫০ টাকা ! কিন্তু আমি ২০ টাকা দিয়েই টিকিট কিনে ঢুকে গেলাম ৷ আমার মতে, ওতে ভারতীয়দের যা অধিকার আমারও তাই- তখন শাহজাহান আমাদেরও তো শাহেনশাহ ছিল ! আসলে ৭৩০ টাকা বাঁচানো গেছে ওতেই শান্তি ;) ৷ 







আমরা ঢুকলাম পূবের গেট দিয়ে ৷ ঢুকেই বোকা বনে গেলাম ৷ রীতিমত চোখ ধাধিয়ে যাবার মত ব্যাপার ৷ শুধু তাজমহল নয়, পাশের মসজিদ বলুন আর গেটগুলো বলুন কোনটাই একে অপর থেকে কোন অংশেই কম নয় ৷ কী স্থাপত্যশৈলি আর ফারসি হরফে গেটের কারু ! অসাধারণত্ব শেষ সীমা বোধহয় এটাই ৷ এটা না হলে কোনটা তা আমার জানা নেই ৷ সামনের চত্বরটাও বানিয়েছে ৷ ফোয়ারাগুলো ছাড়া নেই, কারণ ওগুলোর কাজ চলছে ৷ তাজমহলের সৌন্দর্য ওতে এতটুকু কমে নি ৷ কারণ এর চেয়ে আর কী করে সুন্দর হতে পারে ! প্রখর রোদ, প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি কিন্তু হিউমিডিটি নেই বলে গায়ে ঘাম নেই ৷ চামড়া পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু গায়ে ঘাম নেই ! অভিজ্ঞতাটা মজারই হয়েছে ৷ বলছি ৷





তাজমহলে জুতো পরতে মানা ৷ আমরা আশেপাশের কিছু পড়িনি ৷ যাই হোক, জুতা খুলে পা মাটিতে রাখতেই আজকের সবথেকে বড় ভুল উপলব্ধি করলাম: স্যু কাভার না কেনা ৷ পুরো পাথর আর মার্বেলের আঙ্গিনা তেতে আছে ৷ আমার পায়ের পাতার জন্যই বোধহয় অপেক্ষা করছিল ৷ ভারত সরকার ২০০ টাকার একটা লম্বা ম্যাট্রেস ফেলে রেখেছে বটে কিন্তু ওতে কোন কাজ হচ্ছিল বলে মনে হয়নি ৷ মসজিদটার উঠোন পেরিয়ে যখন গেলাম তাজমহলের পেছন অংশে তখন যমুনা নদী দেখে মাথা ঘুরে গেল ৷ ওপাশে কিছু মিনার দেখলাম, বোধহয় নদীর তীর থেকে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণের কৌশলের অংশ ৷ এবার দূর থেকে ফতেহপুর সিক্রি মানে আগ্রা ফোর্ট দেখতে পেলাম, ওটা আমাদের পরবর্তী স্থান ৷ ঘুরে এসে যখন মূল তাজমহলে ঢুকলাম তখন বুঝলাম শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজকে কতটাই না ভালবাসত! এরকম মহল পৃথিবীর ইতিহাসেই খুব কম হয়েছে ৷ কী তার কারুকার্য আর কী তার নির্মাণধরণ ৷ গালিবের মত করে বলতে হয়, "ইসকো বানায়ে জিসনে উসকো তারিফ কাঁরু তো কাঁরু ক্যাসে ৷" আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ও কুলোবে না ৷ তবে যাদেরই সুযোগ হয় একবার দেখে নেবেন ৷ খোদার দিব্যি বলছি আফসোস হবে না ৷ শুধু খেয়াল রাখবেন হাতে যেন একটা ভাল ক্যামেরা থাকে ৷ আইফোন ফাইভ টাইভ দিয়ে এর সৌন্দর্য পুরোটা ধরতে পারিনি ৷ সম্ভব না বোধ করি ৷ তবে শাহজাহান আর মমতাজের কবর নীচে ৷ ওখানে লোকজন যেতে দেয় না ৷ উপরে রেপ্লিকা মতন বানিয়ে দেখাচ্ছে ৷ ছবি তোলা নিষেধ ৷ ভাব এমন আমি ওতেই মেনে নেব ৷ হাহা ৷ তুলে নিয়েছি গোটা তিনেক ফোন দিয়ে ৷ কিছু একটা আছে এই গোর দুটোই ৷ আপনি সম্মানে নত হবেনই ৷ এটা আনুগত্যের নয় ৷ অতিভূত হওয়ার নত ৷ ঠিক চাকর নয়, তবে ওদের সুপিরিয়র মেনে নেয়া ৷ ব্যাখ্যা করার শব্দ পাচ্ছিনা ৷ 







তারপর বের হয়ে খেলাম খিরাই ৷ একটা খিরাই পাঁচ টাকা ৷ অনেক বড় ৷ খেতে না পেরে আদ্ধেক ফেলেও দিতে হল ৷ ওমনি বানর এসে খেয়ে নিল! এতক্ষণ ওদের উপস্থিতি বুঝিই নি! আসলে পুরোটা জুড়ে ছিল তাজমহল ৷ খেয়াল করে দেখলাম পুরো আঙ্গিনাতেই ওরা আছে ৷ গাছের নীচে বসে কেউ কেউ ঠাণ্ডাও হচ্ছে ! এবারে বেরুতে হয় ৷ নাহলে সময় ফুরিয়ে যাবে ৷ তখন ট্রেন মিস করে ইউপিতে পড়ে থাকতে হবে ৷ ভাবতেই গা গুলিয়ে যাচ্ছে !





ওখান থেকে অটোতে প্রতিজন দশ টাকা দিয়ে বিজলি ঘর না বিজলি ঘাটে পৌছুলাম ৷ এদের হিন্দি বোঝা বড্ড কঠিন ৷ একেবারে সেকেলে কথাবার্তা ৷ নেমেই ফতেহপুর সিক্রি মানে আগ্রা ফোর্ট ৷ ভারতবর্ষের শান ৷ ঐ যে বললাম ক্যান্টনমেন্ট আকবর থেকেই এখানে; তার নমুনা এই ৷ কতজন সৈন্য থাকতে পারত জানা নেই, তবে এ একেবারে ভিন্ন জায়গা ৷ এত উঁচু যে দেখতেই গা শিরশিরিয়ে উঠছে ৷ দিল্লির লাল কিল্লার লাহোর গেট দেখেই ভেবেছিলাম এরকম আর হয় না ৷ এর বিশালতার কাছে লাহোর গেটও হার মানবে ৷ এতটাই বিশাল যে না দেখলে অনুমান করা যাবেনা ৷ বাংলাদেশের পাহাড়গুলোর (সব নয়) থেকে এটা বড় ৷ হ্যাঁ ভাই, অভাবনীয় বড় ৷ ভেতরে দরগা আছে ৷ যাওয়া হল না শুধু সময়ের অভাবে ৷ ট্রেন ছাড়বার সময় হয়ে আসছে যে ! তবে ফতেহপুর সিক্রির উচ্চতা আর পরিধি এতটাই বড় যে একপাশ থেকে অপর পাশে যেতে অটোতে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগে ৷ এটা মেইন রোডের সাথে লাগোয়া অংশের ৷ যমুনা পাড়ের অংশটা এর প্রায় দেড়গুণ ! বিশালত্বের সীমা নেই এর !এখানে খাবার আরও সস্তা ৷ দিল্লীতে লুচি আর ডাল, সবজি খেতে চল্লিশ রূপি যায় ৷ এখানে ওটাই ১৫ রূপি লাগবে ৷ তিনটে কলা খেলাম পাঁচ রূপিতে ! চা চার রূপি ৷ বাজারে লোকজন বসে আছে ৷ একটু অনুন্নতই উত্তর প্রদেশ ৷ তারউপর আগ্রা নাকি এগিয়ে অনেক ! 





এরপর অটোতে করে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে গেলাম আবার ৷ আসার পথে পাঞ্জাব এক্সপ্রেস এ উঠলাম ৷ ভিড় ছিল নয় নম্বর বাসের থেকে বেশি ৷ লোকগুলো অনেকে ওর মধ্যেই বিড়ি (সিগারেট নয়) টানছে ৷ কতটা অসভ্য একবার ভাবুন ৷ ঢাকায় এসব কেউ ভাবতে পারেনা ৷ আসলাম ঘড়ি ধরে দুই ঘণ্টা তেতাল্লিশ মিনিটে ৷ দুইশ কিমি এত তাড়াতাড়ি ভাবা যায় ! একেবারেই ভাল হয়নি যাত্রাটা ৷ বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়েই ছিলাম ৷ কেউ একজন পানি ফেলে দিল যাতে কেউই মাটিতে বসতে না পারে ৷ এতে সুবিধেটা হলো বেশি লোক দাঁড়াতে পারবে ! কী বুদ্ধি এদের! এসে গোসল করে সাইবাবা ভোজনালয়ে গেলাম ৷ ওরা বুঝে নিল কী খাব ৷ খেয়ে এসে শুয়ে পড়লাম ৷ শরীর আর পারছিল না ৷ তখন রাত প্রায় সাড়ে বারটা বাজে ৷ সেজন্যই রাত চারটায় উঠে লিখছি আজ ৷ 





ছবিগুলো একসাথে ব্লগে দেব বলে ঠিক করেছি ৷ দেশে যাই তো আগে ৷ তবে এই রাতে দেশকে মিস করছি বড় ৷ একটা শান্তি আছে ওখানে, ওখানকার মানুষের মাঝে ৷ ওটা কোথাও নেই মনে হয় ৷ এত আছে এদের, তাও কিনতে পারবে না শান্তি ৷ ওটা আমরা মুফতে পাই শত সমস্যার ভিড়েও ৷ এখানকার জন্য অর্থহীনের গানটা খুব যায়, "চারিপাশে ভিড়ের মাঝেও, গানের কোলাহলে/ মাঝে মাঝে কিন্তু আমার খুব একলা লাগে " , দেশে যাব ভাই ৷ তাড়াতাড়ি ৷ জয়তু বাংলাদেশ !





মে ১৭, ২০১৪

রাত চারটা বেজে ছত্রিশ মিনিট

হোটেল লর্ডস, পাহাড়গঞ্জ

নতুন দিল্লী ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.